পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা সৃষ্টির কারণ ও এর পরিণতি

নানা ইস্যুতে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে নজিরবিহীন উত্তেজনা সৃষ্ট হয়েছে। এই উত্তেজনার কারণ যতটানা অভ্যন্তরীণ তার চেয়ে বেশি বাইরের শক্তির ষড়যন্ত্র ও অযাচিত হস্তক্ষেপ।

গত দুই মাসে বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তারা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এমনকি তারা সামরিক সংঘাত বাধার ব্যাপারেও হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। ইসলামি ইরানের সঙ্গে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্পর্কে যে নজিরবিহীন উত্তেজনা বিরাজ করছে তা এ অঞ্চলের কোনো দেশের জন্যই মঙ্গলজনক নয়। এ অঞ্চলে উত্তেজনা সৃষ্টির মূল হোতা হচ্ছে আমেরিকা যে কিনা ইরান বিরোধী নানা তৎপরতার মাধ্যমে উত্তেজনা জিইয়ে রেখেছে। ব্রিটেন আমেরিকার ইরান বিরোধী নীতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটিয়েছে।

২০১৮ সালের মে মাস থেকে আমেরিকার ইরান বিরোধী তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছর ৮মে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে দুই দফায় ইরানের বিরুদ্ধে ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা যেমনটি বলেছেন, "আমেরিকার ইরান বিরোধী নীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ইরানকে পঙ্গু করে ফেলা।"

কিন্তু গত এক বছর ধরে আমেরিকার কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সত্বেও ইরানের অর্থনীতি ধসে পড়েনি। বরং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইরানের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা মার্কিন অর্থনৈতিক যুদ্ধকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। ইরানবিরোধী তৎপরতার অংশ হিসেবে দ্বিতীয় পর্বে আমেরিকা ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে এবং এমনকি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর আমেরিকা ইরানের তেল বিক্রি শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য ইরানের তেল আমদানিকারক প্রধান আটটি দেশকে তেল আমদানির বিষয়ে যে ছাড় দেয়া হয়েছিল তা তুলে নেয়। অর্থাৎ ওই দেশগুলো ইরান থেকে আর তেল কিনতে পারবে না। এ ছাড়া, ইরানকে চাপে রাখা ও ভয় দেখানোর জন্য আমেরিকা পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে বিমানবাহী জাহাজ আব্রাহাম লিঙ্কন পাঠায় এবং একটি আরব দেশে বেশ কয়েকটি  বি-৫২ বোমারু বিমান মোতায়েন করে। সেইসঙ্গে আমেরিকা  আরো একটি যুদ্ধ জাহাজ প্রেরণ করে ইরানকে হুঁশিয়ারি সংকেত পাঠায় যাতে তেহরান কোনো উচ্চবাচ্য না করে।

তবে, সমরসজ্জা সত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বহুবার ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছেন। ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প দাবি করেছেন' "আমি যুদ্ধ চাই না, তবে যদি ইরানে হামলা করতে চাই তাহবে অর্থনৈতিক হামলা।"

বাস্তবতা হচ্ছে, গত এক বছর ধরে ইরান অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আসছে এবং এখন আমেরিকার মিত্র ইউরোপের ওপর পাল্টা চাপ সৃষ্টি করেছে তেহরান। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় ইউরোপের আচরণে হতাশা প্রকাশ করেছে ইরান। কারণ মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় ইউরোপ ইরানের সঙ্গে ব্যবসা ও আর্থিক লেনদেন অব্যাহত রাখার জন্য 'ইন্সটেক্স' ব্যবস্থা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত তারা তা বাস্তবায়ন করেনি। এ কারণে পরমাণু সমঝোতার বিষয়ে পাল্টা পদক্ষেপ নিয়ে ইরান ইউরোপের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।

পাশ্চাত্য আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে না চলায় এবং বিভিন্ন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করায় এখন ইরান পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে। ইরানের একটি কৌশল হচ্ছে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। ইরান তার জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রক্ষায় কোনো ছাড় দেবে না। বিশেষ করে, শান্তিপূর্ণ পরমাণু তৎপরতা, প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে দীর্ঘ জলসীমায় নিজের ভৌগোলিক অবস্থান ধরে রাখা ও হরমুজ প্রণালীর ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে ইরান।

পাশ্চাত্যের অন্যায্য আচরণের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে চলতি বছরের মে মাস থেকে ইরান মৌলিক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে পরমাণু সমঝোতার কিছু ধারা বাস্তবায়ন স্থগিত রাখা, মার্কিন অত্যাধুনিক ড্রোন 'গ্লোবাল হক' ভূপাতিত করা এবং ব্রিটিশ তেলবাহী জাহাজ আটকের কথা উল্লেখ করা যায়।

গত বছর ৮মে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু ইরান অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে এক বছর পর্যন্ত পুরোপুরি প্রতিশ্রুতি মেনে চলে একদিকে সারা বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছে তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে চললেও আমেরিকা প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেছে। অন্যদিকে পরমাণু সমঝোতায় সইকারী দেশগুলোসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কিংবা বহুপক্ষীয় সহযোগিতা বিস্তারের মাধ্যমে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছে ইরান।

একদিকে, আমেরিকার কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা অন্যদিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় চুক্তিতে সইকারী ইউরোপের তিনটি প্রভাবশালী দেশ অর্থাৎ জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের গড়িমসি সত্বেও তারা ইরানকে তার অবস্থান থেকে সরাতে পারেনি। এ অবস্থায় ইরান ধৈর্যের নীতিতে পরিবর্তন আনে এবং আমেরিকা ও ইউরোপের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য পাল্টা পদক্ষেপ নেয়া শুরু করে।

প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমেরিকা পরমাণু সমঝোতার ২৬ ও ৩৬ নম্বর ধারা বাস্তবায়ন স্থগিত রাখে। ইরান ঘোষণা করে, এখন থেকে তারা চুক্তিতে বেধে দেয়া সমৃদ্ধকৃত ৩.৬৭ শতাংশ ইউরেনিয়ামের মজুদ ৩০০ কেজি ছড়িয়ে যাবে। একইসঙ্গে তারা ১৩০ টনের বেশি ভারি পানির মজুদ গড়ে তুলবে এবং তা বিদেশে রপ্তানি করবে না। এজন্য ইরান ইউরোপকে ই্ন্সটেক্স ব্যবস্থা চালু করার জন্য দুই মাসের সময় বেধে দিয়েছিল। কিন্তু ইউরোপ ওই দুই মাসের মধ্যে তাদের প্রতিশ্রুতি পালন না করায় ইরান গত জুলাই মাসে দ্বিতীয় পর্যায়ের পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ঘোষণা দেয়। এ পর্যায়ে ইরান জানিয়ে দেয় তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৩.৬৭ শতাংশের সীমা ছাড়িয়ে ৫.৪ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করবে। এভাবে ইরান পাশ্চাত্যকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। বলা যায় ইরানের ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেআইনি কর্মকাণ্ড ও ইউরোপের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রতিক্রিয়ায় ইরান এসব পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।

পরমাণু চুক্তির সঙ্গে জড়িত ইউরোপের তিনটি প্রভাবশালী দেশ তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার পাশাপাশি ইরানকে ওই চুক্তিতে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। এভাবে তারা একদিকে ইরানকে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে অন্যদিকে ইরানের ওপর আমেরিকার সামরিক হুমকি বাস্তবায়ন ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্র প্রস্তুত করার সুযোগ করে দিচ্ছে। কিন্তু ইরান দ্বিতীয় পর্যায়ের পদক্ষেপ নিয়ে মার্কিন সর্বাত্মক হুমকি মোকাবেলায় সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। বিশেষ করে, মার্কিন অত্যাধুনিক ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনায় ইরানের শক্তিমত্তা ফুটে উঠেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, আমেরিকা আমাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদ চালানোর পাশাপাশি আকাশসীমা লঙ্ঘনের ধৃষ্টতা দেখিয়েছে যা। তিনি বলেন আমরা যুদ্ধ চাই কিন্তু যেকোনো আগ্রাসনের কঠোর জবাব দেব।
-------২-------
ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের যে পরমাণু সমঝোতা সই হয়েছে ব্রিটেন তার অন্যতম শরীক দেশ। আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় ব্রিটেন এর নিন্দা জানালেও বাস্তবে লন্ডন ওয়াশিংটনের তেহরান বিরোধী কর্মকাণ্ডের সহযোগী ও সমর্থক।

মার্কিন নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই ব্রিটেন জিব্রাল্টার প্রণালীতে বেআইনিভাবে ইরানের একটি তেলবাহী জাহাজ আটক করে। ব্রিটেন দাবি করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওই জাহাজ সিরিয়ার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছিল বলেই এটাকে আটক করা হয়। এর কিছুদিন পর গত ২০ জুলাই ব্রিটেনের একটি তেলবাহী জাহাজ 'স্টেনা ইম্পেরো' আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন ভঙ্গ করে হরমুজ প্রণালী অতিক্রম করার সময় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী  বা আইআরজিসি'র নৌ বাহিনী সেটাকে আটক করে। ইরানের পাল্টা পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্রিটেনও ইরানকে ভয় দেখানোর জন্য পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে ডেস্ট্রয়ার পাঠায়। ইরান ভয় না পেলেও ব্রিটেনের এ পদক্ষেপে এ অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়।

পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টির বিষয়টিকে কয়েকটি দিক থেকে মূল্যায়ন করা যায়। প্রথমত, ব্রিটেনের অংশগ্রহণে ইরান ও আমেরিকার মধ্যে সীমিত পর্যায়ে যুদ্ধের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যুদ্ধ একবার শুরু হলে তা আর সীমিত পর্যায়ে থাকবে না বরং ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়বে। ইরানের সশস্ত্র বাহিনী মার্কিন অত্যাধুনিক ড্রোন ভূপাতিত করার পর পরিস্থিতি যুদ্ধের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল যদিও যুদ্ধের আশঙ্কা ছিল খুবই ক্ষীণ। কারণ মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করে ইরান একদিকে নিজের শক্তিমত্বা তুলে ধরেছে এবং অন্যদিকে প্রতিপক্ষকে দেখিয়ে দিয়েছে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে তাদেরকে চরম মূল্য দিতে হবে। অর্থাৎ ইরানকে মোকাবেলা করতে এলে আমেরিকা ও তার মিত্রদেরকে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। পরিস্থিতি উপলব্ধি করেই সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেন থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো সূত্রে জানা গেছে ইরানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আমিরাতের একটি প্রতিনিধি দল তেহরানে এসেছে এবং এ অঞ্চলে উত্তেজনা কমিয়ে আনার জন্য ইরানের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে।      

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি ভাল করেই জানেন ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ হবে অনেক ব্যয়বহুল, ভয়াবহ এবং তা হবে দীর্ঘ মেয়াদি লড়াই। তাই এ মুহূর্তে যুদ্ধে জড়ালে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভরাডুবি হতে পারে বলে ট্রাম্পের আশঙ্কা। অন্যদিকে ইরানও বহুবার বলেছে, তারা কখনোই যুদ্ধ শুরু করবে না। এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে আপাতত যুদ্ধের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

রাশিয়ার সামরিক ও রাজনৈতিক গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তা আনাতোলি তাসিগানোক মনে করেন, "ইরান ও আমেরিকার মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ বাধার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ এবং ওয়াশিংটন ও তেহরান ভাল করেই জানে যেকোনো সামরিক সংঘাত শুরু হলে তা বিপর্যয় ডেকে আনবে। এ ছাড়া, ইরান ইরাক নয় এবং ইরানের রয়েছে আট কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যা। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি ইরানের রয়েছে শক্তিশালী ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী। তাই যুদ্ধ বাধলে শুধু আমেরিকা নয় তার ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোও আর্থ-রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই বলা যায় আপাতত ইরান-মার্কিন যুদ্ধের কোনো সম্ভাবনা নেই।"

দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, বিরাজমান উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদেল আব্দুল মাহদি এবং ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ বিন আলাভি মধ্যস্থতার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে সফলতার বিষয়টি নির্ভর করছে ইরানের ব্যাপারে আমেরিকা ও ব্রিটেনের  বিদ্বেষী নীতি পরিবর্তনের ওপর। উত্তেজনা নিরসনের লক্ষ্যে ওই দুই কর্মকর্তার ইরান সফরের পর আমেরিকা ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ থেকে বোঝা যায় ওয়াশিংটন এখনো ইরানের ব্যাপারে বিদ্বেষী নীতি ত্যাগ করতে প্রস্তুত নয়। এ অবস্থায় ইরান-মার্কিন উত্তেজনা হ্রাস এবং পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট উত্তেজনা নিরসনের আশা করা যায় না।

ইরান-মার্কিন উত্তেজনা হ্রাসে তৃতীয় পথ হচ্ছে আলোচনা প্রক্রিয়া। ইরান ও ব্রিটেনের মধ্যে যেকোনো বিষয়ে সংলাপ হতে পারে। এমনকি দুই দেশের হাতে আটক একে অপরের তেলবাহী জাহাজ ছাড়িয়ে নেয়া ও এ ব্যাপারে উত্তেজনা হ্রাসের বিষয়েও হয়তো একটা সমঝোতা হবে। কিন্তু আমেরিকা বারবার ইরানের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিলেও ওয়াশিংটনের সঙ্গে তেহরানের সংলাপে বসার কোনোই সম্ভাবনা নেই। বিশেষ করে আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে আরো দূরত্ব ও অনাস্থা বেড়েছে। গত ১৫ মাসে আমেরিকার ইরান বিরোধী তৎপরতা অনাস্থার মাত্রাকে বাড়িয়ে তুলেছে। অন্যদিকে, আমেরিকা চায় ইরানের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে কথা বলতে। কিন্তু ইরান এর তীব্র বিরোধিতা করে বলেছে, জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা প্রশ্নে তেহরান কোনো আপোষ করবে না।

বাস্তবতা হচ্ছে, ইরান আমেরিকার অত্যাধুনিক ড্রোন ভূপাতিত করে নিজের শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। ইরান এও প্রমাণ করেছে তারা শত্রুদেরকে পিছু হটতে বাধ্য করার ক্ষমতা রাখে। তাই আমেরিকার হুমকিতে ইরান মোটেও ভীত নয়।

চতুর্থ বিষয়টি হচ্ছে, বর্তমানে হরমুজ প্রণালীতে ইরানের সঙ্গে আমেরিকা ও ব্রিটেনের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং ইরানের সঙ্গে তাদের বাকযুদ্ধ চলছে। আগামীতে এ উত্তেজনা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ মার্কিন সরকারের ইরান বিদ্বেষ অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞাই এর প্রমাণ। অন্যদিকে, তেলবাহী জাহাজ নিয়ে ইরান ও ব্রিটেনের মধ্যেও উত্তেজনা চলার মধ্যে লন্ডন ও ওয়াশিংটন হরমুজ প্রণালীর নিরাপত্তার অজুহাতে সামরিক জোট গঠনের প্রস্তাব দেয়ায় উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে।

এ ছাড়া, বর্তমানে ইউরোপের তিনটি প্রভাবশালী দেশ পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়ন না করলেও তারা এ চুক্তিতে ইরানকে ধরে রাখার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। বিশেষ করে ফ্রান্স ও জার্মানি এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তারা সর্বনিম্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইরানের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় অর্থ লেনদেন বিষয়ক ইন্সটেক্স ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দিলেও আজো তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ কারণেও ইরানও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। বলা যায়, ইউরোপের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এ অঞ্চলে উত্তেজনা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। #
আমেরিকার অত্যাধুনিক এই ড্রোন ভূপাতিত করে ইরান

No comments

Powered by Blogger.