কথা সামান্যই-বাঙালিত্বের বিভ্রম by ফজলুল আলম
বাংলাদেশে বাঙালি জাতিসত্তার উপাদানগুলো কী হতে পারে? একই ভাষা, নৃতাত্ত্বিক উৎস, ইতিহাসে, পৌরাণিক গাথা, স্বপ্ন ও আশা-আকাঙ্ক্ষা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, এসব কিন্তু রাজনৈতিকভাবে স্বীকৃত।
আমরা অনেকেই বাংলাদেশকে ইউরোপের জাতিরাষ্ট্রের সঙ্গে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে গর্বিত বোধ করি। এই তুলনা কিন্তু এক বিশ্লেষণে আমাদের অতীতের ঔপনিবেশিক ধ্যানধারণার সমার্থক। ইউরোপের জাতিরাষ্ট্র অনেক ধরনের জাতীয়তাবাদের জন্ম দিয়েছে; বর্ণবাদ (কৃষ্ণবর্ণ, বাদামি, মেটে বর্ণসহ- সব) সেখানে সাধারণ ব্যাপার, সেমিটিক জনগোষ্ঠীকে ঘৃণা করা সম্মানের কাজ, নিজেদের একই জাতিতে দরিদ্র বা নিম্ন শ্রেণীকে হেয় করা স্বাভাবিক ঘটনা। ইংরেজরা গ্রেট ব্রিটেনের অন্যান্য জাতির সাংস্কৃতিক দাবি অবদমিত করে রেখেছে, যেমন আইরিশ ও স্কটিশরা ইংরেজ আধিপত্যের বিরুদ্ধে গেইলিক (Gaelic) আন্দোলন করেছিল- ডাব্লিউ বি ইয়েটস ও মড গন সেই আন্দোলনে জড়িত ছিলেন, ওয়েলশ দেশে ওয়েলশ ভাষার জন্য আন্দোলন হয়েছিল ১৮৭০ সালে, যুগ যুগ ধরে ব্রিটেনে বাস করা জিপসিদের জীবন অতিষ্ঠ করা পুলিশের নিত্যনৈমিত্তিক কর্ম, আরো কত কী! এ জাতিরাষ্ট্র ধারণা থেকেই সেখানে ফ্যাসিজম ও নাৎসিবাদের জন্ম।
আমরা কি ইউরোপীয় জাতিরাষ্ট্রের এ দোষগুলো কাটিয়ে উঠেছি? আমরা সংখ্যালঘুদের বিশেষত অ-বাঙালিদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, তাদের ভাষা, জীবনযাপনের পার্থক্য কিভাবে গ্রহণ করি? অস্বীকার করা যায় না যে বাংলাদেশে বাঙালিরা অন্যান্য গোষ্ঠী থেকে বেশি ক্ষমতাধারী এবং এ ক্ষমতা এসেছে সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিসত্তার পথ ধরে। অবশ্য সংখ্যাই শেষ কথা নয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ ইউরোপিয়ানরা সংখ্যালঘু হলেও তারা সেখানে এখনো, নেলসন ম্যান্ডেলার পরেও, প্রবল ক্ষমতাধারী। সেখানে এক গোষ্ঠী কৃষ্ণ আফ্রিকান (তারা সেখানে অভিজাত বিধায়) শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের সঙ্গে ওঠাবসার সুযোগ পেয়ে নিজ দেশের কৃষ্ণকায়দের ঘৃণা করা শিখেছে। নিজেদের মধ্যে শ্রেণীবিভাজন সেখানে চরম আকার ধারণ করে আছে।
আমরা বাঙালিরা কি আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন করা থেকে বিরত আছি? যদি না থাকি, তবে আমরা কি জাতীয়তাবাদী মনোভাব ব্যক্ত করছি? অনেকে এটাকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা দেবেন; শ্রেণীর কথা, অভিজাত-অনভিজাতের কথা, ধনী-দরিদ্রের কথা, সামাজিক বৈষম্যের কথা- আরো অনেক কিছু বলবেন; কিন্তু মূল কথাটি রয়ে যায় একটিই এবং সেটা হচ্ছে, জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির গর্বে আমরা জাতীয়তাবাদের দিকে ঝুঁকেছি অনেকটাই।
দুটি বাঙালির দেশ আছে, একটা বাংলাদেশ ও অন্যটা পশ্চিমবঙ্গ। গত সংখ্যায় লিখেছি যে আমরা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠছি এবং সে কারণেই দুই বাংলার একক জাতিসত্তা ভেঙে যাচ্ছে। এ কথার অর্থ এর বিপরীত অবস্থাকে নাকচ করা নয়; পশ্চিমবঙ্গেও সাম্প্রদায়িকতা আছে, তারা ব্রিটেনের ইংরেজ জাতির মতো নিজেদের বাঙালিত্বের ধ্বজাধারী মনে করে, তারা বাঙালি মুসলমানদের বাঙালি মনে করে না, তারা আমাদের নাম বিকৃত বানানে লিখে বিকৃত আনন্দ পায়। কলকাতায় সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে হাজারে একটা বাঙালি মুসলমানের নাম চোখে পড়ে, অথচ বাংলাদেশে উচ্চপদে বাঙালি হিন্দুর সংখ্যা সম্ভবত এক শতে দশ বা আরো বেশি। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও একই অবস্থা। পুরো ভারতে অতীতে ও বর্তমানে মুসলমানদের দুরবস্থার কথা লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের কয়েকজন লেখক, বাংলাদেশেও কয়েকজন হিন্দুদের কথা লিখেছেন; কিন্তু এর পরও বলতে হয়, সাহিত্য, শিল্পকলা, সংগীতে বাংলাদেশের বাঙালিরা পশ্চিমবঙ্গের প্রশংসা করে চলছে এবং বাংলাদেশের কয়েকটি পত্রিকা নিয়মিত পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের লেখা এখানে ছাপাচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তেমন কিছু চোখে পড়ে না।
এই যে বিদ্বেষভাবাপন্নতা, এর শেষ কোথায়? এটার জন্য বাঙালিত্বের চরিত্র কালিমালিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এর কারণ কোথায়? এর কারণ সনি্নহিত আছে আমাদের বাস্তবতাবোধের অভাবে। কী পশ্চিমবঙ্গ, কী বাংলাদেশ- দুই দেশেরই সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা এমন কোনো গর্বের অবস্থায় পৌঁছায়নি। পশ্চিমবঙ্গ বিশাল ভারতের একটা রাজ্য, তারা স্বাধীন নয়। তারা বাঙালি জাতীয়তাবাদের দোষে আক্রান্ত হতে পারছে না; সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র এবং এই দেশটিতে জাতীয়তাবাদের অসুখে ভোগার অনেক পথ খোলা আছে। সে জন্যই না বাংলাদেশে হাজারটা দ্বন্দ্ব মাথা তুলছে। বাঙালিত্বের গর্ব একটা সমাধান নয়, এটা একটা সমস্যা। রাজনৈতিকভাবে এই বাঙালিত্ব হেজিমনিক (সমর্থন নিয়ে বা আদায় করে ক্ষমতায় যাওয়া) হয়ে উঠছে। আঠারো-উনিশ শতকে ইউরোপে বিভিন্ন দেশে জাতীয়তাবাদের উত্থানে সামন্তবাদের ক্ষমতাসীনদের হাত থেকে ধীরে ধীরে পুঁজিবাদী গোষ্ঠীতে (শিল্প বিপ্লবের ফলে) ক্ষমতা হস্তান্তরিত হতে শুরু হয়, সেটায়ও হেজিমনি কাজ করেছে। সেখানে জনগণ সমর্থন দিতে বাধ্য হয়; কারণ সেসব দেশের উৎপাদনব্যবস্থা থেকে উৎপাদিত পণ্যের বণ্টনব্যবস্থাও পরিবর্তিত হতে থাকে। তখন আর জাতীয়তাবাদের কথা বলে জনগোষ্ঠীকে অন্য পথে নিয়ে যাওয়ার উপায় ছিল না। জাতিগর্ব তখনো ছিল; কিন্তু বাস্তব অবস্থার দ্রুত পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে সেটা মাথাচাড়া দিতে পারেনি। নাৎসিবাদের উত্থানের পেছনে ইতালিতে মুসোলিনি ও জার্মানিতে হিটলার ক্ষমতা দখলে রাখার উদ্দেশ্য ছিল (উগান্ডায় ইদি আমিনও তাই করেছিল); কিন্তু বিশ্বের লাখো কোটি মানুষের সমর্থন তাতে ছিল না। পরাজিত ফ্যাসিবাদ বা নাৎসিবাদ সেখানে এখনো মাঝেমধ্যেই বর্ণবাদ ও সেমিটিজম-বিদ্বেষে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
কিন্তু সেটা যে সমাধান নয়, সেটা যে সমস্যা তা আরেকবার না বললেও পাঠকরা বুঝবেন। বাঙালিত্বের ক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে, দুই বাংলায় আমরা ঔপনিবেশিক সময় থেকে আমাদের অর্থনৈতিক-সামাজিক-শিল্পায়নে এমন কী পরিবর্তন দেখেছি যে আমরা বাঙালিত্বের অর্জন বলতে পারি? কিছুই না। বরঞ্চ আমরা যদি বাঙালিত্বের আধিপত্যের ধারণা বর্জন করে এই দুই ভূখণ্ডের সব অধিবাসী নাগরিক অধিকার পূর্ণভাবে দিতে পারি, তাহলেই হবে শ্রেষ্ঠ কাজ। আমাদের মস্তিষ্কে ধোলাই করে দেওয়া আছে যে একই জাতি হতে গেলে একই ভাষা, নৃতাত্ত্বিক উৎস, ইতিহাসে, পৌরাণিক গাথা, স্বপ্ন ও আশা-আকাঙ্ক্ষা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড- এসব থাকতেই হবে, অন্যান্য জাতিদের ঘৃণা করতে হবে। কিন্তু সেসব জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীর ধারণা, পুরোপুরি বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কহীন। সেগুলো ভুলতে পারলেই আমাদের মনে জাতীয়তাবাদ বর্জিত হবে, সাম্প্রদায়িকতা চূর্ণ হবে এবং বাঙালিত্ব গর্বের বিষয় হয়ে উঠবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কথাশিল্পী
আমরা কি ইউরোপীয় জাতিরাষ্ট্রের এ দোষগুলো কাটিয়ে উঠেছি? আমরা সংখ্যালঘুদের বিশেষত অ-বাঙালিদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, তাদের ভাষা, জীবনযাপনের পার্থক্য কিভাবে গ্রহণ করি? অস্বীকার করা যায় না যে বাংলাদেশে বাঙালিরা অন্যান্য গোষ্ঠী থেকে বেশি ক্ষমতাধারী এবং এ ক্ষমতা এসেছে সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিসত্তার পথ ধরে। অবশ্য সংখ্যাই শেষ কথা নয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ ইউরোপিয়ানরা সংখ্যালঘু হলেও তারা সেখানে এখনো, নেলসন ম্যান্ডেলার পরেও, প্রবল ক্ষমতাধারী। সেখানে এক গোষ্ঠী কৃষ্ণ আফ্রিকান (তারা সেখানে অভিজাত বিধায়) শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের সঙ্গে ওঠাবসার সুযোগ পেয়ে নিজ দেশের কৃষ্ণকায়দের ঘৃণা করা শিখেছে। নিজেদের মধ্যে শ্রেণীবিভাজন সেখানে চরম আকার ধারণ করে আছে।
আমরা বাঙালিরা কি আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন করা থেকে বিরত আছি? যদি না থাকি, তবে আমরা কি জাতীয়তাবাদী মনোভাব ব্যক্ত করছি? অনেকে এটাকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা দেবেন; শ্রেণীর কথা, অভিজাত-অনভিজাতের কথা, ধনী-দরিদ্রের কথা, সামাজিক বৈষম্যের কথা- আরো অনেক কিছু বলবেন; কিন্তু মূল কথাটি রয়ে যায় একটিই এবং সেটা হচ্ছে, জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির গর্বে আমরা জাতীয়তাবাদের দিকে ঝুঁকেছি অনেকটাই।
দুটি বাঙালির দেশ আছে, একটা বাংলাদেশ ও অন্যটা পশ্চিমবঙ্গ। গত সংখ্যায় লিখেছি যে আমরা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠছি এবং সে কারণেই দুই বাংলার একক জাতিসত্তা ভেঙে যাচ্ছে। এ কথার অর্থ এর বিপরীত অবস্থাকে নাকচ করা নয়; পশ্চিমবঙ্গেও সাম্প্রদায়িকতা আছে, তারা ব্রিটেনের ইংরেজ জাতির মতো নিজেদের বাঙালিত্বের ধ্বজাধারী মনে করে, তারা বাঙালি মুসলমানদের বাঙালি মনে করে না, তারা আমাদের নাম বিকৃত বানানে লিখে বিকৃত আনন্দ পায়। কলকাতায় সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে হাজারে একটা বাঙালি মুসলমানের নাম চোখে পড়ে, অথচ বাংলাদেশে উচ্চপদে বাঙালি হিন্দুর সংখ্যা সম্ভবত এক শতে দশ বা আরো বেশি। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও একই অবস্থা। পুরো ভারতে অতীতে ও বর্তমানে মুসলমানদের দুরবস্থার কথা লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের কয়েকজন লেখক, বাংলাদেশেও কয়েকজন হিন্দুদের কথা লিখেছেন; কিন্তু এর পরও বলতে হয়, সাহিত্য, শিল্পকলা, সংগীতে বাংলাদেশের বাঙালিরা পশ্চিমবঙ্গের প্রশংসা করে চলছে এবং বাংলাদেশের কয়েকটি পত্রিকা নিয়মিত পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের লেখা এখানে ছাপাচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তেমন কিছু চোখে পড়ে না।
এই যে বিদ্বেষভাবাপন্নতা, এর শেষ কোথায়? এটার জন্য বাঙালিত্বের চরিত্র কালিমালিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এর কারণ কোথায়? এর কারণ সনি্নহিত আছে আমাদের বাস্তবতাবোধের অভাবে। কী পশ্চিমবঙ্গ, কী বাংলাদেশ- দুই দেশেরই সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা এমন কোনো গর্বের অবস্থায় পৌঁছায়নি। পশ্চিমবঙ্গ বিশাল ভারতের একটা রাজ্য, তারা স্বাধীন নয়। তারা বাঙালি জাতীয়তাবাদের দোষে আক্রান্ত হতে পারছে না; সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র এবং এই দেশটিতে জাতীয়তাবাদের অসুখে ভোগার অনেক পথ খোলা আছে। সে জন্যই না বাংলাদেশে হাজারটা দ্বন্দ্ব মাথা তুলছে। বাঙালিত্বের গর্ব একটা সমাধান নয়, এটা একটা সমস্যা। রাজনৈতিকভাবে এই বাঙালিত্ব হেজিমনিক (সমর্থন নিয়ে বা আদায় করে ক্ষমতায় যাওয়া) হয়ে উঠছে। আঠারো-উনিশ শতকে ইউরোপে বিভিন্ন দেশে জাতীয়তাবাদের উত্থানে সামন্তবাদের ক্ষমতাসীনদের হাত থেকে ধীরে ধীরে পুঁজিবাদী গোষ্ঠীতে (শিল্প বিপ্লবের ফলে) ক্ষমতা হস্তান্তরিত হতে শুরু হয়, সেটায়ও হেজিমনি কাজ করেছে। সেখানে জনগণ সমর্থন দিতে বাধ্য হয়; কারণ সেসব দেশের উৎপাদনব্যবস্থা থেকে উৎপাদিত পণ্যের বণ্টনব্যবস্থাও পরিবর্তিত হতে থাকে। তখন আর জাতীয়তাবাদের কথা বলে জনগোষ্ঠীকে অন্য পথে নিয়ে যাওয়ার উপায় ছিল না। জাতিগর্ব তখনো ছিল; কিন্তু বাস্তব অবস্থার দ্রুত পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে সেটা মাথাচাড়া দিতে পারেনি। নাৎসিবাদের উত্থানের পেছনে ইতালিতে মুসোলিনি ও জার্মানিতে হিটলার ক্ষমতা দখলে রাখার উদ্দেশ্য ছিল (উগান্ডায় ইদি আমিনও তাই করেছিল); কিন্তু বিশ্বের লাখো কোটি মানুষের সমর্থন তাতে ছিল না। পরাজিত ফ্যাসিবাদ বা নাৎসিবাদ সেখানে এখনো মাঝেমধ্যেই বর্ণবাদ ও সেমিটিজম-বিদ্বেষে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
কিন্তু সেটা যে সমাধান নয়, সেটা যে সমস্যা তা আরেকবার না বললেও পাঠকরা বুঝবেন। বাঙালিত্বের ক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে, দুই বাংলায় আমরা ঔপনিবেশিক সময় থেকে আমাদের অর্থনৈতিক-সামাজিক-শিল্পায়নে এমন কী পরিবর্তন দেখেছি যে আমরা বাঙালিত্বের অর্জন বলতে পারি? কিছুই না। বরঞ্চ আমরা যদি বাঙালিত্বের আধিপত্যের ধারণা বর্জন করে এই দুই ভূখণ্ডের সব অধিবাসী নাগরিক অধিকার পূর্ণভাবে দিতে পারি, তাহলেই হবে শ্রেষ্ঠ কাজ। আমাদের মস্তিষ্কে ধোলাই করে দেওয়া আছে যে একই জাতি হতে গেলে একই ভাষা, নৃতাত্ত্বিক উৎস, ইতিহাসে, পৌরাণিক গাথা, স্বপ্ন ও আশা-আকাঙ্ক্ষা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড- এসব থাকতেই হবে, অন্যান্য জাতিদের ঘৃণা করতে হবে। কিন্তু সেসব জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীর ধারণা, পুরোপুরি বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কহীন। সেগুলো ভুলতে পারলেই আমাদের মনে জাতীয়তাবাদ বর্জিত হবে, সাম্প্রদায়িকতা চূর্ণ হবে এবং বাঙালিত্ব গর্বের বিষয় হয়ে উঠবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কথাশিল্পী
No comments