মত দ্বিমত-সরকারই হরতাল ডেকে এনেছে by মাহবুবউল্লাহ
হরতালে জনদুর্ভোগ ছাড়াও যে বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়, মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর আঘাত আসে, তার দায় কার? কীভাবে এই ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি থেকে মানুষকে রেহাই দেওয়া যায়, এ নিয়ে দুই অর্থনীতিবিদের অভিমত প্রকাশ করা হলো:
এটি একটি সর্বজনস্বীকৃত সত্য যে হরতালে জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতি হয়। যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁরাও এই সত্যটি উপলব্ধি করেন। রাজনৈতিক প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে হরতাল অত্যন্ত কঠোর কর্মসূচি। রাজনৈতিক দলগুলো নিছক নিরুপায় না হলে এ ধরনের কঠিন এবং বিপজ্জনক কর্মসূচির পথে পা বাড়ায় না। তারা ভালো করেই জানে, হরতাল মানে রাজপথে পুলিশের লাঠিপেটা খাওয়া, গুলিবিদ্ধ হওয়া, এমনকি প্রাণ হারানো। প্রশ্ন হলো, এত বিপদ ও ঝুঁকির কথা জেনেও আমাদের মতো দেশে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে হরতালের পথ কেন বেছে নেয়।
হরতাল দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশে অপরিচিত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। ব্রিটিশরাজের অধীনেও হরতাল, সত্যাগ্রহ এবং অসহযোগের মতো কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গান্ধীজি আইন অমান্য আন্দোলনেরও ডাক দিয়েছিলেন। পাকিস্তান আমলেও অনেক হরতাল-ধর্মঘট হয়েছে। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মার্চে স্বাধীনতার জন্য অসহযোগ কর্মসূচিসহ অনেক হরতাল পালিত হয়েছে। তখন কেউ অর্থনীতির ক্ষতির প্রশ্নটি উত্থাপন করেনি। শাসকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এসব কর্মসূচিকে ধ্বংসাত্মক আখ্যা দেওয়া হলেও জনগণ তাদের কথায় কান দেয়নি।
স্বাধীন বাংলাদেশে বাহাত্তর-পঁচাত্তর পর্বে কিছু হরতাল পালিত হয়েছে। সেই সময়ও হরতালের ক্ষতিকর দিক নিয়ে তুমুল আলোচনা হতে দেখিনি। হরতাল ক্ষতিকর, এই বক্তব্য জোরালো হয়েছে ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক পর্বের সূচনায়। ১৯৯১ সালের পর আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতেও বিশাল কাঠামোগত পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। দেশে বেসরকারি খাত ও বেসরকারি উদ্যোগ ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। বস্তুত, জিডিপিতে বেসরকারি খাত এবং আত্মকর্মসংস্থানের অবদানই মুখ্য।
এ রকম পরিস্থিতিতে যাঁরা এই খাতের ওপর নির্ভরশীল, তাঁরা ক্ষতির মুখে পড়বেন এবং এর জন্য উষ্মা প্রকাশ করবেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ইতিহাসের যে পর্বে আমরা হরতালের নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে তেমন কিছু শুনিনি, এর প্রধান কারণ হলো তখনকার অর্থনৈতিক কাঠামো ছিল আত্মপোষণশীল এবং সীমিত আকারে রাষ্ট্রীয় খাতনির্ভর। এখন এই চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। এ কারণেই হরতাল সম্পর্কে নানা ধরনের সমালোচনা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, যাঁরা হরতালের ডাক দেন, তাঁরা কি এতই অবোধ এবং যুক্তিবুদ্ধিহীন যে হরতালের নেতিবাচক দিকগুলো তাঁদের জানা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা হরতাল ছাড়া বিকল্প দেখেন না।
সম্প্রতি প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার যে হরতাল ডেকেছিল, সেই হরতালের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলা যায়। বিএনপি এই হরতালটি ডেকেছিল সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে। সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান চালু করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। এই ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। তারা সহিংস অসহযোগ আন্দোলনও করেছিল। তখন তাঁদের মনে হয়নি এ রকম একটি অনির্বাচিত নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে সংবিধানের মূল চেতনাবিরোধী। কিন্তু তখনকার শাসক দল শেষ পর্যন্ত বৃহত্তর রাজনৈতিক আপসের ব্যবস্থা হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। ফলে, এই ব্যবস্থার অধীনে তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনগুলোর ফলাফল নিয়ে বিতর্ক থাকলেও দেশের বেশির ভাগ মানুষ এবং আন্তর্জাতিক মহল এই নির্বাচনগুলোকে সুষ্ঠু বলে দাবি করেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান চালু করার পেছনে সবচেয়ে বড় যুক্তিটি হলো, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অবিশ্বাস এবং অনাস্থা গভীর শিকড় গেড়ে বসেছে। ফলে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে অন্য দল ওই নির্বাচনের ফলাফল যেমন বিশ্বাস করবে না; তেমনি সে রকম একটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না, সে ব্যাপারেও সন্দেহ আছে। এই সব দিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশের জন্য বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিকল্প নেই।
উচ্চতর আদালতে একটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সম্পর্কে একটি রায় প্রদান করে। রায়ের সংক্ষিপ্ত ভাষ্য আদালত থেকে প্রকাশ করা হয়। মোটা দাগে বলতে গেলে সংক্ষিপ্ত ভাষ্যটি হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানের মূল চেতনার পরিপন্থী হওয়ায় বাতিলযোগ্য। তবে, রাষ্ট্রের শান্তি ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এই বিধান আরও অন্তত দুটি নির্বাচনের জন্য বলবৎ রাখা যায় এবং আদালত আশা করেন, বিচারপতিদের এই ধরনের সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ার বিষয়টি সংসদ বিবেচনায় নেবে। রায়ের বিস্তারিত ভাষ্য এখনো প্রকাশিত হয়নি। রায়টিও সর্বসম্মত ছিল না। আদালত অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে মতামত দেওয়ার জন্য যাঁদের ডেকেছিলেন, তাঁরা (৯০ শতাংশ) বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দেন।
জাতীয় সংসদের সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত কমিটি যেসব বিশিষ্ট নাগরিকের মতামত গ্রহণ করেছিল, তাঁদের বেশির ভাগ তত্ত্বাবধায়কি বিধান চালু রাখার পক্ষেই মত দিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সাফ বলে দিলেন, আদালত যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারবিধান বাতিল করেছে, সুতরাং সংবিধান সংশোধনীতে এটি অব্যাহত রাখার আর কোনো সুযোগ নেই। শেষ পর্যন্ত তাঁর ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েই সংবিধান সংশোধন করা হলো এবং এই সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার আর কোনো অবকাশ থাকল না। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া হয়েছে অত্যন্ত কঠোর। তারা মনে করে, এর ফলে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হলো। এত বড় একটি পরিবর্তন করা হলো অত্যন্ত তড়িঘড়ি করে। বিরোধী পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ থাকলেও সেই সুযোগের ব্যবহার না করা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। দেশে রাজনৈতিক সংকট দেখা দিলে শুধু সংসদেই নয়, সংসদের বাইরেও অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার সূত্রপাত করা যেত। কেন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করলাম, যাতে বিরোধী দল হরতালের মতো কঠোর পন্থা অবলম্বন করল। এর দায়দায়িত্ব কার, জনগণ নিশ্চয়ই তা উপলব্ধি করার মতো বুদ্ধি-বিবেচনা রাখে।
মাহবুবউল্লাহ: অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
হরতাল দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশে অপরিচিত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। ব্রিটিশরাজের অধীনেও হরতাল, সত্যাগ্রহ এবং অসহযোগের মতো কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গান্ধীজি আইন অমান্য আন্দোলনেরও ডাক দিয়েছিলেন। পাকিস্তান আমলেও অনেক হরতাল-ধর্মঘট হয়েছে। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মার্চে স্বাধীনতার জন্য অসহযোগ কর্মসূচিসহ অনেক হরতাল পালিত হয়েছে। তখন কেউ অর্থনীতির ক্ষতির প্রশ্নটি উত্থাপন করেনি। শাসকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এসব কর্মসূচিকে ধ্বংসাত্মক আখ্যা দেওয়া হলেও জনগণ তাদের কথায় কান দেয়নি।
স্বাধীন বাংলাদেশে বাহাত্তর-পঁচাত্তর পর্বে কিছু হরতাল পালিত হয়েছে। সেই সময়ও হরতালের ক্ষতিকর দিক নিয়ে তুমুল আলোচনা হতে দেখিনি। হরতাল ক্ষতিকর, এই বক্তব্য জোরালো হয়েছে ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক পর্বের সূচনায়। ১৯৯১ সালের পর আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতেও বিশাল কাঠামোগত পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। দেশে বেসরকারি খাত ও বেসরকারি উদ্যোগ ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। বস্তুত, জিডিপিতে বেসরকারি খাত এবং আত্মকর্মসংস্থানের অবদানই মুখ্য।
এ রকম পরিস্থিতিতে যাঁরা এই খাতের ওপর নির্ভরশীল, তাঁরা ক্ষতির মুখে পড়বেন এবং এর জন্য উষ্মা প্রকাশ করবেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ইতিহাসের যে পর্বে আমরা হরতালের নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে তেমন কিছু শুনিনি, এর প্রধান কারণ হলো তখনকার অর্থনৈতিক কাঠামো ছিল আত্মপোষণশীল এবং সীমিত আকারে রাষ্ট্রীয় খাতনির্ভর। এখন এই চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। এ কারণেই হরতাল সম্পর্কে নানা ধরনের সমালোচনা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, যাঁরা হরতালের ডাক দেন, তাঁরা কি এতই অবোধ এবং যুক্তিবুদ্ধিহীন যে হরতালের নেতিবাচক দিকগুলো তাঁদের জানা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা হরতাল ছাড়া বিকল্প দেখেন না।
সম্প্রতি প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার যে হরতাল ডেকেছিল, সেই হরতালের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলা যায়। বিএনপি এই হরতালটি ডেকেছিল সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে। সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান চালু করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। এই ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। তারা সহিংস অসহযোগ আন্দোলনও করেছিল। তখন তাঁদের মনে হয়নি এ রকম একটি অনির্বাচিত নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে সংবিধানের মূল চেতনাবিরোধী। কিন্তু তখনকার শাসক দল শেষ পর্যন্ত বৃহত্তর রাজনৈতিক আপসের ব্যবস্থা হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। ফলে, এই ব্যবস্থার অধীনে তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনগুলোর ফলাফল নিয়ে বিতর্ক থাকলেও দেশের বেশির ভাগ মানুষ এবং আন্তর্জাতিক মহল এই নির্বাচনগুলোকে সুষ্ঠু বলে দাবি করেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান চালু করার পেছনে সবচেয়ে বড় যুক্তিটি হলো, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অবিশ্বাস এবং অনাস্থা গভীর শিকড় গেড়ে বসেছে। ফলে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে অন্য দল ওই নির্বাচনের ফলাফল যেমন বিশ্বাস করবে না; তেমনি সে রকম একটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না, সে ব্যাপারেও সন্দেহ আছে। এই সব দিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশের জন্য বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিকল্প নেই।
উচ্চতর আদালতে একটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সম্পর্কে একটি রায় প্রদান করে। রায়ের সংক্ষিপ্ত ভাষ্য আদালত থেকে প্রকাশ করা হয়। মোটা দাগে বলতে গেলে সংক্ষিপ্ত ভাষ্যটি হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানের মূল চেতনার পরিপন্থী হওয়ায় বাতিলযোগ্য। তবে, রাষ্ট্রের শান্তি ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এই বিধান আরও অন্তত দুটি নির্বাচনের জন্য বলবৎ রাখা যায় এবং আদালত আশা করেন, বিচারপতিদের এই ধরনের সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ার বিষয়টি সংসদ বিবেচনায় নেবে। রায়ের বিস্তারিত ভাষ্য এখনো প্রকাশিত হয়নি। রায়টিও সর্বসম্মত ছিল না। আদালত অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে মতামত দেওয়ার জন্য যাঁদের ডেকেছিলেন, তাঁরা (৯০ শতাংশ) বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দেন।
জাতীয় সংসদের সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত কমিটি যেসব বিশিষ্ট নাগরিকের মতামত গ্রহণ করেছিল, তাঁদের বেশির ভাগ তত্ত্বাবধায়কি বিধান চালু রাখার পক্ষেই মত দিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সাফ বলে দিলেন, আদালত যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারবিধান বাতিল করেছে, সুতরাং সংবিধান সংশোধনীতে এটি অব্যাহত রাখার আর কোনো সুযোগ নেই। শেষ পর্যন্ত তাঁর ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েই সংবিধান সংশোধন করা হলো এবং এই সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার আর কোনো অবকাশ থাকল না। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া হয়েছে অত্যন্ত কঠোর। তারা মনে করে, এর ফলে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হলো। এত বড় একটি পরিবর্তন করা হলো অত্যন্ত তড়িঘড়ি করে। বিরোধী পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ থাকলেও সেই সুযোগের ব্যবহার না করা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। দেশে রাজনৈতিক সংকট দেখা দিলে শুধু সংসদেই নয়, সংসদের বাইরেও অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার সূত্রপাত করা যেত। কেন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করলাম, যাতে বিরোধী দল হরতালের মতো কঠোর পন্থা অবলম্বন করল। এর দায়দায়িত্ব কার, জনগণ নিশ্চয়ই তা উপলব্ধি করার মতো বুদ্ধি-বিবেচনা রাখে।
মাহবুবউল্লাহ: অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments