বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সব প্রস্তাবই ত্রুটিপূর্ণ
গ্রাহক পর্যায়ে আরও এক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) উপস্থাপিত পাঁচটি বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাবই ত্রুটিপূর্ণ। প্রস্তাবগুলোতে যেসব ব্যয় দেখানোর কথা নয়, সেগুলো দেখানো হয়েছে। আবার যেসব আয় উল্লেখ করার কথা, সেগুলো উল্লেখ করা হয়নি।
বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনে এসব ত্রুটি ধরা পড়েছে। এ নিয়ে গণশুনানিতে আলোচনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোম্পানিগুলো জুতসই জবাব দিতে পারেনি। বিইআরসি তাদের সুযোগ দিয়েছে শুনানির পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশোধনী দিতে। তার ভিত্তিতে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে।
বিইআরসির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চলতি জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে কমিশন দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা দিতে পারে। আর সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ১ জানুয়ারি থেকে। দাম বাড়তে পারে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ।
এবার দাম বাড়ানো হলে তা হবে বর্তমান সরকারের শাসনামলে সপ্তমবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো। এই আমলে এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের খুচরা দাম বাড়ানো হয়েছে ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর ফলে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় দাম চার টাকা থেকে বেড়ে পাঁচ টাকা ৭৫ পয়সা হয়েছে।
গতকাল সোমবার পাঁচটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাবের ওপর বিইআরসিতে গণশুনানি শেষ হয়েছে। এতে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প গ্রাহকদের পক্ষ থেকে দাম বাড়ানোর বিষয়ে তীব্র আপত্তি ও বিরোধিতা করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাব, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), বিকেএমইএ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধিরা গণশুনানিতে উপস্থিত হয়ে দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন। এ ছাড়া এফবিসিসিআই ও বাসদসহ কয়েকটি সংগঠন দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিইআরসির কাছে লিখিতভাবে আপত্তি জানিয়েছে।
গতকাল সকালে গণশুনানি হয় ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডেসকো) প্রস্তাবের ওপর। ডেসকো ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে। কিন্তু তাদের উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিইআরসির মূল্যায়ন দলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়ানোর দরকার হতে পারে।
গণশুনানিতে অনুষ্ঠিত আলোচনা-পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডেসকোর আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ঘাটতি মাত্র ১৪ কোটি টাকা। তবে গত মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিলে ধাপ (স্লাব) সুবিধা না থাকা অবস্থায় ডেসকো অস্বাভাবিক বিল হিসেবে যে বাড়তি টাকা (প্রায় ৭০ কোটি টাকা) উপার্জন করেছে, তা এই হিসাবে ধরা হয়নি। তা ধরলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো না হলেও ডেসকো লাভজনক প্রতিষ্ঠানই থাকে। কিন্তু শুনানিতে ডেসকোর কর্মকর্তারা দাবি করেন, দাম বাড়ানো না হলে কিংবা ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়ানো হলেও তাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
শুনানি শেষে বিইআরসি ডেসকোকে ৩ জানুয়ারির মধ্যে ভুলত্রুটি শুদ্ধ করে সংশোধিত তথ্যাদি উপস্থাপন করতে বলেছে।
গতকাল বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি। ডিপিডিসি ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। কিন্তু তাদের দেওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিইআরসির মূল্যায়ন দলের হিসাব অনুযায়ী ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ বাড়ানো দরকার হতে পারে।
এর আগে গত রোববার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ওজোপাডিকো) প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। তাতেও একই রকম ত্রুটি থাকায় কোম্পানি দুটি যে পরিমাণ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে, তার ৪০ শতাংশের মতো বাড়ানো দরকার হতে পারে বলে মত দেয় বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন দল।
গত ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৯ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানিতে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন দল বলেছিল, উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী সংস্থাটি লাভজনক। তাই দাম বাড়ানোর দরকার নেই।
আরইবির ওই প্রস্তাবে একটি খাত থেকে গত বছর ২০০ কোটি টাকা উপার্জনের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়নি। বিইআরসি তাদের বলেছিল সংশোধিত তথ্য-উপাত্ত দিতে। আরইবি গতকাল তা বিইআরসিকে দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি সূত্র জানায়, গত ১ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠবারের মতো বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। এরপর আবারও দাম বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল না। এ জন্য বিইআরসিতে প্রস্তাব নিয়ে আসার ব্যাপারে কোম্পানিগুলোর প্রস্তুতিও ছিল না। কিন্তু এই খাতে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কোনো কোনো ব্যক্তির পরামর্শ ও চাপে পড়ে কোম্পানিগুলো তাড়াহুড়ো করে যেনতেনভাবে প্রস্তাব নিয়ে আসে।
একনজরে বিদ্যুতের দাম বাড়ার চিত্র
১ মার্চ ২০১০: গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ।
১ ফেব্রুয়ারি ২০১১: পাইকারি ১১ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ।
১ আগস্ট ২০১১: পাইকারি ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
১ ডিসেম্বর ২০১১: পাইকারি ১৬ দশমিক ৭৯ ও গ্রাহক পর্যায়ে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।
১ ফেব্রুয়ারি ২০১২: পাইকারি ১৪ দশমিক ৩৭ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৭ দশমিক ০৯ শতাংশ।
১ সেপ্টেম্বর ২০১২: পাইকারি ১৬ দশমিক ৯২ ও গ্রাহক পর্যায়ে ১৫ শতাংশ।
বিইআরসির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চলতি জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে কমিশন দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা দিতে পারে। আর সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ১ জানুয়ারি থেকে। দাম বাড়তে পারে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ।
এবার দাম বাড়ানো হলে তা হবে বর্তমান সরকারের শাসনামলে সপ্তমবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো। এই আমলে এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের খুচরা দাম বাড়ানো হয়েছে ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর ফলে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় দাম চার টাকা থেকে বেড়ে পাঁচ টাকা ৭৫ পয়সা হয়েছে।
গতকাল সোমবার পাঁচটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাবের ওপর বিইআরসিতে গণশুনানি শেষ হয়েছে। এতে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প গ্রাহকদের পক্ষ থেকে দাম বাড়ানোর বিষয়ে তীব্র আপত্তি ও বিরোধিতা করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাব, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), বিকেএমইএ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধিরা গণশুনানিতে উপস্থিত হয়ে দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন। এ ছাড়া এফবিসিসিআই ও বাসদসহ কয়েকটি সংগঠন দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিইআরসির কাছে লিখিতভাবে আপত্তি জানিয়েছে।
গতকাল সকালে গণশুনানি হয় ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডেসকো) প্রস্তাবের ওপর। ডেসকো ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে। কিন্তু তাদের উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিইআরসির মূল্যায়ন দলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়ানোর দরকার হতে পারে।
গণশুনানিতে অনুষ্ঠিত আলোচনা-পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডেসকোর আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ঘাটতি মাত্র ১৪ কোটি টাকা। তবে গত মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিলে ধাপ (স্লাব) সুবিধা না থাকা অবস্থায় ডেসকো অস্বাভাবিক বিল হিসেবে যে বাড়তি টাকা (প্রায় ৭০ কোটি টাকা) উপার্জন করেছে, তা এই হিসাবে ধরা হয়নি। তা ধরলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো না হলেও ডেসকো লাভজনক প্রতিষ্ঠানই থাকে। কিন্তু শুনানিতে ডেসকোর কর্মকর্তারা দাবি করেন, দাম বাড়ানো না হলে কিংবা ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়ানো হলেও তাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
শুনানি শেষে বিইআরসি ডেসকোকে ৩ জানুয়ারির মধ্যে ভুলত্রুটি শুদ্ধ করে সংশোধিত তথ্যাদি উপস্থাপন করতে বলেছে।
গতকাল বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি। ডিপিডিসি ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। কিন্তু তাদের দেওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিইআরসির মূল্যায়ন দলের হিসাব অনুযায়ী ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ বাড়ানো দরকার হতে পারে।
এর আগে গত রোববার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ওজোপাডিকো) প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। তাতেও একই রকম ত্রুটি থাকায় কোম্পানি দুটি যে পরিমাণ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে, তার ৪০ শতাংশের মতো বাড়ানো দরকার হতে পারে বলে মত দেয় বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন দল।
গত ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৯ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানিতে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন দল বলেছিল, উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী সংস্থাটি লাভজনক। তাই দাম বাড়ানোর দরকার নেই।
আরইবির ওই প্রস্তাবে একটি খাত থেকে গত বছর ২০০ কোটি টাকা উপার্জনের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়নি। বিইআরসি তাদের বলেছিল সংশোধিত তথ্য-উপাত্ত দিতে। আরইবি গতকাল তা বিইআরসিকে দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি সূত্র জানায়, গত ১ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠবারের মতো বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। এরপর আবারও দাম বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল না। এ জন্য বিইআরসিতে প্রস্তাব নিয়ে আসার ব্যাপারে কোম্পানিগুলোর প্রস্তুতিও ছিল না। কিন্তু এই খাতে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কোনো কোনো ব্যক্তির পরামর্শ ও চাপে পড়ে কোম্পানিগুলো তাড়াহুড়ো করে যেনতেনভাবে প্রস্তাব নিয়ে আসে।
একনজরে বিদ্যুতের দাম বাড়ার চিত্র
১ মার্চ ২০১০: গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ।
১ ফেব্রুয়ারি ২০১১: পাইকারি ১১ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ।
১ আগস্ট ২০১১: পাইকারি ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
১ ডিসেম্বর ২০১১: পাইকারি ১৬ দশমিক ৭৯ ও গ্রাহক পর্যায়ে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।
১ ফেব্রুয়ারি ২০১২: পাইকারি ১৪ দশমিক ৩৭ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৭ দশমিক ০৯ শতাংশ।
১ সেপ্টেম্বর ২০১২: পাইকারি ১৬ দশমিক ৯২ ও গ্রাহক পর্যায়ে ১৫ শতাংশ।
No comments