২০১৩- কঠিন সত্যের বছর! by উত্তম চক্রবর্তী
সত্য যে কঠিন/কঠিনেরে ভালো-বাসিলাম...’ এই কঠিন সত্যকে সারথি করে ‘আজি এ ঊষার পুণ্য লগনে, উদিছে নবীন সূর্য গগনে।’ আবহমান সূর্য একটি পুরনো বছরকে কালস্রোতের উর্মিমালায় বিলীন করে আবার শুরু করল যাত্রা।
পুব আকাশের তমসা আর ঘন কুয়াশা সরিয়ে উদ্ভাসিত নতুন সূর্য সব জরা-জীর্ণতাকে পেছনে ফেলে আরও একটি নতুন বছরের সূচনা করল। বিদায় ২০১২, স্বাগত ২০১৩ সাল। অনেক হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ এবং আনন্দ-বেদনায় মেশানো ঘটনাবহুল ২০১২ সালের শেষ সূর্য অস্ত গেছে কাল। লাখো প্রত্যাশার ঝাঁপি খুলে এবং সরকারের কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশায় আজ ভোরে কুয়াশাঢাকা পূর্বাকাশে উদয় হয়েছে নতুন বছরের লাল সূর্য। আর এই সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শুরু হচ্ছে ২০১৩ সাল। স্বপ্ন আর দিনবদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার রক্তিম আলোয় উদ্ভাসিত ইংরেজী ক্যালেন্ডারের খ্রিস্টীয় নববর্ষের আজ প্রথম দিন। হ্যাপি নিউ ইয়ার- ২০১৩। নতুন বছরকে স্বাগতম সুখ-সমৃদ্ধির প্রত্যাশায়।বর্ষবরণের আবাহন রেখে কুয়াশামোড়া পা-ুর সূর্য ঝরা পল্লবের মতো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে কাল খসে পড়েছে। প্রাচীন সূর্য গতকাল যে দিবসকে কালস্রোতে বিলীন করে পশ্চিমে অস্ত গেল, তা আজ ফেলে আসা দিন। ‘পুরনো সেই দিনের কথা।’ কালের যাত্রার ধ্বনিতে আজ প্রভাতে ‘রবির কর’ দশ দিগন্তে আলোর নাচন তুলে চোখ মেলেছে নতুন দিনে, নতুন বছরে। দিন আসে দিন যায়। নতুন সূর্যকে অভিবাদন।
‘যেতে নাহি দিব’ এ চিরন্তন বিলাপধ্বনির ভেতরে আজ প্রভাতের সূর্য তার দশ দিগন্তের আলোর নাচনে অভিবাদন জানাল নতুন বছরকে। থার্টি ফার্স্টে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ পরমানন্দে ২০১৩ সালকে বরণ করেছে। আজ নতুন দিনের নতুন সূর্যালোকে স্নান করে সিক্ত হবে জাতি-বর্ণ-নির্বিশেষে সব শ্রেণীপেশার মানুষ। বিগত বছরের সব কালিমা ধুয়ে-মুছে নতুন কেতন ওড়াতে ওড়াতে এগিয়ে যাবে সময়, সভ্যতা, হিংসা-বিদ্বেষ-হানাহানিমুক্ত রাজনীতি, অর্থনীতি আর সংস্কৃতি। অনাবিল স্বপ্ন আর অফুরন্ত প্রাণোন্মাদনা নিয়ে নতুন সূর্যের আলোয় অগ্রসর হবে মানুষ। বিগত সময়ের সব ভুল শুধরে নেয়ার সময় এসেছে আজ।
আজকের দিনটিও আলাদা, কারণ একটি নতুন বর্ষপরিক্রম শুরু হলো আজ মঙ্গলবার থেকে। নতুন বছরে নতুন হয়ে জেগে উঠেছে মানুষের একরাশ প্রত্যাশার ঝাঁপি নিয়ে। স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়ার পথে ২০১২ সালটি নতুন করে মিথ্যার কুহেলিকা ভেদ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সঠিক ধারায় এবং পুনর্জাগরণের নতুন সম্ভাবনার দ্বারোদ্ঘাটন রচনা করে দিয়ে গেছে, সমগ্র জাতি স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে এক মহাসড়কে। সূচিত হয়েছে তার যুথবদ্ধ যাত্রা।
গতরাত ১২টার পর পরই সারাবিশ্বে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়েছে নানা আনুষ্ঠানিকতায়। বর্ষবরণের আনন্দোৎসব করেছে সর্বস্তরের মানুষ। হিসাবের খাতায় ব্যর্থতার গ্লানি মুছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত নতুন বছরে শান্তিকামী মানুষের প্রার্থনা ছিলÑ আর কোন সহিংসতা নয়, কোন হত্যা, খুন কিংবা হানাহানির রাজনীতি নয়। ২০১৩ হবে শান্তির বীজ বপনের সাল। অস্ত্র বা হানাহানির মহড়া হবে না, থেমে যাবে সব যুদ্ধ-সন্ত্রাস। সবার প্রত্যাশা অনুযায়ী ক্ষমতাসীন সরকার নতুন বছরে একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ উপহার দেবে জাতিকে।
শুধু নতুন একটি বছরই নয়, শুরু হলো একটি চ্যালেঞ্জিং বছরও। কারণ নতুন বছরটি নির্বাচনী বছর। এই বছরের শেষভাগে অথবা আগামী বছরের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিদায়ী বছরের অনেক অমীমাংসিত ইস্যু নিষ্পত্তিরও বছর। অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়েই চতুর্থ বছরে পদার্পণ করছে বর্তমান সরকার। এছাড়া নতুন এ বছরে বেশকিছু জ্বলন্ত ইস্যুরও সমাধান করতে হবে ক্ষমতাসীন সরকারকে।
জাতির প্রত্যাশা নতুন বছরেই শেষ হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, একাত্তরের গণহত্যাকারী নরঘাতকদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর করবে সরকার। প্রধান তিনটি মহাচ্যালেঞ্জও সমাধান করতে হবে নতুন বছরে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন ছাড়াও চ্যালেঞ্জ তিনটি হলোÑ কোন্ পদ্ধতিতে হবে আগামী নির্বাচন তা নিয়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক বিতর্কের অবসান, গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রেখে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেশবাসীকে উপহার দেয়া এবং পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসানসহ সংঘাত-সাংঘর্ষিক রাজনীতির পরিবর্তে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার রাজনীতির প্রবর্তন।
নতুন বছরে আরও কয়েকটি চ্যালেঞ্জ হলোÑ জাতীয় চার নেতার হত্যাকা-ের বিচার সম্পন্ন করা, ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ বিচারাধীন বিভিন্ন দুর্নীতির মামলা নিষ্পন্নের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
বিদায়ী বছরের মতো নতুন বছরেও দ্রব্যমূল্যের কশাঘাত থেকে মুক্তিও নতুন বছরের অন্যতম প্রত্যাশা। এছাড়া স্বাধীনতাবিরোধী অন্ধকারের শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিরোধ, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবেলায় মুক্তিযুদ্ধের সকল পক্ষ শক্তিকে শক্ত ঐক্যের বাঁধনে নিয়ে আসা, সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির প্রতিরোধ, সংঘাত-সহিংস রাজনীতির পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ সমঝোতার রাজনীতি, বিরোধী অন্ধকারের শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিরোধ, অর্থনীতির গতিসঞ্চার করে নতুন বছরে একটি শান্তিময় সমৃদ্ধিশালী দেশ উপহার দিতে ২০১৩ সাল সরকারের অনেক চ্যালেঞ্জ হিসেবেই সামনে এসেছে। আর নতুন বছরেই নির্ধারিত হবে আগামী নির্বাচনের ভাগ্য।
তবে দেশের মানুষ নিশ্চিত, রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন বছর। দেশের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা এবং রাজনীতির জন্য ২০১৩ সাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন বছরটি একদিকে যেমন বর্তমান মহাজোট সরকারের মেয়াদের শেষ বছর, তেমনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী দলের আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব মঞ্চায়নের সময়। তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে এখনও সম্পূর্ণ বিপরীত কিংবা অনড় অবস্থানে সরকার ও বিরোধী দল।
সর্বশেষ শনিবার অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলটির পক্ষ থেকে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ীই আগামী নির্বাচন হবে। পক্ষান্তরে গত ২৬ মার্চ ঢাকায় গণসংযোগকালে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া পূর্বের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া ১৮ দল নির্বাচনে যাবে না, এমনকি দলীয় সরকারের অধীনে দেশে কোন নির্বাচনও হতে দেয়া হবে না। বিদায়ী বছরের শেষ মুহূর্তেও কোন পক্ষ নিজ অবস্থান থেকে একটুও নড়েনি। ফলে রাজনৈতিক সমঝোতার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা নিয়েই পথ চলা শুরু করতে যাচ্ছে ২০১৩ সাল।
‘দলীয় নাকি নির্দলীয়’ অন্তবর্তীকালীন সরকারের ধরন কী হবে, তা নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের এখনও অবসান হয়নি। বিদায়ী বছরের মতো নতুন বছরেও এ ইস্যুতে সরকার ও বিরোধী দল মুখোমুখি অবস্থানে। তবে দু’দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের প্রায় সবাই আশাবাদী, সমঝোতার মাধ্যমেই সৃষ্ট সমস্যার সমাধান হবে। নির্বাচনীকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে নতুন বছরের মাঝামাঝি সময়েই সরকার ও বিরোধী দল আসতে পারে সমঝোতার টেবিলে। তৃতীয় কোন পক্ষও মধ্যস্থতা করে করতে পারে দু’দলের সংলাপের আয়োজন। ওয়ান ইলেভেনের তিক্ত অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে কোন পক্ষই চাইছেন না তেমন ধরনের কোন সরকার জাতির ওপর আবার চেপে বসুক, গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করুক। তাই মুখে পরস্পরকে দেখে নেয়ার হুমকি-ধমকি দিলেও বড় দু’দলই আশাবাদী সবার অংশগ্রহণেই অনুষ্ঠিত হবে আগামী নির্বাচন।
শুরু হওয়া নতুন বছরেও রাজনীতির মাঠ গরম করার ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দল। নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় দু’দলই নিজ নিজ সাংগঠনিক শক্তিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছে। অতীত দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অপরাজনীতির বলয় থেকে বের না হওয়া কিংবা জাতির প্রত্যাশাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে বন্ধন অটুট রেখে বিএনপির আন্দোলনের প্রস্তুতিতে সচেতন দেশের মানুষ কতটুকু সম্পৃক্ত হবে, এ ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয় থাকলেও নতুন বছরে তারা যে রাজপথ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করবে তা ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে। এছাড়া যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে নিজেদের রক্ষায় সাম্প্রদায়িক অপশক্তিগুলো নতুন করে দেশকে অস্থিতিশীল ও নাশকতা চালানোর ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের অশনি সঙ্কেত দিচ্ছে।
বিদায়ী বছরের প্রথম থেকে শেষপর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় বিএনপির সমর্থনে জামায়াত-শিবির রাজপথে যে সশস্ত্র তা-ব চালিয়েছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশের মানুষ। গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের আশঙ্কা, শুরু হওয়া নতুন বছরেই একে একে কারাগারে বন্দী শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আদালতের রায় আসা শুরু হবে। এটি নিশ্চিত জেনেই জামায়াত-শিবির বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে এ বিচার প্রক্রিয়া বানচাল করতে আরও বড় ধরনের নাশকতামূলক কর্মকা- চালাতে পারে। দেশকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইবে এই অপশক্তিটি।
কিন্তু এ ব্যাপারে অনেকটাই সতর্ক অবস্থানে সরকার। শুধু প্রশাসনিকভাবেই নয়, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও তাদের মদদদাতা বিএনপির সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। চৌদ্দ দলসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠনগুলো আগামী মার্চ পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচীর মাধ্যমে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে বিদায়ী বছরের মতো নতুন বছরেও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির মহড়া প্রত্যক্ষ করবে দেশের মানুষ।
বিগত তিনটি বছর অনেকটাই সাফল্যের সঙ্গে দেশ পরিচালনায় আন্দোলনে মাঠে নামার সুযোগ পায়নি বিরোধী দলগুলো। রাজপথে বিক্ষিপ্ত হরতাল, অবরোধ ও রাজপথে সহিংসতা চালালেও নিজেদের পক্ষে জনসমর্থনও আদায় করতে পারেনি। বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে এবার পরিচয় পায়নি বাংলাদেশ। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী দেশ হিসেবে বিশ্বের তালিকা থেকেও বাংলাদেশের নাম মুছে ফেলতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। জঙ্গীবাদ ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ শক্তহাতে দমনে দেশের গ-ি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মাঠে নামবে নতুন বছরের প্রথম থেকেই। লক্ষ্য সারাদেশে সংগঠনকে তারুণ্যনির্ভর শক্তিশালী করে গড়ে তোলা। সরকার থেকে দলকে আলাদা সত্তায় ফিরিয়ে এনে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে ঢেলে সাজিয়ে রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলকে মোকাবেলার উপযোগী করে গড়ে তোলা। এ চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন বছরের প্রথম থেকেই শাসক দলের নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটি সারাদেশে ছুটে বেড়িয়ে দল গোছাতে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে। শুধু দল গোছানোই নয়, মহাজোটকে আরও শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করারও উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। উগ্র জঙ্গীবাদকে শক্তহাতে মোকাবেলার চ্যালেঞ্জও সামনে নিয়ে নতুন বছরে নতুন পরিকল্পনায় মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ।
তাই বিপুল প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ নিয়েই আজ থেকে যাত্রা শুরু করল আরও একটি নতুন বছর। নতুন খ্রিস্টাব্দের সূচনামুহূর্ত নিয়ে উচ্ছ্বাস-উল্লাস বাঙালী সংস্কৃতির নিজস্ব কোন অঙ্গ না হলেও পাশ্চাত্য-প্রভাবে শহরাঞ্চলে এর ব্যাপ্তি ঘটেই চলেছে। বিশেষ করে তরুণ সমাজের মধ্যে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর যারা অংশ, তারা জীবিকার কঠোর সংগ্রামে, সমস্যার ভারে এতই ক্লিষ্ট যে, এসব নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামানোর কোন অবকাশ নেই তাদের জীবনে।
তারপরও কালপরিক্রমায় নববর্ষ আসে, নতুন আশায়, স্বপ্নে উদ্দীপিত হয় মানুষ। বছরটি সাফল্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, মুখে যাবে ব্যর্থতার যাবতীয় গ্লানি, এ রকম প্রত্যাশায় মানুষ উজ্জীবিত হয়। বৈশ্বিক পটভূমিতে খ্রিস্টীয় নববর্ষের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য উপেক্ষা করার মতো নয় মোটেও। সবার প্রত্যাশা নতুন বছরে মহাজোট সরকার একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ উপহার দেবে জাতিকে।
জনকণ্ঠের কাছে দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা, সিনিয়র আইনজীবী, প্রসিকিউটরসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন, নতুন বছরে স্বাধীনতাবিরোধী এবং প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তির সকল অপতৎপরতা মোকাবেলা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা।
এ্যার্টনি জেনারেল এ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম জনকণ্ঠের কাছে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, নতুন বছরে আমার প্রত্যাশা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তাড়াতাড়ি শেষ হোক। নানারকম বাহানা সৃষ্টি করে যেন বিচার কার্যক্রমকে বন্ধ বা বিলম্বের চেষ্টা করা না হয়। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ হোক। আগামী নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক অংশগ্রহণ করুক।
তদন্তকারী সংস্থার প্রধান এমএ হান্নান খান বলেন, নতুন বছরের শুরুতেই আমরা বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের রিপোর্ট জমা দেব। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম চৌধুরী মইনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রায় শেষপর্যায়ে। এরা দুজনেই বিদেশে অবস্থান করছেন। পলাতক অবস্থাতেই তাদের বিচার কাজ শুরু হবে।
সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন বছরে সবারই প্রত্যাশা স্বাধীনতাবিরোধী এবং প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তির সকল তৎপরতা বন্ধ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাসহ ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং জেলহত্যা মামলার আপীল নিষ্পত্তি করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নতুন বছর যুগান্তকারী অবদান রাখবে এ কামনাই করি।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী ॥ ইংরেজী নববর্ষের শুভলগ্নে দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে সোমবার পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া। দেশবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, নববর্ষ উদ্যাপন আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইংরেজী নববর্ষ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। আমি আশা করি, ইংরেজী নববর্ষ আমাদের সকলের জীবনে উন্নতি, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও অনাবিল সুখ বয়ে আনবে।
নববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে দেশবাসী, প্রবাসী বাঙালী এবং বিশ্বের সকল নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সকল বাধা ও ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ এগিয়ে চলেছে। জাতীয় চার নেতা হত্যাকা-, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ মানবতাবিরোধী প্রতিটি অপরাধের বিচার কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। নতুনের আবাহনে পুরনো বছরের সব জঞ্জাল ধুয়ে-মুছে সাফ হোক। নতুন বছর আমাদের সবার জীবনে অনাবিল সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি বয়ে আনুক প্রধানমন্ত্রী মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে এই প্রার্থনা করেন।
খ্রিস্টীয় নববর্ষে দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া তাঁর বাণীতে বলেন, নতুন বছরটি সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ ও শান্তি, বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে প্রবাহিত হোক শান্তির অমিয় ধারা, দূর হয়ে যাক সব অশান্তি, যুদ্ধ বিগ্রহ ও অমানবিকতা।
No comments