জম্মুর বধ্যভূমি: সংখ্যালঘুতে পরিণত হলো মুসলমানরা
জম্মুর
বধ্যভূমিতে কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে? এর কোন সরকারি পরিসংখ্যান নেই।
তাই কাউকে সে সময়ে বৃটিশ সংবাদপত্রগুলোর দ্বারস্থ হতে হবে। এ ব্যাপারে ‘দি
স্পেকটেটর’ পত্রিকায় ১৯৪৮ সালের ১৬ জানুয়ারি হোরাস আলেক্সান্ডারের লেখা
একটি নিবন্ধকে ব্যাপকভাবে উদ্ধৃত করা হয়। সেখানে এই সংখ্যা ২,০০,০০০ বলে
উল্লেখ করা হয়েছে।
১৯৪৮ সালের ১০ এপ্রিল লন্ডনের দি টাইমস পত্রিকায় লেখা হয়: ২,৩৭,০০০ মুসলমানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানে যায়নি। ডোগরা রাজ্যের মহারাজার বাহিনী এ কাজ করে। আর এতে সাহায্য করে হিন্দু ও শিখেরা। ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে এই গণহত্যা হয়। এই ঘটনা ঘটে মহারাজার ভারতের সঙ্গে যোগ দেয়ার নয় দিন এবং পাঠান আভিযান শুরুর পাঁচ দিন আগে।
এই গণহত্যা ও পাকিস্তানে অভিবাসনের আগে জম্মু অঞ্চলে মুসলমানরা ছিলো সংখ্যগুরু, জনসংখ্যার ৬১%। এখন সেখানে তারা সংখ্যালঘু।
দিল্লি’র নিয়ন্ত্রণে ছিলেন মাউন্টব্যাটেন। জম্মু’র মুসলমানদের ওপর এই গণহত্যার খবর মিডিয়ায় স্থান পায়নি। আরো দু:খজনক হলো ইতিহাসের এই ভয়ংকর অধ্যায় নিয়ে ভারতে আলোচনাও হয়েছে কম।
আরএসএস’র সহায়তায় মহারাজা হরিসিংয়ের ব্যক্তিগত সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় জরয়াহের লাল নেহেরুর একটি চিঠি থেকে। তিনি ১৯৪৯ সালের ১৭ এপ্রিল বল্লভ ভাই প্যাটেলকে ওই চিঠি লিখেন।
নেহেরু লিখেন, গোয়েন্দা রিপোর্টে আরো অনেক বিষয়ের মধ্যে বলা হচ্ছে যে জম্মু প্রদেশে গণভোট আয়োজন নিয়ে হিন্দুদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। কারণ, পুরো কাশ্মিরে গণভোটের আয়োজন করা হলে নিশ্চিতভাবে হেরে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই অন্তত জম্মু রক্ষা করা হোক। আমাদের মনে থাকবে যে কয়েক মাস আগে মহারাজা নিজেই এমন একটি প্রস্তাব হাজির করেছিলেন। এ ধরনের প্রপাগা-া আমাদের জন্য খুব ক্ষতিকর বলে মনে হয়েছে। ভবিষ্যতে যাই হোক না কেন, জম্মু প্রদেশ আমাদের হাতছাড়া হোক এটা আমি চাই না।
সে সময় জম্মুর গণহত্যার ঢাকনাটি তুলেন বেদ ভাসিন ও গুটিকতক সাংবাদিক। কিন্তু যারা জম্মু’র হলোকাস্ট-এ জড়িত ছিলেন তারা একে আলোচনার আড়ালে রাখার ব্যবস্থা করেন। এর মধ্যে সে সময়ের কংগ্রেস দলীয় নেতারাও জড়িত ছিলেন। হায়দ্রাবাদ, জম্মু ও কাশ্মিরের ঘটনার মধ্য দিয়ে নয়াদিল্লিতে এমন এক শাসক গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে যা ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি উদাসীন।
সাংবাদিক বেদ ভাসির স্বাক্ষ্যটিকেই ধরা যাক। তিনি এ নিয়ে ২০০৩ সালে জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন।
মাউন্ট ব্যাটেনের পরিকল্পনা ঘোষণার পর থেকেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সেই সাথে হিন্দু সভা, আরএসএস ও মুসলিম কনফারেন্স সাম্প্রদায়িক ভাবাবেগ উস্কে দিতে শুরু করে। পাঞ্জাব ও সীমান্ত প্রদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক হিন্দু ও শিখ অভিবাসী এসে ভীড় জমালে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠে। মহারাজা তার জায়গিরের ওপর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ ও নতুন করে কর আরোপের সিদ্ধান্ত নিলে পু এলাকাবাসী অসাম্প্রদায়িক বিক্ষোভের আয়োজন করে। এই বিক্ষোভ দমন করতে যায় মহারাজার বাহিনী। ফলে অসাম্প্রদায়িক বিক্ষোভ রূপ নেয় সাম্প্রদায়িক সংঘাতে।
মহারাজার প্রশাসন মুসলমানদের শুধু অস্ত্র সমর্পনেরই নির্দেশ দেয়নি, ডোগরা সেনাবাহিনী থেকে মুসলিম সেনাদের অপসারণ করে। মুসলিম পুলিশ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হয় সন্দেহের বশে। মহারাজা ভিমবার সফরে যাওয়ার পরপরই সেখানে বড় আকারের হত্যাকান্ড ঘটে।
ভাসিন জানান যে, উধমপুর জেলায় মুসলমানদের পাইকারিভাবে হত্যা করা হয়। উধমপুর শহরে, চেনানি, রামনগর ও রেসাই এলাকায় বড় আকারের হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। এমন কি উধমপুর থেকে ১৫০ কি.মি দূরে ভাদেরোয়াতেও মুসলমানরা হত্যাকান্ডের শিকার হয়।
ভাসিনের মতে, এসব হত্যকান্ডে আরএসএস মূল ভূমিকা পালন করে। তাদের সহযোগিতা করে সশস্ত্র শিখ শরণার্থীরা। এরা নাঙ্গা তরবারী হাতে জম্মুর রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করে। দাঙ্গার নেতৃত্বদানকারী অনেকে পরে ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দেয়, এদের কেউ কেউ মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছেন। ছাম্ব, দেবা বেতালা ও আখনুরের অন্যান্য এলাকায় গণহত্যা সংঘটিত হয়। সেখান থেকে অনেকে সীমান্তের ওপারে অথবা জম্মুতে পালিয়ে যায়। কাঠু জেলাতেও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বড় আকারের গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। সেখানে নারীদের ধর্ষণ ও অপহরণ করা হয়।
এসব গণহত্যায় রাষ্ট্রের আচরণ তুলে ধরতে গিয়ে ভাসিন বলেন যে, এসব সাম্প্রদায়িক হত্যাকা- প্রতিরোধ ও শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টার বদলে মহারাজার প্রশাসন সাম্প্রদায়িক খুনে বাহিনীকে সহায়তা এমনকি অস্ত্রশস্ত্র দিয়েছে। দাঙ্গাকারীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে গাড়িতে চলাফেরা করতো। মুসলিম সংখ্যাগুরু এলাকার বাইরে বসবাসকারী মুসলমানদেরও ব্যাপকভাবে হত্যা করা হয়। তখন কার্ফু জারি করা হতো। কিন্তু এই কার্ফু মূলত ছিলো মুসলমানদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের জন্য।
তালাবা খাতিকান এলাকায় মুসলমানদের আত্মসমর্পনের নির্দেশ দিয়ে গণহত্যা চালানো হয়।
জম্মুর ঘটনাবলী নিয়ে ১৯৪৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর মহাত্মা গান্ধি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন: “জম্মু’র হিন্দু ও শিখ এবং যারা অন্য এলাকা থেকে এসেছে তারা মুসলমানদের হত্যা করে। সেখানে যা ঘটেছে তার জন্য মহারাজা দায়ি… মুসলিম নারীদের অপদস্থ করা হয়।”
>>>সৈয়দ নকভি’র লেখা ‘বিং দি আদার: দি মুসলিম ইন ইন্ডিয়া বই থেকে উদ্ধৃতি
১৯৪৮ সালের ১০ এপ্রিল লন্ডনের দি টাইমস পত্রিকায় লেখা হয়: ২,৩৭,০০০ মুসলমানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানে যায়নি। ডোগরা রাজ্যের মহারাজার বাহিনী এ কাজ করে। আর এতে সাহায্য করে হিন্দু ও শিখেরা। ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে এই গণহত্যা হয়। এই ঘটনা ঘটে মহারাজার ভারতের সঙ্গে যোগ দেয়ার নয় দিন এবং পাঠান আভিযান শুরুর পাঁচ দিন আগে।
এই গণহত্যা ও পাকিস্তানে অভিবাসনের আগে জম্মু অঞ্চলে মুসলমানরা ছিলো সংখ্যগুরু, জনসংখ্যার ৬১%। এখন সেখানে তারা সংখ্যালঘু।
দিল্লি’র নিয়ন্ত্রণে ছিলেন মাউন্টব্যাটেন। জম্মু’র মুসলমানদের ওপর এই গণহত্যার খবর মিডিয়ায় স্থান পায়নি। আরো দু:খজনক হলো ইতিহাসের এই ভয়ংকর অধ্যায় নিয়ে ভারতে আলোচনাও হয়েছে কম।
আরএসএস’র সহায়তায় মহারাজা হরিসিংয়ের ব্যক্তিগত সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় জরয়াহের লাল নেহেরুর একটি চিঠি থেকে। তিনি ১৯৪৯ সালের ১৭ এপ্রিল বল্লভ ভাই প্যাটেলকে ওই চিঠি লিখেন।
নেহেরু লিখেন, গোয়েন্দা রিপোর্টে আরো অনেক বিষয়ের মধ্যে বলা হচ্ছে যে জম্মু প্রদেশে গণভোট আয়োজন নিয়ে হিন্দুদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। কারণ, পুরো কাশ্মিরে গণভোটের আয়োজন করা হলে নিশ্চিতভাবে হেরে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই অন্তত জম্মু রক্ষা করা হোক। আমাদের মনে থাকবে যে কয়েক মাস আগে মহারাজা নিজেই এমন একটি প্রস্তাব হাজির করেছিলেন। এ ধরনের প্রপাগা-া আমাদের জন্য খুব ক্ষতিকর বলে মনে হয়েছে। ভবিষ্যতে যাই হোক না কেন, জম্মু প্রদেশ আমাদের হাতছাড়া হোক এটা আমি চাই না।
সে সময় জম্মুর গণহত্যার ঢাকনাটি তুলেন বেদ ভাসিন ও গুটিকতক সাংবাদিক। কিন্তু যারা জম্মু’র হলোকাস্ট-এ জড়িত ছিলেন তারা একে আলোচনার আড়ালে রাখার ব্যবস্থা করেন। এর মধ্যে সে সময়ের কংগ্রেস দলীয় নেতারাও জড়িত ছিলেন। হায়দ্রাবাদ, জম্মু ও কাশ্মিরের ঘটনার মধ্য দিয়ে নয়াদিল্লিতে এমন এক শাসক গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে যা ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি উদাসীন।
সাংবাদিক বেদ ভাসির স্বাক্ষ্যটিকেই ধরা যাক। তিনি এ নিয়ে ২০০৩ সালে জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন।
মাউন্ট ব্যাটেনের পরিকল্পনা ঘোষণার পর থেকেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সেই সাথে হিন্দু সভা, আরএসএস ও মুসলিম কনফারেন্স সাম্প্রদায়িক ভাবাবেগ উস্কে দিতে শুরু করে। পাঞ্জাব ও সীমান্ত প্রদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক হিন্দু ও শিখ অভিবাসী এসে ভীড় জমালে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠে। মহারাজা তার জায়গিরের ওপর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ ও নতুন করে কর আরোপের সিদ্ধান্ত নিলে পু এলাকাবাসী অসাম্প্রদায়িক বিক্ষোভের আয়োজন করে। এই বিক্ষোভ দমন করতে যায় মহারাজার বাহিনী। ফলে অসাম্প্রদায়িক বিক্ষোভ রূপ নেয় সাম্প্রদায়িক সংঘাতে।
মহারাজার প্রশাসন মুসলমানদের শুধু অস্ত্র সমর্পনেরই নির্দেশ দেয়নি, ডোগরা সেনাবাহিনী থেকে মুসলিম সেনাদের অপসারণ করে। মুসলিম পুলিশ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হয় সন্দেহের বশে। মহারাজা ভিমবার সফরে যাওয়ার পরপরই সেখানে বড় আকারের হত্যাকান্ড ঘটে।
ভাসিন জানান যে, উধমপুর জেলায় মুসলমানদের পাইকারিভাবে হত্যা করা হয়। উধমপুর শহরে, চেনানি, রামনগর ও রেসাই এলাকায় বড় আকারের হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। এমন কি উধমপুর থেকে ১৫০ কি.মি দূরে ভাদেরোয়াতেও মুসলমানরা হত্যাকান্ডের শিকার হয়।
ভাসিনের মতে, এসব হত্যকান্ডে আরএসএস মূল ভূমিকা পালন করে। তাদের সহযোগিতা করে সশস্ত্র শিখ শরণার্থীরা। এরা নাঙ্গা তরবারী হাতে জম্মুর রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করে। দাঙ্গার নেতৃত্বদানকারী অনেকে পরে ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দেয়, এদের কেউ কেউ মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছেন। ছাম্ব, দেবা বেতালা ও আখনুরের অন্যান্য এলাকায় গণহত্যা সংঘটিত হয়। সেখান থেকে অনেকে সীমান্তের ওপারে অথবা জম্মুতে পালিয়ে যায়। কাঠু জেলাতেও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বড় আকারের গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। সেখানে নারীদের ধর্ষণ ও অপহরণ করা হয়।
এসব গণহত্যায় রাষ্ট্রের আচরণ তুলে ধরতে গিয়ে ভাসিন বলেন যে, এসব সাম্প্রদায়িক হত্যাকা- প্রতিরোধ ও শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টার বদলে মহারাজার প্রশাসন সাম্প্রদায়িক খুনে বাহিনীকে সহায়তা এমনকি অস্ত্রশস্ত্র দিয়েছে। দাঙ্গাকারীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে গাড়িতে চলাফেরা করতো। মুসলিম সংখ্যাগুরু এলাকার বাইরে বসবাসকারী মুসলমানদেরও ব্যাপকভাবে হত্যা করা হয়। তখন কার্ফু জারি করা হতো। কিন্তু এই কার্ফু মূলত ছিলো মুসলমানদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের জন্য।
তালাবা খাতিকান এলাকায় মুসলমানদের আত্মসমর্পনের নির্দেশ দিয়ে গণহত্যা চালানো হয়।
জম্মুর ঘটনাবলী নিয়ে ১৯৪৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর মহাত্মা গান্ধি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন: “জম্মু’র হিন্দু ও শিখ এবং যারা অন্য এলাকা থেকে এসেছে তারা মুসলমানদের হত্যা করে। সেখানে যা ঘটেছে তার জন্য মহারাজা দায়ি… মুসলিম নারীদের অপদস্থ করা হয়।”
>>>সৈয়দ নকভি’র লেখা ‘বিং দি আদার: দি মুসলিম ইন ইন্ডিয়া বই থেকে উদ্ধৃতি
No comments