বিভিন্ন স্থানে ধাওয়া, হামলা-পুলিশের ভূমিকায় যেন ছাত্রলীগ

বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের মহাসমাবেশ সামনে রেখে পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও গতকাল সোমবার সারা দিন রাজধানীতে তৎপর ছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিল ছাত্রলীগ। রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে তারা মহড়া দিয়েছে।


অনেক স্থানে মহাসমাবেশের উদ্দেশ্যে যাওয়া লোকজনকে বাধাও দিয়েছে। এমনকি হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল সকাল থেকে ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের নেতা-কর্মীরা শাহবাগ, মধুর ক্যানটিন, কাঁটাবন, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে মোটরসাইকেল নিয়েও মহড়া দেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ছাত্রলীগের কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ এর আশপাশে রড-লাঠি নিয়ে অবস্থান নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির ভেতর দিয়ে বিএনপির সমাবেশে যাওয়ার সময় অনেকেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ভোগান্তির শিকার হন। দুুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহাসমাবেশে অংশ নিতে লালবাগ-কামরাঙ্গীরচর এলাকার বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এলে ছাত্রলীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা, ক্রিকেট স্টাম্প, লোহার পাইপ ও রড নিয়ে তাঁদের ধাওয়া করেন। টিএসসি এলাকায় ছাত্রদলের একজন কর্মীকে মারধরও করা হয়। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে দিয়ে মৎস্য ভবনের দিকে চলে যান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং গুলির শব্দও পাওয়া যায়। ঘটনার পরপরই ছাত্রলীগ একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে শুরু করে টিএসসি, কলাভবন, মধুর ক্যানটিন হয়ে ডাকসু ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার নুরুল ইসলাম বলেন, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে, তবে গুলির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম অভিযোগ করেছেন, হলের বাইরে থাকা ছাত্রলীগের কিছু কর্মী ক্যাম্পাসে আসার সময় ছাত্রদলের কর্মীরা তাঁদের জিম্মি করেন। তখন তাঁরা তাঁদের উদ্ধার করতে যান।
এদিকে, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যালের সামনে লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতেই মহড়া দেন। তাঁরা মহাসমাবেশের পোস্টার ছিঁড়ে আগুন জ্বালিয়ে দেন। ছাত্রদলের একটি মিছিল ওই সময় বাটা সিগন্যাল দিয়ে নয়াপল্টনের দিকে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা হকিস্টিক, দা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া করেন। এ ছাড়া সকাল থেকেই সমাবেশগামী লোকদের হয়রানি করেন ছাত্রলীগের নেতারা।
এ ছাড়া গতকাল সকালে ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড, মাজার রোডের প্রবেশপথ, টেকনিক্যাল মোড় ও কল্যাণপুরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরাই পুলিশের সামনে বিভিন্ন গাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছেন। একই অবস্থা ছিল যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, আবদুল্লাহপুর, গুলিস্তানসহ নগরের বিভিন্ন স্থানে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাজার রোডের মোড়ে কর্মীবেষ্টিত হয়ে সকাল থেকেই বসে আছেন মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম হানিফ। পুলিশ থাকতেও আওয়ামী লীগের কর্মীরা কেন গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করছেন, জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত যাতে নাশকতা করতে না পারে, সে জন্যই আমরা পুলিশকে সহায়তা করছি।’
মিরপুরে সরকারি বাঙলা কলেজের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঘিরে রাখেন ওই এলাকা। ঢাকার পূর্ব প্রান্তের প্রবেশদ্বার যাত্রাবাড়ী এবং উত্তর প্রান্তের প্রবেশদ্বার আবদুল্লাহপুরেও পুলিশের তল্লাশি চৌকির পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের তৎপরতা দেখা গেছে।
ঢাকার গেন্ডারিয়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ লাঠিসোঁটা নিয়ে পাহারা বসায়। তারা রিকশা, ভ্যান ও স্কুটারে চলাচলকারী মানুষকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। অনেক পথচারীকেও তারা এ সময় জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং পরিচয়পত্র দেখতে চায়। কাউকে সন্দেহ হলেই তাকে উল্টো দিকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বেলা দুইটার দিকে আলিয়া মাদ্রাসার সামনে ইসলামী ঐক্যজোটের একটি মিছিলে ছাত্রলীগ ও পুলিশ হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ছাড়া, গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কার্যালয়ে আসেন জাতীয় শ্রমিক লীগ এবং সাবেক ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্যরাও ছিলেন। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এবং কার্যালয়ের বিপরীতে রমনা ভবনের সামনে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা অবস্থান নিয়েছিলেন।
বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেন, কেউ যেন কোনো এলাকাতেই ভাঙচুরসহ বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকতে বলা হয়।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের এসব তৎপরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জনজীবনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে এসব প্রতিহত করেছে।

No comments

Powered by Blogger.