হংকংয়ের অর্থনীতি চীনের জন্য এখনো কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
১৯৯৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে চীনাদের শাসনে আসার পর থেকে সবচেয়ে বড় সংকট মোকাবেলা করছে হংকং।
বিতর্কিত
প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পন্থীদের পরপর নবম সপ্তাহের মত
বিক্ষোভের পর তার প্রভাব পড়া শুরু হয়েছে দেশটির অর্থনীতি।
পর্যটন আর খুচরা বিক্রি দুটোই দারুণভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
তবে
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বড় ঝুঁকির বিষয় হল রাজনৈতিক ও কারণ চলমান সংকট
মোকাবেলায় হংকং প্রশাসনকে সমর্থনের নামে সরাসরি চীনা হস্তক্ষেপ চলে আসতে
পারে।
গত দু'দশকে চীন তাদের এই বিশেষ অঞ্চল থেকে দারুণ উপকৃত হয়েছে, যেটি এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র।
কিভাবে সংকট প্রভাব ফেলছে সেখানে?
অর্থনৈতিক গেটওয়ে
বিবিসির চীন সার্ভিসের সম্পাদকের মতে, বাণিজ্য ও আর্থিক দুদিক থেকেই হংকং চীনের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
২০১৭-১৮ সালে চীন ১২৫ বিলিয়ন ডলার সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ পেয়েছে এর মধ্যে ৯৯ বিলিয়ন ডলারই এসেছে হংকংয়ের মাধ্যমে।
আইনের শাসন ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা চীনে বিনিয়োগে আগ্রহী কোম্পানিগুলোর কাছে হংকংকে নিরাপদ জায়গায় পরিণত করেছে।
২০১৮ সালে ৬০% কোম্পানি শেয়ারবাজারে আইপিও খুলেছে হংকংয়ের শেয়ারবাজারে।
যদিও হংকং স্টক মার্কেটের সাথে তীব্র প্রতিযোগিতা হচ্ছে সাংহাইয়ের।
ব্যবসা বনাম রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ
১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে চীনাদের নিয়ন্ত্রণে আসার সময় এর অর্থনীতি ছিল চীনের মোট অর্থনীতির ১৮ শতাংশের মতো।
গত বছর চীনের জিডিপির ২.৭% শেয়ারের সমান অবদান রেখেছে হংকং।
অর্থনীতিবিদ গ্যারেথ লেদার বলছেন, "আমার মনে হয় হংকং চীনের কাছে ততটা ম্যাটার করে না।"
"চীনের
সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হল নিয়ন্ত্রণ রাখা, আর নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্যই
তারা হংকংয়ের কিছু সাফল্য বিসর্জন দিতেও প্রস্তুত।"
যে প্রত্যর্পণ আইন নিয়ে এতো ঝামেলা হচ্ছে - তা নিয়ে আগে থেকেই উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা।
এমনকি চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বিরোধের জের ধরে ব্যবসায়িক কাজে হংকংয়ে আসা লোকজন আটক হতে পারে এমন ভয়ও আছে।
অন্যদিকে প্রতিবাদ কর্মসূচিও দিন দিন সহিংস হয়ে উঠছে।
সোমবার আটশ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তে হয়েছে পুলিশকে।
'আগুন নিয়ে খেলো না'
গ্যারেথ লেদার বলছেন, উদ্বেগের বিষয় হল হংকং 'অশাসনযোগ্য' হয়ে যাচ্ছে।
"প্রকৃত ঝুঁকি হল হংকং সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারছে না যেটা চীনকে সহায়তায় এগিয়ে আনতে পারে।"
মঙ্গলবার বেইজিং প্রতিবাদকারীদের সমালোচনা করে বলেছেন, আগুন নিয়ে যারা খেলবে তারা এর ফল ভোগ করবে।
হংকং
ও ম্যাকাওয়ের মুখপাত্র হুঁশিয়ার করে বলেছেন, "চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মি
প্রতি ইঞ্চি ভূমির নিরাপত্তা রক্ষায় যথেষ্ট শক্তিশালী।"
'ব্যবসার জন্য খারাপ'
চীনের যেকোন পদক্ষেপ যেটি হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে বলে বিবেচিত হবে - তা ব্যবসার জন্য খারাপ হবে।
"হংকংয়ের
রাস্তায় চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মি দেখা যাচ্ছে, ব্যাপারটা কল্পনা করুণ।
তাহলে হংকংয়ের ভাবমূর্তির কী হবে," বলছেন গ্যারেথ লেদার।
ফলশ্রুতিতে কিছু বহুজাতিক কোম্পানির গন্তব্য হতে পারে এশিয়ার অন্য জায়গা বিশেষ করে সিঙ্গাপুর।
এর আগে ২০১৪ সালে বিক্ষোভকারীরা প্রায় সত্তর দিন হংকং অচল করে রেখেছিল।
কিন্তু এবার আরও তিক্ততা দেখা যাচ্ছে এর মধ্যে আবার চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে।
হংকং সরকার এর মধ্যেই প্রবৃদ্ধি ২/৩ শতাংশ কমে হতে পারে বলে ধারণা দিচ্ছে।
বিতর্কিত প্রত্যার্পণ আইন নিয়ে এই বিক্ষোভে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা |
No comments