মাত্র ৭ দিনেই সব লণ্ডভণ্ড
নারায়ণগঞ্জের
ফতুল্লায় নিজ বাড়ি থেকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত বিস্ফোরক ও আলামত পাওয়ায়
রীতিমতো হতবাক বাড়ির মালিক বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক উপমহাব্যস্থাপক ডিজিএম
জয়নাল আবেদীন। ছেলে ও ছেলের বৌকে আটক এবং তার পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে
অভিযানের সময় তিনি গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। পরে নিজ বাড়িতে এসে ঘটনা শুনে
হতবিহ্বল হয়ে পড়েন জয়নাল আবেদীন। রীতিমতো ভেঙে পড়েন তিনি। কোন ভাবেই নিজেকে
বিশ্বাস করাতে পারছেন না তার মেধাবী দুই সন্তান নব্য জেএমবির সদস্য। এ
ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন। তিনি এও বলেন,
কিভাবে কি ঘটলো কিছুই বুঝতে পারছি না। সাত দিন আগেও যখন বাড়ি তালা মেরে যাই
তখনো চৌকি আর ঘাস পরিষ্কার করার কাঁচি ছাড়া কিছুই ছিল না। এ সাত দিনে
কীভাবে কি হলো বুঝতে পারছি না। গ্রাম থেকে ফিরে মঙ্গলবার বাড়ির সামনে
দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
যদিও সোমবার অভিযানের পরেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তালা ঝুলিয়ে রেখেছে ওই বাড়িতে। অভিযানের সময়ে ওই বাড়িতে শক্তিশালী চারটি বোমা নিষ্ক্রিয় করে বোমা ডিসপোজাল টিমের সদস্যরা। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের দাবি এ বাড়িটি নব্য জেএমবির ল্যাব হিসেবে ব্যবহৃত হতো। গত এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত রাজধানীতে পুলিশের ওপর যেসব হামলা হয়েছে তার প্রত্যেকটির সঙ্গে এ ল্যাবের যেমন সম্পর্ক আছে তেমনি গ্রেপ্তারকৃত ফরিদ উদ্দিন রুমি ও মিশুক হোসেন মিজানের সম্পৃক্ততা আছে। কারণ হামলায় যেসব বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয়েছে তার প্রত্যেকটির সঙ্গে সোমবার উদ্ধারকৃত বিস্ফোরকের মিল রয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে রোববার রাতে মাশুক খান মিজানকে গ্রেপ্তারের পর তার দেয়া তথ্যমতেই সোমবার ভোরে ফতুল্লার শেয়াচর ব্যাংক কলোনির বাড়ি থেকে ফরিদ উদ্দিন রুমিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আটক করা হয় তার স্ত্রী জান্নাতুল ফোয়ারা অনুকেও। পরে অভিযান চলে ফতুল্লার তক্কার মাঠে তাদের পরিত্যক্ত বাড়িতে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানিয়েছে, মিজান ও রুমি নব্য জেএমবির সদস্য। গুলিস্তানে পুলিশকে টার্গেট করে আইইডি হামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ফরিদ উদ্দিন রুমি আরেক ভাই জামাল উদ্দিন রফিককে আটকের কথা এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা স্বীকার না করলেও পরিবারের দাবি তাকেও নিয়ে গেছে।
জয়নাল আবেদীন বলেন, আমার দুই ছেলে ফরিদ উদ্দিন রুমি ও জামাল উদ্দিন রফিক এবং বড় ছেলের বউ জান্নাতুল ফোয়ারা অনু। রোববার রাত অনুমান ১টায় এ তিনজনকে আমার বাসা থেকে নিয়ে গেছে। তখন আমরা এখানে ছিলাম না। আমি ও আমার স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। প্রতিবেশীরা ফোনে রোববার রাত ২টার দিকে আমাকে জানিয়েছে এ ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবেশীরা বলেছে আপনার বাসায় তল্লাশি করছে ও ভাঙচুর করছে। তবে ফতুল্লা থানায় তাদের নেয়া হয়নি ঢাকা থেকে পুলিশ এসে নিয়েছে। ফোনের এই খবরে আমি রীতিমতো আঁতকে উঠি। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল আমার বাড়িতে কেন অভিযান হবে। আমি তো এমন কিছু করিনি যে আমার বাড়িতে পুলিশ আসবে। এলাকার সব মানুষ আমাদের পরিবারের সবাইকে চিনে-জানে। কেউ বলতে পারবে না আমার ছেলেমেয়ের কোনো দোষ-ত্রুটি দেখেছে। সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছি। ভদ্রতা, নম্রতা পরিবার থেকেই শিখিয়েছি। এতো মেধাবী আর শান্ত আমার দুই ছেলে। তাদের সম্পর্কে এখন আমি এসব কি শুনছি। এটা বিশ্বাস করতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। কোথাও যেন একটা ভুল হচ্ছে। আমি সুষ্ঠু তদন্ত চাই। আমার সন্তানরা এমন কাজ করতে পারে না। এলাকায় মাথা তুলে তারা কারো সামনে কথা বলেনি।
তিনি জানান, ১৯৮১ সালে জায়গা কিনে ১৯৮৫ সালে বাড়ি করি। যে বাড়ি থেকে ধরে নিয়েছে সেটাই আগে কিনে বাড়ি করি। পরে যে বাড়িতে অভিযান হয়েছে সেটা কিনেছি। ভাড়া দেয়ার জন্য টিনশেডের রুম করে দেই। সেখানে কেউ থাকে না। আমার ছোট ছেলে রফিক সেখানে থাকে মাঝে মাঝে ও দেখাশোনা করে। বাড়িতে যেহেতু লোকজন নেই কিন্তু সেখানে পানির পাম্প, রান্নার চুলাসহ আসবাবপত্র আছে। সেজন্যই মাঝে মাঝে সেখানে থাকে। কোরবানির দুটা ছাগল কেনা হলে ওই ছাগলগুলোর ঘাস খাওয়ানোর জন্য ওই বাড়িতে রাখা হয়। সে সময় কয়েকদিন ওখানে ছিল। এছাড়াও বাড়িতে আত্মীয়স্বজন আসলে জায়গা হতো না তখন সে ওখানে থাকতো।
জয়নাল আবেদীন বলেন, ভাড়াটিয়া থাকার মতো পরিবেশ নেই। বৃষ্টি হলে চালা দিয়ে পানি পড়ে আর পানি জমে থাকে যার জন্য ভাড়াটিয়ারা চলে যায়। সবাই যাওয়ার পরও একজন ভাড়াটিয়া ছিল। এছাড়াও ভবন নির্মাণের জন্য চিন্তাভাবনা ছিল সেজন্য এখানে মাটি পরীক্ষা করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে জয়নাল আবেদীন বলেন, ১৪ই সেপ্টেম্বর আমি সেখানে গিয়ে ঘাস পরিষ্কার পরিচ্ছন্নের জন্য তার রুম খুলি। সেখানে একটি কাস্তি, নিড়ানি ছিল সেটা দিয়ে ঘাস পরিষ্কার করি লাউ গাছের চারা লাগানোর জন্য। এছাড়াও বাড়ির সামনের ঘাসগুলোও পরিষ্কার করি। তারপর দিন ১৫ই সেপ্টেম্বর আমি গ্রামের বাড়ি চলে যাই। কিন্তু তার রুমে এসব কোনো কিছুই দেখিনি। রেফ্রিজেরেটরের কথা শুনেছি, কিন্তু এখানে ফ্রিজ আসার প্রশ্নই আসে না। এগুলো কিভাবে কি হয়েছে আমি বলতে পারছি না। আমার জানা মতে ১৪ই সেপ্টেম্বর আমি রুম খুলেছি কিন্তু আমার নজরে এসব কিছুই পড়েনি। এখানে ৬টা রুম। যার মধ্যে উত্তর দক্ষিণে দুটা রুম আর পূর্ব-পশ্চিমে ৪টি রুম। পূর্ব পশ্চিমের ৪টি রুমের প্রথমটিতে আমার দেখা একটা চকি, টেবিল, চেয়ার, বিছানা ও জামা কাপড় ছিল।
তিনি আরো বলেন, যখন দেখলাম বাড়িটি সংস্কার করা ছাড়া এখানে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই তখন আমিই ভাড়াটিয়াদের বলি যে চলে যান শুকনো মৌসুম আসলে আমি সংস্কার করবো। তখন আপনারা এসে আবার থাকতে পারবেন। তারপর ৬ মাসের সময় নিয়ে তারা ছেড়ে দেয়। এছাড়াও ভবন নির্মাণের জন্য চিন্তাভাবনা ছিল সেজন্য এখানে মাটি পরীক্ষা করা হয়। ছেলেদের প্রসঙ্গে জয়নাল আবেদীন বলেন, তাদের মধ্যে হঠাৎ করে কোনো পরিবর্তন দেখিনি। আমার মনেও পড়ে না। তারা স্কুল, কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে এমন কোনো কিছু দেখিনি। এছাড়া সব সময় নামাজ আগে থেকেই পড়ে। তাদের আমি আগেই সব সময় বলেছি, সন্তান হয় নেয়ামত কিংবা কেয়ামত। ছেলে যদি ভালো হয় তাহলে বাবা মায়ের জন্য নেয়ামত আর যদি খারাপ হয় তাহলে কেয়ামত। প্রতিবেশী ও এলাকাবাসী আছে তারা কেউ বলতে পারবে না, আমার ছেলেরা খারাপ, মারামারি, কাটাকাটি, ঝগড়া করেছে। মানুষ তো র্নূনতম নালিশ দেয় সেটাও কখনো আসেনি।
জয়নাল আবেদীন বলেন, তার বড় ছেলে রুমি আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ও প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক। রুমি ব্যাচের প্রথম ছিল আর সেই হিসেবে সেখানেই চাকরি করছে। ছোট ছেলে রফিক কুয়েট থেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য আবেদন করছে। ছেলেরা এসএসসি পাস করেছে ফতুল্লা পাইলট স্কুল থেকে আর এইচএসসি পাস করেছে নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে।
তিনি আরো জানান, প্রশাসন থেকে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় আমাকে ফোন করা হয়। তারা আমার তথ্য নেয়। তাদের আমি বলেছি, সুষ্ঠু তদন্ত করুন। তাদের অন্যায় ভাবে যেন না ফাঁসানো হয়। এখন যে ঘটনা ঘটেছে সেটা সাজানো নাকি কেউ শত্রুতার থেকে করেছে এটা আমার জানা নেই।
দুই ভাইকে আসামি করে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা: এদিকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারসহ দুইজন আটকের ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপপরিদর্শক (এসআই) মোখলেসুর রহমান বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি করেন।
মামলায় গ্রেপ্তারকৃত বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডিজিএম জয়নাল আবেদিনের বড় ছেলে শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন রুমি ও ছোট ছেলে জামাল উদ্দিন রফিক (পলাতক)সহ ৬ জন ও অজ্ঞাত আরও ৬ থেকে ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে ফরিদ উদ্দিন রুমির স্ত্রী জান্নাতুল ফোয়ারা অনুকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসেন জানান, জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের ঘটনায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজমের দায়ের করা ওই মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৬ থেকে ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে, জঙ্গিবিরোধী অভিযানের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ফরিদ উদ্দিন রুমি ও মিশুক খান মিজানকে চলতি বছরের ২৯শে এগ্রিল গুলিস্তানে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, রোববার রাত ২টা থেকে সোমবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ফতুল্লা থানার তক্কার মাঠ এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরকসহ নব্য জেএমবি সদস্য ফরিদ উদ্দিন রুমি ও তার স্ত্রী জান্নাতুল ফোয়ারা অনুকে আটক করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এর আগের রাতে ঢাকা থেকে মিজানকে আটক করে পুলিশ। তার দেয়া তথ্য মতেই ফতুল্লার ওই বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া শক্তিশালী ৪টি শক্তিশালী তাজা বোমা ঘটনাস্থলেই বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা নিষ্ক্রিয় করে।
যদিও সোমবার অভিযানের পরেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তালা ঝুলিয়ে রেখেছে ওই বাড়িতে। অভিযানের সময়ে ওই বাড়িতে শক্তিশালী চারটি বোমা নিষ্ক্রিয় করে বোমা ডিসপোজাল টিমের সদস্যরা। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের দাবি এ বাড়িটি নব্য জেএমবির ল্যাব হিসেবে ব্যবহৃত হতো। গত এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত রাজধানীতে পুলিশের ওপর যেসব হামলা হয়েছে তার প্রত্যেকটির সঙ্গে এ ল্যাবের যেমন সম্পর্ক আছে তেমনি গ্রেপ্তারকৃত ফরিদ উদ্দিন রুমি ও মিশুক হোসেন মিজানের সম্পৃক্ততা আছে। কারণ হামলায় যেসব বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয়েছে তার প্রত্যেকটির সঙ্গে সোমবার উদ্ধারকৃত বিস্ফোরকের মিল রয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে রোববার রাতে মাশুক খান মিজানকে গ্রেপ্তারের পর তার দেয়া তথ্যমতেই সোমবার ভোরে ফতুল্লার শেয়াচর ব্যাংক কলোনির বাড়ি থেকে ফরিদ উদ্দিন রুমিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আটক করা হয় তার স্ত্রী জান্নাতুল ফোয়ারা অনুকেও। পরে অভিযান চলে ফতুল্লার তক্কার মাঠে তাদের পরিত্যক্ত বাড়িতে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানিয়েছে, মিজান ও রুমি নব্য জেএমবির সদস্য। গুলিস্তানে পুলিশকে টার্গেট করে আইইডি হামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ফরিদ উদ্দিন রুমি আরেক ভাই জামাল উদ্দিন রফিককে আটকের কথা এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা স্বীকার না করলেও পরিবারের দাবি তাকেও নিয়ে গেছে।
জয়নাল আবেদীন বলেন, আমার দুই ছেলে ফরিদ উদ্দিন রুমি ও জামাল উদ্দিন রফিক এবং বড় ছেলের বউ জান্নাতুল ফোয়ারা অনু। রোববার রাত অনুমান ১টায় এ তিনজনকে আমার বাসা থেকে নিয়ে গেছে। তখন আমরা এখানে ছিলাম না। আমি ও আমার স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। প্রতিবেশীরা ফোনে রোববার রাত ২টার দিকে আমাকে জানিয়েছে এ ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবেশীরা বলেছে আপনার বাসায় তল্লাশি করছে ও ভাঙচুর করছে। তবে ফতুল্লা থানায় তাদের নেয়া হয়নি ঢাকা থেকে পুলিশ এসে নিয়েছে। ফোনের এই খবরে আমি রীতিমতো আঁতকে উঠি। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল আমার বাড়িতে কেন অভিযান হবে। আমি তো এমন কিছু করিনি যে আমার বাড়িতে পুলিশ আসবে। এলাকার সব মানুষ আমাদের পরিবারের সবাইকে চিনে-জানে। কেউ বলতে পারবে না আমার ছেলেমেয়ের কোনো দোষ-ত্রুটি দেখেছে। সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছি। ভদ্রতা, নম্রতা পরিবার থেকেই শিখিয়েছি। এতো মেধাবী আর শান্ত আমার দুই ছেলে। তাদের সম্পর্কে এখন আমি এসব কি শুনছি। এটা বিশ্বাস করতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। কোথাও যেন একটা ভুল হচ্ছে। আমি সুষ্ঠু তদন্ত চাই। আমার সন্তানরা এমন কাজ করতে পারে না। এলাকায় মাথা তুলে তারা কারো সামনে কথা বলেনি।
তিনি জানান, ১৯৮১ সালে জায়গা কিনে ১৯৮৫ সালে বাড়ি করি। যে বাড়ি থেকে ধরে নিয়েছে সেটাই আগে কিনে বাড়ি করি। পরে যে বাড়িতে অভিযান হয়েছে সেটা কিনেছি। ভাড়া দেয়ার জন্য টিনশেডের রুম করে দেই। সেখানে কেউ থাকে না। আমার ছোট ছেলে রফিক সেখানে থাকে মাঝে মাঝে ও দেখাশোনা করে। বাড়িতে যেহেতু লোকজন নেই কিন্তু সেখানে পানির পাম্প, রান্নার চুলাসহ আসবাবপত্র আছে। সেজন্যই মাঝে মাঝে সেখানে থাকে। কোরবানির দুটা ছাগল কেনা হলে ওই ছাগলগুলোর ঘাস খাওয়ানোর জন্য ওই বাড়িতে রাখা হয়। সে সময় কয়েকদিন ওখানে ছিল। এছাড়াও বাড়িতে আত্মীয়স্বজন আসলে জায়গা হতো না তখন সে ওখানে থাকতো।
জয়নাল আবেদীন বলেন, ভাড়াটিয়া থাকার মতো পরিবেশ নেই। বৃষ্টি হলে চালা দিয়ে পানি পড়ে আর পানি জমে থাকে যার জন্য ভাড়াটিয়ারা চলে যায়। সবাই যাওয়ার পরও একজন ভাড়াটিয়া ছিল। এছাড়াও ভবন নির্মাণের জন্য চিন্তাভাবনা ছিল সেজন্য এখানে মাটি পরীক্ষা করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে জয়নাল আবেদীন বলেন, ১৪ই সেপ্টেম্বর আমি সেখানে গিয়ে ঘাস পরিষ্কার পরিচ্ছন্নের জন্য তার রুম খুলি। সেখানে একটি কাস্তি, নিড়ানি ছিল সেটা দিয়ে ঘাস পরিষ্কার করি লাউ গাছের চারা লাগানোর জন্য। এছাড়াও বাড়ির সামনের ঘাসগুলোও পরিষ্কার করি। তারপর দিন ১৫ই সেপ্টেম্বর আমি গ্রামের বাড়ি চলে যাই। কিন্তু তার রুমে এসব কোনো কিছুই দেখিনি। রেফ্রিজেরেটরের কথা শুনেছি, কিন্তু এখানে ফ্রিজ আসার প্রশ্নই আসে না। এগুলো কিভাবে কি হয়েছে আমি বলতে পারছি না। আমার জানা মতে ১৪ই সেপ্টেম্বর আমি রুম খুলেছি কিন্তু আমার নজরে এসব কিছুই পড়েনি। এখানে ৬টা রুম। যার মধ্যে উত্তর দক্ষিণে দুটা রুম আর পূর্ব-পশ্চিমে ৪টি রুম। পূর্ব পশ্চিমের ৪টি রুমের প্রথমটিতে আমার দেখা একটা চকি, টেবিল, চেয়ার, বিছানা ও জামা কাপড় ছিল।
তিনি আরো বলেন, যখন দেখলাম বাড়িটি সংস্কার করা ছাড়া এখানে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই তখন আমিই ভাড়াটিয়াদের বলি যে চলে যান শুকনো মৌসুম আসলে আমি সংস্কার করবো। তখন আপনারা এসে আবার থাকতে পারবেন। তারপর ৬ মাসের সময় নিয়ে তারা ছেড়ে দেয়। এছাড়াও ভবন নির্মাণের জন্য চিন্তাভাবনা ছিল সেজন্য এখানে মাটি পরীক্ষা করা হয়। ছেলেদের প্রসঙ্গে জয়নাল আবেদীন বলেন, তাদের মধ্যে হঠাৎ করে কোনো পরিবর্তন দেখিনি। আমার মনেও পড়ে না। তারা স্কুল, কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে এমন কোনো কিছু দেখিনি। এছাড়া সব সময় নামাজ আগে থেকেই পড়ে। তাদের আমি আগেই সব সময় বলেছি, সন্তান হয় নেয়ামত কিংবা কেয়ামত। ছেলে যদি ভালো হয় তাহলে বাবা মায়ের জন্য নেয়ামত আর যদি খারাপ হয় তাহলে কেয়ামত। প্রতিবেশী ও এলাকাবাসী আছে তারা কেউ বলতে পারবে না, আমার ছেলেরা খারাপ, মারামারি, কাটাকাটি, ঝগড়া করেছে। মানুষ তো র্নূনতম নালিশ দেয় সেটাও কখনো আসেনি।
জয়নাল আবেদীন বলেন, তার বড় ছেলে রুমি আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ও প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক। রুমি ব্যাচের প্রথম ছিল আর সেই হিসেবে সেখানেই চাকরি করছে। ছোট ছেলে রফিক কুয়েট থেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য আবেদন করছে। ছেলেরা এসএসসি পাস করেছে ফতুল্লা পাইলট স্কুল থেকে আর এইচএসসি পাস করেছে নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে।
তিনি আরো জানান, প্রশাসন থেকে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় আমাকে ফোন করা হয়। তারা আমার তথ্য নেয়। তাদের আমি বলেছি, সুষ্ঠু তদন্ত করুন। তাদের অন্যায় ভাবে যেন না ফাঁসানো হয়। এখন যে ঘটনা ঘটেছে সেটা সাজানো নাকি কেউ শত্রুতার থেকে করেছে এটা আমার জানা নেই।
দুই ভাইকে আসামি করে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা: এদিকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারসহ দুইজন আটকের ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপপরিদর্শক (এসআই) মোখলেসুর রহমান বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি করেন।
মামলায় গ্রেপ্তারকৃত বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডিজিএম জয়নাল আবেদিনের বড় ছেলে শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন রুমি ও ছোট ছেলে জামাল উদ্দিন রফিক (পলাতক)সহ ৬ জন ও অজ্ঞাত আরও ৬ থেকে ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে ফরিদ উদ্দিন রুমির স্ত্রী জান্নাতুল ফোয়ারা অনুকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসেন জানান, জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের ঘটনায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজমের দায়ের করা ওই মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৬ থেকে ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে, জঙ্গিবিরোধী অভিযানের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ফরিদ উদ্দিন রুমি ও মিশুক খান মিজানকে চলতি বছরের ২৯শে এগ্রিল গুলিস্তানে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, রোববার রাত ২টা থেকে সোমবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ফতুল্লা থানার তক্কার মাঠ এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরকসহ নব্য জেএমবি সদস্য ফরিদ উদ্দিন রুমি ও তার স্ত্রী জান্নাতুল ফোয়ারা অনুকে আটক করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এর আগের রাতে ঢাকা থেকে মিজানকে আটক করে পুলিশ। তার দেয়া তথ্য মতেই ফতুল্লার ওই বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া শক্তিশালী ৪টি শক্তিশালী তাজা বোমা ঘটনাস্থলেই বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা নিষ্ক্রিয় করে।
No comments