মহাসমাবেশের খোঁজখবর নেন প্রধানমন্ত্রী

রাজধানীজুড়ে হরতালের আবহ বিরাজ করলেও বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সারা দিন মুখরিত ছিল নেতা-কর্মীদের পদভারে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিন বছর যে কার্যালয় ছিল প্রায় নীরব, বিএনপির কর্মসূচি উপলক্ষে সেই কার্যালয় প্রাণ ফিরে পায় গতকাল সোমবার।


বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে নাশকতার আশঙ্কায় উৎকণ্ঠায় ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। খোদ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বসেও ফোনে বিএনপির মহাসমাবেশসহ সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে মহাসমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে পল্টনের সমাবেশে হুমকি দিয়ে কোনো লাভ হবে না। বিকল্প প্রস্তাব থাকলে সংসদে গিয়ে পেশ করতে হবে। তাতে ভালো কিছু থাকলে সরকার তা গ্রহণ করবে।
জাতীয় সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, 'হুমকিধমকি দিয়ে লাভ নেই। আওয়ামী লীগ এতে ভয় পায় না। তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে ভালো কোনো প্রস্তাব থাকলে পল্টন নয়, সংসদে এসে বলুন। প্রস্তাব ভালো হলে আমরা মেনে নেব।' ওই সময় সংসদ সদস্য জাহিদ হাসান রাসেল, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং বি এম মোজাম্মেল উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় মহনগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের দলের প্রধান কার্যালয়ে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল দলের পক্ষ থেকে। এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল থেকেই জড়ো হন নেতারা। পাশাপাশি ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপির মহাসমাবেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতারা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়েই ছিলেন।
নাশকতার আশঙ্কা থাকলেও সে ধরনের কিছুই ঘটেনি রাজধানীতে। শেষ পর্যন্ত বিএনপির কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। বিএনপি আগামী দিনে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলে সরকার তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলে সাংবাদিকদের জানান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুব-উল-আলম হানিফ। বিএনপির কর্মসূচি শেষ করার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও দলীয় কার্যালয় ছাড়েন।
সকাল থেকেই ক্ষমতাসীন দল এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন দলীয় কার্যালয়ে। আস্তে আস্তে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরাও হাজির হন সেখানে। সকাল ১১টার দিকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজি মোহাম্মদ সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ এবং কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ ও সদস্য এনামুল হক শামীম যান কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। পরে সেখানে হাজির হন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানাক। এ ছাড়া ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দলীয় নেতা অসীম কুমার উকিল, সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও আসলামুল হক আসলাম, শ্রমিক লীগ নেতা রায় রমেশ চন্দ্র, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজসহ অনেকে।
ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়েও সারা দিন ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও উপদপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বের হওয়ার আগে মাহবুব-উল-আলম হানিফ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কোনো দাবি আদায় করা যাবে না। আওয়ামী লীগের শিকড় অনেক গভীরে। দাবি আদায় করতে হলে সংসদে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন, 'আমরা সকাল থেকেই দেখেছি, বিএনপির মহাসমাবেশে জামায়াতের লোকজন গোলাম আযম, নিজামীসহ চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে তাদের মুক্তির দাবি করেছে। এতেই প্রমাণ হয়, বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্যই এ মহাসমাবেশ ডেকেছিল।'
হানিফ বলেন, সরকারের তরফ থেকে যানবাহন বন্ধের কোনো ধরনের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বিরোধী দল দুই সপ্তাহ ধরে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এ কারণেই সাধারণ জনগণ তাদের যানবাহন রাস্তায় নামায়নি।
হানিফ বলেন, 'বিএনপি কর্মসূচির নামে যেন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে সে জন্য ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্ব সরকারকে সহায়তা করা। আমরা সে দায়িত্বই পালন করছি।'
গতকাল সারা দিন রাজধানীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিছিল করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে মিছিল বের করেন তাঁরা।

No comments

Powered by Blogger.