ক্যামেরার ফ্রেমে সুন্দরবনে হরেক রকমের পাখি by তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব
সুন্দরবন |
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব আমরা ইতোমধ্যে দেখতে পাচ্ছি।
যেকোনও সময়ের তুলনায় এবার বেশ গরম পড়েছে। এর প্রভাব শুধু জনজীবনেই নয়,
প্রাণীকূলের ওপরও পড়ছে। এবার সুন্দরবন ভ্রমণে গিয়ে এই তিক্ত সত্যটাই সামনে
এলো।
গত
শীতেও সুন্দরবনে ঘুরতে গিয়েছিলাম। তখন বিভিন্ন পাখির কলকাকলীতে মুখর ছিল
সুন্দরবন। বনের ভেতর তারা উড়ে বেড়াচ্ছিল। বনের ধার ঘেঁষে তাদের বিচরণ ছিল
চোখে পড়ার মতো। বন্য শুকর ও ভোদরদের সরব উপস্থিতি ছিল সবখানে।
খালগুলোতে
কলার্ড কিংফিশার, ব্রাউন উইংড কিংফিশার, ব্ল্যাক ক্যাপড কিংফিশার, রাডি
কিংফিশার ব্যস্ত ছিল মাছ ধরায়। বাফি ফিশ আওল গাছের ডালে বসে ঘুমাচ্ছিল।
এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে বানরের গাছ বেয়ে যাওয়া আসা বেশ অভিনব লেগেছে। কটকার পাড় জুড়ে মদনটাক ব্যস্ত ছিক খাবারের সন্ধানে।
তবে
এবার সুন্দরবনের প্রাণচাঞ্চল্য অনেকটাই মলিন মনে হলো। তীব্র গরমে খালগুলো
প্রায় পাখিশুন্য। ব্ল্যাক ক্যাপড কিংফিশারসহ অন্য মাছরাঙার পরিমাণও ছিল
অনেক কম।
হরিণের
পালের দেখা মিললেও তারা ছায়াতেই বিচরণ করছিল। ভোদরদের অনেক খুঁজলেও দেখা
মিললো না। কটকায় অনেকদূরে ছায়ায় একটা বন্য শুকরের দেখা পেলাম। গরমের
কারণে কুমির পানিতে অবস্থান করায় তাদের দেখাও পাইনি।
তবে তিনকোনা দ্বীপ আর ডিমের চরে বেশকিছু পাখি চোখে পড়লো। ছোট ছোট নানারকম পাখির উপস্থিতি ছিল বেশ ভালোই।
শীতে
পরিযায়ী পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থলে পরিণত হয় সুন্দরবন। তীব্র শীত থেকে
রক্ষা পেতে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে তারা আসে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। তখন চরগুলো
মুখর থাকে পরিযায়ী পাখির কলকাকলীতে। শীতের ভোরে কুয়াশা ভেদ করে পাখিদের
ঝাঁকবেঁধে উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য সুন্দরবনকে আরও অপরূপ করে তোলে।
গ্রীষ্মকাল
পাখিদের প্রজনন মৌসুম। এ সময় নিরাপদ প্রজননের জন্য পাখিরা সুন্দরবনে আসে।
বাসা বানানোর জন্য তারা তখন ব্যস্ত সময় কাটায়। তাদের ছোটাছুটি আর পুরুষ
পাখিগুলোর মেয়ে পাখিকে আকৃষ্ট করার জন্য গান গাওয়া, সব মিলিয়ে উৎসবের আমেজ
বিরাজ করে চারদিকে।
সুন্দরবনে গ্রীষ্মের পরিযায়ী পাখির মধ্যে অন্যতম ম্যানগ্রোভ পিট্টা। এবারের ভ্রমণে করমজলে অপূর্ব সুন্দর এই পাখির দেখা পেলাম।
শীত
চলে গেলেও কিছু পাখি রয়ে যায় সুন্দরবনে। কমন রেড শ্যাংক, কেন্টিশ
প্লোভার, লেসার স্যান্ড প্লোভার, কারলিউ স্যান্ডপাইপার, কারলিউ, হুইমবার্ল,
গ্রেট থিকনি, রিভার টার্ন, হুইস্কার্ড টার্নসহ আরও বেশকিছু পাখির দেখলাম
তিনকোনা দ্বীপ ও ডিমের চরে।
>>>ছবি: লেখক
>>>ছবি: লেখক
No comments