মৌমাছি, মৌচাষি ও মধু-বাণিজ্য by শরিফুল হাসান
দিগন্তজুড়ে সরষেখেত। পাশে একটু উঁচু জায়গায় রাখা সারি সারি মৌমাছির বাক্স। ফুলের মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা ফিরছে ওই বাক্সে। কিছুক্ষণ পর পর বাক্সের চাক থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে মধু।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি এলাকার এমন দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। কৃষি কর্মকর্তারা জানালেন, চলনবিলের হাজার হাজার হেক্টর জমির ফুটন্ত সরষে ফুল থেকে মৌচাষিদের মধু সংগ্রহের নীরব বিপ্লব চলছে। প্রতিবছর এভাবে সারা দেশে ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার মধু সংগ্রহ করেন মৌচাষিরা। এর মাধ্যমে শুধু তাঁরাই স্বাবলম্বী হচ্ছেন তা নয়, কৃষকের সরষে উৎপাদনও বাড়ছে।
মহিষলুটি এলাকায় ১০০ মৌবাক্স নিয়ে একটি তাঁবু গেড়েছেন সাতক্ষীরার আবদুল হামিদ। প্রথম আলোকে তিনি জানালেন, কাঠের বাক্সে একটা রানি মৌমাছিসহ ২০০ থেকে ৩০০ মৌমাছি নিয়ে তৈরি হয় একটা মৌবাক্স।
প্রতিদিন সকালে এ বাক্সগুলো ফুটন্ত সরষে ফুলের খেতের পাশে রাখা হয়। মৌমাছিরা মধু এনে রাখে বাক্সের ফ্রেমে। এরপর মাছিমুক্ত করে ঘূর্ণমান ড্রামের সাহায্যে মধু সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি মৌবাক্স থেকে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম মধু সংগ্রহ করা যায়। এভাবে মাস খানেকের মধ্যে অন্তত দুই টন মধু সংগ্রহ করা হয়। আয় হয় তিন থেকে চার লাখ টাকা। তাঁদের কাছ থেকে এই মধু কিনে নেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
হামিদের মতোই সাতক্ষীরা জেলার নাজিমুদ্দিন, মজিবুর, সিরাজুল, গোপালগঞ্জের রেদোয়ান হোসেনসহ আরও অর্ধশত মধু আহরণকারী এসেছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, কয়েক বছর ধরেই সরষের মৌসুমে চলনবিল এলাকায় আসছেন মধু আহরণকারীরা। এবার তাড়াশেই পাঁচ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে সরষের চাষ হয়েছে। এখান থেকে কয়েক কোটি টাকার মধু সংগ্রহ করবেন মৌচাষিরা। এই মধু কিনে নেবে এপি, স্কয়ারসহ দেশের বড় বড় কোম্পানি। আর শুধু আর্থিক বিবেচনায় নয়, এভাবে মধু আহরণের কারণে খেতে আর কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না।
শুধু তাড়াশ নয়, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, রায়গঞ্জ—এই তিন উপজেলায়ও প্রতিবছর অনেক মৌচাষি মধু সংগ্রহের জন্য যান। ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, চলনবিল এলাকা ছাড়াও মানিকগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইলসহ দেশের আরও কয়েকটি এলাকায় সরিষা থেকে মধু সংগ্রহের কাজ চলে।
মৌচাষিরা জানালেন, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ভ্রাম্যমাণ পদ্ধতিতে মধু উৎপাদন করছেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মৌচাষি এবাদুল্লাহ আফজাল। তিনি বাংলাদেশ মৌচাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক। ১৯৯৪ সালে এইচএসসি পাসের পর মৌচাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র ২০টি মৌ পালন বক্স নিয়ে ভ্রাম্যমাণ মৌ খামার শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর খামারে মৌ বক্সের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ টন অর্থাৎ প্রায় অর্ধকোটি টাকার মধু সংগ্রহ করেন তিনি।
এবাদুল্লাহ আফজাল প্রথম আলোকে বলেন, সরষে ফুল ছাড়াও একইভাবে কালোজিরার মধু, ধনিয়ার মধু ও লিচু ফুলের মধু হয়। সরষে থেকে মধু সংগ্রহের পর তাই মৌচাষিরা লিচু ও আমের মৌসুমে রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চলে যাবেন। মৌচাষিদের এই মধু এপি, মডার্ন হারবাল, হামদর্দ, ফেম, প্রশিকাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিনে নেয়। মধুর গুণাগুণও অনেক। তাই বিদেশে এর চাহিদা রয়েছে।
বাংলাদেশ মৌচাষি কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা যায়, দেশে ছয় হাজার মেট্রিক টন মধুর চাহিদা আছে। সারা দেশে সমিতিভুক্ত সদস্য ৫০০। তারা গত বছর সারা দেশ থেকে দুই হাজার টন মধু সংগ্রহ করেছে, যার আনুমানিক মূল্য ২০০ কোটি টাকা।
সমিতির নেতারা কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মৌচাষিরা ব্যাংক থেকে ঋণ পান না। মৌচাষিদের জন্য সরকারি কোনো সহযোগিতা নেই। দেশে মধু প্রক্রিয়াকরণ কারখানা এবং একটি মধু সংরক্ষণাগার দরকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) সাতক্ষীরার উপব্যবস্থাপক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘দেশে এখন ছয় থেকে সাত হাজার টন মধুর চাহিদা রয়েছে। আর উৎপাদিত হচ্ছে তিন হাজার টন। যেসব মৌচাষি এ কাজে আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই সাতক্ষীরার। এ কারণেই সরকার সাতক্ষীরায় আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মৌচাষ উন্নয়ন বিষয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
মহিষলুটি এলাকায় ১০০ মৌবাক্স নিয়ে একটি তাঁবু গেড়েছেন সাতক্ষীরার আবদুল হামিদ। প্রথম আলোকে তিনি জানালেন, কাঠের বাক্সে একটা রানি মৌমাছিসহ ২০০ থেকে ৩০০ মৌমাছি নিয়ে তৈরি হয় একটা মৌবাক্স।
প্রতিদিন সকালে এ বাক্সগুলো ফুটন্ত সরষে ফুলের খেতের পাশে রাখা হয়। মৌমাছিরা মধু এনে রাখে বাক্সের ফ্রেমে। এরপর মাছিমুক্ত করে ঘূর্ণমান ড্রামের সাহায্যে মধু সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি মৌবাক্স থেকে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম মধু সংগ্রহ করা যায়। এভাবে মাস খানেকের মধ্যে অন্তত দুই টন মধু সংগ্রহ করা হয়। আয় হয় তিন থেকে চার লাখ টাকা। তাঁদের কাছ থেকে এই মধু কিনে নেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
হামিদের মতোই সাতক্ষীরা জেলার নাজিমুদ্দিন, মজিবুর, সিরাজুল, গোপালগঞ্জের রেদোয়ান হোসেনসহ আরও অর্ধশত মধু আহরণকারী এসেছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, কয়েক বছর ধরেই সরষের মৌসুমে চলনবিল এলাকায় আসছেন মধু আহরণকারীরা। এবার তাড়াশেই পাঁচ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে সরষের চাষ হয়েছে। এখান থেকে কয়েক কোটি টাকার মধু সংগ্রহ করবেন মৌচাষিরা। এই মধু কিনে নেবে এপি, স্কয়ারসহ দেশের বড় বড় কোম্পানি। আর শুধু আর্থিক বিবেচনায় নয়, এভাবে মধু আহরণের কারণে খেতে আর কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না।
শুধু তাড়াশ নয়, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, রায়গঞ্জ—এই তিন উপজেলায়ও প্রতিবছর অনেক মৌচাষি মধু সংগ্রহের জন্য যান। ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, চলনবিল এলাকা ছাড়াও মানিকগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইলসহ দেশের আরও কয়েকটি এলাকায় সরিষা থেকে মধু সংগ্রহের কাজ চলে।
মৌচাষিরা জানালেন, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ভ্রাম্যমাণ পদ্ধতিতে মধু উৎপাদন করছেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মৌচাষি এবাদুল্লাহ আফজাল। তিনি বাংলাদেশ মৌচাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক। ১৯৯৪ সালে এইচএসসি পাসের পর মৌচাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র ২০টি মৌ পালন বক্স নিয়ে ভ্রাম্যমাণ মৌ খামার শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর খামারে মৌ বক্সের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ টন অর্থাৎ প্রায় অর্ধকোটি টাকার মধু সংগ্রহ করেন তিনি।
এবাদুল্লাহ আফজাল প্রথম আলোকে বলেন, সরষে ফুল ছাড়াও একইভাবে কালোজিরার মধু, ধনিয়ার মধু ও লিচু ফুলের মধু হয়। সরষে থেকে মধু সংগ্রহের পর তাই মৌচাষিরা লিচু ও আমের মৌসুমে রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চলে যাবেন। মৌচাষিদের এই মধু এপি, মডার্ন হারবাল, হামদর্দ, ফেম, প্রশিকাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিনে নেয়। মধুর গুণাগুণও অনেক। তাই বিদেশে এর চাহিদা রয়েছে।
বাংলাদেশ মৌচাষি কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা যায়, দেশে ছয় হাজার মেট্রিক টন মধুর চাহিদা আছে। সারা দেশে সমিতিভুক্ত সদস্য ৫০০। তারা গত বছর সারা দেশ থেকে দুই হাজার টন মধু সংগ্রহ করেছে, যার আনুমানিক মূল্য ২০০ কোটি টাকা।
সমিতির নেতারা কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মৌচাষিরা ব্যাংক থেকে ঋণ পান না। মৌচাষিদের জন্য সরকারি কোনো সহযোগিতা নেই। দেশে মধু প্রক্রিয়াকরণ কারখানা এবং একটি মধু সংরক্ষণাগার দরকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) সাতক্ষীরার উপব্যবস্থাপক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘দেশে এখন ছয় থেকে সাত হাজার টন মধুর চাহিদা রয়েছে। আর উৎপাদিত হচ্ছে তিন হাজার টন। যেসব মৌচাষি এ কাজে আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই সাতক্ষীরার। এ কারণেই সরকার সাতক্ষীরায় আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মৌচাষ উন্নয়ন বিষয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
No comments