গল্প সংকটে ঢালিউড by কামরুজ্জামান মিলু
একটি
চলচ্চিত্র দাঁড়ায় একটি সুন্দর গল্পের ওপর। আর সেই গল্প যদি দর্শকদের না
টানে তাহলে সেই চলচ্চিত্র লসের খাতায় নাম লেখাবে এটাই স্বাভাবিক। আশি-নব্বই
দশকের মধ্যভাগ পর্যন্ত ছবিতে গল্প খুঁজে পাওয়া যেতো। আর তাতে নিজেদের
জীবনের প্রতিফলন দেখতে দর্শক সিনেমা হলে ভিড় করতো। ব্যাপক মন্দাবস্থায়
নিমজ্জিত এখন দেশীয় চলচ্চিত্র। মাঝে কিছু সিনেমার গল্প দর্শকরা পছন্দ করলেও
বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ চলচ্চিত্রের গল্প ও চিত্রনাট্য দুর্বল। তাই একের
পর এক এসব চলচ্চিত্র লসের খাতায় নাম লেখাচ্ছে। চলচ্চিত্র শিল্পের বর্তমান
মন্দাবস্থার জন্য বেশিরভাগ দর্শকই সিনেমার গল্প ও চিত্রনাট্যকে বেশি দায়ী
করছেন। ‘প্রতীজ্ঞা’, ‘নাতবৌ’, ‘জিদ্দি’, ‘সত্য মিথ্যা’, ‘পিতা মাতা
সন্তান’, ‘বাংলার বধূ’, ‘জজ ব্যারিস্টার’, ‘দেনমোহর’, ‘কালিয়া’, ‘স্ত্রী
হত্যা’, ‘স্বামী কেন আসামি’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘আমি সেই মেয়ে’সহ অনেক
হিট ছবির গল্প লিখেছেন ঢালিউডের জনপ্রিয় পরিচালক, গল্প, সংলাপ রচয়িতা ও
চিত্রনাট্যকার ছটকু আহমেদ। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, এখনকার ছবিতে গল্পের সংকট
চরমে। বর্তমান ছবির গল্পে নানা-নানি, দাদা দাদি তো দূরে থাক মা-বাবাই থাকে
না। চার-পাঁচ বছর ধরে আমিও তেমন গল্প লিখছি না। কারণ আমাদের সময় মাসের পর
মাস একটা স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ চলতো, আর্টিস্টের সঙ্গে কথা হতো। এখন তো
একদিনের মধ্যে গল্প রেডি করে তাড়াতাড়ি চিত্রনাট্য দিতে বলা হয়। একটি ছবির
মূল চরিত্রের চাল-চলন কেমন হবে, সংলাপ কেমন হবে-এ বিষয়গুলোতে জোর দেয়া
দরকার। নোংরা বিষয় দেখানো আর জীবনের গল্প দেখানো এক না। সুন্দর গল্পের
পাশাপাশি চিত্রনাট্যে গতি থাকতে হবে। এখনকার সিনেমার চিত্রনাট্যে তো গতিই
নেই। বর্তমানে যেসব ছবি দেখি সেসব দেখে আমারই তো মন খারাপ হয়। এই গল্প সংকট
দ্রুত কাটিয়ে উঠতে হবে আমাদের। বর্তমানে জনপ্রিয় খল অভিনেতা ডিপজলের
প্রযোজনায় একটি ও নায়ক অনন্ত জলিলের প্রযোজনায় একটি এ মোট দুটি ছবির
চিত্রনাট্য লিখছেন ছটকু আহমেদ। একটা সময় সৈয়দ শামসুল হক, কাজী আজিজ,
মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানসহ নানা বিশিষ্টজন ছবির গল্প লিখতেন। উপযুক্ত
পারিশ্রমিক দিতে হবে ভেবে বর্তমান সময়ের অনেক নির্মাতাই সিনিয়র লেখকদের
কাছে গল্পের জন্য যান না। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিত্রপরিচালক
বলেন, দেশে গল্পকারের অভাব রয়েছে এটা সত্যি। তবে যারা আছেন তারা একটি গল্প
লিখতে দিলে অনেক সময় লাগিয়ে দিচ্ছেন। টাকাও বেশি নিচ্ছেন। তাই বাধ্য হয়ে
বিদেশি গল্প বা ছবির অনুকরণ করতে হয়। আর প্রতি বছরই ছবি মুক্তির সংখ্যা
কমছে। এরমধ্যে কাজ না করলে জীবন চলবে কি করে? পরিচালনার পাশাপাশি বেশকিছু
ছবির চিত্রনাট্য করে প্রশংসা পেয়েছেন তৌকীর আহমেদ। তিনি বলেন, চলচ্চিত্রের
মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে গল্প ও চিত্রনাট্য। এর পাশাপাশি ছবির
নির্মাণও ভালো হতে হবে। বর্তমানে অনেক স্বাধীন নির্মাতা নিজেই সিনেমার গল্প
বলতে চান। সেক্ষেত্রে চিত্রনাট্য নিজে করেন। তবে সে বিষয়ে দক্ষতার সঙ্গে
সিনেমার গল্পটি দর্শকদের দেখাতে হবে। গল্পের সংকট রয়েছে এবং তা কাটানোর
জন্য চেষ্টা আমাদেরই তো করতে হবে। পরিচালনার পাশাপাশি ‘অস্তিত্ব আমার দেশ’,
‘জাগো’, ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ ছবিগুলোর গল্প ও চিত্রনাট্য করেছেন খিজির
হায়াত খান। তিনি বলেন, আমি নিজেও ভালো এবং সময়োপযোগী চিত্রনাট্য লেখার
চেষ্টা করছি। সিনেমার চিত্রনাট্য নিয়ে শতভাগ দর্শকের কাছাকাছি এখনো যেতে
পারিনি। আমাদের দেশে গল্পকার ও স্ক্রিপ্ট রাইটারের অভাব রয়েছে। সিনেমার
গল্প লেখা আর চিত্রনাট্য তৈরি করা দুটি আলাদা ব্যাপার। এ বিষয়ে দক্ষ লোক
প্রয়োজন। উপযুক্ত ট্রেনিংও দরকার। সিনেমার চিত্রনাট্যের একটা ফরমেট রয়েছে।
সেটা আমরা ফলো না করেই চিত্রনাট্য তৈরির চেষ্টা করছি। এ কারণে প্রতিনিয়ত
দর্শক হারিয়ে ফেলছি বলে মনে হয় আমার।
No comments