তানোরে কৃষিতে প্রযুক্তির ছোঁয়া by সোহানুল হক পারভেজ
রাজশাহীর
তানোরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়নের কারণে দ্রুত কমে যাচ্ছে আবাদযোগ্য কৃষি
জমি। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রের ব্যবহার কৃষি ব্যবস্থার আগের
চিত্র বদলে দিয়েছে। আধুনিক যন্ত্রাংশের ছোঁয়ায় কৃষি জমির পরিমাণ কমলেও
বেড়েছে উৎপাদন। তানোর উপজেলার বরেন্দ্র এই অঞ্চলসহ রাজশাহী জেলাজুড়েই
কৃষকরা বীজতলা থেকে উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে যোগ করছেন যান্ত্রিক
প্রযুক্তি। মাত্র দু’দশক আগেও তা ছিল স্বপ্নের মতো।
বরেন্দ্র এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানেই আবাদি জমিতে কৃষকরা চাষ দেন ট্রাক্টর যন্ত্রে। বীজতলা তৈরি ও বীজ বোনাও চলছে যন্ত্রেই। সেচ পাম্প ব্যবহারে সেচ পদ্ধতিরও পরিবর্তন হয়েছে আরো আগেই। চাষ দেয়ার মতো ধান মাড়াইতেও এখন আর গরু বা মহিষের ব্যবহার নেই বললেই চলে।
সকল কাজেই যন্ত্রেও ছোঁয়া। যন্ত্র যেমন শ্রমকে বাঁচিয়েছে, তেমনি সময়কেও। গ্রামাঞ্চল থেকে বছর বা মাস কাবারি কামলা প্রথা উঠেই গেছে। এখন কম জমিতে চাষাবাদ করে অনেক বেশি ফসল পাওয়া যাচ্ছে। আধুনিক যন্ত্রাংশের ব্যবহারে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে।
উপজেলার ৩০-৫৫ জন প্রান্তিক কৃষক জানান, যন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদসহ অন্য কাজ সারলেও এখনও ক্ষেতে মই দেয়ার কাজ গরু-মহিষ দিয়েই করছেন তারা। কারণ, যন্ত্রের মাধ্যমে চাষ করে যন্ত্র দিয়ে মই দিলে ক্ষেত উঁচু-নিচু হয়ে থাকে। এতে ধানের ক্ষেত্রে ঠিকমতো পানি থাকে না। তানোর উপজেলার আমশো গ্রামের কৃষক আলহাজ আক্তারুজ্জামান রুঞ্জু জানান, ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় দু’বছর আগে এক জোড়া গরু কিনেছেন তিনি। নিজের ১৬ বিঘা জমি বিগত বোরো মৌসুমে অন্যের কাছে ভাড়া নেয়া পাওয়ার টিলার দিয়ে একদিনেই হাল চাষ করেছেন তিনি। পরে শুধু নিজের গরু দিয়ে মই দিয়েই চারা রোপণ করেছেন।
উপজেলার গোল্লাপাড়া গ্রামের বঙ্গবন্ধু পদকপ্রাপ্ত কৃষক নূর মোহাম্মদ জানান, দিন দিন প্রযুক্তির নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে বর্তমানে যন্ত্রের সাহায্যে (ট্রাক্টর) দিয়ে হা চাষ সহ কৃষি কাজ করা হচ্ছে। তবে গরু দিয়ে হাল চাষ না হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে মাটি জৈবিক ক্ষমতা হারাচ্ছে। তাই একদিকে যেমন ফলন কমে যাচ্ছে তেমনি রাসায়নিক সারের প্রভাব বেড়েছে। তবে উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ জানান, দিনে দিনে কৃষি কাজে বাড়ছে যন্ত্রের ব্যবহার। কৃষি কাজে যান্ত্রিক উপকরণ দিয়ে হালচাষ, ক্ষেত থেকে ধান কাটা, ধান উঠানো এবং মাড়াইয়ের কাজও করছেন কৃষকেরা যন্ত্রের মাধ্যমে। যন্ত্রের ব্যবহার আসাই অল্প সময়েই সব জমি চাষ ও চারা রোপণ করতে পারছে কৃষক। তাতেই কৃষি খাতে অনেক উন্নতি হয়েছে।
বর্তমানে কৃষি ক্ষেত্রে যে যান্ত্রিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে তার বিবরণ জানালেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সামপ্রতিক বছরগুলোয় কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম সংযোজনের একটি হচ্ছে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসল কাটা, খোসা থেকে দানা আলাদা করা যায়। এ কারণে বিভিন্ন স্থানে সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনায় কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। ছোট আকৃতির ধানি জমি চাষেও রয়েছে এর ব্যবহার। এছাড়া বীজ বপন, সার প্রয়োগ ও কীটনাশক ছিটানোর জন্যও রয়েছে ব্রডকাস্ট সিডার। নির্দিষ্ট অবস্থানে বীজ বপনের জন্য আছে সিডর্ডিল। জমির শক্ত মাটি কর্ষণের জন্য সাব সয়লার, ধান কিংবা অন্যান্য ফসলি বীজ শুকানোর জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রায়ার যন্ত্র। ধান, গম, ভুট্টা শুকাতেও ব্যাচ ড্রায়ার নামক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া শস্য কাটার জন্য রয়েছে পাওয়ার রিপার মেশিন। বীজ ঝেড়ে পরিষ্কারের জন্য আছে ইউনার যন্ত্র।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা আরো জানান, উৎপাদন খরচ অনেকাংশে বেড়ে গেছে। এক একর জমির ধান কাটতে কৃষকের খরচ হয় পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু যন্ত্রের মাধ্যমে কাটলে খরচ হবে মাত্র দেড় হাজার টাকা। বর্তমানে কৃষি কাজের বিভিন্ন পর্যায়ে আধুনিক উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতির বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার হচ্ছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বলেন, সরকার কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য বিনামূলে কৃষি সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি, সার-বীজ বিতরণ করে যাচ্ছে। সরকারের আন্তরিকতায় বাংলাদেশে কৃষি সেক্টর বর্তমানে একটি মডেল। শ্রম, অর্থ, সময় বাঁচাতে, সবকিছুকে আরো বেশি প্রযুক্তি নির্ভর করতে হবে। একদিন উচ্চ শিক্ষিত মানুষেরাও কৃষি কাজে এগিয়ে আসবেন।
বরেন্দ্র এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানেই আবাদি জমিতে কৃষকরা চাষ দেন ট্রাক্টর যন্ত্রে। বীজতলা তৈরি ও বীজ বোনাও চলছে যন্ত্রেই। সেচ পাম্প ব্যবহারে সেচ পদ্ধতিরও পরিবর্তন হয়েছে আরো আগেই। চাষ দেয়ার মতো ধান মাড়াইতেও এখন আর গরু বা মহিষের ব্যবহার নেই বললেই চলে।
সকল কাজেই যন্ত্রেও ছোঁয়া। যন্ত্র যেমন শ্রমকে বাঁচিয়েছে, তেমনি সময়কেও। গ্রামাঞ্চল থেকে বছর বা মাস কাবারি কামলা প্রথা উঠেই গেছে। এখন কম জমিতে চাষাবাদ করে অনেক বেশি ফসল পাওয়া যাচ্ছে। আধুনিক যন্ত্রাংশের ব্যবহারে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে।
উপজেলার ৩০-৫৫ জন প্রান্তিক কৃষক জানান, যন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদসহ অন্য কাজ সারলেও এখনও ক্ষেতে মই দেয়ার কাজ গরু-মহিষ দিয়েই করছেন তারা। কারণ, যন্ত্রের মাধ্যমে চাষ করে যন্ত্র দিয়ে মই দিলে ক্ষেত উঁচু-নিচু হয়ে থাকে। এতে ধানের ক্ষেত্রে ঠিকমতো পানি থাকে না। তানোর উপজেলার আমশো গ্রামের কৃষক আলহাজ আক্তারুজ্জামান রুঞ্জু জানান, ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় দু’বছর আগে এক জোড়া গরু কিনেছেন তিনি। নিজের ১৬ বিঘা জমি বিগত বোরো মৌসুমে অন্যের কাছে ভাড়া নেয়া পাওয়ার টিলার দিয়ে একদিনেই হাল চাষ করেছেন তিনি। পরে শুধু নিজের গরু দিয়ে মই দিয়েই চারা রোপণ করেছেন।
উপজেলার গোল্লাপাড়া গ্রামের বঙ্গবন্ধু পদকপ্রাপ্ত কৃষক নূর মোহাম্মদ জানান, দিন দিন প্রযুক্তির নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে বর্তমানে যন্ত্রের সাহায্যে (ট্রাক্টর) দিয়ে হা চাষ সহ কৃষি কাজ করা হচ্ছে। তবে গরু দিয়ে হাল চাষ না হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে মাটি জৈবিক ক্ষমতা হারাচ্ছে। তাই একদিকে যেমন ফলন কমে যাচ্ছে তেমনি রাসায়নিক সারের প্রভাব বেড়েছে। তবে উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ জানান, দিনে দিনে কৃষি কাজে বাড়ছে যন্ত্রের ব্যবহার। কৃষি কাজে যান্ত্রিক উপকরণ দিয়ে হালচাষ, ক্ষেত থেকে ধান কাটা, ধান উঠানো এবং মাড়াইয়ের কাজও করছেন কৃষকেরা যন্ত্রের মাধ্যমে। যন্ত্রের ব্যবহার আসাই অল্প সময়েই সব জমি চাষ ও চারা রোপণ করতে পারছে কৃষক। তাতেই কৃষি খাতে অনেক উন্নতি হয়েছে।
বর্তমানে কৃষি ক্ষেত্রে যে যান্ত্রিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে তার বিবরণ জানালেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সামপ্রতিক বছরগুলোয় কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম সংযোজনের একটি হচ্ছে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসল কাটা, খোসা থেকে দানা আলাদা করা যায়। এ কারণে বিভিন্ন স্থানে সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনায় কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। ছোট আকৃতির ধানি জমি চাষেও রয়েছে এর ব্যবহার। এছাড়া বীজ বপন, সার প্রয়োগ ও কীটনাশক ছিটানোর জন্যও রয়েছে ব্রডকাস্ট সিডার। নির্দিষ্ট অবস্থানে বীজ বপনের জন্য আছে সিডর্ডিল। জমির শক্ত মাটি কর্ষণের জন্য সাব সয়লার, ধান কিংবা অন্যান্য ফসলি বীজ শুকানোর জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রায়ার যন্ত্র। ধান, গম, ভুট্টা শুকাতেও ব্যাচ ড্রায়ার নামক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া শস্য কাটার জন্য রয়েছে পাওয়ার রিপার মেশিন। বীজ ঝেড়ে পরিষ্কারের জন্য আছে ইউনার যন্ত্র।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা আরো জানান, উৎপাদন খরচ অনেকাংশে বেড়ে গেছে। এক একর জমির ধান কাটতে কৃষকের খরচ হয় পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু যন্ত্রের মাধ্যমে কাটলে খরচ হবে মাত্র দেড় হাজার টাকা। বর্তমানে কৃষি কাজের বিভিন্ন পর্যায়ে আধুনিক উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতির বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার হচ্ছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বলেন, সরকার কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য বিনামূলে কৃষি সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি, সার-বীজ বিতরণ করে যাচ্ছে। সরকারের আন্তরিকতায় বাংলাদেশে কৃষি সেক্টর বর্তমানে একটি মডেল। শ্রম, অর্থ, সময় বাঁচাতে, সবকিছুকে আরো বেশি প্রযুক্তি নির্ভর করতে হবে। একদিন উচ্চ শিক্ষিত মানুষেরাও কৃষি কাজে এগিয়ে আসবেন।
No comments