ঢাবি শিক্ষকের আইনজীবী স্ত্রীকে হত্যা, বাসা লুট-দুই নিরাপত্তাকর্মী পলাতক
রাজধানীর মিরপুরে গতকাল সোমবার অ্যাডভোকেট রওশন আরা বেগম (৬১) নামের প্রবীণ এক আইনজীবীকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রওশন আরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব-ই-সাত্তারের স্ত্রী। নিজ ফ্ল্যাটের শোবার ঘরে তিনি খুন হন।
হত্যাকাণ্ডের পর খুনিরা স্বর্ণলংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্রও লুট করে নেয়। ঘটনার পর থেকে বাড়ির দুই নিরাপত্তাকর্মী সাইফুল ও রাসেল পলাতক। নিহতের স্বজন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, জিনিসপত্র লুট করতেই রওশন আরাকে হত্যা করা হয়। ঘটনার সঙ্গে বাড়ির পলাতক দুই নিরাপত্তাকর্মী জড়িত বলে ধারণা করছে পুলিশ।মিরপুরের ৬ নম্বর সেকশনের এ ব্লকের ৩ নম্বর সড়কে শেলটেক কম্পানির ছয়তলা টিউলিপ ভবন। এর তৃতীয় তলার নিজস্ব ফ্ল্যাটে (সি/৩) সপরিবারে থাকতেন রওশন আরা। তাঁদের একমাত্র সন্তান ডাক্তার রেজওয়ানা আক্তার মিনা মিরপুরের কিডনি ফাউন্ডেশনের চিকিৎসা কর্মকর্তা। তিনিও মা-বাবার সঙ্গেই থাকেন। নিহত রওশন আরা আগে হাইকোর্টের আইনজীবী ছিলেন। চার বছর হলো তিনি আইন পেশায় বিরতি দেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রওশন আরার ফ্ল্যাটের পাঁচটি কক্ষ তছনছ অবস্থায় আছে। প্রতিটি আলমারির ড্রয়ার ভাঙা। মেঝেতে পড়ে আছে কাপড়-চোপড়। মাহবুব-ই-সাত্তারের ছোট ভাই মাশকুরে সাত্তার কল্লোল এবং প্রতিবেশী আবু জাফর জানান, দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে ষষ্ঠ তলার বাসিন্দা আবু জাফর নিচতলায় গিয়ে দেখেন গেটে কোনো নিরাপত্তাকর্মী নেই। অনেক খুঁজেও নিরাপত্তাকর্মীদের পাননি তিনি। আবু জাফর কার পার্কিংয়ে গাড়ি আছে কি না, তা দেখার পর কোনো বাসা থেকে কিছু খোয়া গেছে কি না খোঁজ নিতে শুরু করেন। তিনি নিচতলা থেকে প্রতিটি ফ্ল্যাটের কলিংবেল টিপে সবাইকে নিরাপত্তাকর্মীদের পালিয়ে যাওয়ার খবরটি জানাতে শুরু করেন। তৃতীয় তলার সি/৩ নম্বর ফ্ল্যাটের কলিংবেল টেপার পর কারো সাড়া পাননি তিনি। কিছুক্ষণ পর জাফর দরজা ধাক্কা দিলে দরজাটি খুলে যায়। বাসায় ঢুকেই তিনি দেখেন ঘরের সব মালামাল তছনছ অবস্থায় পড়ে আছে। আর শোবার ঘরের মেঝেতে পড়ে আছেন বৃদ্ধা রওশন আরা। তাঁর হাত দুটি ওড়না দিয়ে বাঁধা এবং গলায় বিছানার চাদর পেঁচানো। জাফর প্রতিবেশিদের ডেকে আনেন। রওশন আরার লাশের পাশে পড়ে থাকা মোবাইল ফোন থেকে তাঁর স্বামী সাত্তারকে বিষয়টি জানায় প্রতিবেশীরা। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুব-ই-সাত্তার কালের কণ্ঠকে জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মস্থলে যান। এর কিছু সময় পর তাঁদের মেয়ে ডাক্তার মিনাও বের হয়ে পড়েন। আগামী ২৫ জানুয়ারি মিনার বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে। বিয়ের কেনাকাটা করতেই তিনি বাসা থেকে বের হন বলে জানান তাঁর বাবা। সাত্তার জানান, সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী রওশন আরার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন তিনি। ১১টার দিকে সাত্তার আবার মোবাইল ফোনে কল দিলেও রওশন আরা তা ধরেননি। এরপর পৌণে ১২টার দিকে সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব-ই-সাত্তারকে এক প্রতিবেশী খবর দেন তাঁর বাসায় ডাকাতি হয়েছে। বাসায় ফিরে তিনি মেঝেতে স্ত্রীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর জোনের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বাসায় চুরি করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে দুর্বৃত্তরা শ্বাসরোধে রওশন আরাকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘরের জিনিসপত্র তছনছ দেখা গেছে। তবে বাসা থেকে কী পরিমাণ জিনিসপত্র খোয়া গেছে, তা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।' ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ঘটনার সঙ্গে বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীরাই জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত রাতে নিহত রওশন আরার স্বামী মাহবুব-ই-সাত্তার বাদী হয়ে মিরপুর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় দুই আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।
মিরপুর থানার উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, 'ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে মেঝেতে উপুড় করে ফেলে বিছানার চাদর দিয়ে শ্বাসরোধে তাঁকে (রওশন আরা) হত্যা করা হয়েছে। গলা ছাড়া শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।' তিনি জানান, বাড়ির পলাতক দুই নিরাপত্তাকর্মী সাইফুল ও রাসেলের ব্যাপারে শেলটেক কর্তৃপক্ষের কাছে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। তারা ১৫ দিন আগে ওই বাড়িতে যোগদান করে।
এদিকে গতকাল বিকেল পৌণে ৪টার দিকে পুলিশ রওশন আরার লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সেখানে নিহতের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ কয়েকজন শিক্ষক। জানা গেজে, নিহত আইনজীবী রওশন আরার বাড়ি রাজবাড়ী জেলায়।
No comments