পানি কমছে বিল জলাশয়ে শাপলা বাড়ায় না শোভা, শালুক মেলা ভার - হারিয়ে যাচ্ছে জলাভূমির শাপলা শালুক
পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার কারণে গ্রামবাংলার নদী-খাল-বিল-ডোবা দিনে দিনে পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। ফলে গাইবান্ধার জলাভূমির শাপলা শালুক হারিয়ে যাচ্ছে।
অথচ ইতোপূর্বে শীত মৌসুমের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে বসন্তকালের ফাল্গুন-চৈত্র মাস অবধি জলাভূমিতে ফুটত প্রচুর শাপলা ফুল। আর অল্প পানিতে ফোটা শাপলা ফুলের গোড়াতেই কাদা মাটিতে এ সময় জন্মাত ছোট ছোট কালো শালুক ফল। জলাভূমিতে ফোটা সাদা, লাল এবং নীলচে রঙের পাপড়ি মেলা শাপলা ফুলগুলো এক দিকে যেমন শোভাবর্ধন করে গ্রামীণ প্রকৃতিকে বিমোহিত করত। অন্যদিকে তেমনি এ সময়ে শাপলা ফুলের ডাঁটাগুলো থেকে সুস্বাদু সবজি হিসেবেও খাদ্যের যোগান পেত পল্লী গাঁয়ের মানুষ। শুধু শাপলার ডাঁটাই নয় এর গোড়ার শালুক ফলও খাদ্য হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়। এর পুষ্টিমানও যথেষ্ট বেশি। এই শালুক ফল যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সে কথা প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের গল্প কথাতেও উল্লেখ রয়েছে। এমনকি ১৩৭৬ সালের মন্বন্তরের সেই কষ্টের সময়টিতে মানুষ ভাতের চালের অভাবে এই শালুক ফল পুড়িয়ে খেয়েও যে জীবন বাঁচিয়েছে তা ছিল সর্বজনবিদিত।অতীতে পল্লী অঞ্চলের সর্বত্র যে কোন বিল-জলাশয়েই সহজলভ্য ছিল শাপলা আর শালুক। এ ছাড়া শাপলা ফুটে ঝরে যাওয়ার পর পানিতেই গোলাকার যে সবুজ বীজের গোটা ফলটি থাকে তাও খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয়। এই সবুজ গোটাগুলোর মধ্যে থাকে সরষের মতো ছোট ছোট লাল-কালো গোলাকার দানা। যা পরিপুষ্ট হওয়ার পর এতদঞ্চলের মানুষ কাঁচা গোটাগুলো ভেঙ্গে খায়। এ ছাড়া এগুলো তুলে শুকিয়ে মাটির হাঁড়িতে বা লোহার কড়াইয়ে বালু গরম করে তাতে মুড়ির মতোও ভেজে খায়। গরম বালুতে ভাজলে ছোট দানাগুলো ফুটে সাদা সাদা খই বের হয়। একে এতদঞ্চলের লোকজন বলে ‘ভ্যাটের খই’ যা বেশ সুস্বাদু। এ থেকে গুড় মিশিয়ে মোয়াও বানানো হয়।
তবে শালুক হয় শাপলা ফুলের গাছের গোড়ায়। ফুল ঝরে গিয়ে বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার পর কাদার নিচ থেকে সংগৃহীত হয় গ্রামবাংলার আদি এবং জনপ্রিয় খাবার শালুক। গাঁয়ের লোকজন শাপলার ডাঁটা ধরে ধরে মাটি কাদার নিচ থেকে পানিফল আকৃতির কালো শালুক খুঁজে খুঁজে সংগ্রহ করে। পরে এগুলো রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে অথবা সিদ্ধ করে ছাল ছিলে ভেতরের সাদা উপাদানগুলো খায়। এ ছাড়া এ থেকে ভাল এবং সুস্বাদু ডালও রান্না করে খেত গাঁয়ের মানুষ।
এ সবই এখন অতীত। আগে গ্রামগঞ্জে দু’পা হাঁটলেই যেখানে বিল-ঝিলে শাপলা শালুকের দেখা মিলত। এখন শাপলা ফুল দেখতে চাইলে পল্লী গ্রামই খুঁজে বেড়াতে হবে। কেননা, অসময়ে খাল-বিল, নদী-নালা শুকিয়ে যায়। অনেক বড় বড় বিল-জলাশয়ে এখন ফসলের চাষ হচ্ছে। ফলে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের শাপলা শালুক এখন বিলুপ্তির পথে।
No comments