চাঁদ দেখা: মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবের তারিখ নির্ধারণে বিজ্ঞানকে কেন ব্যবহার করা যাচ্ছে না
চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রান্তির কারণে প্রায়শই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে মুসলিমরা।
মুসলিমদের
ধর্মীয় উৎসবগুলোর তারিখ নির্ধারিত হয় নতুন চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে।
মুসলমানরা যে হিজরি সন ব্যবহার করে, তা চন্দ্রবর্ষপঞ্জী নির্ভর। কিন্তু
আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের মাধ্যমে কোন দেশে কখন নতুন চাঁদ দেখা যাবে তা বহু
আগে থেকেই হিসেব করে বলে দেয়া সম্ভব।
কিন্তু তারপরও কেন তাহলে মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবের তারিখ নির্ধারণ নিয়ে এত বিতর্ক এবং বিভ্রান্তি? কেন একটি নির্দিষ্ট তারিখে ধর্মীয় উৎসব করার ব্যাপারে মুসলিম ধর্মীয় নেতারা এক হতে পারছেন না?
এ নিয়ে বিবিসি বাংলার শাকিল আনোয়ার কথা বলেছিলেন বাংলাদেশের একজন নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী এবং ইসলাম ও বিজ্ঞান বিষয়ক বেশ কয়েকটি বইয়ের লেখক ড: শমসের আলীর সঙ্গে।
ড: আলীর মত হচ্ছে, ধর্মীয় উৎসবের তারিখ নির্ধারণের জন্য ইসলামে যে বিধান আছে, তার সঙ্গে বিজ্ঞানের কোন বিরোধ নেই। কাজেই আধুনিক জ্যোর্তিবিজ্ঞান প্রয়োগ করে খুব সহজেই বলে দেয়া সম্ভব কখন হিজরি সনের নতুন চান্দ্র মাস শুরু হচ্ছে। ফলে সারা বিশ্বের মুসলমানরা চাইলে একই দিনেই পালন করতে পারেন তাদের ধর্মীয় উৎসব, এ নিয়ে এত বিভ্রান্তি বা সংশয় থাকে না।
তারিখ নির্ধারণ নিয়ে কেন এত বিতর্ক?
খালি চোখে চাঁদ দেখা যাওয়ার পরই হিজরি সনের একটি নতুন চান্দ্র মাস শুরু হবে, এটাই ইসলামের বিধান। বহু ধর্মীয় নেতা এখনো পর্যন্ত খালি চোখে চাঁদ দেখা যাওয়ার ওপরই নির্ভর করতে চান।
ডঃ শমসের আলী বলছেন, তারিখ নির্ধারণ নিয়ে এক সময় যে বিতর্ক হতো, তার একটা যুক্তি ছিল। কারণ তখন চাঁদ খালি চোখেই দেখতে হতো। কোন পাহাড়ের এক দিক থেকে চাঁদ দেখা যেত, অন্যদিক থেকে দেখা যেত না। মুসলমানদের যে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, সেগুলো ছিল বিচ্ছিন্ন, যোগাযোগ এত তড়িৎ এবং ঘনিষ্ঠ ছিল না।
"কিন্তু এখন এসব অজুহাত দেয়ার আর সুযোগ নেই", বলছেন তিনি।
"পৃথিবী তো একটাই। চাঁদও একটি। প্রতি মাসেই চাঁদ ওঠে। কোথাও চাঁদ দেখা যাওয়ার মানে হচ্ছে সেই চন্দ্র মাস শুরু হয়ে গেল। পুরো বিশ্ব এখন তাৎক্ষণিক এবং ব্যাপক যোগাযোগের আওতায়। কাজেই এখন কোন একটি জায়গায় চাঁদ দেখা যাওয়ার পর একই দিনে উৎসব না করার বিরুদ্ধে কোন ওজর আপত্তি থাকতে পারে না।"
ডঃ শমসের আলী বলেন, বিশ্বের নামকরা সব ধর্মীয় পন্ডিতরা পরামর্শ করে ঠিক করেছিলেন একটা দেশে চাঁদ দেখা গেলে, অন্যদেশেও সেটা মানা হবে। ওআইসির (অর্গেনাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন) এই সিদ্ধান্ত বিশ্বের অনেক দেশই গ্রহণ করেছে, কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো শুধু নেয়নি।
বাংলাদেশ কেন পারছে না
ডঃ শমসের আলী জানান, এই বিষয়টি নিয়ে তারা বাংলাদেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে তিনদিন ধরে বৈঠকও করেছিলেন।
"ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আমরা তিন দিন ব্যাপী একটি আলোচনা করেছিলাম। সব যুক্তি তর্ক তুলে ধরে বললাম, যে এখন যে ধরণের যোগাযোগ সারা বিশ্বে, একটা জায়গায় চাঁদ উঠলে সেটা সবার জন্য বাইন্ডিং হবে। পৃথিবীর অন্য কোথাও চাঁদ দেখা গেল কিনা, সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নিন, এটাই আমরা বলেছিলাম। গত বছর আমরা একথা বলি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে বলা হয়েছিল এটা প্রধানমন্ত্রীকে বলার জন্য।"
"আমার অনুমান, প্রধানমন্ত্রী এই সায়েন্টিফিক জিনিসটার ব্যাপারে কনভিন্সড। কিন্তু উনার তো একটা পরামর্শ দরকার। কারও তো বলা উচিৎ। ওআইসির সদস্য হিসেবে, অন্য কোন দেশে চাঁদ দেখা গেলে, সেটিকে আমরা দেখা গেছে বলে গণ্য করবো। এই সিদ্ধান্ত নিলেই কিন্তু আর সমস্যা থাকে না।"
ডঃ শমসের আলী বলেন, ধর্মীয় ক্যালেন্ডারের শুরুটা ধর্মীয়, কিন্ত গণনার পদ্ধতি তো বৈজ্ঞানিক । চাঁদ ওঠা, সূর্য ওঠা, এগুলো তো বৈজ্ঞানিক। বাংলাদেশ এখন কক্ষপথে স্যাটেলাইট ছেড়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপারে বাংলাদেশের বেশ আগ্রহ। তাহলে কেন আমরা এটা মেনে নেব না।"
আন্তর্জাতিকভাবে কী সিদ্ধান্ত হয়েছিল
২০১৬ সালের মে মাসে ইস্তাম্বুলে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়েছিল তুরস্কের উদ্যোগে। সেখানে তুরস্ক, কাতার, জর্ডান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মরোক্কো সহ ৫০টি দেশের ধর্মীয় পন্ডিত এবং বিজ্ঞানীরা অংশ নেন। ইন্টারন্যাশনাল হিজরি ক্যালেন্ডার ইউনিয়ন কংগ্রেস নামে পরিচিত এই সম্মেলনে হিজরি ক্যালেন্ডার নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের মধ্যে যে বিভক্তি সেটা নিরসনে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সম্মেলনে দুটি প্রস্তাব বিবেচনা করা হয়েছিল। প্রথমত সারা বিশ্বের জন্য দ্বৈত বর্ষপঞ্জী চালু করা, পূর্ব গোলার্ধের জন্য একটি, আর পশ্চিম গোলার্ধের জন্য একটি। আর দ্বিতীয় প্রস্তাবটি ছিল, সবাইকে একটি বর্ষপঞ্জীর মধ্যে নিয়ে আসা। শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞ একটি বর্ষপঞ্জীর পক্ষেই মত দেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্সি অব রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্সের সেসময়ের প্রেসিডেন্ট মেহমেট গোরমেজ তখন একটি তুর্কী সংবাদপত্র ডেইলি সাবাহ'কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, এই নতুন বর্ষপঞ্জী মেনে নিতে কিছু দেশ হয়তো অসুবিধায় পড়বে, কিন্তু এটি যাতে বিশ্বজুড়ে গৃহীত হয় সে ব্যাপারে ওআইসি তাদের প্রভাব কাজে লাগাতে পারে।
মিস্টার গোরমেজ আরও বলেন, "বৈজ্ঞানিক তথ্য সম্পর্কে ইসলামী দুনিয়ায় এক ধরণের ভুল ধারণা আছে। আজকের যুগে, যখন মানুষ চাঁদে যেতে পারে এবং চাঁদ-সূর্যের প্রতি মূহুর্তের গতি পর্যবেক্ষণ করতে পারে, তখন পাহাড় বেয়ে উঠে খালি চোখে চাঁদ দেখতে হবে বলে গোঁ ধরে থাকাটা ভুল।"
কিন্তু তারপরও কেন তাহলে মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবের তারিখ নির্ধারণ নিয়ে এত বিতর্ক এবং বিভ্রান্তি? কেন একটি নির্দিষ্ট তারিখে ধর্মীয় উৎসব করার ব্যাপারে মুসলিম ধর্মীয় নেতারা এক হতে পারছেন না?
এ নিয়ে বিবিসি বাংলার শাকিল আনোয়ার কথা বলেছিলেন বাংলাদেশের একজন নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী এবং ইসলাম ও বিজ্ঞান বিষয়ক বেশ কয়েকটি বইয়ের লেখক ড: শমসের আলীর সঙ্গে।
ড: আলীর মত হচ্ছে, ধর্মীয় উৎসবের তারিখ নির্ধারণের জন্য ইসলামে যে বিধান আছে, তার সঙ্গে বিজ্ঞানের কোন বিরোধ নেই। কাজেই আধুনিক জ্যোর্তিবিজ্ঞান প্রয়োগ করে খুব সহজেই বলে দেয়া সম্ভব কখন হিজরি সনের নতুন চান্দ্র মাস শুরু হচ্ছে। ফলে সারা বিশ্বের মুসলমানরা চাইলে একই দিনেই পালন করতে পারেন তাদের ধর্মীয় উৎসব, এ নিয়ে এত বিভ্রান্তি বা সংশয় থাকে না।
তারিখ নির্ধারণ নিয়ে কেন এত বিতর্ক?
খালি চোখে চাঁদ দেখা যাওয়ার পরই হিজরি সনের একটি নতুন চান্দ্র মাস শুরু হবে, এটাই ইসলামের বিধান। বহু ধর্মীয় নেতা এখনো পর্যন্ত খালি চোখে চাঁদ দেখা যাওয়ার ওপরই নির্ভর করতে চান।
ডঃ শমসের আলী বলছেন, তারিখ নির্ধারণ নিয়ে এক সময় যে বিতর্ক হতো, তার একটা যুক্তি ছিল। কারণ তখন চাঁদ খালি চোখেই দেখতে হতো। কোন পাহাড়ের এক দিক থেকে চাঁদ দেখা যেত, অন্যদিক থেকে দেখা যেত না। মুসলমানদের যে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, সেগুলো ছিল বিচ্ছিন্ন, যোগাযোগ এত তড়িৎ এবং ঘনিষ্ঠ ছিল না।
"কিন্তু এখন এসব অজুহাত দেয়ার আর সুযোগ নেই", বলছেন তিনি।
"পৃথিবী তো একটাই। চাঁদও একটি। প্রতি মাসেই চাঁদ ওঠে। কোথাও চাঁদ দেখা যাওয়ার মানে হচ্ছে সেই চন্দ্র মাস শুরু হয়ে গেল। পুরো বিশ্ব এখন তাৎক্ষণিক এবং ব্যাপক যোগাযোগের আওতায়। কাজেই এখন কোন একটি জায়গায় চাঁদ দেখা যাওয়ার পর একই দিনে উৎসব না করার বিরুদ্ধে কোন ওজর আপত্তি থাকতে পারে না।"
ডঃ শমসের আলী বলেন, বিশ্বের নামকরা সব ধর্মীয় পন্ডিতরা পরামর্শ করে ঠিক করেছিলেন একটা দেশে চাঁদ দেখা গেলে, অন্যদেশেও সেটা মানা হবে। ওআইসির (অর্গেনাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন) এই সিদ্ধান্ত বিশ্বের অনেক দেশই গ্রহণ করেছে, কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো শুধু নেয়নি।
বাংলাদেশ কেন পারছে না
ডঃ শমসের আলী জানান, এই বিষয়টি নিয়ে তারা বাংলাদেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে তিনদিন ধরে বৈঠকও করেছিলেন।
"ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আমরা তিন দিন ব্যাপী একটি আলোচনা করেছিলাম। সব যুক্তি তর্ক তুলে ধরে বললাম, যে এখন যে ধরণের যোগাযোগ সারা বিশ্বে, একটা জায়গায় চাঁদ উঠলে সেটা সবার জন্য বাইন্ডিং হবে। পৃথিবীর অন্য কোথাও চাঁদ দেখা গেল কিনা, সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নিন, এটাই আমরা বলেছিলাম। গত বছর আমরা একথা বলি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে বলা হয়েছিল এটা প্রধানমন্ত্রীকে বলার জন্য।"
"আমার অনুমান, প্রধানমন্ত্রী এই সায়েন্টিফিক জিনিসটার ব্যাপারে কনভিন্সড। কিন্তু উনার তো একটা পরামর্শ দরকার। কারও তো বলা উচিৎ। ওআইসির সদস্য হিসেবে, অন্য কোন দেশে চাঁদ দেখা গেলে, সেটিকে আমরা দেখা গেছে বলে গণ্য করবো। এই সিদ্ধান্ত নিলেই কিন্তু আর সমস্যা থাকে না।"
ডঃ শমসের আলী বলেন, ধর্মীয় ক্যালেন্ডারের শুরুটা ধর্মীয়, কিন্ত গণনার পদ্ধতি তো বৈজ্ঞানিক । চাঁদ ওঠা, সূর্য ওঠা, এগুলো তো বৈজ্ঞানিক। বাংলাদেশ এখন কক্ষপথে স্যাটেলাইট ছেড়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপারে বাংলাদেশের বেশ আগ্রহ। তাহলে কেন আমরা এটা মেনে নেব না।"
আন্তর্জাতিকভাবে কী সিদ্ধান্ত হয়েছিল
২০১৬ সালের মে মাসে ইস্তাম্বুলে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়েছিল তুরস্কের উদ্যোগে। সেখানে তুরস্ক, কাতার, জর্ডান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মরোক্কো সহ ৫০টি দেশের ধর্মীয় পন্ডিত এবং বিজ্ঞানীরা অংশ নেন। ইন্টারন্যাশনাল হিজরি ক্যালেন্ডার ইউনিয়ন কংগ্রেস নামে পরিচিত এই সম্মেলনে হিজরি ক্যালেন্ডার নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের মধ্যে যে বিভক্তি সেটা নিরসনে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সম্মেলনে দুটি প্রস্তাব বিবেচনা করা হয়েছিল। প্রথমত সারা বিশ্বের জন্য দ্বৈত বর্ষপঞ্জী চালু করা, পূর্ব গোলার্ধের জন্য একটি, আর পশ্চিম গোলার্ধের জন্য একটি। আর দ্বিতীয় প্রস্তাবটি ছিল, সবাইকে একটি বর্ষপঞ্জীর মধ্যে নিয়ে আসা। শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞ একটি বর্ষপঞ্জীর পক্ষেই মত দেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্সি অব রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্সের সেসময়ের প্রেসিডেন্ট মেহমেট গোরমেজ তখন একটি তুর্কী সংবাদপত্র ডেইলি সাবাহ'কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, এই নতুন বর্ষপঞ্জী মেনে নিতে কিছু দেশ হয়তো অসুবিধায় পড়বে, কিন্তু এটি যাতে বিশ্বজুড়ে গৃহীত হয় সে ব্যাপারে ওআইসি তাদের প্রভাব কাজে লাগাতে পারে।
মিস্টার গোরমেজ আরও বলেন, "বৈজ্ঞানিক তথ্য সম্পর্কে ইসলামী দুনিয়ায় এক ধরণের ভুল ধারণা আছে। আজকের যুগে, যখন মানুষ চাঁদে যেতে পারে এবং চাঁদ-সূর্যের প্রতি মূহুর্তের গতি পর্যবেক্ষণ করতে পারে, তখন পাহাড় বেয়ে উঠে খালি চোখে চাঁদ দেখতে হবে বলে গোঁ ধরে থাকাটা ভুল।"
No comments