বাণিজ্য মেলার নামে পাকিস্তানিদের অবৈধ ব্যবসা by নিখিল ভদ্র
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার নামে কম শুল্কে পণ্য আমদানি করে তা রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি করছেন পাকিস্তানি ব্যবসায়ী ও তাঁদের এ দেশীয় অংশীদারদের সিন্ডিকেট। এভাবে প্রতিবছরই সিন্ডিকেটটি কোটি কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে। বাণিজ্য মেলায় প্যাভিলিয়ন ও স্টল ভাড়া নিয়েও তাঁরা অনিয়ম করছেন_অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে পুনরায় এসব ভাড়া দিয়ে অর্থ কামাচ্ছেন। ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে পাকিস্তানিরা এভাবে বছরের পর বছর অবৈধভাবে
ব্যবসা চালাচ্ছেন। তাঁদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বৈধ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা এর প্রতিকার চেয়ে সংসদীয় কমিটির কাছে আবেদন করেছেন। কমিটি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। আর মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছে।
রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো যৌথভাবে প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে। বাংলাদেশি উৎপাদক এবং রপ্তানি ও আমদানিকারকদের পাশাপাশি বিদেশি ব্যবসায়ীরা এই মেলায় অংশ নেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বাণিজ্য মেলার নামে পণ্য আমদানি এবং মেলায় প্যাভিলিয়ন ও স্টল বরাদ্দে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অনিয়ম ও তা মেলার বাইরে বিক্রি করে দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে।
অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেট আগের বছরগুলোর মতো এবারও পণ্য আমদানি ও মেলায় প্যাভিলিয়ন এবং স্টল বরাদ্দ নেওয়ার জন্য তদবির চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বাণিজ্য মেলায় পণ্য আমদানির জন্য ব্যবসায়ীরা ৪০ শতাংশ শুল্ক ছাড় পেয়ে থাকেন। এই শুল্ক ছাড়ের সুযোগ নিয়ে শত শত কোটি টাকার পণ্য আমদানি করছে একটি চক্র। ইপিবি ও কাস্টমসকে ম্যানেজ করে বাণিজ্য মেলায় স্টল বরাদ্দ নিয়ে তাঁরা নামে-বেনামে পণ্য আমদানি করছেন। বিশেষ করে পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি অনিয়ম হচ্ছে। বাণিজ্য মেলায় বিদেশিদের মধ্যে পাকিস্তানিদের অংশগ্রহণ সব থেকে বেশি। গত বাণিজ্য মেলায় বিদেশি ৩৩টি প্যাভিলিয়ন ও স্টলের মধ্যে পাকিস্তানেরই ছিল ১০টি। জানা গেছে, এবারের বাণিজ্য মেলার জন্য (আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয়) করা প্রাথমিক তালিকায় ৪৭টি বিদেশি প্যাভিলিয়ন ও স্টলের মধ্যে পাকিস্তানের জন্য ২০টি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
ওই সিন্ডিকেটটি দেশীয় ব্যবসায়ীদের নামে প্যাভিলিয়ন ও স্টল ভাড়া নিয়েও পণ্য আমদানি ও অবৈধভাবে ব্যবসা করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কাপড়, কসমেটিকস সামগ্রী, টেঙ্টাইল পার্টস, মেশিনারিজ, মার্বেল সামগ্রী, ফার্নিচার ইত্যাদি। এর মধ্যে পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, কাপড়, ওড়না, শালসহ কাপড় ও কসমেটিকসের ব্যবসা সারা বছরই চলে। ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে হোটেলে বা অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে পাকিস্তানি ব্যবসায়ীরা সারা বছরই এই ব্যবসা করেন। এঁদের কেউ কেউ পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন বাংলাদেশে বসবাস করছে।
সাধারণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ট্যুরিস্ট ভিসায় পাকিস্তানি নাগরিকরা এসে মেলার নামে মালামাল আমদানি করে মার্কেটগুলোতে কম দামে বিক্রি করায় বৈধ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অবৈধ ব্যবসায়ীদের কারণে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বৈধ আমদানিকারকরা ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ আইন অনুযায়ী ট্যুরিস্ট ভিসায় কেন, বিজনেস ভিসায় এসেও কোনো বিদেশি নাগরিক মার্কেটে মালামাল বিক্রি বা দোকান নিয়ে ব্যবসা করতে পারবে না। সে কেবল এ দেশের মালামাল আমদানি করতে পারবে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ওইসব পাকিস্তানি ব্যবসায়ী বাংলাদেশে আসার সময় সিগারেট, আমদানিনিষিদ্ধ ওষুধ ও জাল মুদ্রাসহ অবৈধ মালামাল নিয়ে আসে। আর ব্যবসার আড়ালে তাঁরা জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন বলে সংসদীয় কমিটির কাছে দেওয়া অভিযোগে দাবি করা হয়েছে।
সংসদীয় কমিটির কাছে দেওয়া অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, রাজধানীর নবাবপুর রোড, চাঁদনী চক মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোডের সুবাস্তু অ্যারোমা ও বলাকা সুপার মার্কেট, গুলশানের পিংক সিটি, ধানমণ্ডির প্রিন্স প্লাজাসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানে পাকিস্তানি নাগরিকরা অবৈধভাবে ব্যবসা করছেন। গত বছর ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় একটি প্যাভিলিয়ন এবং বিভিন্ন প্যাভিলিয়নে ৪৮টি স্টল বরাদ্দ নিয়ে ব্যবসা করেন নিজাম নামে এক পাকিস্তানি ব্যবসায়ী। নেজাম ফেব্রিঙ্ নামে তিনি মেলায় স্টল বরাদ্দ নিয়ে ছিলেন। তাঁর মতো ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে সারা বছর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বড় ব্যবসায়ী হচ্ছেন কাজ্জাফি ও শেফায়েত। তাঁরা গাউছিয়া মার্কেটের পাশে সুবাস্তু অ্যারোমা মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় দোকান নিয়ে ব্যবসা করেন। একই মার্কেটের দোতলায় ব্যবসা করেন পাকিস্তানের নাগরিক জেনায়েদ লাখানী। এ ছাড়া গুলশানের পিংক সিটির চতুর্থ তলায় কামরান জি, ধানমণ্ডির প্রিন্স প্লাজার দ্বিতীয় তলায় শাহেদ ফারুকী এবং মোহাম্মদ মঞ্জুর আলমসহ অনেকেই ব্যবসা করেন। আর হাশিমপুরী ও কালিমপুরী নামের দুজন গুলশানের হোটেলে রুম ভাড়া নিয়ে পাকিস্তানি পণ্যের ব্যবসা করেন। এই পাকিস্তানিদের কারোরই ওয়ার্ক পারমিট নেই। বাণিজ্য মেলাকে সামনে রেখেই তাঁরা বিভিন্ন পণ্যের বড় চালান আমদানি করে থাকেন।
পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য আমদানি করে সারা বছর বিভিন্ন অভিজাত বিপণীতে ব্যবসা করে থাকেন এ দেশেরও অনেক ব্যবসায়ী। এঁরা প্যাভিলিয়ন ভাড়া নিয়ে তা ছোট ছোট স্টলে ভাগ করে বেচাবিক্রিতে নামেন। এঁদের একজন 'বিহারি পারভেজ' নামে পরিচিত মিরপুর ১১নং সেকশনের এক ব্যবসায়ী এবারও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ নেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এক সময় পাকিস্তানের নাগরিক এই পারভেজ গত বছর বাণিজ্য মেলায় পলি এন্টারপ্রাইজের নামে পণ্য আমদানি করেছিলেন এবং স্টল বরাদ্দ নিয়েছিলেন। কালের কণ্ঠের কাছে প্রথমে নিজের নামে স্টল ভাড়া নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও পরক্ষণে বলেন, ওটা অন্যের নামে ছিল। তবে কার নামে ছিল তা তিনি বলতে চাননি। তাঁর দাবি, মেলার নামে আনা পণ্য মেলায় বিক্রি করা হয়। বাইরে বিক্রির পণ্য আলাদাভাবে আমদানি করা হয়। মেলার নামে পণ্য আমদানি করে বাইরে বিক্রির সঙ্গে তিনি জড়িত নন।
তবে গত কয়েক বছর মেলায় পাকিস্তানি পণ্যের স্টল দিলেও এবার বরাদ্দ পাননি বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ফারুক আলম। এ জে গিফারি অ্যান্ড জাকারিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক ফারুক আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, এবার মেলার জন্য তাঁকে পণ্য আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়নি। কী কারণে অনুমতি পাননি, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কারণ জানার চেষ্টা করিনি। তিনি সারা বছর পাকিস্তানি পণ্যের ব্যবসা করার কথা স্বীকার করলেও বাণিজ্য মেলার নামে আমদানি করা পণ্য বাইরে বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর কথা_ব্যবসায় কোনো অনিয়ম করলে তো সরকার লাইসেন্স বাতিল করে দিত।
এ বিষয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার প্রকল্প পরিচালক, ইপিবি কর্মকর্তা এহসানুল কবীর কালের কণ্ঠকে বলেন, গত বছর মেলায় অনিয়মের সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাঁরা এবার স্টল বরাদ্দ ও পণ্য আমদানির সুযোগ পাবেন না। সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ইপিবির কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ এলে তা সঙ্গে সঙ্গে কাস্টমসকে জানানো হবে। কারণ মেলায় বিক্রির জন্য কম শুল্কে পণ্য আমদানি করে তা বাইরে বিক্রি করলে কাস্টমস ব্যবস্থা নেবে। মেলায় স্টল বরাদ্দ নিয়ে যাতে অনিয়ম না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সব ধরনের অনিয়ম বন্ধে ইপিবি সতর্ক রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ বি এম আবুল কাশেম কালের কণ্ঠকে বলেন, কমিটির কাছে আসা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো বিদেশি নাগরিক এ দেশে অবৈধভাবে ব্যবসা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাণিজ্য মেলায় যাতে বিদেশি নাগরিকরা অবৈধভাবে স্টল বা প্যাভিলিয়ন নিতে না পারেন, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কমিটির গত বৈঠকে মেলার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা শেষে মেলায় যাতে কোনো ধরনের অনিয়ম না হয় সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বাণিজ্য মেলার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য আগামী ৩০ নভেম্বর সংসদীয় কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে তিনি জানান।
রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো যৌথভাবে প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে। বাংলাদেশি উৎপাদক এবং রপ্তানি ও আমদানিকারকদের পাশাপাশি বিদেশি ব্যবসায়ীরা এই মেলায় অংশ নেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বাণিজ্য মেলার নামে পণ্য আমদানি এবং মেলায় প্যাভিলিয়ন ও স্টল বরাদ্দে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অনিয়ম ও তা মেলার বাইরে বিক্রি করে দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে।
অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেট আগের বছরগুলোর মতো এবারও পণ্য আমদানি ও মেলায় প্যাভিলিয়ন এবং স্টল বরাদ্দ নেওয়ার জন্য তদবির চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বাণিজ্য মেলায় পণ্য আমদানির জন্য ব্যবসায়ীরা ৪০ শতাংশ শুল্ক ছাড় পেয়ে থাকেন। এই শুল্ক ছাড়ের সুযোগ নিয়ে শত শত কোটি টাকার পণ্য আমদানি করছে একটি চক্র। ইপিবি ও কাস্টমসকে ম্যানেজ করে বাণিজ্য মেলায় স্টল বরাদ্দ নিয়ে তাঁরা নামে-বেনামে পণ্য আমদানি করছেন। বিশেষ করে পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি অনিয়ম হচ্ছে। বাণিজ্য মেলায় বিদেশিদের মধ্যে পাকিস্তানিদের অংশগ্রহণ সব থেকে বেশি। গত বাণিজ্য মেলায় বিদেশি ৩৩টি প্যাভিলিয়ন ও স্টলের মধ্যে পাকিস্তানেরই ছিল ১০টি। জানা গেছে, এবারের বাণিজ্য মেলার জন্য (আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয়) করা প্রাথমিক তালিকায় ৪৭টি বিদেশি প্যাভিলিয়ন ও স্টলের মধ্যে পাকিস্তানের জন্য ২০টি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
ওই সিন্ডিকেটটি দেশীয় ব্যবসায়ীদের নামে প্যাভিলিয়ন ও স্টল ভাড়া নিয়েও পণ্য আমদানি ও অবৈধভাবে ব্যবসা করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কাপড়, কসমেটিকস সামগ্রী, টেঙ্টাইল পার্টস, মেশিনারিজ, মার্বেল সামগ্রী, ফার্নিচার ইত্যাদি। এর মধ্যে পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, কাপড়, ওড়না, শালসহ কাপড় ও কসমেটিকসের ব্যবসা সারা বছরই চলে। ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে হোটেলে বা অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে পাকিস্তানি ব্যবসায়ীরা সারা বছরই এই ব্যবসা করেন। এঁদের কেউ কেউ পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন বাংলাদেশে বসবাস করছে।
সাধারণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ট্যুরিস্ট ভিসায় পাকিস্তানি নাগরিকরা এসে মেলার নামে মালামাল আমদানি করে মার্কেটগুলোতে কম দামে বিক্রি করায় বৈধ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অবৈধ ব্যবসায়ীদের কারণে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বৈধ আমদানিকারকরা ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ আইন অনুযায়ী ট্যুরিস্ট ভিসায় কেন, বিজনেস ভিসায় এসেও কোনো বিদেশি নাগরিক মার্কেটে মালামাল বিক্রি বা দোকান নিয়ে ব্যবসা করতে পারবে না। সে কেবল এ দেশের মালামাল আমদানি করতে পারবে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ওইসব পাকিস্তানি ব্যবসায়ী বাংলাদেশে আসার সময় সিগারেট, আমদানিনিষিদ্ধ ওষুধ ও জাল মুদ্রাসহ অবৈধ মালামাল নিয়ে আসে। আর ব্যবসার আড়ালে তাঁরা জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন বলে সংসদীয় কমিটির কাছে দেওয়া অভিযোগে দাবি করা হয়েছে।
সংসদীয় কমিটির কাছে দেওয়া অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, রাজধানীর নবাবপুর রোড, চাঁদনী চক মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোডের সুবাস্তু অ্যারোমা ও বলাকা সুপার মার্কেট, গুলশানের পিংক সিটি, ধানমণ্ডির প্রিন্স প্লাজাসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানে পাকিস্তানি নাগরিকরা অবৈধভাবে ব্যবসা করছেন। গত বছর ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় একটি প্যাভিলিয়ন এবং বিভিন্ন প্যাভিলিয়নে ৪৮টি স্টল বরাদ্দ নিয়ে ব্যবসা করেন নিজাম নামে এক পাকিস্তানি ব্যবসায়ী। নেজাম ফেব্রিঙ্ নামে তিনি মেলায় স্টল বরাদ্দ নিয়ে ছিলেন। তাঁর মতো ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে সারা বছর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বড় ব্যবসায়ী হচ্ছেন কাজ্জাফি ও শেফায়েত। তাঁরা গাউছিয়া মার্কেটের পাশে সুবাস্তু অ্যারোমা মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় দোকান নিয়ে ব্যবসা করেন। একই মার্কেটের দোতলায় ব্যবসা করেন পাকিস্তানের নাগরিক জেনায়েদ লাখানী। এ ছাড়া গুলশানের পিংক সিটির চতুর্থ তলায় কামরান জি, ধানমণ্ডির প্রিন্স প্লাজার দ্বিতীয় তলায় শাহেদ ফারুকী এবং মোহাম্মদ মঞ্জুর আলমসহ অনেকেই ব্যবসা করেন। আর হাশিমপুরী ও কালিমপুরী নামের দুজন গুলশানের হোটেলে রুম ভাড়া নিয়ে পাকিস্তানি পণ্যের ব্যবসা করেন। এই পাকিস্তানিদের কারোরই ওয়ার্ক পারমিট নেই। বাণিজ্য মেলাকে সামনে রেখেই তাঁরা বিভিন্ন পণ্যের বড় চালান আমদানি করে থাকেন।
পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য আমদানি করে সারা বছর বিভিন্ন অভিজাত বিপণীতে ব্যবসা করে থাকেন এ দেশেরও অনেক ব্যবসায়ী। এঁরা প্যাভিলিয়ন ভাড়া নিয়ে তা ছোট ছোট স্টলে ভাগ করে বেচাবিক্রিতে নামেন। এঁদের একজন 'বিহারি পারভেজ' নামে পরিচিত মিরপুর ১১নং সেকশনের এক ব্যবসায়ী এবারও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ নেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এক সময় পাকিস্তানের নাগরিক এই পারভেজ গত বছর বাণিজ্য মেলায় পলি এন্টারপ্রাইজের নামে পণ্য আমদানি করেছিলেন এবং স্টল বরাদ্দ নিয়েছিলেন। কালের কণ্ঠের কাছে প্রথমে নিজের নামে স্টল ভাড়া নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও পরক্ষণে বলেন, ওটা অন্যের নামে ছিল। তবে কার নামে ছিল তা তিনি বলতে চাননি। তাঁর দাবি, মেলার নামে আনা পণ্য মেলায় বিক্রি করা হয়। বাইরে বিক্রির পণ্য আলাদাভাবে আমদানি করা হয়। মেলার নামে পণ্য আমদানি করে বাইরে বিক্রির সঙ্গে তিনি জড়িত নন।
তবে গত কয়েক বছর মেলায় পাকিস্তানি পণ্যের স্টল দিলেও এবার বরাদ্দ পাননি বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ফারুক আলম। এ জে গিফারি অ্যান্ড জাকারিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক ফারুক আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, এবার মেলার জন্য তাঁকে পণ্য আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়নি। কী কারণে অনুমতি পাননি, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কারণ জানার চেষ্টা করিনি। তিনি সারা বছর পাকিস্তানি পণ্যের ব্যবসা করার কথা স্বীকার করলেও বাণিজ্য মেলার নামে আমদানি করা পণ্য বাইরে বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর কথা_ব্যবসায় কোনো অনিয়ম করলে তো সরকার লাইসেন্স বাতিল করে দিত।
এ বিষয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার প্রকল্প পরিচালক, ইপিবি কর্মকর্তা এহসানুল কবীর কালের কণ্ঠকে বলেন, গত বছর মেলায় অনিয়মের সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাঁরা এবার স্টল বরাদ্দ ও পণ্য আমদানির সুযোগ পাবেন না। সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ইপিবির কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ এলে তা সঙ্গে সঙ্গে কাস্টমসকে জানানো হবে। কারণ মেলায় বিক্রির জন্য কম শুল্কে পণ্য আমদানি করে তা বাইরে বিক্রি করলে কাস্টমস ব্যবস্থা নেবে। মেলায় স্টল বরাদ্দ নিয়ে যাতে অনিয়ম না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সব ধরনের অনিয়ম বন্ধে ইপিবি সতর্ক রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ বি এম আবুল কাশেম কালের কণ্ঠকে বলেন, কমিটির কাছে আসা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো বিদেশি নাগরিক এ দেশে অবৈধভাবে ব্যবসা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাণিজ্য মেলায় যাতে বিদেশি নাগরিকরা অবৈধভাবে স্টল বা প্যাভিলিয়ন নিতে না পারেন, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কমিটির গত বৈঠকে মেলার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা শেষে মেলায় যাতে কোনো ধরনের অনিয়ম না হয় সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বাণিজ্য মেলার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য আগামী ৩০ নভেম্বর সংসদীয় কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে তিনি জানান।
No comments