অহিংস আন্দোলনের নেতা by রুদ্র মাসুদ

পিতৃদত্ত নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। 'অহিংসা'র মাধ্যমে সহিংসতা মোকাবেলার মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী স্মরণীয় হয়ে আছেন 'মহাত্মা গান্ধী' নামে। আজ এই মহান ব্যক্তির ৬৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ৬৫ বছর পেরিয়েছে মহাত্মা গান্ধীর প্রয়াণের।
গান্ধীর জীবনদর্শনের ওপর ভিত্তি করে এবং তা ধারণ করে কিছু মানুষ এগিয়ে নিয়ে গেছেন তার অসমাপ্ত কাজকে। নোয়াখালীর নিভৃত পল্লীর জয়াগ গ্রামে থেকে শান্তির জন্য, মানবতার জন্য এবং মানুষের অধিকার আদায়ে নিরলস কাজ করার জন্য গান্ধীর প্রয়াণ দিবসের ঠিক পাঁচ দিন আগে ভারত সরকার সেদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার 'পদ্মশ্রী' পদকে ভূষিত করেছে গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সচিব ঝর্ণাধারা চৌধুরীকে।
সামাজিক অস্থিরতা ও অবক্ষয়কে দূর করতে মহাত্মা গান্ধী শান্তিপূর্ণ, অহিংস ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়তে সাতটি সামাজিক পাপ_ নীতিহীন রাজনীতি, চরিত্রহীন শিক্ষা, মানবতাহীন বিজ্ঞান, নৈতিকতাহীন বাণিজ্য, শ্রমহীন সম্পদ, বিবেকবর্জিত আনন্দ এবং ত্যাগহীন অর্চনা পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন গান্ধীজি, যেটি আজকের সমাজের সবচেয়ে কঠিন বাস্তবতা।
১৯৪৬ সালের ১০ থেকে ২৩ অক্টোবর তখনকার বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে এ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। ভ্রাতৃঘাতী সেই দাঙ্গা নিরসনে ১৯৪৬ সালের ৭ নভেম্বর রেলযোগে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে নামেন গান্ধীজি। তিনি ৭৭ বছর বয়সে অসুস্থ শরীর নিয়ে গ্রামে গ্রামে হেঁটে শোনান শান্তির অভয় বাণী। এক পর্যায়ে ১৯৪৭ সালের ২৯ জানুয়ারি বর্তমান সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ গ্রামে পেঁৗছেন গান্ধী। জয়াগে অবস্থানকালেই বিহারের দাঙ্গার খবরে বিচলিত হয়ে সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্তে নোয়াখালী ত্যাগ করেন গান্ধীজি।
গান্ধীকর্মীরা সেই সাতটি সামাজিক পাপ মোচনের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জনগণের মাঝে সচেতনতা তৈরি করছেন গত ৫ বছর ধরে।
গান্ধীজি রাতারাতি মহাত্মা হয়ে ওঠেননি। কর্মের মাধ্যমে হয়ে উঠেছিলেন 'মহাত্মা গান্ধী'। অহিংস সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা, মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি, সংঘাত এড়ানো এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করা, চরকা শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে খাদি বস্ত্রের ব্যবহার বাড়ানো, দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো, কৃষি ও শিক্ষার বিকাশ প্রভৃতি ছিল গান্ধীর ধ্যান-জ্ঞান।
জনকল্যাণে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মহাত্মা গান্ধী পৃথিবীর নানা দেশে ঘুরলেও কোথাও তাকে জীবন দিতে হয়নি। লাঞ্ছিত হলেও দমে যাননি। কিন্তু নিজ দেশেই তাকে প্রাণ দিতে হয় দৃর্বৃত্তের হাতে। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি দিলি্লর এক প্রার্থনা সভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে নাথুরাম গডসের হিংসার অনলে প্রাণ বিসর্জন দেন মহাত্মা গান্ধী।
আমাদের পাপের ঊধর্ে্ব উঠে গান্ধীর মতোই কাজ করতে হবে। সামাজিক শান্তি, পারিবারিক শান্তি, দেশের শান্তির জন্যই মহাত্মা গান্ধীর দর্শনকে ধারণ করতে হবে। আমরা ভালোকে ভালো বলব, মন্দকে পরিহার করব। তবেই জগতে শান্তি আসবে। এ জন্য সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে মন পরিবর্তন করা।
editor@chalomannoakhali.com

No comments

Powered by Blogger.