যুদ্ধবিরতিতে রাশিয়ারই লাভ by শশাঙ্ক জোশি
দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপের শান্তির জন্য যে মিউনিখ চুক্তি হয়েছিল, তার
প্রসঙ্গ বাদ দিয়েই বলা যায়, সিরিয়ায় যে শান্তিচুক্তি হয়েছে তা খুবই
গভীরভাবে ত্রুটিপূর্ণ, আর সেটা দীর্ঘস্থায়ীও হবে না। এটাকে ‘বৈরিতার অবসান’
বলা যায়, কারণ এটা প্রকৃত অর্থে যুদ্ধবিরতি নয়। এই চুক্তিকে কূটনীতির এক
চমৎকার নিদর্শন হিসেবে আখ্যা দেওয়া যায়, কারণ সিরিয়ার চলমান যুদ্ধটি একরকম
নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। এর ফলে অন্তত কিছুটা রেহাই পাওয়া যাবে।
বর্ষীয়ান কূটনীতিক লর্ড উইলিয়ামস বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘দুই পরাশক্তি অনেকটা স্নায়ুযুদ্ধের আদলে সমস্যাটির মালিকানা নিয়ে নিয়েছে।’ বস্তুত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ সমস্যাটির মালিকানা নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে, আর রাশিয়া যেন তার সমাধান আঁকড়ে ধরে আছে। কথা দিয়ে ওয়াশিংটনের পক্ষে রাশিয়াকে এই চুক্তি মান্য করানোর বিশ্বাসযোগ্য উপায় নেই, সেটা সম্ভব লক্ষ্যহীন বোমা বর্ষণের মাধ্যমে, যদিও সেটা খুবই কার্যকর। সে কারণে এই যুদ্ধবিরতিতে বড় রকমের গলদ রয়ে গেছে, যার মধ্য দিয়ে রুশ জেট বিমান উড়তে পারে।
১৭টি দেশ নিয়ে গঠিত জোট ইন্টারন্যাশনাল সিরিয়া সাপোর্ট গ্রুপ (আইএসএসজি) এই মর্মে ঐকমত্যে এসেছে যে তারা ‘দেশব্যাপী বৈরিতার অবসান চায়’। এই দেশগুলোর মধ্যে অনেকে সিরিয়ায় পক্ষে, আবার অনেকেই তার বিপক্ষে। কিন্তু আইএস, জাবাত-আল-নুসরাসহ ‘জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠনকে’ অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ব্যাপারটা যৌক্তিক। কিন্তু রাশিয়া ও ইরান উভয়েই চায়, আলেপ্পোর আশপাশে তৎপর সব সিরীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে এই বড় শ্রেণিতে ফেলা হোক। এই দুটি দেশই সিরিয়ার স্থলবাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছে, একই সঙ্গে রাশিয়া সেখানে বিমান হামলাও চালাচ্ছে।
কিন্তু সত্যটা বড় জটিল। আলেপ্পো ও তুরস্কের মধ্যে যে ছোট অঞ্চলটি বিদ্রোহীরা দখল করে রেখেছে, সেখানে আল-নুসরা খুবই শক্তিশালী। কিন্তু তারা তুরস্ক ও সৌদি-সমর্থিত বৃহত্তর বিদ্রোহী জোট জয়েশ আল-ফাতাহ্র অংশ হিসেবে কাজ করে, যার মধ্যে এমন কিছু গোষ্ঠী আছে যারা অতটা চরমপন্থী না হলেও অত্যন্ত রক্ষণশীল। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আহরার আল-শাম। কথা হচ্ছে, আইএস নয়, এসব গোষ্ঠীর ওপরই রাশিয়া বেশি হামলা করেছে, তা ক্রেমলিন যে প্রচারই চালাক না কেন।
ইসলামপন্থীদের নিয়ন্ত্রিত এই মধ্যবর্তী ভূমি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, সে বিষয়ে ওয়াশিংটন, আঙ্কারা, রিয়াদ ও দোহা একমত হতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র বোঝে, বাশারের পর সিরিয়ায় যে বহুত্ববাদী ও সিভিল সমাজ গড়ে উঠবে, সেটার সঙ্গে তাদের পার্থক্য অনেক। সৌদি আরব ও তুরস্ক আসলে সেটাকে তেমন একটা পাত্তা দেয় না। কিন্তু কেউই এটা চায় না যে তাদের বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হোক। আইএস এই শূন্যতার সুযোগ নিতে পারে, আর ওই ছোট ছোট চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে একসময়ের আল-নুসরার সহযোগীদের সঙ্গে জুড়ে দিতে পারে।
মিউনিখ চুক্তির আলোকে বলা যায়, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ নেতৃত্বে গঠিত আইএসএসজি টাস্কফোর্স আইএস ও আল-নুসরার ভূমি ভাগ করে নেবে, আর পরবর্তী সময়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হলে তার সুরাহা করবে। কিন্তু আলেপ্পোর উপশহরের জটিল ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এসব গোষ্ঠীগুলো পরস্পর জড়িয়ে আছে, আর তাদের পরিচয়ও নির্দিষ্ট নয়।
রাশিয়া গত কয়েক মাসে যুদ্ধক্ষেত্রে যে দারুণ সফলতা অর্জন করেছে, সে কারণে তারা সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদাকে তেমন পাত্তা দিতে নারাজ। রাশিয়ার আগ্রাসন তার জন্য দুভাবে সুবিধাজনক হয়েছে। না, শুধু বাশারই জিতছেন না, এ যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট ইউরোপমুখী শরণার্থীর স্রোতের কারণে ইউরোপ মরিয়া হয়ে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইছে, তা সে যে মূল্যেই হোক না কেন।
ওদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে জোর গলায় বলেছেন, ‘আমি এ কথা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই—রাশিয়া ও ইরান শুরুতে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।’ এটা সৌদি আরব ও তুরস্কের গায়ে হুল ফোটানোর মতো। ব্যাপারটা খুবই উল্লেখযোগ্য। এই দেশগুলো এ মর্মে উদ্বিগ্ন ছিল যে বাশারের পর রাজনৈতিক উত্তরণ না ঘটলে যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে বিরাজমান অবস্থা একরকম স্থায়ী হয়ে যাবে, এতে বাশারের জামানাই থেকে যাবে আর আইএসও টিকে যাওয়ার সহায়ক পরিবেশ পেয়ে যাবে।
গত সপ্তাহে বিদ্রোহীদের অবস্থান ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়েছে। সাধারণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এমন ভাবনাও তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। ওদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ময়দানে নামার অনিচ্ছার কারণে উক্ত দেশগুলো যুদ্ধবিরতিতে সমর্থন দিচ্ছে। কিন্তু কেরি মস্কো ও তেহরানকে নিষ্কৃতি দেওয়ায় তুরস্ক ও উপসাগরীয় দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য ও প্রভাবের পরিবর্তনের সম্ভাবনায় আশঙ্কা বোধ করছে।
এই যুদ্ধবিরতি রাশিয়া ও তুরস্কের সম্পর্কে কী প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। এক সপ্তাহেরও কম সময় আগে বাশারের এক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা সামরিক বাহিনীর বিজয়ে বলীয়ান হয়ে বলেন, ‘যারা যুদ্ধবিরতির পরামর্শ দেয়, তারা আসলে “সন্ত্রাসবাদের অবসান চায় না”, তারা শুধু বিদ্রোহীদের সহায়তা করতে চায়।’ তারপরও বাশারের পক্ষে এই চুক্তি মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই, এটি যেন তাঁর ঘাড়ের ওপর চাপানো হয়েছে। তাঁর সেনাবাহিনী ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে; সেখানে বোমা বর্ষণ করছে রাশিয়া, আর ইরান-নেতৃত্বাধীন স্থলসেনারাই স্থলযুদ্ধ করছে। বাশারের সরকার বেঁচে গেছে, কিন্তু কূটনীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় তিনি স্নায়ুদৌর্বল্যে ভুগছেন, যার কারণে তাঁর নিজের ভবিষ্যৎও আক্রান্ত হতে পারে।
রাশিয়া তার সামরিক অভিযান থামিয়ে দেবে, তেমনটা মনে হচ্ছে না। তারা শুধু তুরস্কের কাছ থেকে বিদ্রোহীদের সরবরাহ প্রাপ্তিই বন্ধ করতে পারবে না, অন্যান্য স্থানের ভূমির নিয়ন্ত্রণও তারা নিতে পারে। আলেপ্পো দখল যদি সম্ভব হয়, তাহলে পালমিরা নয় কেন? ভিতালি নাউমকিন নামের এক রুশ একাডেমিক সিরিয়ার কূটনীতির সঙ্গে ভালোভাবে যুক্ত। তিনি বলেন, ‘বাশার সরকার পূর্বাঞ্চলে আইএসের শক্ত ঘাঁটিতে আক্রমণ চালানোর জন্য ভিত্তি প্রস্তুত করছে।’ যেখানে শুধু আইএসই একমাত্র শত্রু, সেখানে এটা তেমন জটিল কিছু হবে না। কিন্তু যেখানে তা নয়, অর্থাৎ দক্ষিণের দিরায় আমাদের আবারও পুরোনো এক বিতর্কের মুখে পড়তে হবে, সেটা হলো কে সন্ত্রাসী আর কে নয়।
কেরি পরিষ্কারভাবেই আশা করেন, এই যুদ্ধবিরতির তাৎপর্য আরও বড় হবে। আজকের আইএসএসজি ছয় মাসের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তরণের মহান লক্ষ্য অর্জনের ওপর জোর দিয়েছে, যার মধ্যে আছে নতুন নির্বাচন ও সংবিধান। কিন্তু রাশিয়া যদি সামরিক সমাধানের ব্যাপারে লেগে থাকে, তাহলে তারা চুক্তির ফসল ঘরে তুলতে পারবে। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের চাপ কমলে বা বাশারের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়লে বাশারকে হটানো ও রাজনৈতিক সংস্কারের আশা ফিকে হয়ে আসবে। যুদ্ধবিরতি ও আলোচনা একত্রে প্যাকেজ আকারে শুরু করা উচিত। এর বদলে রাশিয়া ছেড়েছে কম, কিন্তু পেয়েছে অনেক।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া
অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
শশাঙ্ক জোশি: রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো।
বর্ষীয়ান কূটনীতিক লর্ড উইলিয়ামস বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘দুই পরাশক্তি অনেকটা স্নায়ুযুদ্ধের আদলে সমস্যাটির মালিকানা নিয়ে নিয়েছে।’ বস্তুত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ সমস্যাটির মালিকানা নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে, আর রাশিয়া যেন তার সমাধান আঁকড়ে ধরে আছে। কথা দিয়ে ওয়াশিংটনের পক্ষে রাশিয়াকে এই চুক্তি মান্য করানোর বিশ্বাসযোগ্য উপায় নেই, সেটা সম্ভব লক্ষ্যহীন বোমা বর্ষণের মাধ্যমে, যদিও সেটা খুবই কার্যকর। সে কারণে এই যুদ্ধবিরতিতে বড় রকমের গলদ রয়ে গেছে, যার মধ্য দিয়ে রুশ জেট বিমান উড়তে পারে।
১৭টি দেশ নিয়ে গঠিত জোট ইন্টারন্যাশনাল সিরিয়া সাপোর্ট গ্রুপ (আইএসএসজি) এই মর্মে ঐকমত্যে এসেছে যে তারা ‘দেশব্যাপী বৈরিতার অবসান চায়’। এই দেশগুলোর মধ্যে অনেকে সিরিয়ায় পক্ষে, আবার অনেকেই তার বিপক্ষে। কিন্তু আইএস, জাবাত-আল-নুসরাসহ ‘জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠনকে’ অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ব্যাপারটা যৌক্তিক। কিন্তু রাশিয়া ও ইরান উভয়েই চায়, আলেপ্পোর আশপাশে তৎপর সব সিরীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে এই বড় শ্রেণিতে ফেলা হোক। এই দুটি দেশই সিরিয়ার স্থলবাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছে, একই সঙ্গে রাশিয়া সেখানে বিমান হামলাও চালাচ্ছে।
কিন্তু সত্যটা বড় জটিল। আলেপ্পো ও তুরস্কের মধ্যে যে ছোট অঞ্চলটি বিদ্রোহীরা দখল করে রেখেছে, সেখানে আল-নুসরা খুবই শক্তিশালী। কিন্তু তারা তুরস্ক ও সৌদি-সমর্থিত বৃহত্তর বিদ্রোহী জোট জয়েশ আল-ফাতাহ্র অংশ হিসেবে কাজ করে, যার মধ্যে এমন কিছু গোষ্ঠী আছে যারা অতটা চরমপন্থী না হলেও অত্যন্ত রক্ষণশীল। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আহরার আল-শাম। কথা হচ্ছে, আইএস নয়, এসব গোষ্ঠীর ওপরই রাশিয়া বেশি হামলা করেছে, তা ক্রেমলিন যে প্রচারই চালাক না কেন।
ইসলামপন্থীদের নিয়ন্ত্রিত এই মধ্যবর্তী ভূমি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, সে বিষয়ে ওয়াশিংটন, আঙ্কারা, রিয়াদ ও দোহা একমত হতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র বোঝে, বাশারের পর সিরিয়ায় যে বহুত্ববাদী ও সিভিল সমাজ গড়ে উঠবে, সেটার সঙ্গে তাদের পার্থক্য অনেক। সৌদি আরব ও তুরস্ক আসলে সেটাকে তেমন একটা পাত্তা দেয় না। কিন্তু কেউই এটা চায় না যে তাদের বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হোক। আইএস এই শূন্যতার সুযোগ নিতে পারে, আর ওই ছোট ছোট চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে একসময়ের আল-নুসরার সহযোগীদের সঙ্গে জুড়ে দিতে পারে।
মিউনিখ চুক্তির আলোকে বলা যায়, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ নেতৃত্বে গঠিত আইএসএসজি টাস্কফোর্স আইএস ও আল-নুসরার ভূমি ভাগ করে নেবে, আর পরবর্তী সময়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হলে তার সুরাহা করবে। কিন্তু আলেপ্পোর উপশহরের জটিল ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এসব গোষ্ঠীগুলো পরস্পর জড়িয়ে আছে, আর তাদের পরিচয়ও নির্দিষ্ট নয়।
রাশিয়া গত কয়েক মাসে যুদ্ধক্ষেত্রে যে দারুণ সফলতা অর্জন করেছে, সে কারণে তারা সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদাকে তেমন পাত্তা দিতে নারাজ। রাশিয়ার আগ্রাসন তার জন্য দুভাবে সুবিধাজনক হয়েছে। না, শুধু বাশারই জিতছেন না, এ যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট ইউরোপমুখী শরণার্থীর স্রোতের কারণে ইউরোপ মরিয়া হয়ে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইছে, তা সে যে মূল্যেই হোক না কেন।
ওদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে জোর গলায় বলেছেন, ‘আমি এ কথা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই—রাশিয়া ও ইরান শুরুতে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।’ এটা সৌদি আরব ও তুরস্কের গায়ে হুল ফোটানোর মতো। ব্যাপারটা খুবই উল্লেখযোগ্য। এই দেশগুলো এ মর্মে উদ্বিগ্ন ছিল যে বাশারের পর রাজনৈতিক উত্তরণ না ঘটলে যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে বিরাজমান অবস্থা একরকম স্থায়ী হয়ে যাবে, এতে বাশারের জামানাই থেকে যাবে আর আইএসও টিকে যাওয়ার সহায়ক পরিবেশ পেয়ে যাবে।
গত সপ্তাহে বিদ্রোহীদের অবস্থান ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়েছে। সাধারণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এমন ভাবনাও তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। ওদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ময়দানে নামার অনিচ্ছার কারণে উক্ত দেশগুলো যুদ্ধবিরতিতে সমর্থন দিচ্ছে। কিন্তু কেরি মস্কো ও তেহরানকে নিষ্কৃতি দেওয়ায় তুরস্ক ও উপসাগরীয় দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য ও প্রভাবের পরিবর্তনের সম্ভাবনায় আশঙ্কা বোধ করছে।
এই যুদ্ধবিরতি রাশিয়া ও তুরস্কের সম্পর্কে কী প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। এক সপ্তাহেরও কম সময় আগে বাশারের এক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা সামরিক বাহিনীর বিজয়ে বলীয়ান হয়ে বলেন, ‘যারা যুদ্ধবিরতির পরামর্শ দেয়, তারা আসলে “সন্ত্রাসবাদের অবসান চায় না”, তারা শুধু বিদ্রোহীদের সহায়তা করতে চায়।’ তারপরও বাশারের পক্ষে এই চুক্তি মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই, এটি যেন তাঁর ঘাড়ের ওপর চাপানো হয়েছে। তাঁর সেনাবাহিনী ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে; সেখানে বোমা বর্ষণ করছে রাশিয়া, আর ইরান-নেতৃত্বাধীন স্থলসেনারাই স্থলযুদ্ধ করছে। বাশারের সরকার বেঁচে গেছে, কিন্তু কূটনীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় তিনি স্নায়ুদৌর্বল্যে ভুগছেন, যার কারণে তাঁর নিজের ভবিষ্যৎও আক্রান্ত হতে পারে।
রাশিয়া তার সামরিক অভিযান থামিয়ে দেবে, তেমনটা মনে হচ্ছে না। তারা শুধু তুরস্কের কাছ থেকে বিদ্রোহীদের সরবরাহ প্রাপ্তিই বন্ধ করতে পারবে না, অন্যান্য স্থানের ভূমির নিয়ন্ত্রণও তারা নিতে পারে। আলেপ্পো দখল যদি সম্ভব হয়, তাহলে পালমিরা নয় কেন? ভিতালি নাউমকিন নামের এক রুশ একাডেমিক সিরিয়ার কূটনীতির সঙ্গে ভালোভাবে যুক্ত। তিনি বলেন, ‘বাশার সরকার পূর্বাঞ্চলে আইএসের শক্ত ঘাঁটিতে আক্রমণ চালানোর জন্য ভিত্তি প্রস্তুত করছে।’ যেখানে শুধু আইএসই একমাত্র শত্রু, সেখানে এটা তেমন জটিল কিছু হবে না। কিন্তু যেখানে তা নয়, অর্থাৎ দক্ষিণের দিরায় আমাদের আবারও পুরোনো এক বিতর্কের মুখে পড়তে হবে, সেটা হলো কে সন্ত্রাসী আর কে নয়।
কেরি পরিষ্কারভাবেই আশা করেন, এই যুদ্ধবিরতির তাৎপর্য আরও বড় হবে। আজকের আইএসএসজি ছয় মাসের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তরণের মহান লক্ষ্য অর্জনের ওপর জোর দিয়েছে, যার মধ্যে আছে নতুন নির্বাচন ও সংবিধান। কিন্তু রাশিয়া যদি সামরিক সমাধানের ব্যাপারে লেগে থাকে, তাহলে তারা চুক্তির ফসল ঘরে তুলতে পারবে। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের চাপ কমলে বা বাশারের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়লে বাশারকে হটানো ও রাজনৈতিক সংস্কারের আশা ফিকে হয়ে আসবে। যুদ্ধবিরতি ও আলোচনা একত্রে প্যাকেজ আকারে শুরু করা উচিত। এর বদলে রাশিয়া ছেড়েছে কম, কিন্তু পেয়েছে অনেক।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া
অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
শশাঙ্ক জোশি: রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো।
No comments