আক্রান্ত নারী- ‘আমি বাঁচতে চাই’, আমরা বাঁচতে চাই by কাবেরী গায়েন
‘ট্যাবু’ নয়, ধর্ষণ অপরাধমূলক শব্দ। এ সত্যটিকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করে দিল্লির চলন্ত বাসে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার মেয়েটি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা গেছে শনিবার। মাত্র ২৩ বছর বয়সী মেডিকেলের ছাত্রী ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়েছে।
ধর্ষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শরীরে দুটি বড় অপারেশন, একটি ছোট অপারেশন এবং মস্তিষ্কের অনেক অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়া মেয়েটি শেষ পর্যন্ত বাঁচতে চেয়েছিল, বাঁচার জন্য লড়াই করেছিল। তার এ বাঁচার আকাঙ্ক্ষা এবং শক্ত জবানবন্দি একটি গুণগত পরিবর্তনের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে পৃথিবীর সব ধর্ষিত এবং ধর্ষণভয়ে ভীত মেয়েদের। আর সেই পরিবর্তন হলো, ধর্ষণ শব্দটিকে ট্যাবুমুক্ত করে অপরাধমূলক শব্দে উত্তীর্ণ করা। ধর্ষণের তিন দিন পরে তার পরিবারের সঙ্গে দেখা হওয়ার প্রথম মুহূর্ত থেকেই সে বলে এসেছে, ‘আমি বাঁচতে চাই’।
সবচেয়ে বড় কথা, ধর্ষিত হয়েও সমাজে যে বেঁচে থাকা যায়, সেই সাহসটিকে সে মূর্ত করেছে। তার ধর্ষণকে কেন্দ্র করে তীব্র বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে নয়াদিল্লি, কলকাতা, গৌহাটি, লক্ষ্মৌ, হায়দরাবাদ, কানপুর, বেঙ্গালুরু। হাজার হাজার নারী-পুরুষ জড়ো হয়েছেন এই অপরাধের বিচারের দাবিতে। অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন পুলিশ কনস্টেবল মৃত্যুবরণও করেছেন। সরব হয়েছে রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএনসহ সারা পৃথিবীর গণমাধ্যম। সরকার বনাম অ্যাক্টিভিস্টদের মুখোমুখি সংঘর্ষের ছবি আর সংবাদ সচকিত করেছে বিশ্ববাসীকে।
২. বিভিন্ন দেশের সরকারি সূত্র থেকে জড়ো করা তথ্য থেকে জাতিসংঘের পরিসংখ্যান রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিবছর আড়াই লাখের বেশি ধর্ষণ কেসের উল্লেখ করেছে ৬৫টি দেশের পুলিশ। বলাই বাহুল্য, এ সংখ্যা প্রকৃত ধর্ষণসংখ্যার চেয়ে অনেক কম। দক্ষিণ আফ্রিকায় পুলিশের হিসাবে ধর্ষণের সংখ্যা পাঁচ লাখ। ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে এ সংখ্যা দাবানলের মতো বেড়েছে। সন্দেহ নেই, ধর্ষণ প্রশ্নে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। দেশে দেশে ধর্ষণের শিকার মেয়েদের কী পরিণতি হয়, তার কোনো সম্পূর্ণ রিপোর্ট বুঝি পাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের দেশে ইয়াসমীনকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হলে এ দেশের মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। পুলিশ প্রথমে বলেছিল, ইয়াসমীন ‘পতিতা’। থানার নিরাপদ হেফাজতে ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন সীমা। তাঁকেও ‘পতিতা’ বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। যেন কেউ যৌনকর্মী হলেই তাকে ধর্ষণ এবং হত্যা করা জায়েজ। অথচ বাংলাদেশে রাষ্ট্রের একটি বৈধ, স্বীকৃত, রেজিস্টার্ড পেশা এটি। আমাদের দেশে তথাকথিত ‘চরিত্রহীন’ তকমা জোটার ভয়ে সিমি, রিমি, তৃষাসহ অসংখ্য মেয়েকে আত্মহত্যা করতে দেখেছি আমরা। আর ধর্ষিতকেই গ্রাম্য সালিসে দোররা মারা হলে ১৪ বছরের মেয়েকে দেখেছি আত্মহত্যা করতে।
৩. প্রশ্ন হচ্ছে, দিল্লির এই মেডিকেল-ছাত্রীর মৃত্যুকে কীভাবে পাঠ করব আমরা? ভারতের অ্যাক্টিভিস্টদের কথা থেকে বারবার যে উদ্বেগটি উঠে এসেছে এ কয় দিনের আন্দোলনে, তা হলো মেয়েদের চলাচল অবাধ ও নিরাপদ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তাই অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচার করার পাশাপাশি সরকারকে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, নারীদের চলাচলকে কীভাবে নিরাপদ করা হবে। স্বাভাবিক, নিরাপদ চলাচলের স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার। কোনো রাষ্ট্র বা সরকার সেই অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারে না। দ্বিতীয় যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, সেটি হলো সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রতিজ্ঞা। ধর্ষিত হলেই মৃত্যু বা নীরবতা নয়। ভারতের গণমাধ্যমে নতুন ডিসকোর্স তীব্র হয়ে উঠেছে, ধর্ষণ কোনোভাবেই নারীর জন্য ‘ট্যাবু’ বিষয় নয়, আর এটি অপরাধ নারীর বিরুদ্ধে, মানবতার বিরুদ্ধে, তাই ধর্ষিত নারীদের সময় এসেছে নিজের বেদনার ঘটনাটি বলে হাজার বছরের পুরোনো এই অপরাধটিকে নির্মূল করার ব্যাপারে সাহায্য করার। বিতর্ক চলছে, ধর্ষিত নারীর নাম-পরিচয় আলোর সামনে নারীরাই নিয়ে আসবে কি না। যে অপরাধে সে দায়ী নয়, সেই অপরাধীদের আড়াল করতে সে কেন নিজেকে লুকিয়ে রাখবে? এটি হতে হয়তো সময় লাগবে, কিন্তু এ ভাবনাটি আলোচনায় আসা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৪. এখনো দেশে দেশে যুদ্ধে ধর্ষণকে যুদ্ধ-উপকরণ হিসেবে ব্যবহূত হতে দেখা যায়। যেমন দেখা গেছে চীন ও কোরিয়ার নারীদের ওপর জাপানি সেনাদের অত্যাচার। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের নারীদের ওপর পাকিস্তানি সেনা এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের অত্যাচার। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ট্যাবুর কারণে এসব নারী হয় আত্মহত্যা করেছেন, নয়তো অদৃশ্য হয়ে গেছেন সমাজে মিশে যাওয়ার তাড়নায়। আজ যখন যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে, তখন একাত্তরের নির্যাতিত নারীরা হতে পারতেন সবচেয়ে বড় জীবন্ত সাক্ষ্য। কিন্তু নারীর এই আত্মদানকে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণ হিসেবে মূল্যায়ন না করে তাঁর ‘সম্ভ্রমহানি’র সমান করে দেখা হয়েছে, সেও এই সামাজিক ট্যাবুর কারণেই তো। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর সাক্ষাৎকার সেই জমাটবাঁধা বরফে প্রথম আঘাত এনেছিল। আস্তে আস্তে আরও অনেক নারীই এগিয়ে আসছেন। তাঁদের এই আত্মদানকে যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণের সমার্থক করে তোলা যায়, তবে ধর্ষণ নামের অপরাধকে ঢেকে রাখার প্রয়োজন হবে না নারীকে বরং ধর্ষক অভিযুক্ত হবে, এ দেশের মেয়েদের ধর্ষণ-ট্যাবু থেকে মুক্ত করতে সেটি হতে পারে খুবই বড় পদক্ষেপ। অত্যাচারিতের নাম-পরিচয় নিয়ে সবার মুখোমুখি হতে পারার গুরুত্ব তাই অপরিসীম।
৫. আমার সময়ের, আমার আগে-পরের খুব কম নারীই বলতে পারবেন যে জীবনের কোনো না কোনো সময়ে তাঁরা ধর্ষণের ভীতি ছাড়াই তাঁদের জীবন পার করেছেন। ২৩ বছরের মেয়েটি একটি নতুন অধ্যায়ে উত্তীর্ণ করেছে আমাদের সবার জীবনকে। আমার প্রজন্ম কেটে গেছে এই ভয়ে, সন্ধ্যার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসার উদ্বেগে। আমার পরবর্তী প্রজন্ম, যার মধ্যে রয়েছে আমার পাঁচ বছরের ছোট ভ্রাতুষ্পুত্রী, কিংবা আমাদের অনেকের তিন বছর বা তিন মাসের বা পাঁচ দিনের ছোট মেয়ে, তাদের জীবন যেন নিরাপদ হয়, তারই একটি আন্দোলনের জন্মদানকারী হিসেবে এ ঘটনাকে পাঠ করা জরুরি। দৃশ্যপট পাল্টাচ্ছে। আমার চোখ ভেসে যাচ্ছে এ তরুণ প্রাণের অসহ্য যন্ত্রণাময় মৃত্যুতে, তবু বুক ভরে উঠছে নতুন আশায়। কেবল মৃত্যুতেই থামে না জীবন। ধর্ষণভয়ে কোনো না কোনোভাবে ভীত পৃথিবীর সব নারীর একজন হিসেবে এ সাহসী লড়াকু মেয়েটিকে ফের অভিবাদন।
ড. কাবেরী গায়েন: শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সবচেয়ে বড় কথা, ধর্ষিত হয়েও সমাজে যে বেঁচে থাকা যায়, সেই সাহসটিকে সে মূর্ত করেছে। তার ধর্ষণকে কেন্দ্র করে তীব্র বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে নয়াদিল্লি, কলকাতা, গৌহাটি, লক্ষ্মৌ, হায়দরাবাদ, কানপুর, বেঙ্গালুরু। হাজার হাজার নারী-পুরুষ জড়ো হয়েছেন এই অপরাধের বিচারের দাবিতে। অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন পুলিশ কনস্টেবল মৃত্যুবরণও করেছেন। সরব হয়েছে রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএনসহ সারা পৃথিবীর গণমাধ্যম। সরকার বনাম অ্যাক্টিভিস্টদের মুখোমুখি সংঘর্ষের ছবি আর সংবাদ সচকিত করেছে বিশ্ববাসীকে।
২. বিভিন্ন দেশের সরকারি সূত্র থেকে জড়ো করা তথ্য থেকে জাতিসংঘের পরিসংখ্যান রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিবছর আড়াই লাখের বেশি ধর্ষণ কেসের উল্লেখ করেছে ৬৫টি দেশের পুলিশ। বলাই বাহুল্য, এ সংখ্যা প্রকৃত ধর্ষণসংখ্যার চেয়ে অনেক কম। দক্ষিণ আফ্রিকায় পুলিশের হিসাবে ধর্ষণের সংখ্যা পাঁচ লাখ। ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে এ সংখ্যা দাবানলের মতো বেড়েছে। সন্দেহ নেই, ধর্ষণ প্রশ্নে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। দেশে দেশে ধর্ষণের শিকার মেয়েদের কী পরিণতি হয়, তার কোনো সম্পূর্ণ রিপোর্ট বুঝি পাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের দেশে ইয়াসমীনকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হলে এ দেশের মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। পুলিশ প্রথমে বলেছিল, ইয়াসমীন ‘পতিতা’। থানার নিরাপদ হেফাজতে ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন সীমা। তাঁকেও ‘পতিতা’ বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। যেন কেউ যৌনকর্মী হলেই তাকে ধর্ষণ এবং হত্যা করা জায়েজ। অথচ বাংলাদেশে রাষ্ট্রের একটি বৈধ, স্বীকৃত, রেজিস্টার্ড পেশা এটি। আমাদের দেশে তথাকথিত ‘চরিত্রহীন’ তকমা জোটার ভয়ে সিমি, রিমি, তৃষাসহ অসংখ্য মেয়েকে আত্মহত্যা করতে দেখেছি আমরা। আর ধর্ষিতকেই গ্রাম্য সালিসে দোররা মারা হলে ১৪ বছরের মেয়েকে দেখেছি আত্মহত্যা করতে।
৩. প্রশ্ন হচ্ছে, দিল্লির এই মেডিকেল-ছাত্রীর মৃত্যুকে কীভাবে পাঠ করব আমরা? ভারতের অ্যাক্টিভিস্টদের কথা থেকে বারবার যে উদ্বেগটি উঠে এসেছে এ কয় দিনের আন্দোলনে, তা হলো মেয়েদের চলাচল অবাধ ও নিরাপদ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তাই অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচার করার পাশাপাশি সরকারকে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, নারীদের চলাচলকে কীভাবে নিরাপদ করা হবে। স্বাভাবিক, নিরাপদ চলাচলের স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার। কোনো রাষ্ট্র বা সরকার সেই অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারে না। দ্বিতীয় যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, সেটি হলো সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রতিজ্ঞা। ধর্ষিত হলেই মৃত্যু বা নীরবতা নয়। ভারতের গণমাধ্যমে নতুন ডিসকোর্স তীব্র হয়ে উঠেছে, ধর্ষণ কোনোভাবেই নারীর জন্য ‘ট্যাবু’ বিষয় নয়, আর এটি অপরাধ নারীর বিরুদ্ধে, মানবতার বিরুদ্ধে, তাই ধর্ষিত নারীদের সময় এসেছে নিজের বেদনার ঘটনাটি বলে হাজার বছরের পুরোনো এই অপরাধটিকে নির্মূল করার ব্যাপারে সাহায্য করার। বিতর্ক চলছে, ধর্ষিত নারীর নাম-পরিচয় আলোর সামনে নারীরাই নিয়ে আসবে কি না। যে অপরাধে সে দায়ী নয়, সেই অপরাধীদের আড়াল করতে সে কেন নিজেকে লুকিয়ে রাখবে? এটি হতে হয়তো সময় লাগবে, কিন্তু এ ভাবনাটি আলোচনায় আসা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৪. এখনো দেশে দেশে যুদ্ধে ধর্ষণকে যুদ্ধ-উপকরণ হিসেবে ব্যবহূত হতে দেখা যায়। যেমন দেখা গেছে চীন ও কোরিয়ার নারীদের ওপর জাপানি সেনাদের অত্যাচার। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের নারীদের ওপর পাকিস্তানি সেনা এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের অত্যাচার। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ট্যাবুর কারণে এসব নারী হয় আত্মহত্যা করেছেন, নয়তো অদৃশ্য হয়ে গেছেন সমাজে মিশে যাওয়ার তাড়নায়। আজ যখন যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে, তখন একাত্তরের নির্যাতিত নারীরা হতে পারতেন সবচেয়ে বড় জীবন্ত সাক্ষ্য। কিন্তু নারীর এই আত্মদানকে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণ হিসেবে মূল্যায়ন না করে তাঁর ‘সম্ভ্রমহানি’র সমান করে দেখা হয়েছে, সেও এই সামাজিক ট্যাবুর কারণেই তো। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর সাক্ষাৎকার সেই জমাটবাঁধা বরফে প্রথম আঘাত এনেছিল। আস্তে আস্তে আরও অনেক নারীই এগিয়ে আসছেন। তাঁদের এই আত্মদানকে যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণের সমার্থক করে তোলা যায়, তবে ধর্ষণ নামের অপরাধকে ঢেকে রাখার প্রয়োজন হবে না নারীকে বরং ধর্ষক অভিযুক্ত হবে, এ দেশের মেয়েদের ধর্ষণ-ট্যাবু থেকে মুক্ত করতে সেটি হতে পারে খুবই বড় পদক্ষেপ। অত্যাচারিতের নাম-পরিচয় নিয়ে সবার মুখোমুখি হতে পারার গুরুত্ব তাই অপরিসীম।
৫. আমার সময়ের, আমার আগে-পরের খুব কম নারীই বলতে পারবেন যে জীবনের কোনো না কোনো সময়ে তাঁরা ধর্ষণের ভীতি ছাড়াই তাঁদের জীবন পার করেছেন। ২৩ বছরের মেয়েটি একটি নতুন অধ্যায়ে উত্তীর্ণ করেছে আমাদের সবার জীবনকে। আমার প্রজন্ম কেটে গেছে এই ভয়ে, সন্ধ্যার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসার উদ্বেগে। আমার পরবর্তী প্রজন্ম, যার মধ্যে রয়েছে আমার পাঁচ বছরের ছোট ভ্রাতুষ্পুত্রী, কিংবা আমাদের অনেকের তিন বছর বা তিন মাসের বা পাঁচ দিনের ছোট মেয়ে, তাদের জীবন যেন নিরাপদ হয়, তারই একটি আন্দোলনের জন্মদানকারী হিসেবে এ ঘটনাকে পাঠ করা জরুরি। দৃশ্যপট পাল্টাচ্ছে। আমার চোখ ভেসে যাচ্ছে এ তরুণ প্রাণের অসহ্য যন্ত্রণাময় মৃত্যুতে, তবু বুক ভরে উঠছে নতুন আশায়। কেবল মৃত্যুতেই থামে না জীবন। ধর্ষণভয়ে কোনো না কোনোভাবে ভীত পৃথিবীর সব নারীর একজন হিসেবে এ সাহসী লড়াকু মেয়েটিকে ফের অভিবাদন।
ড. কাবেরী গায়েন: শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments