বাংলাদেশ-ভারত- সৌহার্দ্যপূর্ণ সীমান্তই সুসম্পর্কের ভিত্তি
সোমবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে স্বাক্ষরিত চুক্তি দুটি বন্ধুপ্রতিম দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
ভারত ভ্রমণেচ্ছু সাধারণ নাগরিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর ভিসাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে যেসব জটিলতা নিয়ে অসন্তোষ ছিল সংশোধিত ভ্রমণ ব্যবস্থা (রিভাইজন ট্রাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট_ আরটিএ) সংক্রান্ত চুক্তির মধ্য দিয়ে তা অনেকখানি দূর হবে আশা করা যায়। বিশেষ করে সাংবাদিক ও গবেষকদের পক্ষ থেকে ভারতীয় ভিসার শর্ত শিথিলে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানো হচ্ছিল। ঢাকা ও নয়াদিলি্লর মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিটিও দীর্ঘ প্রত্যাশিত। চুক্তি স্বাক্ষরের পর যৌথ বিবৃতিতে দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন যে, এতে করে দুই দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দমনে সুবিধা হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিবেচনায় এ ধরনের পদক্ষেপ আরও আগেই নেওয়া যেত বলে আমরা মনে করি। আমাদের প্রত্যাশা, অতীতের অনাকাঙ্ক্ষিত সময় পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার এই সময়ে সামনের দিকেই দৃষ্টি রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে দুই দেশের সীমান্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। আমরা দেখেছি, দুই দেশের সাধারণ মানুষের বন্ধুত্বের আকাঙ্ক্ষা বারবারই সীমান্তে বিএসএফের গুলির মুখে রক্তাক্ত হয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, সাংস্কৃতিক বিনিময়, সীমান্ত হাট স্থাপনসহ নানা ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে; ছিটমহল বিনিময় ও অপদখলীয় ভূমি নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; কিন্তু সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডে এসব ইতিবাচক উদ্যোগ ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ও উদ্যোগ ছিল না, তা বলা যাবে না। আমাদের মনে আছে, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকে বিএসএফ প্রধান সীমান্ত হত্যার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোর জন্য দুঃখও প্রকাশ করেছিলেন। তারও আগে বাংলাদেশ সফরে এসে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে অপ্রাণঘাতী অস্ত্র দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বাস্তবে তারপরও হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়নি। এবারের সফরেও দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধে অনানুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আমরা দেখতে চাই বাস্তবায়ন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে তা কঠিন হবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি। বড় কথা, সীমান্ত অস্থির রেখে আর যা-ই হোক সত্যিকার সুসম্পর্ক স্থাপিত হতে পারে না। এই সত্য ভারতীয় নীতিনির্ধারকরাও নিশ্চয়ই বোঝেন।
No comments