ডেসটিনি by রহিম শেখ
আর্থিক খাতে গত বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল ডেসটিনি গ্রুপের কেলেঙ্কারি। মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের নামে অভিনব প্রতারণার দায়ে কোম্পানির সম্পত্তি জব্দ, নিবন্ধন বাতিল এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের আটকের ঘটনা আলোচনায় ছিল বছরজুড়েই।
সাধারণ মানুষের অর্থ হাতিয়ে নেয়া ডেসটিনি গ্রুপের হাজার কোটি টাকার অনুসন্ধানে বছরের শুরুতে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। তারপর বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে দুদকের দুটি মামলায় ফেঁসে যায় ডেসটিনির শীর্ষ কর্মকর্তারা।এই সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ শতাধিক এ্যাকাউন্ট জব্দ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডেসটিনির অনিশ্চিত ভবিষ্যত জেনেও নানা দাবিতে ফুঁসে উঠে কোম্পানির কয়েক লক্ষাধিক ডিস্ট্রিবিউটররা। এদিকে গেল বছরের বিদায়ী মাসে ডেসটিনি গ্রুপের ৩১ প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। সবশেষ জানা যায়, ডেসটিনি নিয়ে আদালতের রায়ের অপেক্ষা করছে সরকার।
দুদকের তদন্ত অনুসন্ধান ও মামলা
বছরজুড়েই দুদকের ধারাবাহিক অনুসন্ধান ও মামলার কারণে সময়ে-অসময়ে আলোচনার শীর্ষে ছিল ডেসটিনি কেলেঙ্কারি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ধারাবাহিক তদন্ত শুরু করে দুদক। গেল এপ্রিলে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের কর্মকা- তদন্তে বিশেষ অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে কমিশন। এরপর ডেসটিনি গ্রুপের প্রায় ৩০ শীর্ষ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। দীর্ঘদিন অনুসন্ধান শেষে জুনের ২৩ তারিখ ওই কমিটি কমিশনের কাছে রিপোর্ট হস্তান্তর করে। কমিশনের ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে ৩১ জুলাই ৩ হাজার ২৮ কোটি ২৫ লাখ ৮৮ হাজার ৫২৪ টাকা হাস্তান্তরের অভিযোগে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে দুদক রাজধানীর কলাবাগান থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় আসামি করা হয় ডেসটিনি গ্রুপের এমডি রফিকুল আমীন ও গ্রুপের প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদসহ ২২ জন কর্মকর্তাকে। এরপর গত ২ অক্টোবর মুদ্রা পাচারের অভিযোগ এনে গ্রুপের ২২ কর্মকর্তার ৫৩৩টি ব্যাংক এ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দেয় আদালত। গত ১১ অক্টোবর ওই মামলায় তিন আসামি মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালত তা নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। তারপর চার দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। রিমান্ডে অর্থ পাচারের মামলায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন। এদিকে ডেসটিনিতে মুখ্য নির্বাহী প্রধান না থাকায় প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার।
ডেসটিনির ভবিষ্যত
গেল বছরের আর্থিক কেলেঙ্কারির সবচেয়ে বড় ঘটনার জন্ম দেয় ডেসটিনি। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাজার কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সরকারের উচ্চ মহলও বিব্রত ছিল বিষয়টি নিয়ে। ভবিষ্যতে এ কোম্পানিটি কখনও আর প্রতারণা করতে না পারে সেজন্য তদন্ত কমিটির সুপারিশে ডেসটিনি গ্রুপের নিববন্ধন বাতিলের বিষয়টি তুলে ধরা জোরালোভাবে। এরপর গত ডিসেম্বরে গ্রুপের নিবন্ধন নেয়া ৩৭টি কোম্পানির মধ্যে ৩১টি কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল করে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতর (আরজেএসসি)। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো লাভজনক থাকায় নিবন্ধন বাতিল হয়নি। যদিও ডেসটিনির এত বড় কেলেঙ্কারি জেনেও এর ডিস্ট্রিবিউটররা নানা দাবি আদায়ে আন্দোলন করেছেন বছরের অর্ধেক সময়। তারা এখনও আশায় বুক বেঁধে আছেন ডেসটিনি আবার সচল হবে। কিন্তু বাস্তবতা এতটাই কঠিন যে, সবকিছুই এখন নির্ভর করছে আদালতের ওপর। গত ২১ ডিসেম্বর ডেসটিনি সংক্রান্ত সমন্বয় কমিটির প্রথম সভায় এ প্রসঙ্গে জানানো হয়েছে, ডেসটিনির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আদালতের রায়ের অপেক্ষা করছে সরকার। উচ্চ আদালতের রায়ের পরই সরকার করণীয় ঠিক করবে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ীই সবকিছু নির্ধারিত হবে বলে জানানো হয় ওই বৈঠকে।
No comments