ক্রিমিয়ার ইতিহাস : তাতার মুসলিম
ভৌগলিক অবস্থান :
ক্রিমিয়ার তাতার হচ্ছে কৃষ্ণ সাগরের উত্তর উপকূলে অবস্থিত ইউক্রেনের একটি স্বায়িত্বস্বাসিত প্রজাতন্ত্র। বহু উত্তান পতনের নীরব সাক্ষী ক্রিমিয়া। ক্রিমিয়ার এ বিস্তীর্ণ অঞ্চল শত বছর ধরে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও শাসকদের দ্বারা শাসিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। ২৬, ২০০ কিলোমিটারের আয়তন বিশিষ্ট ক্রিমিয়া প্রজাতন্ত্রের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৯, ৭৩, ১৮৫ জন। ক্রিমিয়া হচ্ছে ক্রিমিয়ান তাতারদের জন্মভূমি, যারা নৃতাত্ত্বিকভাবে সংখ্যালঘু। গোটা জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ ক্রিমিয় তাতার। ক্রিমিয়ান তাতারদের পূর্বপুরুষ হচ্ছে তুর্কী। ত্রয়োদশ শতাব্দী হতে তারা ক্রিমিয়ান উপদ্বীপে বসবাস করে আসছে।
পূর্বের অবস্থান :
মূল তাতারগণ পঞ্চম শতাব্দীতে গোবী মরুভূমির উত্তর পশ্চিমে বসবাস করত। নবম শতাব্দীতে খিতানগণ তাদের এলাকার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করলে তারা দক্ষিণ অভিমূখে যাত্রা করে। চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে মোঙ্গল শাসন কায়েম করে। চেঙ্গিস খানের দৌহিত্র বাতু খানের পরিচালনায় তাতারগণ পশ্চিম দিকে রাশিয়ার সমতল অভিমূখে রওনা হয়। যাত্রার সময় তারা তাদের সাথে তুর্কী উরাল বংশোদ্ভুত জনগণকেও সাথে নিয়ে যায়। চেঙ্গিস খানের বংশধর বার্কাই খানের (১২৫৭-১২৬৭) আমলে তাতারদের সাথে ইসলামের পরিচয় ঘটে।
ইসলামে প্রবেশ :
উযবেগের (১৩১৩-১৩৪০) ক্ষমতায় আরোহণের আগ পর্যন্ত এতদঞ্চলে ইসলাম ব্যাপকতা লাভ করেনি। চতুর্দশ শতকের শেষের দিকে ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতি তাতাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। চতুর্দশ শতকে পরিভ্রমণকারী পর্যটকগণ এতদঞ্চলে ইসলামী সংস্কৃতি ও সভ্যতার নিদর্শন প্রত্যক্ষ করেন। সময়ের বিবর্তনে ইসলামী অনুশাসন, সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রতি তাতারদের আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
তাতার রাজ্য :
কিপচাক সাম্রাজ্যের (Golden Hordes) পতনের পর উক্ত অঞ্চলের উপর গড়ে উঠা তাতার রাজ্য সমূহের মধ্যে ক্রিমিয়াই ছিল সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী স্বাধীন রাজশক্তি। ক্রিমিয়ার এই তাতার বংশের রাজত্বকাল ১৪২০ হতে ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় দীর্ঘ সাড়ে তিন শ’ বছর স্থায়ী হয় এবং সিংকোরাপোলকে রাজধানী করে পর্যায়ক্রমে ৬২ জন তাতার খান ক্ষমতায় অধিষ্টিত থেকে রাজনৈতিক প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম হন। কাজান বংশের প্রতিষ্ঠাতা উলুঘ মুহাম্মদের জনৈক ভ্রাতা তাশ-তিমুর তোখতামিশের সেনাপতি ছিলেন এবং তিনিই ক্রিমিয়ায় তাতার বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।
জার আইভানকে পরাজিত করে মস্কো জয় :
গীরাই খান নামে পরিচিত তাতার শাসকদের সাথে পোলান্ডের ডিউক ও উসমানীয় তুর্কী সুলতানগণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে ক্রিমিয়া অবস্থিত হওয়ায় এর ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে সবাই সজাগ ছিলেন। বহিঃশত্র“র আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে তাতারগণ দু’লাখ সদস্য বিশিষ্ট দূর্ধর্র্ষ সেনাবাহিনী গঠন করেন যার মাধ্যমে পোলান্ড, রাশিয়া ও কোসাকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান পরিচালিত হয়। এমনকি ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম দওলত গিরাই এর নেতৃত্বে তাতার বাহিনী রাশিয়ার জার আইভানকে পরাজিত করে মস্কো নগরী বিধ্বস্ত করে দেয় এবং জারকে কর প্রদানে বাধ্য করে। সে সময় ককেসাস, দাগিস্তান ও রুমালিয়ার উপরও তাতারদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
রাশিয়া কর্তৃক ক্রিমিয়া জয় :
১৪৭৫ সালে উসমানীয় সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহর নেতৃত্বে এই দ্বীপ সম্পূর্ণভাবে মুসলিমদের অধীনে চলে আসে যা তিন শতক বলবৎ থাকে। ক্রিমিয়ার মুসলিম তাতার শাসক উসমানীয় খিলাফতের প্রতিনিধি হয়ে শাসন করতে থাকেন।
১৭৮০ এর দশকে রাশিয়ার নিকট উসমানীয়রা পরাজিত হলে খলিফাহ প্রথম আব্দুল হামিদ বাধ্য হন একটি দুঃখজনক চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাতে ক্রিমিয়াকে স্বাধীনতা দেয়া হয়। কিন্তু ক্রিমিয়ার ভৌগলিক অবস্থান রাশিয়ার কাছে হওয়ায় তারা ক্রিমিয়ায় দখলদারিত্ব শুরু করে। ক্রিমিয়ার মুসলিম শাসক ইস্তাম্বুলে আকুল আবেদন জানান, "আমরা স্বাধীনতা চাইনা, আমরা খিলাফতের সরাসরি অধীনে জীবন যাপন করতে চাই। আপনারা আবার সৈন্য নিয়ে এখানে আসেন" কিন্তু ইস্তাম্বুল তখন এতই দুর্বল ছিল যে রাশিয়ার সাথে করা চুক্তি ভাঙ্গার সাহস পায়নি তারা।
অবশেষে ৮ এপ্রিল, ১৭৮৩ সালের এই দিনে রাশিয়া ক্রিমিয়াকে নিজের সাম্রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়।...!!!!
ক্রিমিয়া স্বাধীন রাজ্য :
১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে সম্পাদিত কুচকায়নারজির সন্ধিতে ক্রিমিয়া স্বাধীন রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৭৭৪ হতে ১৭৭৬ সাল পর্যন্ত তাতারগন নির্বিঘ্নে ক্রিমিয়া ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ব্যবসা বানিজ্য সম্প্রসারন করেন। নিজেদের সন্তানদেরকে তাঁরা উচ্চ শিক্ষার জন্য বুখারার বিখ্যাত মাদ্রাসায় পাঠাতে থাকেন। এমনকি তাতারদের পূর্ব পুরুষগণ যারা খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তাঁরা আবার ইসলাম ধর্মে ফিরে আসেন। কিন্তু তাতারদের এ স্বাধীনতা প্রাপ্তি বেশী দিন স্থায়ী হয়নি।
সন্ধি ভঙ্গঃ ২য় ক্যাথরিন
পরিশেষে ক্রিমিয়ার খান শাহীন গিরাই এর সাথে তুর্কী সুলতানের মনোমালিন্যের সুযোগে সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ৯ই এপ্রিল জারিনা দ্বিতীয় ক্যাথারিণ ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভূক্ত করে নেন। উক্ত ঘোষণায় তাতারদের ধর্মীয়, আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার অক্ষুন্ন থাকার আশ্বাস দেয়া হলেও তা আদৌ কার্যকর হয়নি।
রুশদের অধীনে ক্রিমিয়া :
বস্তুত রুশদের অধীনে ক্রিমিয়ার তাতার মুসলিম জাতি গোষ্ঠীর পরবর্তী ইতিহাস বড়ই মর্মন্তুদ ও হৃদয়স্পর্শী। জারদের অনিয়ন্ত্রিত বর্বরতায় তাতারগণ সীমাহীন অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিপীড়নের শিকার হন এমনকি জোর পূর্বক তাতারদের ধর্ম পরিবর্তনে বাধ্য করা হয়। নিজেদের সমাজ, ধর্ম, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির ভিত্তি যখন বিধ্বস্ত হয়ে যায় তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও দু’লাখ পঞ্চাশ হাজার তাতার মুসলিম নারী-পুরুষ স্বদেশভূমি পরিত্যাগ করে তুরস্ক ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে আশ্রয় নেন। শত নিগ্রহ ও নির্যাতন স্বত্ত্বেও যারা পৈত্রিক বাস্তুভিটা পরিত্যাগ করেনি তাদের উপর নেমে আসে পৈশাচিকতার খড়গ কৃপাণ।
ক্রিমিয়ার যুদ্ধ :
১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ শুরু হলে এতদঞ্চল সাময়িক ভাবে তুরস্ক ও ইংরেজদের অধীনে চলে যায়। পরিবর্তিত এ পরিস্থিতি তাতার মুসলমানদের জন্য সৃষ্টি করে নতুন বিপদ। রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাজদ্রোহিতার অপরাধে ক্রিমিয়ার তাতারদের অভিযুক্ত করা হয়। জার সন্ত্রাসীগোষ্ঠী জিঘাংসার উন্মত্ততায় নির্বিচারে ধর্ষণ, অগ্নি সংযোগ ও নিপীড়ন চালিয়ে তাতারদের নির্মূল প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়। বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে এ Ethning cleansing অভিযান।
ইতিহাসবিদ জি, হ্যান্বলী Central Asia শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ক্রিমিয়ায় যেখানে তাতার মুসলমানদের সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ, নির্মূল অভিযানের ফলে ১৯১৭ সালে সে সংখ্যা এসে দাঁড়ায় মাত্র এক লাখে।
সোভিয়েত সোশ্যালিষ্ট রিপাবলিক ইউনিয়নের (USSR) অন্তর্ভূক্ত
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে বলশেভিকগণ ক্রিমিয়াকে সোভিয়েত সোশ্যালিষ্ট রিপাবলিক ইউনিয়নের (USSR) অন্তর্ভূক্ত করে নেয়। ১৯২০ হতে ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মোট সাত বছর স্বায়ত্বশাসিত প্রজাতন্ত্র হিসেবে ক্রিমিয়া পর্যাপ্ত স্বাধীনতা ভোগ করে। এমনকি রাশিয়ার কমিউনিষ্ট পার্টি ও মিল্লি ফিরকা কোয়ালিশন সরকার গঠন করে। তাতার ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয় এবং মুসলমানগণ সরকারী উচ্চপদে নিযুক্তি লাভ করেন। কিন্তু দূর্ভাগ্য ক্রিমিয়ার তাতার মুসলমানদের এ সৌভাগ্য বেশী দিন স্থায়ী হয়নি। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে মস্কো সরকার তাতার জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূল করার জন্য পূর্বাপেক্ষা কঠোরতম পন্থায় আঘাত হানে। তাতার মুসলমানদের স্বাধীনভাবে বাঁচার স্বপ্নসাধ সাময়িকভাবে ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লবের পূর্বে পুরো ক্রিমি য়ায় মসজিদের সংখ্যা ছিল ১৭৫০, বলশেভিক বিপ্লবের পর তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় মাত্র ১০০ তে।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ ও ষ্ট্যালিন :
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় পুরো তাতার জনগোষ্ঠীকে ষ্ট্যালিন নাজী জার্মানীর দালাল হিসেবে অভিযুক্ত করে প্রতিশোধের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৪ সালে ষ্ট্যালিন সরকার ক্রিমিয়ান তাতারদের ভাষাকে সিরিলিক (Cyrillic) অক্ষরে পরিবর্র্তিত করে দেয়। রুশ বুদ্ধিজীবিদের মাধ্যমে ক্রিমিয়দের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে মুছে ফেলা হয়। পারিবারিক জীবনে, সামাজিক বন্ধনে ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রচন্ডরূপে ধ্বস নামে। অতঃপর শুরু হয় তাতার মুসলমানদের পুনঃ উৎখাতের পালা। ষ্ট্যালিনের নির্দেশে তাতার মুসলমানদেরকে নিজ মাতৃভূমি ক্রিমিয়া হতে জোর করে বের করে দেয়া হয়। বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ, যুবা-বৃদ্ধ ও শিশু গণহত্যার শিকার হয়ে পড়ে। অধিকাংশ তাতার বাস্তু-ভিটা ও সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে সাইবেরিয়া ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিশেষত উযবেকিস্তানে উদ্বাস্তু রূপে আশ্রয় নেয়। তাতারগণ সোভিয়েত শাসনের প্রতি ‘অনুগত’ নয় ষ্ট্যালিনের এ যুক্তিই ছিল নির্বাসনের ভিত্তি। তিনি তাতারদের ‘অবিশ্বস্ত নাগরিক’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। এক পরিসংখ্যানে জানা যায় যে, ৫০ হাজার থেকে এক লাখ তাতারকে ষ্ট্যালিন দেশ ত্যাগে বাধ্য করেন। বিপুল সংখ্যক তাতারের জীবন প্রদীপ নিভে যায় কারা অন্তরালে। তখনকার আদমশুমারী অনুযায়ী তাতার মুসলমানদের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩ শতাংশে।
ষষ্টদশ ও বিংশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে জার রাশিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ক্রিমিয়ার জনগণের প্রতি দমন মূলক শাসন ও পক্ষপাতদুষ্ট আর্থ-সামাজিক নীতি গ্রহণ করেও ব্যাপকভাবে এ অঞ্চলকে রুশীয়করণ করতে ব্যর্থ হয়। অধিকাংশ জনগণ রুশ আত্নীকরণকে দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করেন এবং ইসলামী পরিচিতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইসলামী অনুশাসন প্রতিপালনের প্রতি দৃঢ়তার ফলে তাতার জনগোষ্ঠী বিভিন্ন সামাজিক পরিমন্ডলে বসবাস করেও একটি ভারসাম্যপূর্ণ রীতি বজায় রাখতে সক্ষম হন। প্রবল বিপত্তি সত্ত্বেও মুসলমান পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকাকে তাতারগণ গৌরব মনে করেন।
ইতোমধ্যে আড়াই লাখ তাতার স্বদেশে ফিরে আসলেও বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। বাকীদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বাধাগ্রস্থ হয়। সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতনের পর ১৫টি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছে কিন্তু একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে ক্রিমিয়ার তাতারদের স্বাধীনতা তো দূরের কথা নিজ মাতৃভূমিতে তাদের প্রত্যাবাসনের কাজ টুকু পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি।
ক্রিমিয়ার তাতার হচ্ছে কৃষ্ণ সাগরের উত্তর উপকূলে অবস্থিত ইউক্রেনের একটি স্বায়িত্বস্বাসিত প্রজাতন্ত্র। বহু উত্তান পতনের নীরব সাক্ষী ক্রিমিয়া। ক্রিমিয়ার এ বিস্তীর্ণ অঞ্চল শত বছর ধরে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও শাসকদের দ্বারা শাসিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। ২৬, ২০০ কিলোমিটারের আয়তন বিশিষ্ট ক্রিমিয়া প্রজাতন্ত্রের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৯, ৭৩, ১৮৫ জন। ক্রিমিয়া হচ্ছে ক্রিমিয়ান তাতারদের জন্মভূমি, যারা নৃতাত্ত্বিকভাবে সংখ্যালঘু। গোটা জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ ক্রিমিয় তাতার। ক্রিমিয়ান তাতারদের পূর্বপুরুষ হচ্ছে তুর্কী। ত্রয়োদশ শতাব্দী হতে তারা ক্রিমিয়ান উপদ্বীপে বসবাস করে আসছে।
পূর্বের অবস্থান :
মূল তাতারগণ পঞ্চম শতাব্দীতে গোবী মরুভূমির উত্তর পশ্চিমে বসবাস করত। নবম শতাব্দীতে খিতানগণ তাদের এলাকার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করলে তারা দক্ষিণ অভিমূখে যাত্রা করে। চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে মোঙ্গল শাসন কায়েম করে। চেঙ্গিস খানের দৌহিত্র বাতু খানের পরিচালনায় তাতারগণ পশ্চিম দিকে রাশিয়ার সমতল অভিমূখে রওনা হয়। যাত্রার সময় তারা তাদের সাথে তুর্কী উরাল বংশোদ্ভুত জনগণকেও সাথে নিয়ে যায়। চেঙ্গিস খানের বংশধর বার্কাই খানের (১২৫৭-১২৬৭) আমলে তাতারদের সাথে ইসলামের পরিচয় ঘটে।
ইসলামে প্রবেশ :
উযবেগের (১৩১৩-১৩৪০) ক্ষমতায় আরোহণের আগ পর্যন্ত এতদঞ্চলে ইসলাম ব্যাপকতা লাভ করেনি। চতুর্দশ শতকের শেষের দিকে ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতি তাতাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। চতুর্দশ শতকে পরিভ্রমণকারী পর্যটকগণ এতদঞ্চলে ইসলামী সংস্কৃতি ও সভ্যতার নিদর্শন প্রত্যক্ষ করেন। সময়ের বিবর্তনে ইসলামী অনুশাসন, সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রতি তাতারদের আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
তাতার রাজ্য :
কিপচাক সাম্রাজ্যের (Golden Hordes) পতনের পর উক্ত অঞ্চলের উপর গড়ে উঠা তাতার রাজ্য সমূহের মধ্যে ক্রিমিয়াই ছিল সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী স্বাধীন রাজশক্তি। ক্রিমিয়ার এই তাতার বংশের রাজত্বকাল ১৪২০ হতে ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় দীর্ঘ সাড়ে তিন শ’ বছর স্থায়ী হয় এবং সিংকোরাপোলকে রাজধানী করে পর্যায়ক্রমে ৬২ জন তাতার খান ক্ষমতায় অধিষ্টিত থেকে রাজনৈতিক প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম হন। কাজান বংশের প্রতিষ্ঠাতা উলুঘ মুহাম্মদের জনৈক ভ্রাতা তাশ-তিমুর তোখতামিশের সেনাপতি ছিলেন এবং তিনিই ক্রিমিয়ায় তাতার বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।
জার আইভানকে পরাজিত করে মস্কো জয় :
গীরাই খান নামে পরিচিত তাতার শাসকদের সাথে পোলান্ডের ডিউক ও উসমানীয় তুর্কী সুলতানগণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে ক্রিমিয়া অবস্থিত হওয়ায় এর ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে সবাই সজাগ ছিলেন। বহিঃশত্র“র আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে তাতারগণ দু’লাখ সদস্য বিশিষ্ট দূর্ধর্র্ষ সেনাবাহিনী গঠন করেন যার মাধ্যমে পোলান্ড, রাশিয়া ও কোসাকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান পরিচালিত হয়। এমনকি ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম দওলত গিরাই এর নেতৃত্বে তাতার বাহিনী রাশিয়ার জার আইভানকে পরাজিত করে মস্কো নগরী বিধ্বস্ত করে দেয় এবং জারকে কর প্রদানে বাধ্য করে। সে সময় ককেসাস, দাগিস্তান ও রুমালিয়ার উপরও তাতারদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
রাশিয়া কর্তৃক ক্রিমিয়া জয় :
১৪৭৫ সালে উসমানীয় সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহর নেতৃত্বে এই দ্বীপ সম্পূর্ণভাবে মুসলিমদের অধীনে চলে আসে যা তিন শতক বলবৎ থাকে। ক্রিমিয়ার মুসলিম তাতার শাসক উসমানীয় খিলাফতের প্রতিনিধি হয়ে শাসন করতে থাকেন।
১৭৮০ এর দশকে রাশিয়ার নিকট উসমানীয়রা পরাজিত হলে খলিফাহ প্রথম আব্দুল হামিদ বাধ্য হন একটি দুঃখজনক চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাতে ক্রিমিয়াকে স্বাধীনতা দেয়া হয়। কিন্তু ক্রিমিয়ার ভৌগলিক অবস্থান রাশিয়ার কাছে হওয়ায় তারা ক্রিমিয়ায় দখলদারিত্ব শুরু করে। ক্রিমিয়ার মুসলিম শাসক ইস্তাম্বুলে আকুল আবেদন জানান, "আমরা স্বাধীনতা চাইনা, আমরা খিলাফতের সরাসরি অধীনে জীবন যাপন করতে চাই। আপনারা আবার সৈন্য নিয়ে এখানে আসেন" কিন্তু ইস্তাম্বুল তখন এতই দুর্বল ছিল যে রাশিয়ার সাথে করা চুক্তি ভাঙ্গার সাহস পায়নি তারা।
অবশেষে ৮ এপ্রিল, ১৭৮৩ সালের এই দিনে রাশিয়া ক্রিমিয়াকে নিজের সাম্রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়।...!!!!
ক্রিমিয়া স্বাধীন রাজ্য :
১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে সম্পাদিত কুচকায়নারজির সন্ধিতে ক্রিমিয়া স্বাধীন রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৭৭৪ হতে ১৭৭৬ সাল পর্যন্ত তাতারগন নির্বিঘ্নে ক্রিমিয়া ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ব্যবসা বানিজ্য সম্প্রসারন করেন। নিজেদের সন্তানদেরকে তাঁরা উচ্চ শিক্ষার জন্য বুখারার বিখ্যাত মাদ্রাসায় পাঠাতে থাকেন। এমনকি তাতারদের পূর্ব পুরুষগণ যারা খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তাঁরা আবার ইসলাম ধর্মে ফিরে আসেন। কিন্তু তাতারদের এ স্বাধীনতা প্রাপ্তি বেশী দিন স্থায়ী হয়নি।
সন্ধি ভঙ্গঃ ২য় ক্যাথরিন
পরিশেষে ক্রিমিয়ার খান শাহীন গিরাই এর সাথে তুর্কী সুলতানের মনোমালিন্যের সুযোগে সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ৯ই এপ্রিল জারিনা দ্বিতীয় ক্যাথারিণ ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভূক্ত করে নেন। উক্ত ঘোষণায় তাতারদের ধর্মীয়, আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার অক্ষুন্ন থাকার আশ্বাস দেয়া হলেও তা আদৌ কার্যকর হয়নি।
রুশদের অধীনে ক্রিমিয়া :
বস্তুত রুশদের অধীনে ক্রিমিয়ার তাতার মুসলিম জাতি গোষ্ঠীর পরবর্তী ইতিহাস বড়ই মর্মন্তুদ ও হৃদয়স্পর্শী। জারদের অনিয়ন্ত্রিত বর্বরতায় তাতারগণ সীমাহীন অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিপীড়নের শিকার হন এমনকি জোর পূর্বক তাতারদের ধর্ম পরিবর্তনে বাধ্য করা হয়। নিজেদের সমাজ, ধর্ম, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির ভিত্তি যখন বিধ্বস্ত হয়ে যায় তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও দু’লাখ পঞ্চাশ হাজার তাতার মুসলিম নারী-পুরুষ স্বদেশভূমি পরিত্যাগ করে তুরস্ক ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে আশ্রয় নেন। শত নিগ্রহ ও নির্যাতন স্বত্ত্বেও যারা পৈত্রিক বাস্তুভিটা পরিত্যাগ করেনি তাদের উপর নেমে আসে পৈশাচিকতার খড়গ কৃপাণ।
ক্রিমিয়ার যুদ্ধ :
১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ শুরু হলে এতদঞ্চল সাময়িক ভাবে তুরস্ক ও ইংরেজদের অধীনে চলে যায়। পরিবর্তিত এ পরিস্থিতি তাতার মুসলমানদের জন্য সৃষ্টি করে নতুন বিপদ। রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাজদ্রোহিতার অপরাধে ক্রিমিয়ার তাতারদের অভিযুক্ত করা হয়। জার সন্ত্রাসীগোষ্ঠী জিঘাংসার উন্মত্ততায় নির্বিচারে ধর্ষণ, অগ্নি সংযোগ ও নিপীড়ন চালিয়ে তাতারদের নির্মূল প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়। বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে এ Ethning cleansing অভিযান।
ইতিহাসবিদ জি, হ্যান্বলী Central Asia শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ক্রিমিয়ায় যেখানে তাতার মুসলমানদের সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ, নির্মূল অভিযানের ফলে ১৯১৭ সালে সে সংখ্যা এসে দাঁড়ায় মাত্র এক লাখে।
সোভিয়েত সোশ্যালিষ্ট রিপাবলিক ইউনিয়নের (USSR) অন্তর্ভূক্ত
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে বলশেভিকগণ ক্রিমিয়াকে সোভিয়েত সোশ্যালিষ্ট রিপাবলিক ইউনিয়নের (USSR) অন্তর্ভূক্ত করে নেয়। ১৯২০ হতে ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মোট সাত বছর স্বায়ত্বশাসিত প্রজাতন্ত্র হিসেবে ক্রিমিয়া পর্যাপ্ত স্বাধীনতা ভোগ করে। এমনকি রাশিয়ার কমিউনিষ্ট পার্টি ও মিল্লি ফিরকা কোয়ালিশন সরকার গঠন করে। তাতার ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয় এবং মুসলমানগণ সরকারী উচ্চপদে নিযুক্তি লাভ করেন। কিন্তু দূর্ভাগ্য ক্রিমিয়ার তাতার মুসলমানদের এ সৌভাগ্য বেশী দিন স্থায়ী হয়নি। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে মস্কো সরকার তাতার জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূল করার জন্য পূর্বাপেক্ষা কঠোরতম পন্থায় আঘাত হানে। তাতার মুসলমানদের স্বাধীনভাবে বাঁচার স্বপ্নসাধ সাময়িকভাবে ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লবের পূর্বে পুরো ক্রিমি য়ায় মসজিদের সংখ্যা ছিল ১৭৫০, বলশেভিক বিপ্লবের পর তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় মাত্র ১০০ তে।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ ও ষ্ট্যালিন :
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় পুরো তাতার জনগোষ্ঠীকে ষ্ট্যালিন নাজী জার্মানীর দালাল হিসেবে অভিযুক্ত করে প্রতিশোধের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৪ সালে ষ্ট্যালিন সরকার ক্রিমিয়ান তাতারদের ভাষাকে সিরিলিক (Cyrillic) অক্ষরে পরিবর্র্তিত করে দেয়। রুশ বুদ্ধিজীবিদের মাধ্যমে ক্রিমিয়দের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে মুছে ফেলা হয়। পারিবারিক জীবনে, সামাজিক বন্ধনে ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রচন্ডরূপে ধ্বস নামে। অতঃপর শুরু হয় তাতার মুসলমানদের পুনঃ উৎখাতের পালা। ষ্ট্যালিনের নির্দেশে তাতার মুসলমানদেরকে নিজ মাতৃভূমি ক্রিমিয়া হতে জোর করে বের করে দেয়া হয়। বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ, যুবা-বৃদ্ধ ও শিশু গণহত্যার শিকার হয়ে পড়ে। অধিকাংশ তাতার বাস্তু-ভিটা ও সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে সাইবেরিয়া ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিশেষত উযবেকিস্তানে উদ্বাস্তু রূপে আশ্রয় নেয়। তাতারগণ সোভিয়েত শাসনের প্রতি ‘অনুগত’ নয় ষ্ট্যালিনের এ যুক্তিই ছিল নির্বাসনের ভিত্তি। তিনি তাতারদের ‘অবিশ্বস্ত নাগরিক’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। এক পরিসংখ্যানে জানা যায় যে, ৫০ হাজার থেকে এক লাখ তাতারকে ষ্ট্যালিন দেশ ত্যাগে বাধ্য করেন। বিপুল সংখ্যক তাতারের জীবন প্রদীপ নিভে যায় কারা অন্তরালে। তখনকার আদমশুমারী অনুযায়ী তাতার মুসলমানদের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩ শতাংশে।
ষষ্টদশ ও বিংশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে জার রাশিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ক্রিমিয়ার জনগণের প্রতি দমন মূলক শাসন ও পক্ষপাতদুষ্ট আর্থ-সামাজিক নীতি গ্রহণ করেও ব্যাপকভাবে এ অঞ্চলকে রুশীয়করণ করতে ব্যর্থ হয়। অধিকাংশ জনগণ রুশ আত্নীকরণকে দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করেন এবং ইসলামী পরিচিতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইসলামী অনুশাসন প্রতিপালনের প্রতি দৃঢ়তার ফলে তাতার জনগোষ্ঠী বিভিন্ন সামাজিক পরিমন্ডলে বসবাস করেও একটি ভারসাম্যপূর্ণ রীতি বজায় রাখতে সক্ষম হন। প্রবল বিপত্তি সত্ত্বেও মুসলমান পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকাকে তাতারগণ গৌরব মনে করেন।
ইতোমধ্যে আড়াই লাখ তাতার স্বদেশে ফিরে আসলেও বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। বাকীদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বাধাগ্রস্থ হয়। সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতনের পর ১৫টি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছে কিন্তু একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে ক্রিমিয়ার তাতারদের স্বাধীনতা তো দূরের কথা নিজ মাতৃভূমিতে তাদের প্রত্যাবাসনের কাজ টুকু পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি।
No comments