আলবদর-রাজাকার মুক্ত দেশ চাই by মুনতাসীর মামুন
যুদ্ধাপরাধ বিচার এ দেশের অনেকের বিশেষ করে সুশীল সমাজের অনেকের মুখোশ উন্মোচন করেছে। মধ্যবিত্তের প্রকৃত চরিত্র বুঝতে সাহায্য করেছে। রাজনীতিবিদদের বিভ্রান্তি, অজ্ঞতা, সুবিধাবাদ তুলে ধরেছে।
যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে এসব বিষয় যে আমাদের অনেকের অজানা ছিল তা নয়। আমরা লিখেছি, বলেছি, সেগুলো তেমন অভিঘাত সৃষ্টি করতে পারেনি। নতুন প্রজন্মকে ধন্যবাদ যে, তারা বাধ্য করেছে আওয়ামী লীগকে যুদ্ধাপরাধ বিচার শুরু করতে। শেখ হাসিনাকেও অভিনন্দন, ইতস্ততা কাটিয়ে তিনি বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। আজ থেকে মাত্র ৫০ বছর পরও যদি আমাদের ইতিহাস লেখা হয়, তা হলে শেখ হাসিনার সমসাময়িক কোন রাজনীতিবিদের উল্লেখ থাকবে না, তার নামটি ছাড়া। কারণ, এই এলাকায় যুদ্ধাপরাধী বা মানবিকতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া তিনিই শুরু করেছিলেন। অবশ্য, তখন যদি ইতিহাস চর্চা হয়। কারণ, তাঁর দোহাই দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন যে শিক্ষাক্রম অনুমোদন করেছে তাতে প্রতিস্তরে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ইতিহাস বিলুপ্ত করা হয়েছে। সেখানে রাখা হয়েছে ইসলামী শিক্ষা/ইতিহাস/ইসলামের ইতিহাস অপশনাল হিসেবে। পাকিস্তানেও এ কাজটি করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষার ধরনটি তাদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে, সেক্যুলার থেকে। এ প্রসঙ্গে আরেকদিন আলোচনা করা যাবে। এ বিষয়টি যাঁরা করেছেন তাঁরা চরম প্রগতিশীল হিসেবে পরিচিত, শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর খুবই প্রিয়ভাজন। এটি উল্লেখ করলাম এ কারণে যে, আমাদের প্রগতিশীলতারও একটি সীমাবদ্ধতা আছে। প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি পরানের গহীনে চাপা পড়ে থাকে। চরম সিদ্ধান্তের সময় সেটি উন্মোচিত হয়। যেমন, এক সময় দেখা গেছে, লেফটিরা সব ঝাঁকে ঝাঁকে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি করেছে। এখন দেখা যাচ্ছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচার প্রক্রিয়ায় অনেকের চাপা পড়ে থাকা আসল চেহারাটি ফুটে উঠছে।
প্রথমে, মিডিয়ার কথা ধরা যাক। এর তরুণ কর্মীরা সব সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছেন। তাঁরা খবর সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন, ছবি তুলেছেন, কিন্তু যখন তা প্রচারিত হয় তখন দেখা যায় তা সøাইটলি নিউটেরাল [নিউট্রালও বলতে পারেন]। অর্থাৎ লাইনটা কেন যেন এঁকেবেঁকে চলে যায় বিচার সমর্থকদের বিপক্ষে। উদাহরণ দিই। প্রতিদিন বিচার প্রক্রিয়ার খবর/চিত্র দেখান হয় টিভিতে। সেখানে দুটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। অপরাধীদের অনেক কষ্টে সিঁড়িতে ওঠানো-নামানো হচ্ছে, কারো বুকে কোরান শরীফ। এক বছর আগেও তাদের শরীরের অবস্থা এত খারাপ ছিল বলে জানা ছিল না। কেউ বুকে কোরান নিয়েও হাঁটত না। মিডিয়া দেখাতে চাচ্ছে, শুধু শুধু বয়সী এদের নিয়ে টানাহেঁচড়া করা হচ্ছে। এক ধরনের সমবেদনা জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় হচ্ছে, ভিক্টোরি স্যালুট। অর্থাৎ, আমরা জিতব। পাকিস্তান জিন্দাবাদ। অন্যকোন দেশে, নাজি অপরাধী বিচারে, অপরাধীর এ ধরনের বিজয়ী হাতনাড়া দেখালে সেই চ্যানেলকে ব্যাম্বু কি জিনিস বুজিয়ে দেয়া হতো।
প্রিন্ট মিডিয়ার ঝোঁক আওয়ামী বিরোধিতা। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট সম্পাদকরাও একই কাজ করে যাচ্ছেন। কয়েকদিন আগে, বিএনপি-জামায়াতের সমাবেশের কথা ধরুন। খালেদা জিয়া বলছেন, স্বচ্ছ বিচার চান। তার আগে-পিছে-সামনে সব প্ল্যাকার্ডে যা লেখা তার মূল কথাÑযুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি চাই, ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দিতে হবে। দৈনিক জনকণ্ঠ ছাড়া এ ছবি কেউ ছাপেনি। জামায়াতকে সবাই যুদ্ধাপরাধীর দল বলে কিন্তু বিএনপিকে নয়, যদিও তারাই প্রথম যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করেছে এবং তাদের দলের যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার হচ্ছে। কারণ? কারণ আর কিছু নয়, বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে বউ-বাচ্চা, টাকাপয়সা নিয়ে টানাটানি করবে। আওয়ামী লীগ বা ১৪ দল তো তা করছে না। শেখ হাসিনা কথা বললে হয়ে যায় অতিকথন। খালেদা বললে হয় তা অমৃত বচন। এটি স্পষ্ট যে যুদ্ধাপরাধ বিচার বিএনপি চায় না। জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব অপরাধের দায়ে বন্দী, বিচার চলছে। এখন জামায়াতের দায়িত্বও খালেদা কাঁধে তুলে নিয়েছেন, মতিয়া চৌধুরীর ভাষায়, জামায়াতের মহিলা আমির হিসেবে। কিন্তু, এটি শুধু বলছেন মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা নয়। কারণ, তাদের ব্যবসাবাণিজ্য আছে, ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার বন্ধন আছে। এসব কারণেও যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া থমকে থমকে যাচ্ছে।
জামায়াত-বিএনপি এই বিচার প্রক্রিয়া বানচালের জন্য যথেষ্ট টাকা দিয়েছে। এর বিপরীতে সরকার টাকা খরচ করা দূরে থাক, প্রতিটি ক্ষেত্রে শৈথিল্য দেখিয়েছে যে কারণে সব কিছু আর আগের মতো মসৃণভাবে চলছে না। প্রসিকিউশন, অবকাঠামো, নিরাপত্তা, প্রচারÑ সব কিছু নিয়ে আমরা সব সময় চিৎকার করেছি, আবেদন-নিবেদন করেছি। আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেগুলোতে দৃকপাত করেননি এবং আমাদের সম্পর্কে সুখকর কোন মন্তব্য করেননি। প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেননি। আজকের অবস্থার জন্য সব দায়-দায়িত্ব তাদের বহন করতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বদল হলে এবং আইনমন্ত্রীর গাড়ি আক্রান্ত হলে, স্কাইপ নাটক হলে, যেসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন তিন বছর আটকে ছিল তা ছাড়া পেয়েছে। বিচারের শেষ অবস্থায়। মন্ত্রীরা বার বার রায়ের তারিখ ঘোষণা করে বিচারক থেকে শুরু করে সবার ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছেন অযথা। বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা, বিচার প্রক্রিয়া মসৃণ করার ক্ষেত্রে তাদের অদক্ষতা ও ঔদ্ধত্য শুধু জটিলতার সৃষ্টি করেছে মাত্র।
প্রশ্ন উঠতে পারে, তা হলে কোন কোন ব্যক্তির বিচার শেষ হলো কিভাবে? এর একটি কারণ, সব পক্ষই ফৌজদারি আইনের ভিত্তিতে যেটিতে তারা অভ্যস্ত সেই ভিত্তিতে কাজ করে গেছেন। যদি আইনটি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হতো, তা হলে বিচার প্রক্রিয়া এত দীর্ঘ হতো না। যদি শুরুতে মন্ত্রীদের অদক্ষতা ও ঔদ্ধত্যের কারণে অবকাঠামো উন্নয়ন স্থগিত না থাকত তা হলে বিচারক নিজামুল হককে স্কাইপের ফাঁদে পড়তে হতো না। বিদেশে এত অপপ্রচার তার জবাব দিয়েছেন প্রধানত শাহরিয়ার কবির ও নির্মূল কমিটি। চাঁদা তুলে তাকে বাইরে পাঠাতে হচ্ছে, হয়েছে। কোন মন্ত্রণালয় সহায়তা করেনি। কোন দূতাবাস এই অপপ্রচার রোধ করতে পারেনি। মীর কাশেম আলী ২৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেন যুক্তরাষ্ট্রে। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, রাজস্ব বোর্ড কি এ নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলেছে বা ব্যবস্থা নিয়েছে? এর কারণ অনুসন্ধান করেও জানা যাবে না, তবে বুঝে নিতে হবে।
এর ওপর যুক্ত হয়েছে, পার্টির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জামায়াত প্রতিরোধের কথা বললে, যুবলীগপ্রধান তা বিরোধিতা করেন। অনেকে অবশ্য ঠাট্টা করে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জামায়াত প্রতিরোধে টেন্ডারের কথা বললে এই প্রশ্ন যুবলীগ নেতা ওঠাতেন না । শুধু তাই নয় আমাদের প্রিয় কমিউনিস্ট নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি করতে চান [মানবকণ্ঠ, ২৮.১২.২০১২]। জামায়াত প্রতিরোধ ছাত্রলীগ-যুবলীগের কাজ নয়। এরপর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ প্রতিরোধ, বিএনপি-জামায়াত প্রতিরোধে জনাব সেলিম আবেদন না জানালে খুশি হব। কারণ, তাহলে ব্যাপক গৃহযুদ্ধ শুরু হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও নিন্দিত হবেন, তার পরিবারবর্গ নিন্দিত হবে এবং বিএনপি-জামায়াত এলে তার জন্য জেলও নির্ধারিত। প্রশ্ন হচ্ছে, বেগম জিয়া আওয়ামী লীগে একমাত্র বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে রাজাকার বলেন, খোকার মতো রাজনীতিবিদও তাকে মস্তান বলেন, জামায়াত তার বিচার চায় কিন্তু পূর্বের বা অন্য কোন মন্ত্রীর বিচারও চায় না। রাজাকারও বলে না। শেখ হাসিনার বিচার অবশ্য চায়। তার পুত্রকে চোর হিসেবে আখ্যায়িত করে। কেন এ রকম হয়? কেন এখন আর জামায়াত-বিএনপি হরতাল ডেকে গাড়ি পোড়াচ্ছে না, মানুষ পোড়াচ্ছে না, হঠাৎ ঢাকায় কেন জামায়াত আগের থেকে নীরব, সেটি অবশ্যই পুলিশের কারণে। এটি খুব সম্ভব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাফল্য নয়। ব্যবস্থা না নেয়াটাই সাফল্য। নিলেই বিতর্ক। এ কারণেই যুদ্ধাপরাধ বিচারে সরকারের কমিটমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এবং অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে রায় ও সে রায় কার্যকর না করলে [যদি তা সরকারের পক্ষে যায়] আওয়ামী লীগের পক্ষে আগামী নির্বাচন জয় করা সম্ভব হবে না। রাজনৈতিক নেতারা বক্তৃতায় যুদ্ধাপরাধ বিচার চেয়েছেন কিন্তু, মাঠে-ময়দানে নেমে যেভাবে বিচারের সপক্ষে জনমত সংহত করে প্রতিরোধে নামা উচিত ছিল তা করেননি।
এ প্রসঙ্গে আসে বুদ্ধিজীবীদের কথা। যুদ্ধাপরাধের প্রসঙ্গে প্রচার বা খবরে কোন ভারসাম্য থাকতে পারে না। সেটি একতরফা হবে। টকশোগুলো, প্রযোজকরা ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করেন যা যুদ্ধাপরাধের পক্ষে যায়। টিভি প্রযোজকরা লেফটি এবং প্রগতিশীল বলে খ্যাতদের টকশোতে আনেন এবং তারা বিচারের স্বচ্ছতা, আন্তর্জাতিক মানদ-, জামায়াতের গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা তোলেন। এতে অবশ্যই কেউ না কেউ বিভ্রান্ত হয়। বাংলাদেশের মিডিয়া ছাড়া পৃথিবীর কোন মিডিয়ায় মানবতাবিরোধী বা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বলার জন্য এত অবারিত সুযোগ দেয়া হয় না। ব্যালান্সের নামে ক্ষমতার এ ধরনের অপব্যবহার এখানে শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়। ইউরোপে ‘হলোকাস্ট’ অস্বীকার করা নিন্দনীয় অপরাধ। যারা নিয়ত এ ধরনের কথা বলেন প্রগিতশীলতার নামে, তাদের আপনারা সুধী সমাজ, সুজন, সুশীল সমাজ বলেন। সাধারণ মানুষ তাদের ‘হার্ডকোর হারামজাদা’-ই বলে। তবে, এটিকে গালিগালাজ মনে করলে তাদের ক্রান্তিকালীন বা সৃজনশীল জামায়াতী-বিএনপি বুদ্ধিজীবী বলতে পারেন। মাহমুদুর রহমান সম্পাদিত দৈনিক দেশে স্কাইপের যে প্রতিলিপি ছাপা হয়েছে তা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় অপরাধ, সাংবাদিকতার নৈতিকতার বিরোধী। সাংবাদিকরা কেউ কোন প্রতিবাদ করেননি, এমনকি শেখ হাসিনার পক্ষের সাংবাদিক নেতা মাননীয় ইকবাল সোবহান চৌধুরী বা জনাব গোলাম সরোয়ারও নয়। বহুল প্রচারিত নিউজ অব দি ওয়ার্ল্ড এ কারণে বন্ধ করে দেয়া হলো। সাংবাদিক সম্পাদককে শাস্তি পেতে হয়েছিল। অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও সরকার পক্ষের কৌঁসুলিরা দাবি করেননি যে, এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং সেসব ইমেইল বা স্কাইপি কথোপকথন আদালতে পেশ করাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এভাবে আমাদের একাংশ, বা মধ্যবিত্তের একাংশ বা ক্ষমতাধরদের একাংশ, বুঝে না বুঝে, অজ্ঞতা ও ঔদ্ধত্যের কারণে সুবিধাবাদ ও স্বার্থের কারণে, সব সময় ঠিক জায়গায় থাকার বাসনায়, এ ধরনের কার্যক্রমে জড়িত থেকেছি বা থাকছি।
জামায়াত-বিএনপি যুদ্ধাপরাধ বিচার বানচালে অনেকটা সফল হয়েছে। বিচার কর্মকে তারা প্রলম্বিত করতে পেরেছে, বিচারককে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। সরকারের ভেতর, মিডিয়ার ভেতর তাদের পক্ষ সৃষ্টি করতে পেরেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিচার নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে পেরেছেন। এটি কম কৃতিত্ব নয়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট চিঠি লিখে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে নিষেধ করেছেন। ডা. দীপু মণি ও নির্মূল কমিটি ছাড়া এক্ষেত্রে প্রবল প্রতিবাদ কেউ করেননি। আমার উপর্যুক্ত আলোচনার যথার্থতা বোধহয় ঠিক। কী বলেন?
সরকারের শৈলিথ্য, সমন্বয়ের ও দূরদর্শিতা এবং নেতাদের বাগাড়ম্বরের কারণে, এ প্রশ্ন জেগেছে যা আগেই উল্লেখ করেছি যে, আওয়ামী লীগ কি আসলেই যুদ্ধাপরাধীর বিচার চায়? না রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করে নির্বাচনে ঝড় তুলতে চায়। আমার ব্যক্তিগত মত, আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা ও কর্মী এবং সাধারণ মানুষ এটি রাজনৈতিক ইস্যু মনে করেন না। এটিকে জাতীয় ইস্যু মনে করেন এবং তারা সবাই চান বিচার চলুক, রায় হোক এবং তা কার্যকর হোক। এ বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। এবং সারাদেশের মানুষ মোটামুটি একমত যে, বিচার হতেই হবে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের আগেও অনেকে দোদুল্যমান ছিলেন, ২৫ মার্চের আগেও। তারপর সবাই এককাট্টা হয়েছিলেন। সাধারণ মানুষই জয়বাংলা বলে বাংলাদেশকে রাজাকারমুক্ত করেছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য যুদ্ধে যেতে বাধ্য হওয়া এক সৈনিক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে আবার রাজাকারদূষিত করেছেন। সমস্ত দোদুল্যমানতা ভুলে আবারও জয়বাংলা বলে দেশকে রাজাকারমুক্তির সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করুন। যদি মনে করেন এটি ‘গৃহযুদ্ধের’ ডাক তাতে ক্ষতি নেই। সেদিন খুব দেরি নয়, যেদিন এদেশের মানুষই বলবে, জামায়াত নিষিদ্ধ কর, মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনাল স্থায়ী কর। বিএনপি যুদ্ধাপরাধীর দল অতএব তার রাজনীতি প্রতিরোধ কর [জনাব ওমর ফারুক চৌধুরী ও জনাব সেলিম এটিকে গৃহযুদ্ধের আহ্বান বলে মনে করলেও আমরা বার বার এ কথাই বলব]। সাধারণ মানুষ এসব দাবি তুলে জয়বাংলা বলে, সামনের বছর এগিয়ে যাবে এটিই নতুন বছরের কামনা। এটি ন্যায় যুদ্ধ। ন্যায় যুদ্ধ যারা করে তারা পরাজিত হয় না।
No comments