ভ্যালেন্টাইন এরশাদ by ফারুক ওয়াসিফ
আজ
ভ্যালেন্টাইনস দিবস, তথা ভালোবাসা দিবস। আজ দিন এরশাদের। তেত্রিশ বছর আগেও
যেমন, তেত্রিশ বছর পরেও তেমন। তেত্রিশ বছর আগে এই দিনে এরশাদের স্বৈরশাসন
রুখতে গিয়ে ছাত্ররা প্রাণ দিয়েছিলেন। এবং ‘তেত্রিশ বছর কেটে গেল, কেউ কথা
রাখেনি’—সেই শহীদেরা বিস্মৃতপ্রায়, কিন্তু দারুণ জাগ্রত ভালোবাসা। আর সেই
ভালোবাসা এমনই রঙিন, কেবলই এরশাদের কথা মনে আসে। প্রেমিকের ভাবমূর্তি নিয়ে
তিনি আজও ‘বর্তমান’।
সোয়া বছর আগেও তাঁর প্রেমিক হৃদয় বলে উঠেছিল, ‘এখন আর প্রেম-ভালোবাসা নেই। সমাজ থেকে প্রেম-ভালোবাসা উঠে গেছে’ (আমাদের সময়, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪)। এরশাদ যে প্রেমিক, এ তাঁর অতি বড় শত্রুও অস্বীকার করবে না। আমাদের আশির দশক এরশাদের প্রেমের দশক। আর সেই প্রেমের ইতিহাস প্রতারণারও ইতিহাস। এক প্রেমিকাকে তিনি দলের সংরক্ষিত কোটায় সাংসদ বানিয়েছিলেন, পরে ছুড়ে ফেলেছিলেন। আরেক নারী যুক্তরাজ্যে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছিলেন। তাঁর আরেক স্ত্রী বিদিশাকে তো একরকম নির্যাতিত ও অপমানিত হয়ে বিদায় নিতে হয়েছিল। এরশাদের প্রেমঘটিত কাহিনিগুলো তাঁর পতনের পরে দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোয় প্রকাশিত হয়।
অনেকের কাছে এসব এখনো মজাদার গল্প। কিন্তু এই মজার আড়ালে চাপা পড়ে যায় এরশাদ আমলের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো। ১৪ ফেব্রুয়ারির ভ্যালেন্টাইনস দিবসের রমরমার তলায় চাপা পড়ে গেছে ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত ইতিহাস। এরশাদের শাসন আর তাঁর শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খানের গণবিরোধী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। ঢাকার হাইকোর্টের সামনের রাস্তায় পুলিশের গুলিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন জাফর, জয়নাল, দীপালি সাহা, আইয়ুব, ফারুক, কাঞ্চন প্রমুখ। ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও সরকার স্বীকার করে মাত্র একজনের মৃত্যুর কথা। পরদিন চট্টগ্রামে নিহত হন মোজাম্মেলসহ আরও কয়েকজন। সেই থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস।
কিন্তু এ এমন এক যুগ, যখন ইতিহাস ও স্মৃতির বাছাই চলছে। যে ইতিহাস ও স্মৃতির পক্ষে ক্ষমতা ও ব্যবসা আছে, সেটাই কেবল জীবন্ত হয়। সেই স্মৃতিই পুষে রাখা হয়, যা নাকি ক্ষমতাবানদের জন্য নিরাপদ। বাকিদের পাঠানো হয় বিস্মৃতির হিমঘরে। ভালোবাসা দিবস তাই যত জাগ্রত, তত জাগ্রত নয় ১৪ ফেব্রুয়ারির শহীদদের আত্মদানের রক্ত-অশ্রু-দ্রোহের কথা। একটি নিলে আরেকটিকে ভুলে যেতে হবে, এমন ছোট হবে কেন প্রেমিকের মন, এমন খাটো হবে কেন তাদের স্মৃতি?
কিন্তু ভালোবাসার সঙ্গে বিদ্রোহ-বিপ্লবের তো কোনো বিরোধ থাকতে পারে না। রণাঙ্গন থেকে কিংবা জেলখানা থেকেই তো যুগে যুগে লেখা হয়েছিল হৃদয় নিংড়ানো প্রেমের কবিতা। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে প্রেম, বিদ্রোহ ও কবিতা পাশাপাশি হেঁটেছিল তরুণদের মিছিলে, মঞ্চের বক্তৃতা ও কবিতার আবৃত্তিতে। নব্বইয়ের এক ছাত্রনেতার মুখে শুনেছি, এরশাদের পতনের খবর শুনে নাকি আবেগে ছেলেমেয়েরা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। পরে গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে শামসুন্নাহার হলে ন্যক্কারজনক পুলিশি অভিযানের সময়ে যে তীব্র আন্দোলন তৈরি হয়েছিল, তার সোনালি মুহূর্তটি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর পদত্যাগ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তখন আমরণ অনশন চলছিল শিক্ষার্থীদের। পুলিশের নির্মম মার, ছাত্রদলের হুমকি, বিভিন্ন পক্ষের ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিনরাত শত শত ছেলেমেয়ের জমায়েত চলছিল শহীদ মিনারের বেদিতে। বিজয়ের খবরে ছেলেমেয়েরা হাত ধরাধরি করে গোল হয়ে নেচেছিলেন আর গাইছিলেন প্রাণভরে। বন্ধুত্ব, ভালোবাসা ও সংগ্রামের আবেগ তাঁদের এক করেছিল। ভালোবাসা দিবসে এই সব সংগ্রামী ভালোবাসারও স্থান থাকুক, সেই শহীদদের জন্যও নিবেদিত হোক না কিছু কবিতা ও কিছু লাল গোলাপ।
সৌন্দর্য ঘাতক ও সমালোচককে একসঙ্গে যে মুগ্ধ করতে পারে, তার প্রমাণ এরশাদ ও তাঁর ঘোরতর সমালোচক সাংবাদিক-লেখক শফিক রেহমান। উভয়েরই প্রিয় ফুল লাল গোলাপ, উভয়ই প্রেম ও কবিতার আশিক। এরশাদের আমলের মধ্যসময়ে তিনি যায়যায়দিন নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করা শুরু করেন। সেখানেও প্রেম ও প্রতিবাদ একসঙ্গেই চলেছিল। ওই পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হতো মিলা ও মঈন নামের দুই কল্পিত চরিত্রের প্রেমালাপ। তাদের সেই আলাপের বড় অংশজুড়েই থাকত রাজনৈতিক ঘটনাবলি এবং অবধারিতভাবে উঠত এরশাদের সমালোচনা। এমন সব লেখার জন্য শফিক রেহমানকে দেশছাড়া হতেও হয়েছিল কিছুদিনের জন্য। আর শফিক রেহমানই তাঁর ‘লাল গোলাপ’ নামের টেলিভিশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে ১৪ ফেব্রুয়ারির ভ্যালেন্টাইনস দিবসের প্রচার শুরু করেন। সেই অনুষ্ঠানে তিনি লাল গোলাপ হাতে আসেন, অতিথিদের তা উপহারও দেন। ইতিহাস এ রকমই পরিহাসময়। একসময়ের এক তীব্র এরশাদবিরোধীর মাধ্যমেই এরশাদ আমলের এক বিয়োগান্ত অধ্যায় আড়ালে পড়ে যেতে শুরু করে। ক্ষমতার মতোই প্রেমও সময়ে সময়ে অন্ধ বটে। আজকের প্রেমান্ধরা কি স্বৈরাচারীর অপরাধ দেখবেন না? আর ক্ষমতান্ধরা কি চিরকালের মতো প্রেমের পথে বাধাই হয়ে থাকবেন?
১৪ ফেব্রুয়ারিতে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস আর ভালোবাসা দিবস একসঙ্গেই চলতে পারত হাত ধরাধরি করে। তা যে হলো না, কারণ ভালোবাসা-বাসির সঙ্গে জড়িত সব পণ্যের বাজার বড়ই চাঙা। কারণ, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক চেতনা খুবই দুর্বল। গণতন্ত্র দাবি করতে যে সাহস লাগে, যে সংগ্রাম ও সততা লাগে, তাও যেন কমে আসছে আজকের তরুণদের মধ্যে।
পরাজয়ের স্মৃতি মানুষ ভুলে যেতে চায়। নব্বইয়ে এরশাদের পতন হলেও গণতন্ত্রের জয় টেকসই হয়নি। এককালের গণতন্ত্রের প্রহরীরা এখন এরশাদের প্রতিই ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে আছেন। বাংলাদেশের রাজনীতির পিতৃপুরুষ এরশাদই, সবাই যেন তাঁর মতো একচেটিয়া ক্ষমতা ভোগ করতে চায়। সেই পথে যেতে যেতে তাঁরা মাড়িয়ে চলেন ১৪ ফেব্রুয়ারিসহ আশির দশকের সব
শহীদ তরুণ-তরুণীদের অবদান। হয়তো ভবিষ্যতের অন্য কোনো তরুণেরা প্রেম ও বিদ্রোহের নামে আবার তাদের আত্মদানের স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলবে। সে সময় পর্যন্ত কি এরশাদের মতো মানুষদের মেকি হাসি মেকি কান্না আমাদের দেখে যেতে হবে?
ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক ও লেখক।
bagharu@gmail.com
সোয়া বছর আগেও তাঁর প্রেমিক হৃদয় বলে উঠেছিল, ‘এখন আর প্রেম-ভালোবাসা নেই। সমাজ থেকে প্রেম-ভালোবাসা উঠে গেছে’ (আমাদের সময়, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪)। এরশাদ যে প্রেমিক, এ তাঁর অতি বড় শত্রুও অস্বীকার করবে না। আমাদের আশির দশক এরশাদের প্রেমের দশক। আর সেই প্রেমের ইতিহাস প্রতারণারও ইতিহাস। এক প্রেমিকাকে তিনি দলের সংরক্ষিত কোটায় সাংসদ বানিয়েছিলেন, পরে ছুড়ে ফেলেছিলেন। আরেক নারী যুক্তরাজ্যে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছিলেন। তাঁর আরেক স্ত্রী বিদিশাকে তো একরকম নির্যাতিত ও অপমানিত হয়ে বিদায় নিতে হয়েছিল। এরশাদের প্রেমঘটিত কাহিনিগুলো তাঁর পতনের পরে দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোয় প্রকাশিত হয়।
অনেকের কাছে এসব এখনো মজাদার গল্প। কিন্তু এই মজার আড়ালে চাপা পড়ে যায় এরশাদ আমলের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো। ১৪ ফেব্রুয়ারির ভ্যালেন্টাইনস দিবসের রমরমার তলায় চাপা পড়ে গেছে ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত ইতিহাস। এরশাদের শাসন আর তাঁর শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খানের গণবিরোধী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। ঢাকার হাইকোর্টের সামনের রাস্তায় পুলিশের গুলিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন জাফর, জয়নাল, দীপালি সাহা, আইয়ুব, ফারুক, কাঞ্চন প্রমুখ। ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও সরকার স্বীকার করে মাত্র একজনের মৃত্যুর কথা। পরদিন চট্টগ্রামে নিহত হন মোজাম্মেলসহ আরও কয়েকজন। সেই থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস।
কিন্তু এ এমন এক যুগ, যখন ইতিহাস ও স্মৃতির বাছাই চলছে। যে ইতিহাস ও স্মৃতির পক্ষে ক্ষমতা ও ব্যবসা আছে, সেটাই কেবল জীবন্ত হয়। সেই স্মৃতিই পুষে রাখা হয়, যা নাকি ক্ষমতাবানদের জন্য নিরাপদ। বাকিদের পাঠানো হয় বিস্মৃতির হিমঘরে। ভালোবাসা দিবস তাই যত জাগ্রত, তত জাগ্রত নয় ১৪ ফেব্রুয়ারির শহীদদের আত্মদানের রক্ত-অশ্রু-দ্রোহের কথা। একটি নিলে আরেকটিকে ভুলে যেতে হবে, এমন ছোট হবে কেন প্রেমিকের মন, এমন খাটো হবে কেন তাদের স্মৃতি?
কিন্তু ভালোবাসার সঙ্গে বিদ্রোহ-বিপ্লবের তো কোনো বিরোধ থাকতে পারে না। রণাঙ্গন থেকে কিংবা জেলখানা থেকেই তো যুগে যুগে লেখা হয়েছিল হৃদয় নিংড়ানো প্রেমের কবিতা। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে প্রেম, বিদ্রোহ ও কবিতা পাশাপাশি হেঁটেছিল তরুণদের মিছিলে, মঞ্চের বক্তৃতা ও কবিতার আবৃত্তিতে। নব্বইয়ের এক ছাত্রনেতার মুখে শুনেছি, এরশাদের পতনের খবর শুনে নাকি আবেগে ছেলেমেয়েরা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। পরে গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে শামসুন্নাহার হলে ন্যক্কারজনক পুলিশি অভিযানের সময়ে যে তীব্র আন্দোলন তৈরি হয়েছিল, তার সোনালি মুহূর্তটি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর পদত্যাগ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তখন আমরণ অনশন চলছিল শিক্ষার্থীদের। পুলিশের নির্মম মার, ছাত্রদলের হুমকি, বিভিন্ন পক্ষের ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিনরাত শত শত ছেলেমেয়ের জমায়েত চলছিল শহীদ মিনারের বেদিতে। বিজয়ের খবরে ছেলেমেয়েরা হাত ধরাধরি করে গোল হয়ে নেচেছিলেন আর গাইছিলেন প্রাণভরে। বন্ধুত্ব, ভালোবাসা ও সংগ্রামের আবেগ তাঁদের এক করেছিল। ভালোবাসা দিবসে এই সব সংগ্রামী ভালোবাসারও স্থান থাকুক, সেই শহীদদের জন্যও নিবেদিত হোক না কিছু কবিতা ও কিছু লাল গোলাপ।
সৌন্দর্য ঘাতক ও সমালোচককে একসঙ্গে যে মুগ্ধ করতে পারে, তার প্রমাণ এরশাদ ও তাঁর ঘোরতর সমালোচক সাংবাদিক-লেখক শফিক রেহমান। উভয়েরই প্রিয় ফুল লাল গোলাপ, উভয়ই প্রেম ও কবিতার আশিক। এরশাদের আমলের মধ্যসময়ে তিনি যায়যায়দিন নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করা শুরু করেন। সেখানেও প্রেম ও প্রতিবাদ একসঙ্গেই চলেছিল। ওই পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হতো মিলা ও মঈন নামের দুই কল্পিত চরিত্রের প্রেমালাপ। তাদের সেই আলাপের বড় অংশজুড়েই থাকত রাজনৈতিক ঘটনাবলি এবং অবধারিতভাবে উঠত এরশাদের সমালোচনা। এমন সব লেখার জন্য শফিক রেহমানকে দেশছাড়া হতেও হয়েছিল কিছুদিনের জন্য। আর শফিক রেহমানই তাঁর ‘লাল গোলাপ’ নামের টেলিভিশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে ১৪ ফেব্রুয়ারির ভ্যালেন্টাইনস দিবসের প্রচার শুরু করেন। সেই অনুষ্ঠানে তিনি লাল গোলাপ হাতে আসেন, অতিথিদের তা উপহারও দেন। ইতিহাস এ রকমই পরিহাসময়। একসময়ের এক তীব্র এরশাদবিরোধীর মাধ্যমেই এরশাদ আমলের এক বিয়োগান্ত অধ্যায় আড়ালে পড়ে যেতে শুরু করে। ক্ষমতার মতোই প্রেমও সময়ে সময়ে অন্ধ বটে। আজকের প্রেমান্ধরা কি স্বৈরাচারীর অপরাধ দেখবেন না? আর ক্ষমতান্ধরা কি চিরকালের মতো প্রেমের পথে বাধাই হয়ে থাকবেন?
১৪ ফেব্রুয়ারিতে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস আর ভালোবাসা দিবস একসঙ্গেই চলতে পারত হাত ধরাধরি করে। তা যে হলো না, কারণ ভালোবাসা-বাসির সঙ্গে জড়িত সব পণ্যের বাজার বড়ই চাঙা। কারণ, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক চেতনা খুবই দুর্বল। গণতন্ত্র দাবি করতে যে সাহস লাগে, যে সংগ্রাম ও সততা লাগে, তাও যেন কমে আসছে আজকের তরুণদের মধ্যে।
পরাজয়ের স্মৃতি মানুষ ভুলে যেতে চায়। নব্বইয়ে এরশাদের পতন হলেও গণতন্ত্রের জয় টেকসই হয়নি। এককালের গণতন্ত্রের প্রহরীরা এখন এরশাদের প্রতিই ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে আছেন। বাংলাদেশের রাজনীতির পিতৃপুরুষ এরশাদই, সবাই যেন তাঁর মতো একচেটিয়া ক্ষমতা ভোগ করতে চায়। সেই পথে যেতে যেতে তাঁরা মাড়িয়ে চলেন ১৪ ফেব্রুয়ারিসহ আশির দশকের সব
শহীদ তরুণ-তরুণীদের অবদান। হয়তো ভবিষ্যতের অন্য কোনো তরুণেরা প্রেম ও বিদ্রোহের নামে আবার তাদের আত্মদানের স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলবে। সে সময় পর্যন্ত কি এরশাদের মতো মানুষদের মেকি হাসি মেকি কান্না আমাদের দেখে যেতে হবে?
ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক ও লেখক।
bagharu@gmail.com
No comments