শিক্ষার আলো জ্বালছেন এরফান আলী by আবু সালেহ মুসা
ঠাকুরগাঁও
সীমান্তবর্তী হরিপুর উপজেলার নির্জন চড়ভিটা গ্রাম। কাঁটাতারের বেড়া সংলগ্ন
ওই গ্রামে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা হাতেগোনা ক’জন। একসময় ওই গ্রামের মানুষ
চাষ আর ক্ষেত-খামারে কাজ করা ছাড়া কিছুই বুঝতো না। তাদের শিক্ষিত করার
স্বপ্ন দেখলেন বেকার যুবক এরফান আলী। ২০০১ সালে চরভিটা গ্রামের পশ্চিমে ৩৩
শতাংশ জমিতে; খড়-বাঁশের তিনটি ঘর তৈরি করে ৪০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে চরভিটা
স্কুলের যাত্রা শুরু করেন এরফান। পরে স্কুলের নামে আরো জমি কেনা হয়। চারজন
শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত বর্তমানে শিক্ষার্থী ৩২০ জন। এছাড়াও ১৯৩ জন
শিক্ষার্থী নিয়ে ৬ জন শিক্ষক দিয়ে শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় চলে বিকাল
থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
এলাকার যে সব ছাত্রছাত্রী হারিকেন, চেরাগ কিংবা বৈদ্যুতিক আলো জ্বালিয়ে বাড়িতে পড়ালেখা করতে পারে না তাদের স্কুলে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনা বেতনে পড়ানো হয় এই স্কুলে। রাতের পড়া শেষে অভিভাবকের হাতে বাচ্চাদের বুঝিয়ে দেয়া হয়। কোনো অভিভাবক সময়মতো আসতে না পারলে তাদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত বিনয়ী অতিথিপরায়ণ। অতিথি দেখলে অত্যন্ত মিষ্টি সুরে সালাম বিনিময়। এসেম্বলিতে নজরকাড়া পরিবেশ। স্কুলের খেলার মাঠ, পুকুর, পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে এক কথায় যেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশে। স্কুলটিতে গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক শিশু পার্ক। পুকুরে হাঁস পালন আর মাছ চাষ করা হয়। শিক্ষার্থীদের সাঁতার শেখানো হয় এখানে। নিরাপত্তার জন্য সীমানা প্রাচীর দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ঘিরে রাখা হয়েছে। প্রাচীরে লেখা রয়েছে বিখ্যাত মনীষীদের উক্তি, আঁকা রয়েছে জাতীয় ফুল-ফল, গুণীজনদের ছবি, শিশু শিক্ষার্থীদের আর্কষণীয় মিনা রাজুর বিদ্যালয়ে যাওয়ার টিয়া পাখি সম্বলিত ছবিসহ অনেক চিত্র। স্কুলের নিজস্ব জাদুঘরে দেখা যায়, গরুর গাড়ি, কুলা, মাথল, লাঠি, ঢেঁকি, যাতা, ছাম, মই ইত্যাদি সাজিয়ে রেখেছেন। লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, বসার জন্য কুটির চালা, খেলার জন্য শিশুপার্ক ভালো পরিবেশের জন্য ফুলের বাগান এবং পুকুরে নৌকা রয়েছে। গ্রামের নামনুসারে নামকরণ করা হয়েছে চড়ভিটা প্রাথমিক বিদ্যালয়। এক সময়ের খোলা আকাশের নিচে চট বিছিয়ে পড়ানো স্কুল ২০১৭ সালের ১৭ই মার্চ সরকারিকরণ করা হয়েছে। স্কুলটি সরকারি হওয়ার সময় এরফান আলী মাস্টার ৪২ মাসের বকেয়া বেতন হিসেবে ৩২ লাখ টাকা পান। তন্মধ্যে আর্তমানবতার সেবায় এবং স্কুলের উন্নয়নমূলক কাজে প্রায় ১৮ লাখ টাকা খরচ করেন। শিক্ষার্থীদের কেউ স্কুলে না আসলে তাৎক্ষণিকভাবে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য মোবাইল সিম দিয়ে ল্যান্ড ফোন ব্যবহার করেন তিনি। কেউ অসুস্থ হলে তার ওষুধ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন তাৎক্ষণিকভাবে। বিদ্যালয়ের বাহ্যিক পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হলেও জরাজীর্ণ ঘরে শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেখে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এরফান আলীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, এ বিদ্যালয়টি বেসরকারি ছিল বর্তমানে সরকারি হয়েছে। আর এ পরিবেশ আমিসহ এলাকার মানুষের সহযোগিতায় গড়ে তুলেছি। গ্রাম পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পড়াতে চায় না। তাই আমি নিজ উদ্যোগে সকলের সহযোগিতায় শিক্ষার আধুনিক পরিবেশ নিয়ে ছেলেমেয়েদের প্রাথমিকে সুশিক্ষা দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে এমন পরিবেশ করেছি। স্কুলে এসে শিশুরা বিনোদন করতে চাইলে আমাদের লোক দিয়ে নৌকাই করে পুকুরের চারপাশ ঘুরে বিনোদন করতে পারে। ২০১৪ সাল থেকে চালাচ্ছেন মিড ডে মিল। গ্রামের সকল মানুষের নিকট মুষ্টি মুষ্টি চাল আর হাঁস-মাছের আবাদ করে বেশিরভাগ অর্থ দেয়া এই মিড ডে মিলে। শিক্ষার্থীদের শরীরে পুষ্টিমান ঠিক রাখার জন্য সম্পূর্ণ নিজস্ব খরচে মাসে দু’দিন দুধ, কলা, পাউরুটি খাওয়ানো হয়। শীতের সময় গরিব অসহায় শিক্ষার্থীদের জন্য গরম শীতবস্ত্র দিয়ে থাকি। শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধ, উপস্থিতির হার বৃদ্ধি এবং পড়াশোনায় উৎসাহী করতে ২০১৪ সালে মিড ডে মিল চালু করে দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করে স্কুলটি। ২০১৫ সালে পত্রপত্রিকায় মিড ডে, মিলের সংবাদটি প্রকাশ হয়। ২০১৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সমন্বয় সভায় এই স্কুলের মিড ডে মিল এর মডেলটি আলোচনায় আসে। এরপর অধিদপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে এই স্কুলকে অনুসরণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। মন্ত্রী মো. মোস্তাফিজার রহমান ফিজার ২০১৫ সালে স্কুলটি পরিদর্শন করেন। স্কুলের কার্যক্রম বাড়াতে জেলা প্রশাসক মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন। যদ্দুুর সম্ভব অর্থের পাশাপাশি যোগান দিয়েছিলেন সাহস উৎসাহ উদ্দীপনা। ২০১৮ সালের অক্টোবরে রংপুর বিভাগীয় ডিডি মো. আ. ওহাব স্কুল পরিদর্শনে আসেন। এছাড়াও চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব উদ্বোধন ও মিড ডে মিল পরিদর্শন করেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (নিয়োগ শাখা) এ কে এম সাফায়েত আলম প্রধান। এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার এম এস এ রবিউল ইসলাম বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান ও পরিবেশের প্রশংসা করে বলেন, শিক্ষকদের নিজ উদ্যোগে এমন পরিবেশ সমন্বিত বিদ্যালয় আমার উপজেলায় তেমন নেই। স্কুলটিতে ভবনের জন্য পড়াশোনার সমস্যা হচ্ছিল, আমরা ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবগত করেছিলাম। কর্তৃপক্ষ ভবন বরাদ্দ দিয়েছে এবং ভবনের কাজ খুব তাড়াতাড়ি শুরু হবে। আমরা আশা করছি পড়াশোনায় বিদ্যালয়টির আরো মান বাড়বে।
এলাকার যে সব ছাত্রছাত্রী হারিকেন, চেরাগ কিংবা বৈদ্যুতিক আলো জ্বালিয়ে বাড়িতে পড়ালেখা করতে পারে না তাদের স্কুলে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনা বেতনে পড়ানো হয় এই স্কুলে। রাতের পড়া শেষে অভিভাবকের হাতে বাচ্চাদের বুঝিয়ে দেয়া হয়। কোনো অভিভাবক সময়মতো আসতে না পারলে তাদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত বিনয়ী অতিথিপরায়ণ। অতিথি দেখলে অত্যন্ত মিষ্টি সুরে সালাম বিনিময়। এসেম্বলিতে নজরকাড়া পরিবেশ। স্কুলের খেলার মাঠ, পুকুর, পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে এক কথায় যেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশে। স্কুলটিতে গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক শিশু পার্ক। পুকুরে হাঁস পালন আর মাছ চাষ করা হয়। শিক্ষার্থীদের সাঁতার শেখানো হয় এখানে। নিরাপত্তার জন্য সীমানা প্রাচীর দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ঘিরে রাখা হয়েছে। প্রাচীরে লেখা রয়েছে বিখ্যাত মনীষীদের উক্তি, আঁকা রয়েছে জাতীয় ফুল-ফল, গুণীজনদের ছবি, শিশু শিক্ষার্থীদের আর্কষণীয় মিনা রাজুর বিদ্যালয়ে যাওয়ার টিয়া পাখি সম্বলিত ছবিসহ অনেক চিত্র। স্কুলের নিজস্ব জাদুঘরে দেখা যায়, গরুর গাড়ি, কুলা, মাথল, লাঠি, ঢেঁকি, যাতা, ছাম, মই ইত্যাদি সাজিয়ে রেখেছেন। লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, বসার জন্য কুটির চালা, খেলার জন্য শিশুপার্ক ভালো পরিবেশের জন্য ফুলের বাগান এবং পুকুরে নৌকা রয়েছে। গ্রামের নামনুসারে নামকরণ করা হয়েছে চড়ভিটা প্রাথমিক বিদ্যালয়। এক সময়ের খোলা আকাশের নিচে চট বিছিয়ে পড়ানো স্কুল ২০১৭ সালের ১৭ই মার্চ সরকারিকরণ করা হয়েছে। স্কুলটি সরকারি হওয়ার সময় এরফান আলী মাস্টার ৪২ মাসের বকেয়া বেতন হিসেবে ৩২ লাখ টাকা পান। তন্মধ্যে আর্তমানবতার সেবায় এবং স্কুলের উন্নয়নমূলক কাজে প্রায় ১৮ লাখ টাকা খরচ করেন। শিক্ষার্থীদের কেউ স্কুলে না আসলে তাৎক্ষণিকভাবে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য মোবাইল সিম দিয়ে ল্যান্ড ফোন ব্যবহার করেন তিনি। কেউ অসুস্থ হলে তার ওষুধ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন তাৎক্ষণিকভাবে। বিদ্যালয়ের বাহ্যিক পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হলেও জরাজীর্ণ ঘরে শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেখে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এরফান আলীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, এ বিদ্যালয়টি বেসরকারি ছিল বর্তমানে সরকারি হয়েছে। আর এ পরিবেশ আমিসহ এলাকার মানুষের সহযোগিতায় গড়ে তুলেছি। গ্রাম পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পড়াতে চায় না। তাই আমি নিজ উদ্যোগে সকলের সহযোগিতায় শিক্ষার আধুনিক পরিবেশ নিয়ে ছেলেমেয়েদের প্রাথমিকে সুশিক্ষা দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে এমন পরিবেশ করেছি। স্কুলে এসে শিশুরা বিনোদন করতে চাইলে আমাদের লোক দিয়ে নৌকাই করে পুকুরের চারপাশ ঘুরে বিনোদন করতে পারে। ২০১৪ সাল থেকে চালাচ্ছেন মিড ডে মিল। গ্রামের সকল মানুষের নিকট মুষ্টি মুষ্টি চাল আর হাঁস-মাছের আবাদ করে বেশিরভাগ অর্থ দেয়া এই মিড ডে মিলে। শিক্ষার্থীদের শরীরে পুষ্টিমান ঠিক রাখার জন্য সম্পূর্ণ নিজস্ব খরচে মাসে দু’দিন দুধ, কলা, পাউরুটি খাওয়ানো হয়। শীতের সময় গরিব অসহায় শিক্ষার্থীদের জন্য গরম শীতবস্ত্র দিয়ে থাকি। শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধ, উপস্থিতির হার বৃদ্ধি এবং পড়াশোনায় উৎসাহী করতে ২০১৪ সালে মিড ডে মিল চালু করে দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করে স্কুলটি। ২০১৫ সালে পত্রপত্রিকায় মিড ডে, মিলের সংবাদটি প্রকাশ হয়। ২০১৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সমন্বয় সভায় এই স্কুলের মিড ডে মিল এর মডেলটি আলোচনায় আসে। এরপর অধিদপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে এই স্কুলকে অনুসরণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। মন্ত্রী মো. মোস্তাফিজার রহমান ফিজার ২০১৫ সালে স্কুলটি পরিদর্শন করেন। স্কুলের কার্যক্রম বাড়াতে জেলা প্রশাসক মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন। যদ্দুুর সম্ভব অর্থের পাশাপাশি যোগান দিয়েছিলেন সাহস উৎসাহ উদ্দীপনা। ২০১৮ সালের অক্টোবরে রংপুর বিভাগীয় ডিডি মো. আ. ওহাব স্কুল পরিদর্শনে আসেন। এছাড়াও চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব উদ্বোধন ও মিড ডে মিল পরিদর্শন করেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (নিয়োগ শাখা) এ কে এম সাফায়েত আলম প্রধান। এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার এম এস এ রবিউল ইসলাম বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান ও পরিবেশের প্রশংসা করে বলেন, শিক্ষকদের নিজ উদ্যোগে এমন পরিবেশ সমন্বিত বিদ্যালয় আমার উপজেলায় তেমন নেই। স্কুলটিতে ভবনের জন্য পড়াশোনার সমস্যা হচ্ছিল, আমরা ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবগত করেছিলাম। কর্তৃপক্ষ ভবন বরাদ্দ দিয়েছে এবং ভবনের কাজ খুব তাড়াতাড়ি শুরু হবে। আমরা আশা করছি পড়াশোনায় বিদ্যালয়টির আরো মান বাড়বে।
No comments