সদরে অন্দরে-গোলায় উঠছে সোনার ফসল by মোস্তফা হোসেইন
সোনার ধানে জমি ভরা, কৃষকের মুখে তাই তৃপ্তির হাসি। যেদিকে তাকাই, মনে হয় কার্পেট বিছিয়ে রাখা হয়েছে সোনালি রঙের। এ অবস্থা প্রায় সারা দেশের, যেদিকে যাওয়া যাক সবখানে। গত সপ্তাহে দৈনিক কালের কণ্ঠ সম্পাদক শ্রদ্ধেয় আবেদ খান গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম। বললেন সেই ধানের কথা। মন ভরে যায় সেই দৃশ্যের দিকে চোখ গেলে।
যেন রেশমি চুল বাতাসে ঢেউ খেলছে। হাতছানি দিচ্ছে সুখের রাজ্যে। গত সপ্তাহে গিয়েছিলাম নিজ এলাকা কুমিল্লা জেলার চান্দলা গ্রামে। ওহ! কী মজার সেই দৃশ্য। ধানচাষি ধান পাবেন, সংগত কারণেই খুশি তিনি। কিন্তু একেবারে যার জমি নেই, পরের বাড়ি যিনি শ্রম বিক্রি করেন_তাঁকেও দেখলাম মহা খুশি। কারণ এবার শ্রমের মূল্য ভালো। দিন গেলেই তিন শতাধিক টাকা। চালের হিসাবে ১০ কেজির বেশি পাবেন দৈনিক গড়ে। বললেন চান্দলা গ্রামের প্রবীণ এক কৃষিশ্রমিক। গর্বে তাঁর বুক ভরে যায়। সে যেমন-তেমন ব্যাপার নয়। বললেন, এটাই স্বাধীনতার সুফল। পেছনে ফিরে তাকানোর কথা বললেন। ওই আমলে সপ্তাহব্যাপী শ্রম বিক্রি করে পাওয়া যেত দেড় থেকে দুই টাকা। চাল কেনা যেত দেড় থেকে দুই সের। কী দুর্বিষহ জীবন ছিল ওই সময়। বলছিলেন স্বাধীনতার আগের কথা, পাকিস্তান আমলে তাঁদের দুর্যোগের কথা। আর এখন? তাঁর কথা_'আল্লায় অনেক বালা রাখছে অ।' সুতরাং এ মুহূর্তের ধানের জমি কৃষক-অকৃষক সবারই দৃষ্টি কাড়ে। মন ভুলিয়ে দেয়। কয় দিন আগেও সেখানে ছিল সবুজের সমারোহ। ছিল কৃষকের হাতে উইডার কিংবা কাঁধে কীটনাশক ছিটানোর স্প্রেয়ার। সবুজ দেখেও তিনি আশা লালন করেছেন। তার পরও উৎকণ্ঠা ছিল। ভাবনায় ছিল_হায় রে বিদ্যুৎ যদি জ্বালায় শুধু, কী হবে সেচ দেওয়ার? সেচ দেওয়া যে বন্ধ হয়ে যাবে? কেমন হবে ধানের ফলন? ঘরে ফিরে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন কৃষক_আল্লাহ আমাদের দিকে ফিরে তাকাও। একটু বৃষ্টি দাও। আল্লাহ কৃষকের ডাক শুনেছেন। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে এবার। আঙুল-দুই আঙুল পানি জমেছে ধানগাছের গোড়ায়। ওহ! কী তৃপ্তি। সেই যে খনার বচন_'যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্য রাজার পুণ্য দেশ।' তাই হয়েছে এবার। মাঘের মাঝামাঝি থেকেই থেকে থেকে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে ধানের জমিগুলো কম-বেশি ভিজেই ছিল বৃষ্টির পানিতে। কোথাও কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি, কোথাও আবার থেকে থেকে দরকার হয়েছে সেচের। আর ওই সময়টায় পেয়েছে বিদ্যুৎও। কারণ বৃষ্টি হওয়ায় আবহাওয়া ছিল অনেকটা শীতল। বিদ্যুতের চাহিদা ছিল তাই তুলনামূলক কম। যা গত বছরও কল্পনা করা যায়নি। এমনকি চৈত্রের খরাও হয়নি সে রকম। এ তো ছিল প্রাকৃতিক কারণ। প্রকৃতি যেন উদার দৃষ্টি দিয়েছিল এবার। 'ধন্য রাজার পুণ্য দেশ'_এই বচন পূর্ণ হলো বলে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চান্দলা গ্রামের এক ধানচাষি হাসতে হাসতেই বললেন, 'আল্লাহ আসলে হাসিনারে দিছে ধানের কপাল। হাসিনায় ক্ষমতায় আইলেই ধান অয়। আল্লায় ধান যেন জমিতে বিছাইয়া দেয়। এইবারও দিছে। হাসিনার সহযোগিতা, কৃষকের চেষ্টার ফল দিছে আল্লায়। আল্লায় দিছে, মন ভইরা দিছে।'
হাসিনার চেষ্টা কেমন? ধানের ক্ষেতে কি শুধু সেচ দিলেই চলে? চাই কীটনাশক ও পরিমিত সার। দুটি উপাদানই নির্ভর করে সরকারের ওপর। এবার কি সেই দিনাজপুরের মতো কোথাও ঘটেছে কিছু? ওহ! সে কী দৃশ্য। মনে আছে সবার। সারের জন্য মানুষকে জীবন দিতে হলো সেবার। হাসিনা সেই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেননি। ঘোষণা দিয়েছিলেন নির্বাচনের আগে। যদি নির্বাচিত হতে পারেন, যদি সরকার গঠন করতে পারেন, তাহলে কৃষককে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। কথা রেখেছে শেখ হাসিনার সরকার। কৃষকের দোরগোড়ায় চলে গেছে সার। কত প্রয়োজন সারের। কোনো রেশনিং নেই। কোনো ঝক্কিঝামেলা নেই। তাহলে কৃষকের জমিতে সার ছিটাতে বাধা কোথায়। নির্বিঘ্নে সে ছিটাতে পেরেছে সার। কীটনাশকের জন্য কোনো কৃষককে কীটনাশক ওষুধ খেতে হয়নি। ফল দাঁড়াল কী? ফসলের মাঠে চারা রোয়ে কৃষক যখন সার চাইল, সে পেয়ে গেল। আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চাইল, সেই বৃষ্টিও সে পেয়ে গেল। কীটনাশকও পেল প্রয়োজন মতো। সংগত কারণেই ইতিবাচক এই আবহাওয়া ও পরিবেশ কৃষকের গোলাকে করেছে সমৃদ্ধ। সেই সমৃদ্ধ কৃষক হাসবে না তো কে হাসতে পারে? কৃষক হাসছে, তৃপ্তির নিশানা তার চোখে-মুখে। ফল দাঁড়াল কী? ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হলো। ফলন আগাম অনুমান করা হয়েছিল সরকারিভাবে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হলো_১ কোটি ৯২ লাখ মেট্রিক টন বোরো উৎপাদনের। কিন্তু প্রকৃতি দিল অনেক বেশি। মৌসুমের শুরুতে কাটা শুরু হলো ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ ধান। কী আনন্দ কৃষকের। সব মিলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বোরো ধান। বলা হচ্ছে, এবারে বোরো উৎপাদন ২ কোটি মেট্রিক টনও ছাড়িয়ে যাবে।
কৃষি খাতে সরকারের দেওয়া ভর্তুকি যে কাজে লেগেছে, তার প্রমাণ এবারের বোরো ফসলের বাম্পার ফলন। দু-একটি জায়গা ছাড়া সর্বত্র এবার ফলন চমৎকার। কৃষককে বলতে শোনা যায়_গত এক যুগেও এমন ভালো ফলন ফলেনি। তবে ব্যতিক্রমও আছে কোথাও কোথাও। নোয়াখালীসহ কয়েকটি জেলায় ফলন খারাপ হয়েছে বীজের কারণে। ঝলক নামের ধানের বীজ নিয়ে কৃষকদের বিপাকে পড়তে হয়েছে। যাঁরাই এই ধান বুনেছেন তাঁদেরই বিপর্যয় ঘটেছে। ঝলক বুনে কৃষকের কপাল পুড়েছে বলে তাঁরা এই বীজ সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। তবে এই ঝলকের কারণে যে ক্ষতি বাংলাদেশের হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে পেরেছে দেশ। যদি ঝলক চাষিদের জমিগুলোতে ভালো বীজ বোনা হতো, তাহলে নিশ্চিতভাবে এবার রেকর্ড পরিমাণ ফলন হতো কৃষকের।
ধান কাটার মৌসুমে এত আনন্দের মধ্যেও কৃষক কোথাও কোথাও নাখোশও বটে। নাখোশ মূলত ধানের মূল্য নিয়ে। কৃষক এই সময় ধান বিক্রি করে উৎপাদন ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন। ফসল বোনার জন্য যে ঋণ করেন, তা তিনি ধান বিক্রি করে শোধ করেন। এটা ধান ভিজা থাকতেই অনেকে করে থাকেন। যে কারণে এখনকার ধান বিক্রি করাটা তাঁর জন্য অত্যন্ত জরুরি। অথচ বগুড়া ও নওগাঁ এলাকার অনেক জায়গায়ই ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষক। সেখানে ব্রি-২৮ ধান মণপ্রতি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে তাঁদের উৎপাদন ব্যয় ফিরে আসছে না। এ মুহূর্তে সরকারের উচিত কৃষককে সহযোগিতা করা । দ্রুত বোরো ধান কেনার মাধ্যমে কৃষককে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিলে কৃষক এই ধকল সইতে পারবে না। ধান কেনার সময় মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকেও কৃষককে রক্ষা করতে হবে।
mhussain_71@yahoo.com
হাসিনার চেষ্টা কেমন? ধানের ক্ষেতে কি শুধু সেচ দিলেই চলে? চাই কীটনাশক ও পরিমিত সার। দুটি উপাদানই নির্ভর করে সরকারের ওপর। এবার কি সেই দিনাজপুরের মতো কোথাও ঘটেছে কিছু? ওহ! সে কী দৃশ্য। মনে আছে সবার। সারের জন্য মানুষকে জীবন দিতে হলো সেবার। হাসিনা সেই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেননি। ঘোষণা দিয়েছিলেন নির্বাচনের আগে। যদি নির্বাচিত হতে পারেন, যদি সরকার গঠন করতে পারেন, তাহলে কৃষককে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। কথা রেখেছে শেখ হাসিনার সরকার। কৃষকের দোরগোড়ায় চলে গেছে সার। কত প্রয়োজন সারের। কোনো রেশনিং নেই। কোনো ঝক্কিঝামেলা নেই। তাহলে কৃষকের জমিতে সার ছিটাতে বাধা কোথায়। নির্বিঘ্নে সে ছিটাতে পেরেছে সার। কীটনাশকের জন্য কোনো কৃষককে কীটনাশক ওষুধ খেতে হয়নি। ফল দাঁড়াল কী? ফসলের মাঠে চারা রোয়ে কৃষক যখন সার চাইল, সে পেয়ে গেল। আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চাইল, সেই বৃষ্টিও সে পেয়ে গেল। কীটনাশকও পেল প্রয়োজন মতো। সংগত কারণেই ইতিবাচক এই আবহাওয়া ও পরিবেশ কৃষকের গোলাকে করেছে সমৃদ্ধ। সেই সমৃদ্ধ কৃষক হাসবে না তো কে হাসতে পারে? কৃষক হাসছে, তৃপ্তির নিশানা তার চোখে-মুখে। ফল দাঁড়াল কী? ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হলো। ফলন আগাম অনুমান করা হয়েছিল সরকারিভাবে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হলো_১ কোটি ৯২ লাখ মেট্রিক টন বোরো উৎপাদনের। কিন্তু প্রকৃতি দিল অনেক বেশি। মৌসুমের শুরুতে কাটা শুরু হলো ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ ধান। কী আনন্দ কৃষকের। সব মিলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বোরো ধান। বলা হচ্ছে, এবারে বোরো উৎপাদন ২ কোটি মেট্রিক টনও ছাড়িয়ে যাবে।
কৃষি খাতে সরকারের দেওয়া ভর্তুকি যে কাজে লেগেছে, তার প্রমাণ এবারের বোরো ফসলের বাম্পার ফলন। দু-একটি জায়গা ছাড়া সর্বত্র এবার ফলন চমৎকার। কৃষককে বলতে শোনা যায়_গত এক যুগেও এমন ভালো ফলন ফলেনি। তবে ব্যতিক্রমও আছে কোথাও কোথাও। নোয়াখালীসহ কয়েকটি জেলায় ফলন খারাপ হয়েছে বীজের কারণে। ঝলক নামের ধানের বীজ নিয়ে কৃষকদের বিপাকে পড়তে হয়েছে। যাঁরাই এই ধান বুনেছেন তাঁদেরই বিপর্যয় ঘটেছে। ঝলক বুনে কৃষকের কপাল পুড়েছে বলে তাঁরা এই বীজ সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। তবে এই ঝলকের কারণে যে ক্ষতি বাংলাদেশের হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে পেরেছে দেশ। যদি ঝলক চাষিদের জমিগুলোতে ভালো বীজ বোনা হতো, তাহলে নিশ্চিতভাবে এবার রেকর্ড পরিমাণ ফলন হতো কৃষকের।
ধান কাটার মৌসুমে এত আনন্দের মধ্যেও কৃষক কোথাও কোথাও নাখোশও বটে। নাখোশ মূলত ধানের মূল্য নিয়ে। কৃষক এই সময় ধান বিক্রি করে উৎপাদন ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন। ফসল বোনার জন্য যে ঋণ করেন, তা তিনি ধান বিক্রি করে শোধ করেন। এটা ধান ভিজা থাকতেই অনেকে করে থাকেন। যে কারণে এখনকার ধান বিক্রি করাটা তাঁর জন্য অত্যন্ত জরুরি। অথচ বগুড়া ও নওগাঁ এলাকার অনেক জায়গায়ই ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষক। সেখানে ব্রি-২৮ ধান মণপ্রতি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে তাঁদের উৎপাদন ব্যয় ফিরে আসছে না। এ মুহূর্তে সরকারের উচিত কৃষককে সহযোগিতা করা । দ্রুত বোরো ধান কেনার মাধ্যমে কৃষককে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিলে কৃষক এই ধকল সইতে পারবে না। ধান কেনার সময় মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকেও কৃষককে রক্ষা করতে হবে।
mhussain_71@yahoo.com
No comments