প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী-আটান্ন বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় by সাইফুদ্দীন চৌধুরী
দেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তবর্তী জেলা শহর রাজশাহী। পদ্মা নদীবিধৌত রাজশাহী একসময় হয়ে উঠেছিল প্রাচীন বরেন্দ্রভূমির প্রাণকেন্দ্র। বরেন্দ্রভূমিতে সহস্র বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বৃহত্তর রাজশাহীর নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। এই বিহার জ্ঞান-বিজ্ঞান, মীমাংসা, ব্যাকরণ, সাহিত্য,
ধর্মশাস্ত্র ও শারীরিক বিদ্যাশিক্ষার জন্য একটি উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানরূপে গড়ে উঠেছিল, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করেছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আসত শিক্ষালাভের জন্য। দেশের উত্তরাঞ্চল একসময় তার গৌরব হারিয়ে শিক্ষাদীক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতি, অর্থনীতি প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে পরিণত হয়।
ভারতশাসক ঔপনিবেশিক সরকার উচ্চশিক্ষা চালু ও গবেষণাব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে ভারতবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম জোরালো করার উদ্যোগ নেয়। ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি কমিশন (পরে স্যাডলার কমিশন) ১৯১৭ সালের ৬ জুলাই এ বিষয়ে একটি নতুন সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সিদ্ধান্তে, অনুসন্ধানপূর্বক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোষত্রুটি খুঁজে বের করে তার সংস্কারের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি হন বিলেতের লিড্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম ই স্যাডলার। সে সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে সারা দেশে খ্যাতি ছিল রাজশাহী কলেজের। বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে স্যাডলার সাহেব রাজশাহী কলেজকে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার জন্য সুপারিশ করেন। কিন্তু দেশে বিরাজমান বৈরী রাজনৈতিক অবস্থা কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
১৯৪৭-এ ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর দেখা দেয় নতুন সংকট। তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার এক আদেশবলে পূর্ব পাকিস্তানের সব কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অঙ্গীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করে। সরকারি ওই আদেশের বিরুদ্ধে এবং স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুসারে রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হয়। রাজশাহীর কৃৎবিদ্য আইনজীবী মৌলবি মাদার বখ্শ এবং রাজশাহী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ইতরাৎ হুসেন জুবেরীর যৌথ প্রচেষ্টায় ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক পর্ষদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। পরে ১৬ জুন ওই বিলে প্রাদেশিক গভর্নর সম্মতি প্রদান করেন। ১৯৫৩ সালে আজকের এই দিনে ইতরাৎ হুসেন জুবেরীকে উপাচার্য নিযুক্তির মধ্য দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়।
দেশের উত্তরাঞ্চলের মাত্র ১২টি ডিগ্রি কলেজ এবং আটটি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ অধিভুক্ত করে সাতটি একাডেমিক বিভাগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। গোড়াতে শিক্ষার্থী ছিল মাত্র ১৬১ জন। পদ্মাতীরে ওলন্দাজদের নির্মিত ‘বড়কুঠি’ নামে ইতিহাসপ্রসিদ্ধ রেশম কুঠিকে করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ভবন। ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস অনুষ্ঠিত হতে থাকে রাজশাহী কলেজে। শহরের নানা স্থানে ভাড়া করা বাড়িতে অস্থায়ীভাবে চলে অফিসের কাজ।
এ অবস্থার নিরসন ঘটে কয়েক বছর পরই, ১৯৬১ সালে, যখন শহর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে মতিহারের সবুজ চত্বরে ৩০৩ দশমিক ৮০ হেক্টর জমির ওপর লে. কর্নেল জি সোয়ানি টমাস প্রণীত কলম্বো প্ল্যান অনুযায়ী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থানান্তর করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ৪৯টি একাডেমিক বিভাগ, নয়টি অনুষদ, পাঁচটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। দেড় হাজার শিক্ষক তাদের পাঠদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছেন। প্রায় ছয় দশকে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং এমফিল ও পিএইচডির মতো বিশেষায়িত ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এই শিক্ষার্থীদের অনেকেই দেশ পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বে তাঁদের সাফল্য রেখেছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছেন সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে। গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জনের ক্ষেত্রেও ছিল তাঁদের প্রতিবাদী এবং সংগ্রামী ভূমিকা। ১৯৬২ সালের বিতর্কিত হামদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিল আন্দোলনে, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে এবং একাত্তরের মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের অনেকেই সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। এ সময় পাকিস্তানি আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারান ছাত্রপ্রিয় শিক্ষক শামসুজ্জোহা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালের স্মৃতি ভাস্বর করে রেখেছেন তিন শহীদ অধ্যাপক—হাবিবুর রহমান, সুখরঞ্জন সমাদ্দার ও মীর আবদুল কাইউম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এ সময় নিহত শিক্ষার্থী-কর্মচারীর সংখ্যাও অনেক।
১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনভাবে এগিয়ে যাওয়ার পথের সন্ধান পায় ১৯৭৩ সালে, যখন ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট-১৯৭৩’ প্রতিষ্ঠিত হয়। সভ্যতার দুর্গ হিসেবে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা আর তার বিকাশের কেন্দ্র হিসেবে, মুক্তবুদ্ধির চর্চা এবং স্বাধীন চিন্তা পরিচর্যার সূতিকাগার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠুক—সেই প্রত্যাশায় দেশের শিক্ষকেরা আন্দোলন করেছিলেন, তার ফলেই তো ‘বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ’। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ওই অধ্যাদেশ কার্যকর হয়। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের লক্ষ্যই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে নিরঙ্কুশ স্বশাসন প্রতিষ্ঠা করা, চিন্তার স্বাধীনতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। গত দশকে (২০০১-১১) এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৮৪৯ জন পিএইচডি এবং ৩২৫ জন এমফিল ডিগ্রি লাভ করেছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান যে বেশ খানিকটা আন্তর্জাতিক মানের, তা উল্লেখ করেছেন বিশ্ববিখ্যাত মানবতাবাদী দার্শনিক আঁদ্রে মার্লো, ১৯৭৩ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি গ্রহণকালে দেওয়া মন্তব্যে। শিক্ষা, গবেষণার ক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই যে ঈর্ষণীয় সাফল্য লাভ করেছে, তা নয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ক্ষেত্রে যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে, প্রতিকূল অবস্থারও অন্ত নেই। এই অর্জন আর সীমাবদ্ধতা নিয়েই দেশের উচ্চতর শিক্ষার দ্বিতীয় পাদপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আটান্ন বছরে পা রাখছে।
ড. সাইফুদ্দীন চৌধুরী: গবেষক; অধ্যাপক, ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
pr_saif@yahoo.com
ভারতশাসক ঔপনিবেশিক সরকার উচ্চশিক্ষা চালু ও গবেষণাব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে ভারতবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম জোরালো করার উদ্যোগ নেয়। ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি কমিশন (পরে স্যাডলার কমিশন) ১৯১৭ সালের ৬ জুলাই এ বিষয়ে একটি নতুন সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সিদ্ধান্তে, অনুসন্ধানপূর্বক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোষত্রুটি খুঁজে বের করে তার সংস্কারের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি হন বিলেতের লিড্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম ই স্যাডলার। সে সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে সারা দেশে খ্যাতি ছিল রাজশাহী কলেজের। বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে স্যাডলার সাহেব রাজশাহী কলেজকে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার জন্য সুপারিশ করেন। কিন্তু দেশে বিরাজমান বৈরী রাজনৈতিক অবস্থা কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
১৯৪৭-এ ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর দেখা দেয় নতুন সংকট। তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার এক আদেশবলে পূর্ব পাকিস্তানের সব কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অঙ্গীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করে। সরকারি ওই আদেশের বিরুদ্ধে এবং স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুসারে রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হয়। রাজশাহীর কৃৎবিদ্য আইনজীবী মৌলবি মাদার বখ্শ এবং রাজশাহী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ইতরাৎ হুসেন জুবেরীর যৌথ প্রচেষ্টায় ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক পর্ষদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। পরে ১৬ জুন ওই বিলে প্রাদেশিক গভর্নর সম্মতি প্রদান করেন। ১৯৫৩ সালে আজকের এই দিনে ইতরাৎ হুসেন জুবেরীকে উপাচার্য নিযুক্তির মধ্য দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়।
দেশের উত্তরাঞ্চলের মাত্র ১২টি ডিগ্রি কলেজ এবং আটটি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ অধিভুক্ত করে সাতটি একাডেমিক বিভাগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। গোড়াতে শিক্ষার্থী ছিল মাত্র ১৬১ জন। পদ্মাতীরে ওলন্দাজদের নির্মিত ‘বড়কুঠি’ নামে ইতিহাসপ্রসিদ্ধ রেশম কুঠিকে করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ভবন। ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস অনুষ্ঠিত হতে থাকে রাজশাহী কলেজে। শহরের নানা স্থানে ভাড়া করা বাড়িতে অস্থায়ীভাবে চলে অফিসের কাজ।
এ অবস্থার নিরসন ঘটে কয়েক বছর পরই, ১৯৬১ সালে, যখন শহর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে মতিহারের সবুজ চত্বরে ৩০৩ দশমিক ৮০ হেক্টর জমির ওপর লে. কর্নেল জি সোয়ানি টমাস প্রণীত কলম্বো প্ল্যান অনুযায়ী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থানান্তর করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ৪৯টি একাডেমিক বিভাগ, নয়টি অনুষদ, পাঁচটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। দেড় হাজার শিক্ষক তাদের পাঠদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছেন। প্রায় ছয় দশকে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং এমফিল ও পিএইচডির মতো বিশেষায়িত ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এই শিক্ষার্থীদের অনেকেই দেশ পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বে তাঁদের সাফল্য রেখেছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছেন সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে। গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জনের ক্ষেত্রেও ছিল তাঁদের প্রতিবাদী এবং সংগ্রামী ভূমিকা। ১৯৬২ সালের বিতর্কিত হামদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিল আন্দোলনে, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে এবং একাত্তরের মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের অনেকেই সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। এ সময় পাকিস্তানি আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারান ছাত্রপ্রিয় শিক্ষক শামসুজ্জোহা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালের স্মৃতি ভাস্বর করে রেখেছেন তিন শহীদ অধ্যাপক—হাবিবুর রহমান, সুখরঞ্জন সমাদ্দার ও মীর আবদুল কাইউম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এ সময় নিহত শিক্ষার্থী-কর্মচারীর সংখ্যাও অনেক।
১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনভাবে এগিয়ে যাওয়ার পথের সন্ধান পায় ১৯৭৩ সালে, যখন ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট-১৯৭৩’ প্রতিষ্ঠিত হয়। সভ্যতার দুর্গ হিসেবে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা আর তার বিকাশের কেন্দ্র হিসেবে, মুক্তবুদ্ধির চর্চা এবং স্বাধীন চিন্তা পরিচর্যার সূতিকাগার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠুক—সেই প্রত্যাশায় দেশের শিক্ষকেরা আন্দোলন করেছিলেন, তার ফলেই তো ‘বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ’। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ওই অধ্যাদেশ কার্যকর হয়। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের লক্ষ্যই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে নিরঙ্কুশ স্বশাসন প্রতিষ্ঠা করা, চিন্তার স্বাধীনতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। গত দশকে (২০০১-১১) এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৮৪৯ জন পিএইচডি এবং ৩২৫ জন এমফিল ডিগ্রি লাভ করেছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান যে বেশ খানিকটা আন্তর্জাতিক মানের, তা উল্লেখ করেছেন বিশ্ববিখ্যাত মানবতাবাদী দার্শনিক আঁদ্রে মার্লো, ১৯৭৩ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি গ্রহণকালে দেওয়া মন্তব্যে। শিক্ষা, গবেষণার ক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই যে ঈর্ষণীয় সাফল্য লাভ করেছে, তা নয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ক্ষেত্রে যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে, প্রতিকূল অবস্থারও অন্ত নেই। এই অর্জন আর সীমাবদ্ধতা নিয়েই দেশের উচ্চতর শিক্ষার দ্বিতীয় পাদপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আটান্ন বছরে পা রাখছে।
ড. সাইফুদ্দীন চৌধুরী: গবেষক; অধ্যাপক, ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
pr_saif@yahoo.com
No comments