নিখিল ফিরে আসছে by মাহবুবুল হক রিপন
সাংবাদিক নিখিল ভদ্র সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দেশ-বিদেশের চিকিৎসা শেষে সহসাই তার কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাবে এটাই প্রত্যাশা। তিনি এখন ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ ঝিবো আর্মি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ব্যাংককে আসার পর নিখিলের কয়েকটা ছোট আকারের অপারেশন হয়েছে।
সপ্তাহ দুই আগে ডান পায়ের হাঁটু কেটে ফেলতে হয়েছে ভবিষ্যতে সংক্রমণের ভয়ে। বাম পায়ের অবস্থাও এখন বেশ ভালো। হয়তো আরও কয়েকবার গ্রাফটিং করতে হবে। অন্যান্য অসুবিধা এখন নেই বললেই চলে। তবে ভবিষ্যতে তাকে স্বাভাবিক চলাফেরার জন্য অনেক এক্সারসাইজ করতে হবে। প্রবাসে দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলাকালে নিখিলের স্ত্রী চার মাসের শিশুকন্যাসহ যেভাবে শুশ্রূয়া দিয়েছেন তা না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। সঙ্গে ছিল নিখিলের অনুজ মন্টু ভদ্র। যদিও এখানে আমাদের দেশের মতো রোগীর স্বজনদেরই আগ বাড়িয়ে খবর নিতে হয় না, তারপরও তাদের সাহচর্য ছাড়া নিখিলের চিকিৎসা করানো অসম্ভব ছিল।
মধ্যপ্রাচ্য কিংবা পাশ্চাত্যের অনেক দেশে যেভাবে বাঙালিদের বড় কমিউনিটি থাকে, ব্যাংককে সেই অর্থে তেমনটা নেই। তারপরও ইন্টারনেট যুগে সংবাদপত্রে সর্বশেষ খবরটা বোধহয় প্রবাসীদের হাতে চলে যায়। যারা এখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত আছেন কিংবা বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত আছেন প্রায় প্রত্যেকেই হাসপাতালে না গিয়েও খবরাখবর নিয়েছেন। নিখিলের ব্যাংককের চিকিৎসার কয়েকটা দিক উল্লেখ না করলেই নয়। যেমন একটা পর্যায়ে তারকাখচিত হাসপাতাল বামরুনগ্রাদে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করানো অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। পরে থাইল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঐকান্তিক সহযোগিতায় ভর্তি করানো হয় আর্মি হাসপাতালে। যদিও বাংলাদেশে বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া আমজনতার জন্য সেনা হাসপাতালের দুয়ার বন্ধ। কিন্তু বিদেশে এসে সেই সুযোগটা পাওয়া গেছে। এটা কি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কখনও ভাবতে পারি? এখনও বাংলাদেশের সরকারি খাতগুলোতে ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে একেবারেই মুক্ত নয়। করপোরেট হাসপাতালগুলো অর্থ নিচ্ছে কিন্তু সেবার বেলায় বেহাল অবস্থা। অথচ অন্য দেশে এসে শুধু রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে তার অবস্থার কথা বিবেচনায় রেখে নিদ্বর্িধায় ভর্তি করছে। কোনো তথাকথিত নিরাপত্তার কথা তুলে রোগীকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে না।
এই হলো আমাদের সঙ্গে এখানকার পার্থক্য। কোথাও হয়তোবা সেবা পেতে দেরি হচ্ছে। কিন্তু গাফিলতি হচ্ছে বলা যাবে না। বিদেশি বলে থাইল্যান্ডের সরকারি হাসপাতালে নিখিলকে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হয়নি। এই নিয়ম মানুষের জন্য। এটাকেই বলে মানবাধিকারের সর্বজনীন চর্চা। মানুষের মর্যাদা এবং তার অধিকার এটাকে সার্বভৌমত্ব আর সীমানা দিয়ে আটকে রাখা যায়নি।
নিখিল সুস্থ হয়ে ফিরবে। কিন্তু নিখিলের দুর্ঘটনার কয়েক দিন পর ঢাকার আরেক সিনিয়র রিপোর্টার দীনেশ দাস মারা গেলেন বাসচালকের বেপরোয়া আচরণের কারণে। এর বিচার হবে কি? চালকদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা ট্রেড ইউনিয়ন কিংবা রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কেউ করবে বলে মনে হয় না। ফলে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটবে। অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ঘটবে। আহতের উপচেপড়া ভিড় হবে হাসপাতালগুলোতে। এই অবস্থা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। দুর্ঘটনা দুনিয়ার সব দেশেই হয়, শুধু মাতাল হয়ে গাড়ি চালিয়ে নববর্ষের প্রাক্কালে থাইল্যান্ডে পাঁচশ' মানুষ মারা গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা সত্ত্বেও আমরা দেশের অতি সাধারণ মানুষ হয়ে রাষ্ট্রের কাছে ওই নিরাপত্তাটুকু চাই। যাতে প্রাণ নিয়ে ঘরে ফিরতে রাষ্ট্র যেন নাগরিকদের সহযোগিতা করে। কোনো অনাচার যেন প্রশ্রয় না দেয়।
মাহবুবুল হক রিপন :থাইল্যান্ডের মাহিদল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণারত
মধ্যপ্রাচ্য কিংবা পাশ্চাত্যের অনেক দেশে যেভাবে বাঙালিদের বড় কমিউনিটি থাকে, ব্যাংককে সেই অর্থে তেমনটা নেই। তারপরও ইন্টারনেট যুগে সংবাদপত্রে সর্বশেষ খবরটা বোধহয় প্রবাসীদের হাতে চলে যায়। যারা এখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত আছেন কিংবা বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত আছেন প্রায় প্রত্যেকেই হাসপাতালে না গিয়েও খবরাখবর নিয়েছেন। নিখিলের ব্যাংককের চিকিৎসার কয়েকটা দিক উল্লেখ না করলেই নয়। যেমন একটা পর্যায়ে তারকাখচিত হাসপাতাল বামরুনগ্রাদে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করানো অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। পরে থাইল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঐকান্তিক সহযোগিতায় ভর্তি করানো হয় আর্মি হাসপাতালে। যদিও বাংলাদেশে বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া আমজনতার জন্য সেনা হাসপাতালের দুয়ার বন্ধ। কিন্তু বিদেশে এসে সেই সুযোগটা পাওয়া গেছে। এটা কি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কখনও ভাবতে পারি? এখনও বাংলাদেশের সরকারি খাতগুলোতে ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে একেবারেই মুক্ত নয়। করপোরেট হাসপাতালগুলো অর্থ নিচ্ছে কিন্তু সেবার বেলায় বেহাল অবস্থা। অথচ অন্য দেশে এসে শুধু রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে তার অবস্থার কথা বিবেচনায় রেখে নিদ্বর্িধায় ভর্তি করছে। কোনো তথাকথিত নিরাপত্তার কথা তুলে রোগীকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে না।
এই হলো আমাদের সঙ্গে এখানকার পার্থক্য। কোথাও হয়তোবা সেবা পেতে দেরি হচ্ছে। কিন্তু গাফিলতি হচ্ছে বলা যাবে না। বিদেশি বলে থাইল্যান্ডের সরকারি হাসপাতালে নিখিলকে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হয়নি। এই নিয়ম মানুষের জন্য। এটাকেই বলে মানবাধিকারের সর্বজনীন চর্চা। মানুষের মর্যাদা এবং তার অধিকার এটাকে সার্বভৌমত্ব আর সীমানা দিয়ে আটকে রাখা যায়নি।
নিখিল সুস্থ হয়ে ফিরবে। কিন্তু নিখিলের দুর্ঘটনার কয়েক দিন পর ঢাকার আরেক সিনিয়র রিপোর্টার দীনেশ দাস মারা গেলেন বাসচালকের বেপরোয়া আচরণের কারণে। এর বিচার হবে কি? চালকদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা ট্রেড ইউনিয়ন কিংবা রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কেউ করবে বলে মনে হয় না। ফলে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটবে। অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ঘটবে। আহতের উপচেপড়া ভিড় হবে হাসপাতালগুলোতে। এই অবস্থা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। দুর্ঘটনা দুনিয়ার সব দেশেই হয়, শুধু মাতাল হয়ে গাড়ি চালিয়ে নববর্ষের প্রাক্কালে থাইল্যান্ডে পাঁচশ' মানুষ মারা গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা সত্ত্বেও আমরা দেশের অতি সাধারণ মানুষ হয়ে রাষ্ট্রের কাছে ওই নিরাপত্তাটুকু চাই। যাতে প্রাণ নিয়ে ঘরে ফিরতে রাষ্ট্র যেন নাগরিকদের সহযোগিতা করে। কোনো অনাচার যেন প্রশ্রয় না দেয়।
মাহবুবুল হক রিপন :থাইল্যান্ডের মাহিদল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণারত
No comments