বিবাদ সূত্র ব্রহ্মপুত্র by অমিত বসু
বসন্তের বিকেলের দিকে ফিরোজা আকাশ। শঙ্কা রাতের সন্ত্রাসকে। কখন এসে সব রং চেটেপুটে খাবে কে জানে। বাংলা আকাদেমি প্রাঙ্গণে লাল কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুলের আগুন। তাও কালো হবে রজনীর স্বেচ্ছাচারে। চীনের কনসাল জেনারেল চ্যাং লিচুং জীবনানন্দ সভাগৃহে প্রবেশের আগে ওপর দিকে চাইলেন।
তারপর সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা রেখে বললেন, ঢাকার বাঙালি ডাক্তার বিজয়কুমার বসুর কাছে চীন চিরঋণী। চীনের মুমূর্ষু মানুষের সেবা করেছেন সারা জীবন নিঃস্বার্থ সচেতনতায়। মহাসমারোহে তাঁর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপিত হচ্ছে চীনে। মঞ্চে ভাষণ দিতে উঠে লিচুংয়ের আন্তরিক আবেদন, হৃদয়ের কথা শুনুন। মগজের ওপর বেশি ভরসা রাখলে পথভ্রষ্ট হতে পারেন। সার্ক দেশগুলোকে একসঙ্গে সাঁতরাতে হবে। যাতে কেউ ডুবলে অন্যরা বাঁচাতে পারে। বিচ্ছিন্নতায় ছন্নছাড়া হয়ে কী লাভ!
ভালো কথা শুনতে ভালো লাগে। আগে পরে কিন্তু অনেক বাধা। সবাই মিলে সাঁতরানোর মতো নদী কোথায়। চোখ মেললেই নদীর মৃত্যু মিছিল। আগে যে নদীর গর্জনে মাটি কাঁপত আজ তার চোখে কান্না। শুকিয়ে শেষ হওয়ার মুখে আকুল আর্তি, আমায় বাঁচাও। উজানের দেশ খুঁটি ধরে বলছে, নিচে নামতে দেব না। শির সর্বস্ব নদী। হাত-পা শুকিয়ে কাঠি। মাথায় সেচ-বিদ্যুৎ প্রকল্প। দুর্বল। পানিশূন্য মরুভূমি। হাহাকার পৌঁছায় না ওপর তলায়। চিৎকারে সাড়া নেই। উলটো সতর্কতা, চুপ কাজ চলছে। মাথা যার, নদী তার। অন্তহীন আপস-আলোচনায় সময় যায়, বরফ গলে না। রাজনীতি-কূটনীতির ধর্মই হচ্ছে নিজের দিকে ঝোল টানা। বড় দেশ জানে, ছোট দেশকে কিভাবে ছিটকে দিতে হয়। জাতিপুঞ্জের কাছে দরবার করে কী লাভ? মেঘপুঞ্জের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। ধরতে পারে তারা যাদের সেই শক্তি আছে। যারা বিশ্বকে দাবিয়ে রাখতে পারে।
বাংলাদেশ-ভারত নদী টানাটানিতে এবার যুক্ত হলো চীন। বিতর্কের কেন্দ্রে ব্রহ্মপুত্র। এই পুত্রের জন্ম চীন তিব্বতের কৈলাস পাহাড়ে, সরোবরের কাছে। আংসি হিমবাহ গলে ব্রহ্মপুত্র। চীনে এই নদের নাম ইয়ারলুং সাংপো। ভারতের অরুণাচলের তৃতিং এলাকায় ঢুকে নাম নিয়েছে সিয়াং। পাখিঘাটে সিয়াংয়ের রূপ চোখে পড়ার মতো। দুর্বার প্রাণপ্রবাহ। হেসে খেলে ঢেউয়ে ঢেউয়ে লুটোপুটি। তার আচমকা মৃত্যুতে অস্থির অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী নাবাম চুকি। সন্তান হারানোর ব্যথা। তাঁর কথা বলার সামর্থ্য নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছেন, একটা নদ কখনই হঠাৎ ভ্যানিশ হয়ে যেতে পারে না। অন্য কোনো দেশ ম্যাজিক দেখাচ্ছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তবে কি ভারত চীনের দিকে আঙুল তুলতে চাইছে। ইঙ্গিতটা সে রকমই। ২০০০ সালে বিধ্বংসী বন্যায় ভেসেছিল পাখিঘাট। তদন্তে জানা গিয়েছিল, তিব্বতে একটা বাঁধ ভেঙেই এই বিপত্তি। বর্তমান সংঘর্ষের উৎপত্তিস্থল কি তাহলে চীন?
উপগ্রহ চিত্রে পরিষ্কার, চীনে ব্রহ্মপুত্রের মাথায় একাধিক বাঁধের কাজ চলছে। ইউনান প্রদেশে মেকং অববাহিকায় সাংপোর ওপর আটটি স্তরে বাঁধ দিতে ব্যস্ত চীন। ১৯৯৬ সালে মামওয়াম বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা হচ্ছে। চীন চাইলে গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। প্রবাহ পরিবর্তন করতে পারে। যদিও চীন কথা দিয়েছে, ভারতের ক্ষতি হয় এমন কাজ তারা করবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রকের চীনবিষয়ক যুগ্ম সচিব গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, চীনের কথায় এই মুহূর্তে পুরোপুরি ভরসা রাখা যাচ্ছে না। ভারত নিজেদের রাস্তায় তদন্ত করবে। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট ব্রহ্মপুত্রকে ঘিরে ভারত-চীনের মধ্যে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। সংকট বিন্দুতে শেষ না করলে তিল থেকে তাল হতে কতক্ষণ।
সীমান্তে অরুণাচল রাজ্যটির দিকে চীনের কড়া নজর। তাদের দাবি রাজ্যটি ভারতের নয়, চীনের। ভারত পাল্টা জবাবে জানিয়েছে, অরুণাচলের অধিকার নিয়ে কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। এটা ভারতের আছে এবং থাকবে। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পরও বিতর্কের কাঁটা থেকে গেছে। সম্প্রতি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি অরুণাচল সফরের পর চীন বিরক্ত। এখানেই শেষ নয়। চীনের আপত্তি উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মুল্লাপনি্ন রামচন্দ্রন ফের অরুণাচলের রাজধানী ইটামগরে যাওয়ায় আগুনে ঘি পড়েছে। তাতে পুড়ছে সম্পর্ক। ভারতকে কড়া বার্তা দিতেই কি তবে চীনের ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহে কলকাঠি নাড়া।
চীন ব্রহ্মপুত্র আটকালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশও বিপদে পড়বে। দুটি দেশেরই জীবনরেখা এই নদ। ভারতের দীর্ঘতম নদ ব্রহ্মপুত্র। দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিলোমিটার। তিব্বত থেকে বেরিয়ে অরুণাচল, আসাম পেরিয়ে কুড়িগ্রামের কাছে বাংলাদেশে ঢুকেছে। এরপর জামালপুরের কাছে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব শাখাটি ভৈরবের কাছে মেঘনায় মিলেছে। অন্যটি যমুনা নাম নিয়ে দক্ষিণ বরাবর প্রবাহিত হয়ে গোয়ালন্দে পদ্মার সঙ্গে এক হয়ে গেছে।
চীনের তিব্বত, আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ নদের জন্মদাত্রী। তাদের কৈলাস পর্বতের সিঙ্গিমারার হিমবাহ থেকে বেরিয়েছে সিন্ধু। তার পাঁচটি শাখা নদী বিতস্তা বা ঝিলাম, বিপাশা বা বিয়াস, শতদ্রু বা সাটলেজ, ইরাবতী বা রবি, চন্দ্রভাগা বা চেনাব। এই পঞ্চ অব বা নদী থেকে পাঞ্জাবের নাম। হিন্দু নামটাও সিন্ধু থেকে। আর্যদের দেওয়া। সিন্ধু নদের দুপারের উপত্যকায় গড়ে ওঠা সিন্ধু সভ্যতা মিসরীয় ও সুমেরীয় সভ্যতা থেকে প্রাচীন এবং উন্নত। সিন্ধু নদ শেষমেশ পাকিস্তানের সিন্ধুপ্রদেশে ঢুকে আরব সাগরে গিয়ে পড়েছে। সিন্ধু নদের প্রবাহ নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের বিতর্ক মাঝেমধ্যেই মাথাচাড়া দেয়। যার উৎস কিন্তু চীনের হাতে।
সার্কের তিনটি দেশ ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের অববাহিকার চেহারা বদলে দিতে পারে চীন। এ বিষয়ে চীনের যথেষ্ট নজরদারি আছে। সার্কের অন্যতম অবজার্ভার চীন। সার্ক দেশগুলো যদি নিজেদের মধ্যে নদী বিরোধ ঠেকাতে না পারে চীন হস্তক্ষেপ করার সুযোগ ছাড়বে কেন?
ব্রহ্মপুত্রে ধাক্কা খেয়ে ভারত বুঝেছে উজানে বাঁধ তৈরির যন্ত্রণা। একই কারণে বাংলাদেশ যখন কষ্ট পায় তখন বোঝে না কেন? তিস্তার যথার্থ ভাগ থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করে শাস্তি দেওয়ার যুক্তিটা কোথায়? জ্যোতি বসু এই সত্যটা উপলব্ধি করেই ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গা চুক্তি করতে বাধ্য করেছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। এবার চলছে উল্টো খেলা। তিস্তা চুক্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজি। বাদ সেধেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই পুরনো যুক্তি, বাংলাদেশকে তিস্তার ভাগ দিলে উত্তরবঙ্গে নদী প্রকল্প বাদ যাবে। কিন্তু এই নদীর প্রবাহ হারিয়ে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল যে শুকিয়ে কাঠ হচ্ছে? দু'টুকরো পাউরুটির মাঝে মাখনের মতো জুড়ে রেখেছে দুটো দেশকে। সেটা শুকোলে বিচ্ছিন্নতা আসবে। মাখনের জায়গা নেবে চীন। তৃতীয় শক্তির অচিন্তনীয় শাসনে ছাড়খাড় হবে দ্বিপক্ষীয় সুর ছন্দ তাল। ভালো করে সব কিছু বিবেচনার সামর্থ্য না থাকলে বদলে যায় সম্পর্ক। কাজেই দেশ কাছে থেকেও দূরত্ব বজায় রাখতে চায়।
লেখক : কলকাতার সাংবাদিক
ভালো কথা শুনতে ভালো লাগে। আগে পরে কিন্তু অনেক বাধা। সবাই মিলে সাঁতরানোর মতো নদী কোথায়। চোখ মেললেই নদীর মৃত্যু মিছিল। আগে যে নদীর গর্জনে মাটি কাঁপত আজ তার চোখে কান্না। শুকিয়ে শেষ হওয়ার মুখে আকুল আর্তি, আমায় বাঁচাও। উজানের দেশ খুঁটি ধরে বলছে, নিচে নামতে দেব না। শির সর্বস্ব নদী। হাত-পা শুকিয়ে কাঠি। মাথায় সেচ-বিদ্যুৎ প্রকল্প। দুর্বল। পানিশূন্য মরুভূমি। হাহাকার পৌঁছায় না ওপর তলায়। চিৎকারে সাড়া নেই। উলটো সতর্কতা, চুপ কাজ চলছে। মাথা যার, নদী তার। অন্তহীন আপস-আলোচনায় সময় যায়, বরফ গলে না। রাজনীতি-কূটনীতির ধর্মই হচ্ছে নিজের দিকে ঝোল টানা। বড় দেশ জানে, ছোট দেশকে কিভাবে ছিটকে দিতে হয়। জাতিপুঞ্জের কাছে দরবার করে কী লাভ? মেঘপুঞ্জের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। ধরতে পারে তারা যাদের সেই শক্তি আছে। যারা বিশ্বকে দাবিয়ে রাখতে পারে।
বাংলাদেশ-ভারত নদী টানাটানিতে এবার যুক্ত হলো চীন। বিতর্কের কেন্দ্রে ব্রহ্মপুত্র। এই পুত্রের জন্ম চীন তিব্বতের কৈলাস পাহাড়ে, সরোবরের কাছে। আংসি হিমবাহ গলে ব্রহ্মপুত্র। চীনে এই নদের নাম ইয়ারলুং সাংপো। ভারতের অরুণাচলের তৃতিং এলাকায় ঢুকে নাম নিয়েছে সিয়াং। পাখিঘাটে সিয়াংয়ের রূপ চোখে পড়ার মতো। দুর্বার প্রাণপ্রবাহ। হেসে খেলে ঢেউয়ে ঢেউয়ে লুটোপুটি। তার আচমকা মৃত্যুতে অস্থির অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী নাবাম চুকি। সন্তান হারানোর ব্যথা। তাঁর কথা বলার সামর্থ্য নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছেন, একটা নদ কখনই হঠাৎ ভ্যানিশ হয়ে যেতে পারে না। অন্য কোনো দেশ ম্যাজিক দেখাচ্ছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তবে কি ভারত চীনের দিকে আঙুল তুলতে চাইছে। ইঙ্গিতটা সে রকমই। ২০০০ সালে বিধ্বংসী বন্যায় ভেসেছিল পাখিঘাট। তদন্তে জানা গিয়েছিল, তিব্বতে একটা বাঁধ ভেঙেই এই বিপত্তি। বর্তমান সংঘর্ষের উৎপত্তিস্থল কি তাহলে চীন?
উপগ্রহ চিত্রে পরিষ্কার, চীনে ব্রহ্মপুত্রের মাথায় একাধিক বাঁধের কাজ চলছে। ইউনান প্রদেশে মেকং অববাহিকায় সাংপোর ওপর আটটি স্তরে বাঁধ দিতে ব্যস্ত চীন। ১৯৯৬ সালে মামওয়াম বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা হচ্ছে। চীন চাইলে গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। প্রবাহ পরিবর্তন করতে পারে। যদিও চীন কথা দিয়েছে, ভারতের ক্ষতি হয় এমন কাজ তারা করবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রকের চীনবিষয়ক যুগ্ম সচিব গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, চীনের কথায় এই মুহূর্তে পুরোপুরি ভরসা রাখা যাচ্ছে না। ভারত নিজেদের রাস্তায় তদন্ত করবে। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট ব্রহ্মপুত্রকে ঘিরে ভারত-চীনের মধ্যে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। সংকট বিন্দুতে শেষ না করলে তিল থেকে তাল হতে কতক্ষণ।
সীমান্তে অরুণাচল রাজ্যটির দিকে চীনের কড়া নজর। তাদের দাবি রাজ্যটি ভারতের নয়, চীনের। ভারত পাল্টা জবাবে জানিয়েছে, অরুণাচলের অধিকার নিয়ে কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। এটা ভারতের আছে এবং থাকবে। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পরও বিতর্কের কাঁটা থেকে গেছে। সম্প্রতি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি অরুণাচল সফরের পর চীন বিরক্ত। এখানেই শেষ নয়। চীনের আপত্তি উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মুল্লাপনি্ন রামচন্দ্রন ফের অরুণাচলের রাজধানী ইটামগরে যাওয়ায় আগুনে ঘি পড়েছে। তাতে পুড়ছে সম্পর্ক। ভারতকে কড়া বার্তা দিতেই কি তবে চীনের ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহে কলকাঠি নাড়া।
চীন ব্রহ্মপুত্র আটকালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশও বিপদে পড়বে। দুটি দেশেরই জীবনরেখা এই নদ। ভারতের দীর্ঘতম নদ ব্রহ্মপুত্র। দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিলোমিটার। তিব্বত থেকে বেরিয়ে অরুণাচল, আসাম পেরিয়ে কুড়িগ্রামের কাছে বাংলাদেশে ঢুকেছে। এরপর জামালপুরের কাছে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব শাখাটি ভৈরবের কাছে মেঘনায় মিলেছে। অন্যটি যমুনা নাম নিয়ে দক্ষিণ বরাবর প্রবাহিত হয়ে গোয়ালন্দে পদ্মার সঙ্গে এক হয়ে গেছে।
চীনের তিব্বত, আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ নদের জন্মদাত্রী। তাদের কৈলাস পর্বতের সিঙ্গিমারার হিমবাহ থেকে বেরিয়েছে সিন্ধু। তার পাঁচটি শাখা নদী বিতস্তা বা ঝিলাম, বিপাশা বা বিয়াস, শতদ্রু বা সাটলেজ, ইরাবতী বা রবি, চন্দ্রভাগা বা চেনাব। এই পঞ্চ অব বা নদী থেকে পাঞ্জাবের নাম। হিন্দু নামটাও সিন্ধু থেকে। আর্যদের দেওয়া। সিন্ধু নদের দুপারের উপত্যকায় গড়ে ওঠা সিন্ধু সভ্যতা মিসরীয় ও সুমেরীয় সভ্যতা থেকে প্রাচীন এবং উন্নত। সিন্ধু নদ শেষমেশ পাকিস্তানের সিন্ধুপ্রদেশে ঢুকে আরব সাগরে গিয়ে পড়েছে। সিন্ধু নদের প্রবাহ নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের বিতর্ক মাঝেমধ্যেই মাথাচাড়া দেয়। যার উৎস কিন্তু চীনের হাতে।
সার্কের তিনটি দেশ ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের অববাহিকার চেহারা বদলে দিতে পারে চীন। এ বিষয়ে চীনের যথেষ্ট নজরদারি আছে। সার্কের অন্যতম অবজার্ভার চীন। সার্ক দেশগুলো যদি নিজেদের মধ্যে নদী বিরোধ ঠেকাতে না পারে চীন হস্তক্ষেপ করার সুযোগ ছাড়বে কেন?
ব্রহ্মপুত্রে ধাক্কা খেয়ে ভারত বুঝেছে উজানে বাঁধ তৈরির যন্ত্রণা। একই কারণে বাংলাদেশ যখন কষ্ট পায় তখন বোঝে না কেন? তিস্তার যথার্থ ভাগ থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করে শাস্তি দেওয়ার যুক্তিটা কোথায়? জ্যোতি বসু এই সত্যটা উপলব্ধি করেই ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গা চুক্তি করতে বাধ্য করেছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। এবার চলছে উল্টো খেলা। তিস্তা চুক্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজি। বাদ সেধেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই পুরনো যুক্তি, বাংলাদেশকে তিস্তার ভাগ দিলে উত্তরবঙ্গে নদী প্রকল্প বাদ যাবে। কিন্তু এই নদীর প্রবাহ হারিয়ে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল যে শুকিয়ে কাঠ হচ্ছে? দু'টুকরো পাউরুটির মাঝে মাখনের মতো জুড়ে রেখেছে দুটো দেশকে। সেটা শুকোলে বিচ্ছিন্নতা আসবে। মাখনের জায়গা নেবে চীন। তৃতীয় শক্তির অচিন্তনীয় শাসনে ছাড়খাড় হবে দ্বিপক্ষীয় সুর ছন্দ তাল। ভালো করে সব কিছু বিবেচনার সামর্থ্য না থাকলে বদলে যায় সম্পর্ক। কাজেই দেশ কাছে থেকেও দূরত্ব বজায় রাখতে চায়।
লেখক : কলকাতার সাংবাদিক
No comments