স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস-যেভাবে বঙ্গবন্ধু মুক্ত হলেন by আবু সাইয়িদ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীনতা সমার্থক হিসেবে বিশ্ব পরিসরে ব্যাপকভাবে উচ্চারিত, আলোচিত হয়। রাজনীতিক সমাধানের লক্ষ্যে শেখ মুজিবের মুক্তি অন্যতম শর্ত হয়ে দাঁড়ায়।
ভারত এবং মুজিবনগর সরকার ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতায় বঙ্গবন্ধুকে সমগ্র মুক্তিযুদ্ধকালে এমনভাবে দৃশ্যমান করে রাখেন যার ফলে মুজিবের মুক্তি ভিন্ন অন্য কিছুই আর বিকল্প ছিল না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বৃহৎ দেশগুলোর সরকার প্রধানদের কাছে পত্র লেখে শেখ মুজিবের আশু মুক্তি দাবি করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিংয়ের বক্তব্য হলো, পাকিস্তান সরকার কর্তৃক সামরিক শক্তি প্রয়োগ বাঙালির মনকে বিষিয়ে দিয়েছে। ভারত সরকার কোনো সুনির্দিষ্ট সমাধান সম্পর্কে কিছু বলতে আগ্রহী নয়; তবে তারা মনে করে, সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে না এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে একটি রাজনৈতিক সমাধানে পেঁৗছানো আবশ্যক এবং তা হতে হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কিংবা তার মনোনীত প্রতিনিধিদের কাছে গ্রহণীয়।
১৯৭১ সালের ২৮ জুন পাকিস্তান সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উদ্বাস্তু ও অভিবাসন বিষয়ক বিশেষ সহকারী এল কিলগকে ইয়াহিয়া খান বলেন, মিসেস গান্ধী মুজিবের সঙ্গে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে বর্তমান সংকটের সৃষ্টি করেছেন। পরবর্তীকালে লক্ষ্য করা যাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশ সমস্যার সমাধানের শেখ মুজিবুর রহমানকে এড়িয়ে ভারতের সঙ্গে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। অনুরূপভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্যে শেখ মুজিবের মুক্তি এবং মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে একটি কৌশলগত অপ্রকাশ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। তার প্রমাণ পাওয়া যায় শেখ মুজিবের মুক্তি ও মুজিবনগর সরকারকে স্বীকৃতিদানের প্রশ্নে। মুজিবনগর সরকার কর্তৃক স্টেট ডিপার্টমেন্টে প্রেরিত দুটি পত্র বার্লিন পোস্ট অফিস থেকে ২৬ মে ও ২২ জুলাই প্রেরণ করা হয়েছিল। এ সম্পর্কে স্টেট ডিপার্টমেন্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, এই পত্রের স্বীকৃতি তারা দেবে না, তবে তা রেকর্ড রুমে সংরক্ষিত করা হবে। জিজ্ঞাসিত হলে বলা হবে বাংলাদেশের স্বীকৃতির ব্যাপারে তারা কোনো অনুরোধ পাননি এবং বার্লিন থেকে যে পত্র পাওয়া গেছে তা কোন ঠিকানায় উত্তর দেওয়া হবে তা লেখা হয়নি। আমরা মনে করি, পূর্ব পাকিস্তান অখণ্ড পাকিস্তানের অংশ।
৭ জুলাই নয়াদিলি্লতে হেনরি কিসিঞ্জার ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা সমাধানে শেখ মুজিবকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে কি-না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান বিষয়টি সমাধান করবে, এটা ভারত-পাকিস্তানের সমস্যা নয়, ভারত শরণার্থী সমস্যা ব্যতীত জড়িত নয়। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ইন্দিরা গান্ধীর এই উক্তি ছিল ব্যাপক তাৎপর্যমণ্ডিত। এর কোনো সরলার্থ না থাকলে এটা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি, বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে মুজিবের সঙ্গে বা মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা সেদিকেই ধাবিত হয়েছে।
২৩ জুলাই কিসিঞ্জারের সভাপতিত্বে সিনিয়র রিভিউ গ্রুপের একটি মিটিং হয়। মিটিংয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ডিফেন্স, জেসিএস, সিআইএ, এইড গ্রুপ এবং অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। মিটিংয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে কিসিঞ্জার বলেন, ইয়াহিয়া ও তার গ্রুপ কখনও জয়লাভ করতে পারবে না এবং সূক্ষ্মভাবে রাজনৈতিক সমন্বয় করতে অসমর্থ। পূর্ব পাকিস্তান কেন পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চায় না, তারা এটা বুঝতে অক্ষম। ভারতের প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তার অর্থ হলো, কোনো সমস্যা সমাধানে তারা কোনো চাপ দেবে না, কিন্তু ভারতের রাষ্ট্রদূত এলকে ঝা তাকে বলেছেন, আওয়ামী লীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। বন্দি মুজিবকে মুক্তি দিতে হবে।
বন্দি মুজিবকে চমকপ্রদ নাটকীয় ঘটনাবলির মাধ্যমে মুক্তি দিতে হয়েছে। মহাপরাক্রমশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন, ভারতসহ বিশ্ব পরিসরে সামরিক ট্রাইব্যুনালে তার বিচার ও মুক্তি নিয়ে যে নিরবচ্ছিন্ন তৎপরতা, সমকালীন ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছে অখণ্ড পাকিস্তান। অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষার্থেই তাকে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর অনমনীয় স্বদেশপ্রেম তা ব্যর্থ করে দিয়েছে। মৃত্যুকে তুচ্ছ করে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন স্বাধীনতার মুক্তির প্রশ্নে। কোনো কিছুই তাকে দমিত করতে পারেনি। ১৬ ডিসেম্বরের পর ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে। ইয়াহিয়ার বদলে ভুট্টো ক্ষমতা দখল করেছে। ভুট্টো তিনবার তার সঙ্গে দেখা করেছেন। শিথিল কনফেডারেশন রক্ষার অনুরোধ করেছেন। ভুট্টো হতাশ হয়ে শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেন।
৭ জানুয়ারি ৪৪তম জন্মদিনের উৎসব লারকানায় পালন শেষে ভুট্টো ইসলামাবাদে আসেন মুজিবকে বিদায় জানাতে। জরুরিভাবে ডিপেল্গাম্যাটিক পাসপোর্ট তৈরি করা হয়। বিমানবন্দরে ভুট্টো বলেন, ২৪ ডিসেম্বর (১৯৭০) আপনি বলেছিলেন_ ডিফেন্স, বৈদেশিক অর্থ কেন্দ্রে রেখে আপনি যেভাবে শিথিল সম্পর্ক চান অথবা যা আপনার বিবেচনাধীন_ এটা হতে পারে 'লুজ কনফেডারেশন'। মুজিব প্রতিবাদ করে বলেন, এখন আর কোনো কথা নয়। এয়ার মার্শাল জাফর চৌধুরী ৫০ হাজার ডলার এয়ারপোর্টে নিয়ে এসেছিলেন। ভুট্টো মুজিবের ব্যক্তিগত খরচের জন্য তার হাতে তুলে দিতে চাইলে মুজিব অস্বীকৃতি
জানিয়ে বলেন, ্তুঈড়হঃৎরনঁঃব রঃ ভড়ৎ সু পযধৎঃবৎবফ ঢ়ষধহব.্থ তখন ৮ জানুয়ারি। ভুট্টো তার সঙ্গীদের বললেন, ঞযব নরৎফ যধং ভষড়হি. আর তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মাটিতে পা রাখেন ১০ জানুয়ারি, ১৯৭২।
অধ্যাপক আবু সাইয়িদ : সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী
১৯৭১ সালের ২৮ জুন পাকিস্তান সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উদ্বাস্তু ও অভিবাসন বিষয়ক বিশেষ সহকারী এল কিলগকে ইয়াহিয়া খান বলেন, মিসেস গান্ধী মুজিবের সঙ্গে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে বর্তমান সংকটের সৃষ্টি করেছেন। পরবর্তীকালে লক্ষ্য করা যাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশ সমস্যার সমাধানের শেখ মুজিবুর রহমানকে এড়িয়ে ভারতের সঙ্গে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। অনুরূপভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্যে শেখ মুজিবের মুক্তি এবং মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে একটি কৌশলগত অপ্রকাশ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। তার প্রমাণ পাওয়া যায় শেখ মুজিবের মুক্তি ও মুজিবনগর সরকারকে স্বীকৃতিদানের প্রশ্নে। মুজিবনগর সরকার কর্তৃক স্টেট ডিপার্টমেন্টে প্রেরিত দুটি পত্র বার্লিন পোস্ট অফিস থেকে ২৬ মে ও ২২ জুলাই প্রেরণ করা হয়েছিল। এ সম্পর্কে স্টেট ডিপার্টমেন্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, এই পত্রের স্বীকৃতি তারা দেবে না, তবে তা রেকর্ড রুমে সংরক্ষিত করা হবে। জিজ্ঞাসিত হলে বলা হবে বাংলাদেশের স্বীকৃতির ব্যাপারে তারা কোনো অনুরোধ পাননি এবং বার্লিন থেকে যে পত্র পাওয়া গেছে তা কোন ঠিকানায় উত্তর দেওয়া হবে তা লেখা হয়নি। আমরা মনে করি, পূর্ব পাকিস্তান অখণ্ড পাকিস্তানের অংশ।
৭ জুলাই নয়াদিলি্লতে হেনরি কিসিঞ্জার ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা সমাধানে শেখ মুজিবকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে কি-না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান বিষয়টি সমাধান করবে, এটা ভারত-পাকিস্তানের সমস্যা নয়, ভারত শরণার্থী সমস্যা ব্যতীত জড়িত নয়। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ইন্দিরা গান্ধীর এই উক্তি ছিল ব্যাপক তাৎপর্যমণ্ডিত। এর কোনো সরলার্থ না থাকলে এটা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি, বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে মুজিবের সঙ্গে বা মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা সেদিকেই ধাবিত হয়েছে।
২৩ জুলাই কিসিঞ্জারের সভাপতিত্বে সিনিয়র রিভিউ গ্রুপের একটি মিটিং হয়। মিটিংয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ডিফেন্স, জেসিএস, সিআইএ, এইড গ্রুপ এবং অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। মিটিংয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে কিসিঞ্জার বলেন, ইয়াহিয়া ও তার গ্রুপ কখনও জয়লাভ করতে পারবে না এবং সূক্ষ্মভাবে রাজনৈতিক সমন্বয় করতে অসমর্থ। পূর্ব পাকিস্তান কেন পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চায় না, তারা এটা বুঝতে অক্ষম। ভারতের প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তার অর্থ হলো, কোনো সমস্যা সমাধানে তারা কোনো চাপ দেবে না, কিন্তু ভারতের রাষ্ট্রদূত এলকে ঝা তাকে বলেছেন, আওয়ামী লীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। বন্দি মুজিবকে মুক্তি দিতে হবে।
বন্দি মুজিবকে চমকপ্রদ নাটকীয় ঘটনাবলির মাধ্যমে মুক্তি দিতে হয়েছে। মহাপরাক্রমশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন, ভারতসহ বিশ্ব পরিসরে সামরিক ট্রাইব্যুনালে তার বিচার ও মুক্তি নিয়ে যে নিরবচ্ছিন্ন তৎপরতা, সমকালীন ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছে অখণ্ড পাকিস্তান। অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষার্থেই তাকে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর অনমনীয় স্বদেশপ্রেম তা ব্যর্থ করে দিয়েছে। মৃত্যুকে তুচ্ছ করে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন স্বাধীনতার মুক্তির প্রশ্নে। কোনো কিছুই তাকে দমিত করতে পারেনি। ১৬ ডিসেম্বরের পর ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে। ইয়াহিয়ার বদলে ভুট্টো ক্ষমতা দখল করেছে। ভুট্টো তিনবার তার সঙ্গে দেখা করেছেন। শিথিল কনফেডারেশন রক্ষার অনুরোধ করেছেন। ভুট্টো হতাশ হয়ে শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেন।
৭ জানুয়ারি ৪৪তম জন্মদিনের উৎসব লারকানায় পালন শেষে ভুট্টো ইসলামাবাদে আসেন মুজিবকে বিদায় জানাতে। জরুরিভাবে ডিপেল্গাম্যাটিক পাসপোর্ট তৈরি করা হয়। বিমানবন্দরে ভুট্টো বলেন, ২৪ ডিসেম্বর (১৯৭০) আপনি বলেছিলেন_ ডিফেন্স, বৈদেশিক অর্থ কেন্দ্রে রেখে আপনি যেভাবে শিথিল সম্পর্ক চান অথবা যা আপনার বিবেচনাধীন_ এটা হতে পারে 'লুজ কনফেডারেশন'। মুজিব প্রতিবাদ করে বলেন, এখন আর কোনো কথা নয়। এয়ার মার্শাল জাফর চৌধুরী ৫০ হাজার ডলার এয়ারপোর্টে নিয়ে এসেছিলেন। ভুট্টো মুজিবের ব্যক্তিগত খরচের জন্য তার হাতে তুলে দিতে চাইলে মুজিব অস্বীকৃতি
জানিয়ে বলেন, ্তুঈড়হঃৎরনঁঃব রঃ ভড়ৎ সু পযধৎঃবৎবফ ঢ়ষধহব.্থ তখন ৮ জানুয়ারি। ভুট্টো তার সঙ্গীদের বললেন, ঞযব নরৎফ যধং ভষড়হি. আর তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মাটিতে পা রাখেন ১০ জানুয়ারি, ১৯৭২।
অধ্যাপক আবু সাইয়িদ : সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী
No comments