মহাজোট সরকার : ভাল-মন্দের ৪ বছর-কৃষির সুদিন কৃষকের নয় by রাজীব আহমেদ
বিরোধীরা বলবে কৃষকের সাফল্য, পক্ষের লোকেরা বলবে সরকারের সাফল্য। আসলে সাফল্য যারই হোক- বাংলাদেশ এখন চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শুধু চাল নয়, অন্যান্য কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ায় বাংলাদেশকে এখন আর আমদানির পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয় না।
খাদ্য কিনতে মানুষকে কাঠফাটা রোদে ন্যায্যমূল্যের দোকানের সামনে দিনভর লাইনে দাঁড়াতে হয় না। চালের জন্য বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় না।
পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য নিজেরা উৎপাদন করতে না পারার যন্ত্রণা কতখানি, তা টের পেয়েছিল বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। টনপ্রতি হাজার ডলার দাম দিয়েও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে খাদ্য কিনতে পারেনি তারা। ভারত পাঁচ লাখ টন চাল দেওয়ার কথা বলে প্রয়োজনের সময় দেয়নি। চালের উচ্চমূল্যের কারণে মোটামুটি আয়ের মানুষকেও লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিল তখনকার বিডিআরের দোকানের সামনে।
শুধু ধান নয়, বর্তমান সরকারের আমলে অন্যান্য ফসলের উৎপাদনও বেড়েছে। দূর হয়েছে সার নিয়ে সংকট। ইউরিয়ার বাইরে অন্যান্য সারের দাম কমিয়ে কৃষকের ইউরিয়ানির্ভরতা কমানো হয়েছে। কৃষিঋণ বিতরণ বেড়েছে। প্রথমবারের মতো ঋণ দেওয়া শুরু হয়েছে বর্গাচাষিদের। লবণসহিষ্ণু, খরাসহিষ্ণু, জলাবদ্ধতাসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ হচ্ছে। কৃষি গবেষণার জন্য তহবিল গঠন করা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকার। কৃষকের ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব হয়েছে। এক কোটি ৪০ লাখ কৃষক পরিবার পেয়েছে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড। পাটের জীবন রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। ক্ষতিকর ছত্রাকের জীবন রহস্যও জানা গেছে। সব মিলিয়ে আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের মতো এ আমলেও সাফল্য দেখিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
এত সাফল্যের পরও কিছু সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। প্রতিবছর কমতে থাকা কৃষিজমি রক্ষায় সরকার উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। ভূমি জোনিং হয়নি। বাড়তি উৎপাদন করে কৃষক তার পণ্যের ভালো দাম পায়নি। কৃষিপণ্যের বীমার সুবিধা বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়নি এখনো।
উৎপাদন বেড়েছে, কমছে আমদানিনির্ভরতা : কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হিসাবে, মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগের বছর ২০০৭-০৮ অর্থবছরে চাল, গম ও ভুট্টা মিলিয়ে বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল প্রায় তিন কোটি ১১ লাখ টন। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা তিন কোটি ৬৮ লাখ ৩৯ হাজার টনে উন্নীত হয়। চাল উৎপাদন দুই কোটি ৮৯ লাখ টন থেকে বেড়ে তিন কোটি ৩৯ লাখ টনে উন্নীত হয়। বাংলাদেশ গম চাষের জন্য তেমন উপযোগী নয়। তাই এর উৎপাদনও তেমন বাড়েনি। তবে আমদানি পণ্য ভুট্টার চাহিদা বাড়ার সঙ্গে উৎপাদনও বেড়েছে।
গমের উৎপাদন ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ছিল আট লাখ ৪৪ হাজার টন। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ লাখ ৯৫ হাজার টনে। আর ভুট্টার উৎপাদন ১৩ লাখ ৪৬ হাজার টন থেকে বেড়ে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার টনে উন্নীত হয়।
পাশাপাশি পেঁয়াজ, রসুন ও আদার চাহিদার বেশির ভাগ পূরণ করছে দেশীয় চাষিরা। তৈলবীজ, গম, সবজি, আলু ইত্যাদি পণ্যের উৎপাদন বেড়েছে। মসলাজাতীয় পণ্য কয়েক বছর আগেও প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানি করা হতো। বর্তমানে ৮০ শতাংশ দেশে উৎপাদন হচ্ছে। আমদানি হচ্ছে ২০ শতাংশের মতো। ডিএইর তথ্য মতে, দেশে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল আট লাখ ৪৯ হাজার টন। ২০১১-১২ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় প্রায় ১৯ লাখ টন। আদা ও রসুনের উৎপাদন বাড়ায় এগুলোর দাম এখন প্রায় বছরজুড়ে মানুষের নাগালের মধ্যে থাকছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে মোট সবজির উৎপাদন হয়েছিল প্রায় এক কোটি ৮৭ হাজার টনের মতো। ২০১১-১২ অর্থবছরে এক কোটি ২৬ লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়েছে বলে ডিএইর তথ্যে দেখা যায়।
তৈলবীজ ও ডালের উৎপাদন আগের চেয়ে কিছুটা বাড়লেও এখনো চাহিদার বড় অংশ আমদানি করতে হচ্ছে। সয়াবিন তেলের চাহিদার ৯০ শতাংশই আমদানি থেকে পূরণ হচ্ছে। তবে সবজির উৎপাদন বাড়ছে। ডিএইর তথ্য মতে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে এক কোটি ৮৬ হাজার টন সবজি উৎপাদন হয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে বাংলাদেশ উৎপাদন করেছে এক কোটি ২৬ লাখ টন সবজি। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল ৬৬ লাখ ৪৮ হাজার টন। ২০১১-১২ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন হয়েছে ৮২ লাখ টন।
সফলতার খতিয়ানই বড় : এ সরকারের আমলে কৃষিতে প্রতিবছর গড়ে ৪.৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সাফল্যের পেছনে কৃষকের চেষ্টার সঙ্গে সরকারের প্রচেষ্টাও ছিল। সরকার এক কোটি ৪০ লাখ কৃষক পরিবারকে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড দিয়েছে। সঙ্গে ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব। তাদের যে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় তা সরাসরি চলে যায় ব্যাংকে। ফলে অনিয়মের সুযোগ থাকে না। কিছু কৃষক বিনা মূল্যে কৃষি উপকরণও পেয়েছে। বিনা-৭ জাতের ধান চাষ করে মঙ্গা দূর করা এ সরকারের অন্যতম সাফল্য।
কয়েকটি বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়েছেন। কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি বীজ সরবরাহ করছে। কৃষিঋণ বিতরণ অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি হবিগঞ্জে চালু করা হয়েছে পাইলট ভিত্তিতে শস্য বীমা স্কিম। লবণসহিষ্ণু বিনা-৮ ও ব্রি-৪৭ ধানের আবাদ শুরু হয়েছে। একই ধরনের আরো কিছু জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। বন্যা এলাকার জন্য ব্রি-৫১ ও ৫২ জাতের ধান উদ্ভাবন করে পরীক্ষামূলক চাষ চলছে। আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছে নোরিকা জাতের খরাসহিষ্ণু ধান। ইউনিয়নগুলোতে চালু করা হয়েছে কৃষি তথ্য যোগাযোগ কেন্দ্র।
কৃষি গবেষণায় গুরুত্ব না পাওয়ার অভিযোগ অনেকখানি দূর হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলমের দল আবিষ্কার করেছে পাটের জীবন রহস্য। এ আবিষ্কারে কৃষিমন্ত্রীর সহায়তা ছিল। এর মাধ্যমে প্রতিকূলতাসহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল পাটের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে। পাটসহ ৫০০ প্রজাতির উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর ছত্রাকের জীবন রহস্যও উদ্ঘাটিত হয়েছে। এর মাধ্যমে ওই সব উদ্ভিদকে ছত্রাক থেকে রক্ষার উপায় বের করা যাবে। 'বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল আইন-২০১২' করা হয়েছে। গবেষণার জন্য করা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল। এত দিনের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলকে আবার গুরুত্ব দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। দক্ষিণাঞ্চলের কৃষির উন্নয়নে নেওয়া হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প।
দুই বিশ্লেষকের মত : কৃষিতে সরকারের সাফল্যই দেখছেন দুই কৃষি বিশ্লেষক ড. আবদুস সাত্তার মণ্ডল ও ডিএইর সাবেক মহাপরিচালক তারিক হাসান। তাঁদের মতে, বর্তমান সরকার যে উদ্যোগগুলো নিয়েছে তা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে কৃষির উৎপাদন আরো বাড়বে। তবে ভূমি কমে যাওয়া, কৃষকের পণ্যের ভালো দাম নিশ্চিত করা, গবেষণায় ব্যয় বাড়ানো এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. আবদুস সাত্তার মণ্ডল কালের কণ্ঠকে বলেন, কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ানো সরকারের বড় সাফল্য। এর পেছনে সরকারের উপকরণ সহায়তা, সার ও সেচসুবিধা দেওয়ার বিষয়টি কাজ করেছে। তবে দিন দিন যে জমি কমে যাচ্ছে, সেদিকে নজর দিতে হবে। শিল্প ও আবাসনে জমি ব্যবহার হবে, তবে একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন।
ডিএইর সাবেক মহাপরিচালক তারিক হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, এক সময় সার নিয়ে মানুষের মধ্যে হৈচৈ হতো। এখন তা নেই। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছিলেন, সার মানুষের পেছনে ছুটবে। মানুষকে ছুটতে হবে না। আসলে এখন তেমনই চলছে। পাশাপাশি ইউরিয়ার বাইরে অন্যান্য সারের দাম কমিয়ে কৃষকের সুষম সার ব্যবহারের পথ সুগম করেছে সরকার। ফলে উৎপাদন বেড়েছে।
পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য নিজেরা উৎপাদন করতে না পারার যন্ত্রণা কতখানি, তা টের পেয়েছিল বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। টনপ্রতি হাজার ডলার দাম দিয়েও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে খাদ্য কিনতে পারেনি তারা। ভারত পাঁচ লাখ টন চাল দেওয়ার কথা বলে প্রয়োজনের সময় দেয়নি। চালের উচ্চমূল্যের কারণে মোটামুটি আয়ের মানুষকেও লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিল তখনকার বিডিআরের দোকানের সামনে।
শুধু ধান নয়, বর্তমান সরকারের আমলে অন্যান্য ফসলের উৎপাদনও বেড়েছে। দূর হয়েছে সার নিয়ে সংকট। ইউরিয়ার বাইরে অন্যান্য সারের দাম কমিয়ে কৃষকের ইউরিয়ানির্ভরতা কমানো হয়েছে। কৃষিঋণ বিতরণ বেড়েছে। প্রথমবারের মতো ঋণ দেওয়া শুরু হয়েছে বর্গাচাষিদের। লবণসহিষ্ণু, খরাসহিষ্ণু, জলাবদ্ধতাসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ হচ্ছে। কৃষি গবেষণার জন্য তহবিল গঠন করা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকার। কৃষকের ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব হয়েছে। এক কোটি ৪০ লাখ কৃষক পরিবার পেয়েছে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড। পাটের জীবন রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। ক্ষতিকর ছত্রাকের জীবন রহস্যও জানা গেছে। সব মিলিয়ে আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের মতো এ আমলেও সাফল্য দেখিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
এত সাফল্যের পরও কিছু সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। প্রতিবছর কমতে থাকা কৃষিজমি রক্ষায় সরকার উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। ভূমি জোনিং হয়নি। বাড়তি উৎপাদন করে কৃষক তার পণ্যের ভালো দাম পায়নি। কৃষিপণ্যের বীমার সুবিধা বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়নি এখনো।
উৎপাদন বেড়েছে, কমছে আমদানিনির্ভরতা : কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হিসাবে, মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগের বছর ২০০৭-০৮ অর্থবছরে চাল, গম ও ভুট্টা মিলিয়ে বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল প্রায় তিন কোটি ১১ লাখ টন। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা তিন কোটি ৬৮ লাখ ৩৯ হাজার টনে উন্নীত হয়। চাল উৎপাদন দুই কোটি ৮৯ লাখ টন থেকে বেড়ে তিন কোটি ৩৯ লাখ টনে উন্নীত হয়। বাংলাদেশ গম চাষের জন্য তেমন উপযোগী নয়। তাই এর উৎপাদনও তেমন বাড়েনি। তবে আমদানি পণ্য ভুট্টার চাহিদা বাড়ার সঙ্গে উৎপাদনও বেড়েছে।
গমের উৎপাদন ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ছিল আট লাখ ৪৪ হাজার টন। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ লাখ ৯৫ হাজার টনে। আর ভুট্টার উৎপাদন ১৩ লাখ ৪৬ হাজার টন থেকে বেড়ে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার টনে উন্নীত হয়।
পাশাপাশি পেঁয়াজ, রসুন ও আদার চাহিদার বেশির ভাগ পূরণ করছে দেশীয় চাষিরা। তৈলবীজ, গম, সবজি, আলু ইত্যাদি পণ্যের উৎপাদন বেড়েছে। মসলাজাতীয় পণ্য কয়েক বছর আগেও প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানি করা হতো। বর্তমানে ৮০ শতাংশ দেশে উৎপাদন হচ্ছে। আমদানি হচ্ছে ২০ শতাংশের মতো। ডিএইর তথ্য মতে, দেশে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল আট লাখ ৪৯ হাজার টন। ২০১১-১২ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় প্রায় ১৯ লাখ টন। আদা ও রসুনের উৎপাদন বাড়ায় এগুলোর দাম এখন প্রায় বছরজুড়ে মানুষের নাগালের মধ্যে থাকছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে মোট সবজির উৎপাদন হয়েছিল প্রায় এক কোটি ৮৭ হাজার টনের মতো। ২০১১-১২ অর্থবছরে এক কোটি ২৬ লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়েছে বলে ডিএইর তথ্যে দেখা যায়।
তৈলবীজ ও ডালের উৎপাদন আগের চেয়ে কিছুটা বাড়লেও এখনো চাহিদার বড় অংশ আমদানি করতে হচ্ছে। সয়াবিন তেলের চাহিদার ৯০ শতাংশই আমদানি থেকে পূরণ হচ্ছে। তবে সবজির উৎপাদন বাড়ছে। ডিএইর তথ্য মতে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে এক কোটি ৮৬ হাজার টন সবজি উৎপাদন হয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে বাংলাদেশ উৎপাদন করেছে এক কোটি ২৬ লাখ টন সবজি। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল ৬৬ লাখ ৪৮ হাজার টন। ২০১১-১২ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন হয়েছে ৮২ লাখ টন।
সফলতার খতিয়ানই বড় : এ সরকারের আমলে কৃষিতে প্রতিবছর গড়ে ৪.৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সাফল্যের পেছনে কৃষকের চেষ্টার সঙ্গে সরকারের প্রচেষ্টাও ছিল। সরকার এক কোটি ৪০ লাখ কৃষক পরিবারকে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড দিয়েছে। সঙ্গে ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব। তাদের যে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় তা সরাসরি চলে যায় ব্যাংকে। ফলে অনিয়মের সুযোগ থাকে না। কিছু কৃষক বিনা মূল্যে কৃষি উপকরণও পেয়েছে। বিনা-৭ জাতের ধান চাষ করে মঙ্গা দূর করা এ সরকারের অন্যতম সাফল্য।
কয়েকটি বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়েছেন। কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি বীজ সরবরাহ করছে। কৃষিঋণ বিতরণ অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি হবিগঞ্জে চালু করা হয়েছে পাইলট ভিত্তিতে শস্য বীমা স্কিম। লবণসহিষ্ণু বিনা-৮ ও ব্রি-৪৭ ধানের আবাদ শুরু হয়েছে। একই ধরনের আরো কিছু জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। বন্যা এলাকার জন্য ব্রি-৫১ ও ৫২ জাতের ধান উদ্ভাবন করে পরীক্ষামূলক চাষ চলছে। আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছে নোরিকা জাতের খরাসহিষ্ণু ধান। ইউনিয়নগুলোতে চালু করা হয়েছে কৃষি তথ্য যোগাযোগ কেন্দ্র।
কৃষি গবেষণায় গুরুত্ব না পাওয়ার অভিযোগ অনেকখানি দূর হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলমের দল আবিষ্কার করেছে পাটের জীবন রহস্য। এ আবিষ্কারে কৃষিমন্ত্রীর সহায়তা ছিল। এর মাধ্যমে প্রতিকূলতাসহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল পাটের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে। পাটসহ ৫০০ প্রজাতির উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর ছত্রাকের জীবন রহস্যও উদ্ঘাটিত হয়েছে। এর মাধ্যমে ওই সব উদ্ভিদকে ছত্রাক থেকে রক্ষার উপায় বের করা যাবে। 'বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল আইন-২০১২' করা হয়েছে। গবেষণার জন্য করা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল। এত দিনের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলকে আবার গুরুত্ব দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। দক্ষিণাঞ্চলের কৃষির উন্নয়নে নেওয়া হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প।
দুই বিশ্লেষকের মত : কৃষিতে সরকারের সাফল্যই দেখছেন দুই কৃষি বিশ্লেষক ড. আবদুস সাত্তার মণ্ডল ও ডিএইর সাবেক মহাপরিচালক তারিক হাসান। তাঁদের মতে, বর্তমান সরকার যে উদ্যোগগুলো নিয়েছে তা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে কৃষির উৎপাদন আরো বাড়বে। তবে ভূমি কমে যাওয়া, কৃষকের পণ্যের ভালো দাম নিশ্চিত করা, গবেষণায় ব্যয় বাড়ানো এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. আবদুস সাত্তার মণ্ডল কালের কণ্ঠকে বলেন, কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ানো সরকারের বড় সাফল্য। এর পেছনে সরকারের উপকরণ সহায়তা, সার ও সেচসুবিধা দেওয়ার বিষয়টি কাজ করেছে। তবে দিন দিন যে জমি কমে যাচ্ছে, সেদিকে নজর দিতে হবে। শিল্প ও আবাসনে জমি ব্যবহার হবে, তবে একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন।
ডিএইর সাবেক মহাপরিচালক তারিক হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, এক সময় সার নিয়ে মানুষের মধ্যে হৈচৈ হতো। এখন তা নেই। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছিলেন, সার মানুষের পেছনে ছুটবে। মানুষকে ছুটতে হবে না। আসলে এখন তেমনই চলছে। পাশাপাশি ইউরিয়ার বাইরে অন্যান্য সারের দাম কমিয়ে কৃষকের সুষম সার ব্যবহারের পথ সুগম করেছে সরকার। ফলে উৎপাদন বেড়েছে।
No comments