.মিরপুরে ঢাবি শিক্ষকের স্ত্রী নিজ ফ্ল্যাটে দুর্বৃত্তের হাতে খুন- বাসার দুই নিরাপত্তা কর্মীর গা-ঢাকা, গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ
রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের স্ত্রী এ্যাডভোকেট রওশন আক্তারকে (৬০) শ্বাসরোধে হত্যা করে বাড়ির মাল লুট করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি ঢাবি ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব-ই-সাত্তারের স্ত্রী।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর ফ্ল্যাটের দুই তত্ত্বাবধায়ক পলাতক রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ফ্ল্যাটে গৃহবধূ রওশন আক্তারকে একা পেয়ে দুই নিরাপত্তাকর্মী এই ঘটনা ঘটিয়ে বাড়ির মূল্যবান মাল লুট করে পালিয়ে যায়। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অপরদিকে ঘটনার পর উপাচার্য আআমস আরেফিন সিদ্দিকসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে রওশন আক্তারের মরদেহ দেখতে যান। স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, সোমবার দুপুর ২টার দিকে পুলিশ মিরপুর থানাধীন ৬ নম্বর সেকশনের এ ব্লকের ৩ নম্বর রোডের ৪ নম্বর শেলটেক টিউলিপের তৃতীয় তলার সি/৩ নম্বর ফ্ল্যাটের মেঝে থেকে গৃহবধূ এ্যাডভোকেট রওশন আক্তারের হাত-মুখ ও গলা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ব্যাপারে মিরপুর থানার এসআই রফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, একটি সবুজ প্রিন্টের ওড়না দিয়ে নিহতের দুই হাত পিঠমোড়া করে বাঁধা ও হলুদ চেক বিছানার চাদর দিয়ে তার গলা পেঁচানো ছিল। মুখে কাপড় ঢোকানো ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, গলায় চাদর পেঁচানোর কারণে শ্বাসরোধে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। নিহত রওশন আক্তারের দেবর মাসফুর-ই-সাত্তার হিল্লোল ওরফে কল্লোল জানান, সকাল ৭টার দিকে তাঁর ভাই মাহবুব-ই-সাত্তার বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। তাদের একমাত্র মেয়ে ডা. রেজওয়ান আক্তার মাহবুব মিনা তার কর্মস্থল মিরপুর কিডনি হাসপাতালে যান। ওই সময় ভাবি একা বাসায় ছিলেন। এই সুযোগে দুর্বৃত্তরা ঘরে ঢুকে ভাবির হাত-মুখ বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা ও মূল্যবান মালপত্র লুট করে পালিয়েছে। তবে বাসা থেকে কী খোয়া গেছে তা তিনি জানাতে পারেননি। তিনি জানান, ভাবি নিজে আইনজীবী। মিরপুর বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ১১টার মধ্যে ওই ফ্ল্যাটের দুই নিরাপত্তাকর্মী এ্যাডভোকেট রওশন আক্তারকে একা পেয়ে তাঁর ঘরে প্রবেশ করে। এরপর তারা গৃহকর্ত্রী রওশন আক্তারকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে তার দুই হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে ও গলায় চাদর পেঁচিয়ে উপুড় করে ফ্লোরে ফেলে রাখে। পরে দুই নিরাপত্তাকর্মী বাড়ির মূল্যবান মালপত্র লুট করে পালিয়ে যায়। তিনি জানান, ফ্ল্যাটের পাঁচটি কক্ষ তছনছ অবস্থায় পাওয়া গেছে। আলমারিগুলোর দরজাও খোলা ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এই দু’জনই মাল লুট করার জন্য এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ঘটনার পর তারা গা ঢাকা দিয়েছে। তাদের গ্রেফতারের জন্য একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে এ্যাডভোকেট রওশন আক্তারের মরদেহ আসার পর সেখানে ছুটে যান উপাচার্য আআমস আরেফিন সিদ্দিকসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষক। এ সময় তাঁর স্বামী ঢাবি অধ্যাপক মাহবুব-ই-সাত্তারও উপস্থিত ছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলতে চাননি। তবে মর্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আআমস আরেফিন সিদ্দিক জানান, ঘটনা সত্যিই মর্মান্তিক। দোষীদের অচিরেই গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। এ ঘটনায় মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন জানান, ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে একাধিক পুলিশ মাঠে রয়েছে। অচিরেই হত্যাকারীরা গ্রেফতার হয়ে যাবে। নিহত রওশন আক্তারের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর মহেশ্বরে।
No comments