চারদিক-ছোটরাই অতিথি by কল্যাণ প্রসূন
সাধারণত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ‘বড়রা’ (বয়সে যাঁরা বড়) প্রধান ও বিশেষ অতিথি হন; কিন্তু আমরা আজ যে অনুষ্ঠানটির কথা বলছি, তাতে ‘শিশুরা’ই ছিল অতিথি। বড়রাও ছিলেন অনুষ্ঠানে, তবে তাঁরাই সম্মান জানালেন শিশুদের। এই অতিথিরা এবার এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থী!
গত ২০ জুন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বসেছিল এই আসর। ‘শিশু আনন্দ মেলা-২০১১’ নামের ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল কুলাউড়া উপজেলা শিশু একাডেমী। বিভিন্ন বয়সী দর্শকের উপচে পড়া ভিড় ছিল সেখানে। আসলে শিশুদের অতিথি করার বিষয়টি আগের রাতে প্রশাসনের এক কর্মকর্তা মুঠোফোনে জানিয়ে দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে অনুষ্ঠানটি দেখারও আমন্ত্রণ জানান তিনি। এ ধরনের অনুষ্ঠান আগে কখনো দেখিনি আমরা। তাই অন্য কাজ ফেলে যথাসময়ে অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হই।
পুরো অনুষ্ঠান ছিল মূলত শিশুকেন্দ্রিক। তিনটি পর্বে সাজানো হয়েছিল তা। প্রথম পর্বে আলোচনা সভা, দ্বিতীয় পর্বে কৃতী শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের ক্রেস্ট, সম্মাননা সনদ ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পোশাকসামগ্রী বিতরণ এবং তৃতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সকাল ১০টায় জনমিলনকেন্দ্রের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। পৌর শহরের কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে শোভাযাত্রাটি। বাইরে তীব্র দাবদাহের কারণে কিছু সময় পর শোভাযাত্রাটি ফিরে আসে।
বেলা ১১টায় জনমিলনকেন্দ্রে শুরু হয় আলোচনা সভা। মঞ্চের সামনে দর্শকসারিতে শিশুদের সঙ্গে বসা ছিলেন জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকেরা।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করে খুদে শিক্ষার্থী কুসুম আক্তার ও তানজিনা আক্তার। দর্শকসারিতে বসা বড়দের কেউ যদি মনে করে থাকেন, তাঁদের অতিথি করে মঞ্চে ডেকে আসন গ্রহণের বিনীত অনুরোধ করা হবে, তাহলে তাঁদের দোষ দেওয়া যাবে না। কারণ, সেভাবেই অনুষ্ঠানগুলো হয়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই মূল ভাবনাটি স্পষ্ট হলো। সঞ্চালকেরা এক এক করে সভার সভাপতি হিসেবে অন্তরা রায়, প্রধান অতিথি পুষ্পিতা দেবরায়, বিশেষ অতিথি মৌনি ভট্টাচার্য, নাজিরা ইসলাম চৌধুরী ও মাশিয়া পূর্বাকে মঞ্চে ডেকে নেয়। অতিথিরা সবাই এবারের (২০১১) এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছে। এই তথ্যটিও সঞ্চালকেরা দর্শকদের জানিয়ে দিল। এ সময় সবাই দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে অদম্য মেধাবীদের অভিনন্দিত করলেন।
দর্শকসারি থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্যের পালা শুরু হলো। সময় মাত্র দুই মিনিট। বক্তারা প্রায় সবাই শিশুদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। এর মধ্যে ভাটেরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা শাহ লতিফা আক্তার বলেন, ‘এ ধরনের অনুষ্ঠান এই প্রথম দেখছি। খুবই ভালো লাগছে। কন্যাশিশুরা সমাজ ও পরিবারে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’
অভিভাবক পলি বেগম বলেন, মা-বাবা ও শিক্ষকেরা প্রায়ই তুচ্ছ বিষয়ে শিশুদের ধমক ও শারীরিক শাস্তি দেন। এতে শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এটা পরিহার করতে হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু কায়সার খান বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে আরও এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিযোগিতায় তোমাদের টিকতে হবে।
শিশু একাডেমীর সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, গোটা উপজেলায় কোনো ছেলে এসএসসিতে এবার গোল্ডেন জিপিএ-৫ পায়নি। শুধু ছয়জন মেয়ে পেয়েছে। তাই তাদের আজ অতিথি করে সম্মানিত করা হলো।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন বলেন, নারীশিক্ষার অগ্রগতি হচ্ছে। এটা ভালো লক্ষণ। শিশুদের পরিচর্যা করে আলোকিত মানুষ হিসেবে সমাজে দাঁড় করাতে হবে।
অন্যান্যের মধ্যে মৎস্য কর্মকর্তা ফণীন্দ্র চন্দ্র সরকার, সাংবাদিক সুশীল সেনগুপ্ত, টিলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মালিক, সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বড়দের শেষে অতিথিদের বক্তব্যের পালা শুরু হয়। জনমিলনকেন্দ্রে তখন সুনসান নীরবতা। পুষ্পিতা, মৌনি, নাজিরা ও মাশিয়ার বক্তব্যও ছিল পরিপাটি। তারা বড়দের উদ্দেশে বলে, ‘শিশুশ্রম-শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। তাদের (শিশু) অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। আমরা সব সময় ভালোর সঙ্গে থাকতে চাই। সেই পরিবেশ সৃষ্টি করে দিন।’
খুদে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তারা বলে, ‘লেখাপড়ার বিকল্প কিছু নেই। লেখাপড়া করলে সবাই ভালোবাসবে। পাঠ্যবইয়ের বাইরেও শেখার-জানার একটা জগৎ আছে। সেটা তোমাদের খুঁজে নিতে হবে। বড়দের সম্মান করতে হবে।’
দ্বিতীয় পর্বে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাক্-প্রাথমিক পর্যায়ে সুবিধাবঞ্চিত ৬০ জন খুদে শিক্ষার্থীকে জামা ও জুতা এবং সংগীত, আবৃত্তি, নৃত্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে ক্রেস্ট ও সনদ বিতরণ করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সুধীজনেরা কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন।
তৃতীয় পর্বে শিশু একাডেমীর সদস্যরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। বিকেল চারটার দিকে ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠান শেষ হয়।
কল্যাণ প্রসূন
পুরো অনুষ্ঠান ছিল মূলত শিশুকেন্দ্রিক। তিনটি পর্বে সাজানো হয়েছিল তা। প্রথম পর্বে আলোচনা সভা, দ্বিতীয় পর্বে কৃতী শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের ক্রেস্ট, সম্মাননা সনদ ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পোশাকসামগ্রী বিতরণ এবং তৃতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সকাল ১০টায় জনমিলনকেন্দ্রের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। পৌর শহরের কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে শোভাযাত্রাটি। বাইরে তীব্র দাবদাহের কারণে কিছু সময় পর শোভাযাত্রাটি ফিরে আসে।
বেলা ১১টায় জনমিলনকেন্দ্রে শুরু হয় আলোচনা সভা। মঞ্চের সামনে দর্শকসারিতে শিশুদের সঙ্গে বসা ছিলেন জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকেরা।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করে খুদে শিক্ষার্থী কুসুম আক্তার ও তানজিনা আক্তার। দর্শকসারিতে বসা বড়দের কেউ যদি মনে করে থাকেন, তাঁদের অতিথি করে মঞ্চে ডেকে আসন গ্রহণের বিনীত অনুরোধ করা হবে, তাহলে তাঁদের দোষ দেওয়া যাবে না। কারণ, সেভাবেই অনুষ্ঠানগুলো হয়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই মূল ভাবনাটি স্পষ্ট হলো। সঞ্চালকেরা এক এক করে সভার সভাপতি হিসেবে অন্তরা রায়, প্রধান অতিথি পুষ্পিতা দেবরায়, বিশেষ অতিথি মৌনি ভট্টাচার্য, নাজিরা ইসলাম চৌধুরী ও মাশিয়া পূর্বাকে মঞ্চে ডেকে নেয়। অতিথিরা সবাই এবারের (২০১১) এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছে। এই তথ্যটিও সঞ্চালকেরা দর্শকদের জানিয়ে দিল। এ সময় সবাই দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে অদম্য মেধাবীদের অভিনন্দিত করলেন।
দর্শকসারি থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্যের পালা শুরু হলো। সময় মাত্র দুই মিনিট। বক্তারা প্রায় সবাই শিশুদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। এর মধ্যে ভাটেরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা শাহ লতিফা আক্তার বলেন, ‘এ ধরনের অনুষ্ঠান এই প্রথম দেখছি। খুবই ভালো লাগছে। কন্যাশিশুরা সমাজ ও পরিবারে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’
অভিভাবক পলি বেগম বলেন, মা-বাবা ও শিক্ষকেরা প্রায়ই তুচ্ছ বিষয়ে শিশুদের ধমক ও শারীরিক শাস্তি দেন। এতে শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এটা পরিহার করতে হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু কায়সার খান বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে আরও এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিযোগিতায় তোমাদের টিকতে হবে।
শিশু একাডেমীর সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, গোটা উপজেলায় কোনো ছেলে এসএসসিতে এবার গোল্ডেন জিপিএ-৫ পায়নি। শুধু ছয়জন মেয়ে পেয়েছে। তাই তাদের আজ অতিথি করে সম্মানিত করা হলো।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন বলেন, নারীশিক্ষার অগ্রগতি হচ্ছে। এটা ভালো লক্ষণ। শিশুদের পরিচর্যা করে আলোকিত মানুষ হিসেবে সমাজে দাঁড় করাতে হবে।
অন্যান্যের মধ্যে মৎস্য কর্মকর্তা ফণীন্দ্র চন্দ্র সরকার, সাংবাদিক সুশীল সেনগুপ্ত, টিলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মালিক, সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বড়দের শেষে অতিথিদের বক্তব্যের পালা শুরু হয়। জনমিলনকেন্দ্রে তখন সুনসান নীরবতা। পুষ্পিতা, মৌনি, নাজিরা ও মাশিয়ার বক্তব্যও ছিল পরিপাটি। তারা বড়দের উদ্দেশে বলে, ‘শিশুশ্রম-শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। তাদের (শিশু) অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। আমরা সব সময় ভালোর সঙ্গে থাকতে চাই। সেই পরিবেশ সৃষ্টি করে দিন।’
খুদে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তারা বলে, ‘লেখাপড়ার বিকল্প কিছু নেই। লেখাপড়া করলে সবাই ভালোবাসবে। পাঠ্যবইয়ের বাইরেও শেখার-জানার একটা জগৎ আছে। সেটা তোমাদের খুঁজে নিতে হবে। বড়দের সম্মান করতে হবে।’
দ্বিতীয় পর্বে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাক্-প্রাথমিক পর্যায়ে সুবিধাবঞ্চিত ৬০ জন খুদে শিক্ষার্থীকে জামা ও জুতা এবং সংগীত, আবৃত্তি, নৃত্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে ক্রেস্ট ও সনদ বিতরণ করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সুধীজনেরা কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন।
তৃতীয় পর্বে শিশু একাডেমীর সদস্যরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। বিকেল চারটার দিকে ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠান শেষ হয়।
কল্যাণ প্রসূন
No comments