ফিরে দেখা ২০১২- অপূর্ব শর্মা
জাতীয় ক্রিকেট দলের বড় এক অর্জনের মধ্য দিয়েই শেষ হলো ২০১২ সাল। বাংলার দামাল ছেলেরা টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অনেকটা হেসেখেলে হারিয়ে জয় করেছে ওয়ানডে সিরিজ। এর ফলে র্যাংকিংয়েও একধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।
শুধু ক্রিকেটেই নয়, সদ্য শেষ হওয়া ২০১২ সালে এমন অনেক ক্ষেত্রেই সাফল্য অর্জন করেছে জাতি। যাতে আমরা হয়েছি সমৃদ্ধ। হয়েছি শাণিত। সমুদ্রজয় তেমনি এক অবিস্মরণীয় সাফল্য। দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে চলে আসা বিরোধ সরকারের যথাযথ উদ্যোগের ফলে নিষ্পত্তি হয়েছে। গত বছরের ১৪ মার্চ সমুদ্র আইনসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের (ইটলস) ঐতিহাসিক এক রায়ের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি এই অভূতপূর্ব সাফল্য। অর্জন করেছি বঙ্গোপসাগরে বিশাল জলসীমা। বর্তমান সরকারের দূরদর্শী এবং সময়োচিত সিদ্ধান্তের কারণেই বাংলাদেশের পক্ষে এই বিজয় লাভ করা সম্ভব হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির দৃষ্টান্ত হিসেবে এই রায় আলোকবর্তিকা হিসেবে আগামীতে যে গণ্য হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই জয় বাংলাদেশকে আগামীর পথে অগ্রসর হতে প্রেরণা হিসেবে কাজ করে যাবে অগণিতকাল। অন্যদিকে, বঙ্গোপসাগরে প্রাপ্ত বিশাল জলসীমা আমাদের অগ্রগতির ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাপ্ত জলসীমায় রয়েছে প্রচুর মৎস্য সম্পদ এবং গ্যাস ও তেলের অফুরন্ত ভা-ার। সেগুলো যথাযথভাবে আহরণ করা সম্ভব হলে দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে।
২০১০ সালে এভারেস্টের চূড়ায় প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন মুসা ইব্রাহিম। কিন্তু গেল বছরের ১৯ মে প্রথম বাঙালী নারী হিসেবে নিশাত মজুমদার লাল-সবুজের পতাকা উড়ান পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গে। সমৃদ্রপৃষ্ঠ থেকে আট হাজার ৮৪৮ মিটার উচ্চতায় আরোহণ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন নিশাত। এর এক সপ্তাহ পর আরেক নারী ওয়াসফিয়া অর্জন করেন একই সাফল্য। এর মাধ্যমে বাংলার নারীরা যে কোন অংশেই পিছিয়ে নেই তা প্রমাণিত হলো আরেকবার।
জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্থাপিত ‘জনগণের ক্ষমতায়ন এবং শান্তিকেন্দ্রিক উন্নয়ন মডেল’ প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার বিষয়টিও আমাদের আরেক অনন্য অর্জন। জাতিসংঘের ৬৭তম অধিবেশনে জাতিসংঘভুক্ত প্রায় সব সদস্য দেশই বাংলাদেশের এ প্রস্তাবে তাদের নৈতিক সমর্থন ব্যক্ত করায় প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৬তম অধিবেশনের প্রথমবাবের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। আগামী বছরের সিএসডির (কমিশন ফর সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট) ৫১তম সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন।
গেল বছর প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসির) সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন বাংলাদেশের আ হ ম মোস্তফা কামাল। ২০১২-১৪ এই দুই বছরের জন্য ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ এ পদে আসীন হলেন তিনি। কলম্বোয় ৯ অক্টোবর আইসিসি’র নির্বাহী কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। নতুন নিয়মে ২০১৪-১৫ সালের জন্য তিনিই হবেন আইসিসির আলঙ্কারিক সভাপতি।
পাটের ক্ষতিক্ষর ছত্রাকের জীবনরহস্য আবিষ্কার গত বছরের অন্যতম সাফল্য। বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে দেশের বিজ্ঞানীরা এই যুগান্তকারী কাজটি সম্পন্ন করেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাটবিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা প্রকল্পের আওতায় মাত্র এক বছরের মাথায় দেশের সূর্যসন্তানেরা এ অভাবনীয় সফলতা অর্জন করেন। ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে বিশাল এই সাফল্যের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। একই দিন বিশ্বের বিজ্ঞানবিষয়ক অন্যতম প্রভাবশালী সাময়িকী বিএমসি জেনোমিকসও ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচনবিষয়ক গবেষণাটি প্রকাশ করে।
বিগত বছরে আরেকটি সাফল্য বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে। সেটি হচ্ছে বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা জানানো। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনী, বিভিন্ন দেশের রাজনীতিক, কূটনীতিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সংগঠনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। বিদেশের হৃদয়বান যে সব মানুষ দুঃসহ সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ২০৪ ব্যক্তি ও দুটি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা জানানো হয় গত বছর। ২৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা ৮৩ জন বিদেশী বন্ধুকে দেয়া হয় ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’। ২০ অক্টোবর একই সম্মাননা জানানো হয় আরও ৬১ জনকে। সর্বশেষ ১৫ ডিসেম্বর ৬০ ব্যক্তি ও ২টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান করা হয়।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে আন্তর্জাতিকভাবে যখন ষড়যন্ত্র চলছে তখন মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা জানানো বিচার প্রক্রিয়ার পক্ষে বিশ্বজনমত তৈরিতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা জানিয়ে বাংলাদেশও সম্মানিত হয়েছে।
গত বছর আর্জেন্টিনার মারডেলপ্লাটা শহরে ১০০টি দেশের ৫৪৮ জন প্রতিযোগী নিয়ে অনুষ্ঠিত ৫৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের ধনঞ্জয় বিশ্বাস প্রথমবারের মতো রৌপ্যপদক অর্জন করেন। গণিতেও বাঙালীরা পিছিয়ে নেই তার এই অর্জন সে কথাই জানান দিয়েছে বিশ্বব্যাপী।
এমন আরো অনেক সাফল্য আছে ২০১২ সালে। বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আয় তন্মধ্যে অন্যতম। কৃষি এবং শিক্ষাক্ষেত্রেও সাফল্যের ধারা অব্যাহত ছিল গত বছর। দেশ এখন খাদ্যে পুরোপুরি স্বয়ং সম্পূর্ণ। চালের মূল্য ছিল সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে।
সাফল্যের পাশাপাশি বছরজুড়ে ব্যর্থতাও কম ছিল না। প্রত্যাশিত অনেক কিছুই অর্জিত হয়নি ২০১২ সালে। এমন অনেক বিষয় ছিল যেগুলোকে নিয়ে জাতি স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু বছরান্তে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর বিষয়টি সবাগ্রে উল্লেখ করার মতো। গত বছরই পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হবে বলে জানানো হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে ঋণ প্রদান থেকে বিরত থাকায় স্বপ্নের এই সেতুর কাজ শুরু হয়নি এখনও। দুর্নীতির সাথে জড়িত আছেন এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। গ্রেফতারও করা হয়েছে অভিযুক্ত একাধিক জনকে। বিশ্বব্যাংককে এই প্রকল্পের সাথে সম্পৃক্ত করতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার ঘোষণা শোনা যায়নি বছর শেষের দিন পর্যন্ত। যা আশাহত করেছে মানুষকে।
হলমার্ক কেলেঙ্কারি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সুনামকে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে গেল বছর। সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে হলমার্ক গ্রুপের নামে বৃহৎ এই আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি সরকারের ভাবমূর্তিকেও করেছে বিনষ্ট। এই কেলেঙ্কারির নায়ক তানভীর মাহমুদসহ হলমার্ক গ্রুপের কয়েক কর্মকর্তাকে দুদকের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তাদেরকে গ্রেফতার করা হলেও আত্মসাতকৃত বিপুল পরিমাণের অর্থ আদৌ উদ্ধার সম্ভব হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। অর্থ উদ্ধারের ব্যাপারে কার্যকর তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
শেয়ারবাজারের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সর্বস্বান্ত হওয়া ৩০ লাখ লোক আশায় বুক বেঁধেছিল, ২০১২ সালে হয়ত ক্ষতিপূরণ পাবে তারা। এ নিয়ে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে তারা। আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল, শেয়ার কেলেঙ্কারির সাথে সম্পৃক্তদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর। কিন্তু রাঘব বোয়ালরা থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সরকারের সমালোচক এবং সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর রেলওয়ের কালো বিড়াল বের করার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। কিন্তু এপিএস-এর গাড়িতে বিপুল পরিমাণের অর্থ পাওয়ার ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েন মন্ত্রী। সরকারের প্রভাবশালী ও ক্লিন ইমেজের মন্ত্রীর এপিএস-এর অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে সরকার। এর এক পর্যায়ে ১৬ এপ্রিল রেলমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন সুরঞ্জিত। তবে, তাঁকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করে রাখা হয়েছে এখনও।
সুরঞ্জিত ইস্যুতে যখন রাজনৈতিক ময়দান সরগরম তখন সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটে। ঢাকা থেকে গাড়ি চালকসহ গত ১৭ এপ্রিল নিখোঁজ হন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী। নিখোঁজের পর থেকেই বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, প্রশাসনের লোকজন তাকে গুম করেছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছে। এ নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করে বিএনপি। ইলিয়াস আলীকে ফিরে পেতে তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেন। প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ চেষ্টার ব্যাপারে আশ্বস্ত করলে ইলিয়াসকে ফিরে পাবার আশায় বুক বাঁধেন তার পরিবারসহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা। কিন্তু ইলিয়াস আলীর সন্ধান পাওয়া যায়নি এখনও।
ইলিয়াস ইস্যুতে যখন উত্তপ্ত রাজপথ তখনই ঘটে সাংবাদিক সাগর-রুনী হত্যাকা-। এই ইস্যুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকা-ের সাথে জড়িতেদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা সম্ভব হয়নি। সাহারা খাতুনের দফতর বদল হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন মহিউদ্দিন খান আলমগীর। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, হত্যাকারীদের গ্রেফতারের কিন্তু বছর শেষ হলেও সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত খুনীদের খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।
২৯ সেপ্টেম্বর ঘটে এক ন্যক্কারজনক ঘটনা। এদিন রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে সভ্যতার শত্রুরা। এতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মহামূল্যবান অনেক জিনিসপত্র ধ্বংস হয়ে যায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও প্রশ্নের মুখে পড়ে। এই ঘটনার সাথে বিভিন্ন মহলের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। কিন্তু রামুর ঘটনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হয়নি আজও।
নবেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বেপরোয়া হয়ে ওঠে শিবির। ৫ ও ৬ নবেম্বর জামায়াতের ছাত্র সংগঠনের ক্যাডাররা সারাদেশে বেপরোয়া তা-ব চালায়। শিবিরের বেপরোয়া ক্যাডাররা পুলিশ, সাংবাদিক ও নিরীহ পথচারীদের ওপর জঙ্গী হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করে। পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে ঐ অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে তাদের আহত করে। শিবিরের বীভৎসতা একাত্তরে আল-বদর, আল-শামসের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে আবার।
এ ধরনের নৃশংসতা চালিয়ে শিবির যখন ধিক্কৃত হচ্ছিল তখনই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কর্তৃক বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ফিল্মী কায়দায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে বিশ্বজিৎকে খুন করে। নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দেয়। এ ঘটনার সাথে জড়িত প্রায় সব আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুধু এই ঘটনাই নয়, বছর জুড়েই সংবাদ শিরোনাম হয়েছে ছাত্রলীগ। সরকার দলের ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের লাগাম টেনে ধরতে পারেননি ক্ষমতাসীনরা। যার ফলে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা বেপরোয়া থেকে দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেছে। আর এ কারণে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি।
সফলতা এবং ব্যর্থতার পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে গত বছর। তার মধ্যে ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে অর্জিত হয়েছে কাক্সিক্ষত সাফল্য। বিগত ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দেশে মোবাইল ফোনে বাংলায় এসএমএস কার্যক্রম চালু করা হয়। এর মাধ্যমে এখন মোবাইল ফোনে সহজেই খুদেবার্তা আদান-প্রদান করা যাচ্ছে। ২৬ মে চালু হয় কর পরিশোধের অনলাইনভিত্তিক নতুন পদ্ধতি ই-পেমেন্ট। ১৩ অক্টোবর দেশে প্রথমবারের মতো চালু হয় রাষ্ট্রীয় মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটককে ত্রিজি প্রযুক্তি। এছাড়াও নানা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সুফল পাচ্ছে জনগণ। পরীক্ষার ফল জানতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর তেমন একটা যেতে হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের। ঘরে বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সহজেই তারা জানতে পারছে ফলাফল।
২০১২ সালে সম্ভাবনারও অনেক দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। যা আমাদের অগ্রগতিতে নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে কয়লা ও চুনাপাথর খনি এবং গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার। জয়পুরহাট জেলার পাচবিবি উপজেলায় সন্ধান পাওয়া গেছে চুনাপাথর খনির। ৩১ মার্চ ভূগর্ভের ১,৪৯৮ ফুট গভীরে এই খনির সন্ধান লাভ করেন অনুসন্ধানকারীরা। খনিটিতে প্রায় ৯৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিপুল পরিমান চুনাপাথর রয়েছে।
একই উপজেলায় আবিস্কৃত হয়েছে নতুন কয়লা খনি। পাঁচবিবি উপজেলার পাঁচ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে আয়মা রসুলপুর ইউনিয়নের আগাইর গ্রামে ঐ কয়লাক্ষেত্রের কেন্দ্রস্থল নিরূপণ করেছে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর। এই কয়লাক্ষেত্রের আয়তন প্রায় ১২ কিলোমিটার।
গত বছর দেশে দুটি নতুন গ্যাসক্ষেত্রে আবিষ্কৃত হয়েছে। এর একটি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল গ্রামে, অন্যটি ধর্মপাশা ও বারহাট্টা উপজেলায়। এছাড়া দেশের বেশ কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের নতুন স্তর পাওয়া গেছে।
২০১২ সালে সরকারের অন্যতম এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল যুদ্ধাপারাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু করা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন এই প্রক্রিয়াকে সাধুবাদ জানিয়েছে। বিচার প্রক্রিয়ার পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা। এই পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত অন্তত একজনের হলেও বিচার কার্য সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি ঘোষিত সময়ের মধ্যে। ইস্যুটি ঝুলে যাচ্ছে- এমন শংসয় যাতে সৃষ্টি না হয় সে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে এলজিআরডি মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নতুন করে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আগামী বিজয় দিবসের পূর্বেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শেষ হবে।’ দেশবাসীও চায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত মানবতাবিরোধীদের বিচার। তবে, এই বিচার প্রক্রিয়া যথাযথ এবং স্বচ্ছতার সাথে যেন হয়, এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
আলবদর-রাজাকার মুক্ত দেশ চাই
ফিরে দেখা ২০১২
সংসদ বর্জনে বিরোধী দলের রেকর্ড গড়ার বছর
আলোচিত লেখক আলোচিত বই
সাহিত্যে দুই দিকপালের বিদায়
ঘরোয়া ক্রীড়াঙ্গন
আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন
বিচারপতির কম্পিউটার ও ই-মেইল হ্যাকিং
আলোচনায় ছিল দুদক
পদ্মা সেতুর ভাগ্য অনির্ধারিতই থাকল
রাজপথ গরমের চেষ্টায় বিএনপি
সংস্কৃতি ও বিনোদন
আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ
ডেসটিনি
হলমার্ক
রেল কেলেঙ্কারি
তাজরিন ফ্যাশন-এ আগুন
শংকর কুমার দে গাফফার খান চৌধুরী
২০১৩ ॥ আসছে থিংটার নেট-এর যুগ
২০১৩ কি অশুভ ?
No comments