সাংবাদিকতার কিংবদন্তি by রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ
প্রখ্যাত পথিকৃৎ সাংবাদিক নির্মল সেন আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। নির্মল সেন একজন অকুতোভয় নির্ভীক সাংবাদিক ছিলেন। তিনি স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে সংগ্রাম শুরু করেন। সেই সংগ্রামে আমরাও ছিলাম তার সহযোগী।
তার প্রয়াণে সাংবাদিকতা পেশায় এক বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিকামী মানুষ। মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন। মাতৃভাষার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি কলম আর কথা বলার স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
১৯৭২ সাল। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ। সবকিছুই নতুন করে গড়তে হলো। সেই গড়ায় নির্মল সেন নেতৃত্ব দিলেন সংবাদপত্র আর সাংবাদিকদের সংগঠিত করার জন্য। ১৯৭২ সালে তিনিই প্রথম ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এবং পরে ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি সাংবাদিকদের এতই প্রিয় ছিলেন যে নির্বাচন করে তাকে সভাপতি হতে হয়নি, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন গিয়াস কামাল চৌধুরী। কামাল লোহানী আর আমি ছিলাম ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার দায়িত্ব পড়ে আমাদের ওপর। নির্মল সেনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে গড়ে তুলেছিলাম আজকের গণমাধ্যম উন্নয়নের পটভূমি। আজকে গণমাধ্যম যেটুকু স্বাধীনতা ভোগ করছে, নির্মল সেনের নেতৃত্বেই কিন্তু তার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। তারই নেতৃত্বে সংবাদপত্রের সকল কালাকানুনের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। সে আন্দোলন সাংবাদিকরা এগিয়ে নিয়ে একটি মুক্ত স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করতে সামর্থ্য হয়।
সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে যেমন নির্মল সেন দক্ষ ছিলেন, তেমনি দক্ষ ছিলেন পেশায়। তার অগি্নঝরা কলমে এমন কিছু যুগান্তকারী লেখা এ দেশের মানুষ পেয়েছিল যা আজও সাংবাদিকতা পেশায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। তার যুগান্তকারী লেখার মধ্যে 'স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই' একটি অনবদ্য সাহসী লেখা। যে লেখার প্রয়োজনীয়তা আজও দারুণভাবে অনুভূত হয়। যে রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তাহীনতার প্রেক্ষাপটে তিনি এই লেখা লিখেছিলেন সেটা আজকেও কিন্তু সমানভাবে প্রযোজ্য। সাগর-রুনির হত্যা এবং রাজনৈতিক গুম ও হত্যা এ কথাই প্রমাণ করে। তার আরেকটি ঐতিহাসিক লেখা ছিল 'হরতাল হয়েছে হরতাল হয় নাই'_ এ লেখাটি যখন প্রচণ্ড প্রতিবাদী একটি লেখা। স্বাধীন সাংবাদিকতার টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা হচ্ছিল, তখনই তিনি এ লেখা লিখেছিলেন। হরতাল হলে লিখতে হতো, জীবন ছিল স্বাভাবিক। তা ছিল সত্যের অপলাপ। তার বিরুদ্ধেই নির্মল সেনের এই প্রতিবাদী লেখা।
অনিকেত নামে দৈনিক বাংলায় তার জনপ্রিয় কলমে তিনি এ ধরনের অনেক লেখা জনগণের জন্য লিখেছিলেন। জনগণ তার প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পেয়েছিল। শাসকগোষ্ঠীকে তিনি নির্ভয়ে কশাঘাত করেছেন। সরকার, প্রশাসন আর সমাজপতিদের আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতেন তাদের ব্যর্থতার কীর্তি। সরকারের নিয়ন্ত্রিত পত্রিকায় চাকরি করে এবং লিখেও তিনি সরকারের জন্য ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। তার সাহসিকতা, নির্ভীক পথযাত্রা সত্যের জন্য তার নিরন্তর সংগ্রাম।
ইতিহাস নির্মল সেনকে করে রাখবে চিরভাস্বর এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। নির্মল সেন হয়ে থাকবেন সাংবাদিকতার কিংবদন্তি এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রবাদপুরুষ।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ
নিউজ টুডের সম্পাদক ও
সাংবাদিক নেতা
১৯৭২ সাল। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ। সবকিছুই নতুন করে গড়তে হলো। সেই গড়ায় নির্মল সেন নেতৃত্ব দিলেন সংবাদপত্র আর সাংবাদিকদের সংগঠিত করার জন্য। ১৯৭২ সালে তিনিই প্রথম ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এবং পরে ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি সাংবাদিকদের এতই প্রিয় ছিলেন যে নির্বাচন করে তাকে সভাপতি হতে হয়নি, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন গিয়াস কামাল চৌধুরী। কামাল লোহানী আর আমি ছিলাম ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার দায়িত্ব পড়ে আমাদের ওপর। নির্মল সেনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে গড়ে তুলেছিলাম আজকের গণমাধ্যম উন্নয়নের পটভূমি। আজকে গণমাধ্যম যেটুকু স্বাধীনতা ভোগ করছে, নির্মল সেনের নেতৃত্বেই কিন্তু তার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। তারই নেতৃত্বে সংবাদপত্রের সকল কালাকানুনের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। সে আন্দোলন সাংবাদিকরা এগিয়ে নিয়ে একটি মুক্ত স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করতে সামর্থ্য হয়।
সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে যেমন নির্মল সেন দক্ষ ছিলেন, তেমনি দক্ষ ছিলেন পেশায়। তার অগি্নঝরা কলমে এমন কিছু যুগান্তকারী লেখা এ দেশের মানুষ পেয়েছিল যা আজও সাংবাদিকতা পেশায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। তার যুগান্তকারী লেখার মধ্যে 'স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই' একটি অনবদ্য সাহসী লেখা। যে লেখার প্রয়োজনীয়তা আজও দারুণভাবে অনুভূত হয়। যে রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তাহীনতার প্রেক্ষাপটে তিনি এই লেখা লিখেছিলেন সেটা আজকেও কিন্তু সমানভাবে প্রযোজ্য। সাগর-রুনির হত্যা এবং রাজনৈতিক গুম ও হত্যা এ কথাই প্রমাণ করে। তার আরেকটি ঐতিহাসিক লেখা ছিল 'হরতাল হয়েছে হরতাল হয় নাই'_ এ লেখাটি যখন প্রচণ্ড প্রতিবাদী একটি লেখা। স্বাধীন সাংবাদিকতার টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা হচ্ছিল, তখনই তিনি এ লেখা লিখেছিলেন। হরতাল হলে লিখতে হতো, জীবন ছিল স্বাভাবিক। তা ছিল সত্যের অপলাপ। তার বিরুদ্ধেই নির্মল সেনের এই প্রতিবাদী লেখা।
অনিকেত নামে দৈনিক বাংলায় তার জনপ্রিয় কলমে তিনি এ ধরনের অনেক লেখা জনগণের জন্য লিখেছিলেন। জনগণ তার প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পেয়েছিল। শাসকগোষ্ঠীকে তিনি নির্ভয়ে কশাঘাত করেছেন। সরকার, প্রশাসন আর সমাজপতিদের আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতেন তাদের ব্যর্থতার কীর্তি। সরকারের নিয়ন্ত্রিত পত্রিকায় চাকরি করে এবং লিখেও তিনি সরকারের জন্য ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। তার সাহসিকতা, নির্ভীক পথযাত্রা সত্যের জন্য তার নিরন্তর সংগ্রাম।
ইতিহাস নির্মল সেনকে করে রাখবে চিরভাস্বর এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। নির্মল সেন হয়ে থাকবেন সাংবাদিকতার কিংবদন্তি এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রবাদপুরুষ।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ
নিউজ টুডের সম্পাদক ও
সাংবাদিক নেতা
No comments