প্রতিরোধের মার্চ-মুজিবের সমান্তরাল সরকার ও বহির্বিশ্ব by ফারুক চৌধুরী
ইতিহাসে যদি তার তুলনা আদৌ থেকেও থাকে, বিরল তা নিশ্চয়ই যে একই সময় একই ভূখণ্ড থেকে দুটি সরকার চালু রয়েছে। ১৯৭১-এর মার্চ মাসে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান, তথা বর্তমান বাংলাদেশের ভূখণ্ডে তা-ই ছিল। প্রথমটি ছিল ১৯৪৭-এর ১৪ আগস্টে ব্রিটিশের এই ভূখণ্ড ত্যাগকালে স্থাপিত সরকার, দ্বিতীয়টি আকস্মিকভাবে আবির্ভূত এবং এই
ভূখণ্ডের আপামর জনসাধারণ-সমর্থিত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশমালায় পরিচালিত সরকার। ঘটনা বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয় যে ২৬ মার্চ একাত্তরে তাঁর স্বাধীনতা ঘোষণার পূর্ববর্তী সময়টিতে বঙ্গবন্ধু তাঁর লক্ষ্য পূরণে ধাপে ধাপেই এগিয়েছিলেন।
২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১-এ তিনি পাকিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত যোসেফ ফারল্যান্ডকে ঢাকায় এক সাক্ষাৎকারে ‘নাটকীয়’ভাবেই জানালেন যে তাঁর দেশের মানুষ তাঁকে যে ‘ম্যান্ডেট’ দিয়েছে, তা অর্জনের পথে তিনি কারাগারে যেতে অথবা তাঁকে ‘মেরে টুকরো টুকরো’ করলেও তিনি বিচ্যুত হবেন না। এসব কথা আমরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রকাশিত গোপন দলিল থেকে জানতে পারি। সেসব গোপন দলিল থেকে আমরা এখন এ-ও জানি, যা বঙ্গবন্ধু তখন জানতেন না, ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল, যখনই প্রতীয়মান হবে যে ‘নতুন সরকার’ কর্তৃত্ব স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে, তখনই তারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করবে। তার আগে তা করা (স্বীকৃতি দেওয়া) পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ‘জটিল’ করবে, কিন্তু তা করতে বেশি দেরি হলে বাংলাদেশের সঙ্গে ‘নতুন সম্পর্কের শুভারম্ভ হবে না’।
তখনকার দুই মেরুর বিশ্বে ঢাকার দ্রুত বিবর্তমান ঘটনাবলি বিভিন্ন রাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল বৈকি। সংবাদমাধ্যম ছাড়াও ঢাকায় তখন একটি মাঝারি আকারের কনস্যুলার কোর ছিল। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল আর্চার কে ব্লাড বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে একটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছিলেন। এ কারণে বাংলাদেশের অভ্যুদয় সম্পর্কে তিনি ছিলেন নিশ্চিত। সেই সময়ে সোভিয়েত কনসাল জেনারেল পপভের সহানুভূতিও ছিল আমাদের দাবির অনুকূলে। ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার মি. ব্রিটন তাঁর উপরিউক্ত দুই সহকর্মী এবং ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার মি. সেনগুপ্তের মতো বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছিলেন। সেই কনস্যুলার কোরের ডিন ছিলেন নেপালের কনসাল জেনারেল মাধব কুমার বিশাল। তাঁর এবং তাঁর অন্য কোনো সহকর্মীর অসুবিধা এই ছিল যে, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থার কারণে এবং তাঁদের নিজস্ব যোগাযোগব্যবস্থা না থাকায় ইসলামাবাদ এবং তাদের নিজ নিজ সরকারের সঙ্গে ছিলেন বহুলাংশে বিচ্ছিন্ন।
আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ১ থেকে ২৫ মার্চ ১৯৭১, সময়টিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ২৫ মার্চ ১৯৭১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর হলো স্বাধীনতাসংগ্রামের তৃতীয় এবং চূড়ান্ত অধ্যায়।
১ মার্চ ১৯৭১-এ ইয়াহিয়া খান ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির’ নির্ধারিত অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি করলেন।
তার প্রতিক্রিয়ায় মার্চ মাসের প্রথম ছয় দিনের অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা ও কর্মসূচি ঘোষিত হলো। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে স্থাপিত সরকার তখন অচল হয়ে গেল এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশমালা অক্ষরে অক্ষরে পালিত হলো। ইতিমধ্যে ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ ১৯৭১-এ ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’ অধিবেশনের জন্য পুনর্নির্ধারিত করলেন। এল ৭ মার্চ। সেদিন বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বললেন যে চারটি শর্তসাপেক্ষে প্রস্তাবটি বিবেচনা করে দেখব, ‘আমরা এ অ্যাসেম্বলিতে বসতে পারব কি পারব না।’ শর্তগুলো হলো: সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ব্যারাকে ফিরে যেতে হবে, সামরিক বাহিনীর হাতে নিহত ব্যক্তিদের বিষয়ে তদন্ত করতে হবে এবং জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। বঙ্গবন্ধু ভালো করেই জানতেন যে এ চারটি শর্ত পূরণের ক্ষমতা অথবা ইচ্ছা ইয়াহিয়া খানের নেই। সেই উপলব্ধি থেকেই তো এসেছে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণের অন্তিম ঘোষণাটি: ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
বাঙালি জাতির ইতিহাসে তা ছিল এক পরম সন্ধিক্ষণ; একজন নেতার অঙ্গুলিনির্দেশের জন্য সারা জাতি এখন অপেক্ষমাণ। সেই সন্ধিক্ষণে বঙ্গবন্ধু তাঁর ১৮ মিনিটের ভাষণে একটি জাতিকে আসন্ন স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে দিলেন। তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন না, আবার ঘোষণা শুনতে উৎসুক দেশবাসীকে হতাশও করলেন না। আবেগময়, দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অসাধারণ বিচক্ষণতায় তিনি জনগণের কাছে তাঁর প্রকৃত বার্তাটি পৌঁছে দিলেন। স্বাধীনতা-উত্তরকালের স্মৃতিচারণায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাঁর ‘একটি জাতির জন্ম’ প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ঘোষণা আমাদের কাছে এক গ্রিন সিগন্যাল বলে মনে হলো।’ এই গ্রিন সিগন্যালটি শুধু আমাদের সামরিক বাহিনী নয়, ছিল দেশের আপামর জনসাধারণের জন্যও।
আর ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানিরা আমাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করল, তখন ওই ভাষাণটিই কোটি কোটি মানুষের মনে স্বাধীনতার ঘোষণায় রূপান্তরিত হলো। ৭ মার্চ আর ২৬ মার্চ একসূত্রে বাঁধা পড়ল। স্বাধীনতাযুদ্ধের সূচনা সম্পর্কে সন্দেহের আর কোনো অবকাশ রইল না।
মুক্তিযুদ্ধের গোটা সময় বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবে অনুপস্থিত থাকতে হলো। কিন্তু তৎসত্ত্বেও তাঁর অভাব অনুভূত হলো না। তার কারণ, ৭ মার্চের অভ্রান্ত দিকনির্দেশনা। নয়টি মাস, আমাদের সংগ্রামের তৃতীয় এবং চূড়ান্ত লগ্নে বাঙালি জাতি সেই ভাষণের প্রতিটি বাক্য থেকে শক্তি আর সাহস সঞ্চয় করল, প্রতিটি শব্দ থেকে খুঁজে নিল যুদ্ধজয়ের মন্ত্র।
কিন্তু সেই মার্চের ৪১ বছর পর এই মার্চে দেশের রাজনীতির বর্তমান সাংঘর্ষিক অবস্থাদৃষ্টে মনে প্রশ্ন তো জাগেই যে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের স্বাধীন সত্তা সত্ত্বেও প্রকৃত মুক্তি কি আমরা পেয়েছি? ১১ মার্চ ২০১২ সালের প্রথম আলোর প্রথম পাতায় মৌলভীবাজারের জনৈক ফারুক মিয়ার উদ্ধৃতির পুনরাবৃত্তি করার ইচ্ছে হয়, ‘এমন দেশ সৃষ্টি অইছে কারে মারিয়া কে খাইত।’ বিশুদ্ধ বাংলায় ঢাকার জনৈক ফারুক চৌধুরীও সেই বিষাদময় ভাবনার প্রতিধ্বনি করতে চায়, ‘এমনই দেশ সৃষ্টি হলো। কাকে মেরে কে খাচ্ছে!’
ফারুক চৌধুরী: সাবেক পররাষ্ট্রসচিব, কলাম লেখক।
zaaf@bdmail.net
২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১-এ তিনি পাকিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত যোসেফ ফারল্যান্ডকে ঢাকায় এক সাক্ষাৎকারে ‘নাটকীয়’ভাবেই জানালেন যে তাঁর দেশের মানুষ তাঁকে যে ‘ম্যান্ডেট’ দিয়েছে, তা অর্জনের পথে তিনি কারাগারে যেতে অথবা তাঁকে ‘মেরে টুকরো টুকরো’ করলেও তিনি বিচ্যুত হবেন না। এসব কথা আমরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রকাশিত গোপন দলিল থেকে জানতে পারি। সেসব গোপন দলিল থেকে আমরা এখন এ-ও জানি, যা বঙ্গবন্ধু তখন জানতেন না, ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল, যখনই প্রতীয়মান হবে যে ‘নতুন সরকার’ কর্তৃত্ব স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে, তখনই তারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করবে। তার আগে তা করা (স্বীকৃতি দেওয়া) পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ‘জটিল’ করবে, কিন্তু তা করতে বেশি দেরি হলে বাংলাদেশের সঙ্গে ‘নতুন সম্পর্কের শুভারম্ভ হবে না’।
তখনকার দুই মেরুর বিশ্বে ঢাকার দ্রুত বিবর্তমান ঘটনাবলি বিভিন্ন রাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল বৈকি। সংবাদমাধ্যম ছাড়াও ঢাকায় তখন একটি মাঝারি আকারের কনস্যুলার কোর ছিল। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল আর্চার কে ব্লাড বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে একটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছিলেন। এ কারণে বাংলাদেশের অভ্যুদয় সম্পর্কে তিনি ছিলেন নিশ্চিত। সেই সময়ে সোভিয়েত কনসাল জেনারেল পপভের সহানুভূতিও ছিল আমাদের দাবির অনুকূলে। ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার মি. ব্রিটন তাঁর উপরিউক্ত দুই সহকর্মী এবং ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার মি. সেনগুপ্তের মতো বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছিলেন। সেই কনস্যুলার কোরের ডিন ছিলেন নেপালের কনসাল জেনারেল মাধব কুমার বিশাল। তাঁর এবং তাঁর অন্য কোনো সহকর্মীর অসুবিধা এই ছিল যে, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থার কারণে এবং তাঁদের নিজস্ব যোগাযোগব্যবস্থা না থাকায় ইসলামাবাদ এবং তাদের নিজ নিজ সরকারের সঙ্গে ছিলেন বহুলাংশে বিচ্ছিন্ন।
আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ১ থেকে ২৫ মার্চ ১৯৭১, সময়টিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ২৫ মার্চ ১৯৭১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর হলো স্বাধীনতাসংগ্রামের তৃতীয় এবং চূড়ান্ত অধ্যায়।
১ মার্চ ১৯৭১-এ ইয়াহিয়া খান ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির’ নির্ধারিত অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি করলেন।
তার প্রতিক্রিয়ায় মার্চ মাসের প্রথম ছয় দিনের অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা ও কর্মসূচি ঘোষিত হলো। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে স্থাপিত সরকার তখন অচল হয়ে গেল এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশমালা অক্ষরে অক্ষরে পালিত হলো। ইতিমধ্যে ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ ১৯৭১-এ ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’ অধিবেশনের জন্য পুনর্নির্ধারিত করলেন। এল ৭ মার্চ। সেদিন বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বললেন যে চারটি শর্তসাপেক্ষে প্রস্তাবটি বিবেচনা করে দেখব, ‘আমরা এ অ্যাসেম্বলিতে বসতে পারব কি পারব না।’ শর্তগুলো হলো: সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ব্যারাকে ফিরে যেতে হবে, সামরিক বাহিনীর হাতে নিহত ব্যক্তিদের বিষয়ে তদন্ত করতে হবে এবং জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। বঙ্গবন্ধু ভালো করেই জানতেন যে এ চারটি শর্ত পূরণের ক্ষমতা অথবা ইচ্ছা ইয়াহিয়া খানের নেই। সেই উপলব্ধি থেকেই তো এসেছে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণের অন্তিম ঘোষণাটি: ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
বাঙালি জাতির ইতিহাসে তা ছিল এক পরম সন্ধিক্ষণ; একজন নেতার অঙ্গুলিনির্দেশের জন্য সারা জাতি এখন অপেক্ষমাণ। সেই সন্ধিক্ষণে বঙ্গবন্ধু তাঁর ১৮ মিনিটের ভাষণে একটি জাতিকে আসন্ন স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে দিলেন। তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন না, আবার ঘোষণা শুনতে উৎসুক দেশবাসীকে হতাশও করলেন না। আবেগময়, দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অসাধারণ বিচক্ষণতায় তিনি জনগণের কাছে তাঁর প্রকৃত বার্তাটি পৌঁছে দিলেন। স্বাধীনতা-উত্তরকালের স্মৃতিচারণায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাঁর ‘একটি জাতির জন্ম’ প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ঘোষণা আমাদের কাছে এক গ্রিন সিগন্যাল বলে মনে হলো।’ এই গ্রিন সিগন্যালটি শুধু আমাদের সামরিক বাহিনী নয়, ছিল দেশের আপামর জনসাধারণের জন্যও।
আর ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানিরা আমাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করল, তখন ওই ভাষাণটিই কোটি কোটি মানুষের মনে স্বাধীনতার ঘোষণায় রূপান্তরিত হলো। ৭ মার্চ আর ২৬ মার্চ একসূত্রে বাঁধা পড়ল। স্বাধীনতাযুদ্ধের সূচনা সম্পর্কে সন্দেহের আর কোনো অবকাশ রইল না।
মুক্তিযুদ্ধের গোটা সময় বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবে অনুপস্থিত থাকতে হলো। কিন্তু তৎসত্ত্বেও তাঁর অভাব অনুভূত হলো না। তার কারণ, ৭ মার্চের অভ্রান্ত দিকনির্দেশনা। নয়টি মাস, আমাদের সংগ্রামের তৃতীয় এবং চূড়ান্ত লগ্নে বাঙালি জাতি সেই ভাষণের প্রতিটি বাক্য থেকে শক্তি আর সাহস সঞ্চয় করল, প্রতিটি শব্দ থেকে খুঁজে নিল যুদ্ধজয়ের মন্ত্র।
কিন্তু সেই মার্চের ৪১ বছর পর এই মার্চে দেশের রাজনীতির বর্তমান সাংঘর্ষিক অবস্থাদৃষ্টে মনে প্রশ্ন তো জাগেই যে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের স্বাধীন সত্তা সত্ত্বেও প্রকৃত মুক্তি কি আমরা পেয়েছি? ১১ মার্চ ২০১২ সালের প্রথম আলোর প্রথম পাতায় মৌলভীবাজারের জনৈক ফারুক মিয়ার উদ্ধৃতির পুনরাবৃত্তি করার ইচ্ছে হয়, ‘এমন দেশ সৃষ্টি অইছে কারে মারিয়া কে খাইত।’ বিশুদ্ধ বাংলায় ঢাকার জনৈক ফারুক চৌধুরীও সেই বিষাদময় ভাবনার প্রতিধ্বনি করতে চায়, ‘এমনই দেশ সৃষ্টি হলো। কাকে মেরে কে খাচ্ছে!’
ফারুক চৌধুরী: সাবেক পররাষ্ট্রসচিব, কলাম লেখক।
zaaf@bdmail.net
No comments