বিশ্বব্যাংকের অর্থে পদ্মা সেতু তৈরির সম্ভাবনা ক্ষীণ by শওকত হোসেন
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। পুরো বিষয়টি এখন নির্ভর করছে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করা নিয়ে। মামলা হলে বাংলাদেশ অর্থ পাবে, না হলে পাবে না।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ দলের চিঠির জবাব দিয়েছে। চিঠিতে সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা হয়নি। এর ফলে নাটকীয় কিছু না হলে পদ্মা সেতু দাতাদের অর্থে হচ্ছে না বলেই সরকারি ও দাতা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে।
দুদক ও বিশ্বব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এই দুই সংস্থার মধ্যে সব ধরনের চিঠি চালাচালি শেষ। দুদকের জবাব পেয়ে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ দল মতামত পাঠাবে বিশ্বব্যাংকের কাছে। তারপর আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবে বিশ্বব্যাংক।
এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে পদ্মা সেতুর সুরাহা না হওয়ায় সরকারও হতাশ হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একধরনের আস্থার সংকটও তৈরি হয়েছে। সরকারের একটি অংশ এখনো মনে করে, দাতা সংস্থাটি একের পর এক শর্ত দিয়েই যাবে, কিন্তু অর্থ দেবে না। সরকারের ওই অংশটির আরও ধারণা, মার্কিন প্রশাসনে রদবদল না হলে পদ্মা সেতুতে অর্থ আসবে না।
আবার সরকারের ওই অংশটি মনে করছে, বিশ্বব্যাংক এখন সম্মতি দিলেও সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে। তাতে বর্তমান সরকারের বাকি সময়ে কাজ শুরু করা যাবে না। সরকারের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, এ নিয়েও দাতা সংস্থাটির সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা বলা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ধারণা দিয়েছে যে, চার মাসের মধ্যে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
সেপ্টেম্বরের সমঝোতা: গত ২৯ জুন ঋণচুক্তি বাতিল করেছিল বিশ্বব্যাংক। এরপর সেপ্টেম্বরে শর্ত সাপেক্ষে নতুন করে ফিরে আসে বিশ্বব্যাংক। ফিরে আসার আগে বাংলাদেশের সঙ্গে কয়েকটি ক্ষেত্রে সমঝোতা হয়েছিল। বাংলাদেশ কথা দিয়েছিল, দুর্নীতির বিষয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে একটি তদন্ত করা হবে এবং একটি নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ দল তা পর্যবেক্ষণ করবে। এই দলে কে থাকবে, তা নিয়ে বৈঠকও হয়। প্রথমে কথা হয়েছিল, বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংক কিছু নাম দেবে, সেখান থেকে বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা হবে। কিন্তু সে সময় বাংলাদেশ থেকে কোনো নাম দেওয়া হয়নি, বরং পুরো বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছিল, তদন্তে যার নামই আসবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পরই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান আইনজীবী লুই মোরেনো ওকাম্পোকে প্রধান করে বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা হয়। সেই সমঝোতা এখন মানছে না বাংলাদেশ।
দুদক তদন্ত করলেও সেটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি বলে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ দল ইতিমধ্যে বলে দিয়েছে। মূল সমস্যাটি তৈরি হয়েছে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীকে নিয়ে। দুদক সূত্রে জানা গেছে, এ নিয়েও একধরনের টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে। এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগমন্ত্রীর যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী। তাঁকেও এজাহারভুক্ত করেনি দুদক। তাঁর বিষয়ে বিশেষজ্ঞ দল খানিকটা নমনীয়। তাঁর বিষয়ে দুদককে বলা হয়েছে, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শুধু দেখা করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। এ ক্ষমতা আছে মন্ত্রীর। এ কারণেই সাবেক প্রতিমন্ত্রীকে বাদ দিলে বিশ্বব্যাংকের আপত্তি থাকবে না। আবার সরকারের একটি অংশের ধারণা, আন্তর্জাতিক যোগাযোগের কারণে সাবেক প্রতিমন্ত্রীকে বাদ দেওয়ার কথা বলছে বিশ্বব্যাংক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রাশিয়া সফর শেষে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে কারও নাম উল্লেখ না করে বিশ্বব্যাংকের এ অবস্থানের সমালোচনা করেছেন।
বিশ্বব্যাংকের দেওয়া দুর্নীতির তথ্য নিয়েও একধরনের টানাপোড়েন চলছে। গত ১৩ নভেম্বর বিশ্বব্যাংক দুদককে বেশ কিছু প্রমাণ দেয়। তবে দুদক সূত্র বলছে, বিশ্বব্যাংকের শর্ত হচ্ছে, এসব প্রমাণ আদালতের কাছে উপস্থাপন করা যাবে না। সরকারের একটি পক্ষ মনে করে, এসব তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা না গেলে মামলা আদালতে টিকবে না। এতে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে।
তবে এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছে, যেসব প্রমাণ দুদককে দেওয়া হয়েছে, তাতে বেশ কিছু ই-মেইল বার্তা ছাড়াও কয়েকজন ব্যক্তির সাক্ষ্য রয়েছে। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্যই এসব সাক্ষ্য ব্যবহার না করার শর্ত দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। তবে দুদক চিঠি দিয়ে সেসব সাক্ষ্য ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে।
আবুল হোসেনকে নিয়ে টানাপোড়েন: সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে এ সময় বাদ পড়েন সৈয়দ আবুল হোসেন। শুধু বাদ দেওয়াই নয়, তাঁর নির্বাচনী এলাকা থেকে আবদুস সোবহানকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেওয়া হয়েছে। এ কারণে আগামী নির্বাচনে সৈয়দ আবুল হোসেনের মনোনয়ন পাওয়াও অনিশ্চিত। এই দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে সরকারের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করেছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আবুল হোসেনকে মামলায় না রাখার বিষয়ে কোনো চেষ্টা নেই, বরং দল তাঁকে এখন দায় মনে করছে।
সূত্র জানায়, তদন্ত শেষ করার পর কাদের বিরুদ্ধে এজাহার দেওয়া হবে, এ ব্যাপারে একাধিক আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েছে দুদক। এর মধ্যে দুজন আইনজীবী আবুল হাসান চৌধুরীকে এজাহারে না রাখার জন্য সুপারিশ করেছেন। আর সৈয়দ আবুল হোসেনকে এজাহারভুক্ত না করতে অব্যাহতভাবে কাজ করছেন আরেকজন আইনজীবী।
এদিকে দুদকও নির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। কমিশন কখনোই আবুল হোসেনকে নিয়ে একমত হতে পারেনি। দুদক সূত্র জানায়, সংস্থাটির একজন কমিশনার প্রথম থেকেই আবুল হোসেনকে বাদ দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করে আসছিলেন। এর সঙ্গে পরে যুক্ত হন একজন আইনজীবী। দুদক চেয়ারম্যানও কোনো শক্ত অবস্থান নিতে পারেননি।
দুদক সূত্র আরও জানায়, সৈয়দ আবুল হোসেনকে রক্ষায় এজাহারে অনেক কিছুই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে একটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে বিশেষজ্ঞ দলের চিঠিতে। যেমন, এজাহারে গণখাতে ক্রয় আইনের কোনোই উল্লেখ করা হয়নি। অথচ পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগসহ সব ধরনের পণ্য বা সেবা কেনার প্রক্রিয়া চলেছে গণখাতে ক্রয় আইন অনুযায়ী। এ আইনে মন্ত্রী ও সচিবের দায়দায়িত্ব স্পষ্ট করে বলা আছে।
এ নিয়ে একাধিক সাবেক সচিবের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মন্ত্রীর সরাসরি অনুমোদন ছাড়া কোনো কেনাকাটাই করা হয় না, করা যায়ও না। তা আইনে যা-ই থাকুক না কেন। আর কেনাকাটার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে হলেও মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবকেই সাধারণত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এ নিয়ে এজাহারে কোনো কিছুই উল্লেখ করেনি দুদক। এ থেকে বিশ্বব্যাংক মনে করছে, মন্ত্রীকে রক্ষায় দুদক ইচ্ছাকৃতভাবে বিষয়টি এড়িয়ে গেছে।
জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘ঘটনায় কে সংশ্লিষ্ট, সেটা দেখতে হবে। সেখানে একজনও হতে পারেন, দুজনও হতে পারেন, তিনজনও হতে পারেন। যিনি অপরাধী, তাঁকেই ধরতে হবে।’
সব মিলিয়ে পুরো পদ্মা সেতু এখন নির্ভর হয়ে আছে মাত্র একজন ব্যক্তি অর্থাৎ সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীকে নিয়ে সরকার বা দুদক কী সিদ্ধান্ত নেয় তার ওপর। এ ব্যাপারে দুদক এখনো আগের সিদ্ধান্তে অনড়। তা সত্ত্বেও শেষ চেষ্টা হিসেবে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে ওয়াশিংটনে যাবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এটাই এখন শেষ ভরসা বলে মনে করছে সরকারি সূত্রগুলো।
দুদক ও বিশ্বব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এই দুই সংস্থার মধ্যে সব ধরনের চিঠি চালাচালি শেষ। দুদকের জবাব পেয়ে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ দল মতামত পাঠাবে বিশ্বব্যাংকের কাছে। তারপর আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবে বিশ্বব্যাংক।
এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে পদ্মা সেতুর সুরাহা না হওয়ায় সরকারও হতাশ হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একধরনের আস্থার সংকটও তৈরি হয়েছে। সরকারের একটি অংশ এখনো মনে করে, দাতা সংস্থাটি একের পর এক শর্ত দিয়েই যাবে, কিন্তু অর্থ দেবে না। সরকারের ওই অংশটির আরও ধারণা, মার্কিন প্রশাসনে রদবদল না হলে পদ্মা সেতুতে অর্থ আসবে না।
আবার সরকারের ওই অংশটি মনে করছে, বিশ্বব্যাংক এখন সম্মতি দিলেও সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে। তাতে বর্তমান সরকারের বাকি সময়ে কাজ শুরু করা যাবে না। সরকারের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, এ নিয়েও দাতা সংস্থাটির সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা বলা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ধারণা দিয়েছে যে, চার মাসের মধ্যে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
সেপ্টেম্বরের সমঝোতা: গত ২৯ জুন ঋণচুক্তি বাতিল করেছিল বিশ্বব্যাংক। এরপর সেপ্টেম্বরে শর্ত সাপেক্ষে নতুন করে ফিরে আসে বিশ্বব্যাংক। ফিরে আসার আগে বাংলাদেশের সঙ্গে কয়েকটি ক্ষেত্রে সমঝোতা হয়েছিল। বাংলাদেশ কথা দিয়েছিল, দুর্নীতির বিষয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে একটি তদন্ত করা হবে এবং একটি নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ দল তা পর্যবেক্ষণ করবে। এই দলে কে থাকবে, তা নিয়ে বৈঠকও হয়। প্রথমে কথা হয়েছিল, বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংক কিছু নাম দেবে, সেখান থেকে বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা হবে। কিন্তু সে সময় বাংলাদেশ থেকে কোনো নাম দেওয়া হয়নি, বরং পুরো বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছিল, তদন্তে যার নামই আসবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পরই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান আইনজীবী লুই মোরেনো ওকাম্পোকে প্রধান করে বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা হয়। সেই সমঝোতা এখন মানছে না বাংলাদেশ।
দুদক তদন্ত করলেও সেটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি বলে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ দল ইতিমধ্যে বলে দিয়েছে। মূল সমস্যাটি তৈরি হয়েছে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীকে নিয়ে। দুদক সূত্রে জানা গেছে, এ নিয়েও একধরনের টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে। এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগমন্ত্রীর যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী। তাঁকেও এজাহারভুক্ত করেনি দুদক। তাঁর বিষয়ে বিশেষজ্ঞ দল খানিকটা নমনীয়। তাঁর বিষয়ে দুদককে বলা হয়েছে, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শুধু দেখা করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। এ ক্ষমতা আছে মন্ত্রীর। এ কারণেই সাবেক প্রতিমন্ত্রীকে বাদ দিলে বিশ্বব্যাংকের আপত্তি থাকবে না। আবার সরকারের একটি অংশের ধারণা, আন্তর্জাতিক যোগাযোগের কারণে সাবেক প্রতিমন্ত্রীকে বাদ দেওয়ার কথা বলছে বিশ্বব্যাংক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রাশিয়া সফর শেষে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে কারও নাম উল্লেখ না করে বিশ্বব্যাংকের এ অবস্থানের সমালোচনা করেছেন।
বিশ্বব্যাংকের দেওয়া দুর্নীতির তথ্য নিয়েও একধরনের টানাপোড়েন চলছে। গত ১৩ নভেম্বর বিশ্বব্যাংক দুদককে বেশ কিছু প্রমাণ দেয়। তবে দুদক সূত্র বলছে, বিশ্বব্যাংকের শর্ত হচ্ছে, এসব প্রমাণ আদালতের কাছে উপস্থাপন করা যাবে না। সরকারের একটি পক্ষ মনে করে, এসব তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা না গেলে মামলা আদালতে টিকবে না। এতে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে।
তবে এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছে, যেসব প্রমাণ দুদককে দেওয়া হয়েছে, তাতে বেশ কিছু ই-মেইল বার্তা ছাড়াও কয়েকজন ব্যক্তির সাক্ষ্য রয়েছে। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্যই এসব সাক্ষ্য ব্যবহার না করার শর্ত দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। তবে দুদক চিঠি দিয়ে সেসব সাক্ষ্য ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে।
আবুল হোসেনকে নিয়ে টানাপোড়েন: সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে এ সময় বাদ পড়েন সৈয়দ আবুল হোসেন। শুধু বাদ দেওয়াই নয়, তাঁর নির্বাচনী এলাকা থেকে আবদুস সোবহানকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেওয়া হয়েছে। এ কারণে আগামী নির্বাচনে সৈয়দ আবুল হোসেনের মনোনয়ন পাওয়াও অনিশ্চিত। এই দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে সরকারের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করেছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আবুল হোসেনকে মামলায় না রাখার বিষয়ে কোনো চেষ্টা নেই, বরং দল তাঁকে এখন দায় মনে করছে।
সূত্র জানায়, তদন্ত শেষ করার পর কাদের বিরুদ্ধে এজাহার দেওয়া হবে, এ ব্যাপারে একাধিক আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েছে দুদক। এর মধ্যে দুজন আইনজীবী আবুল হাসান চৌধুরীকে এজাহারে না রাখার জন্য সুপারিশ করেছেন। আর সৈয়দ আবুল হোসেনকে এজাহারভুক্ত না করতে অব্যাহতভাবে কাজ করছেন আরেকজন আইনজীবী।
এদিকে দুদকও নির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। কমিশন কখনোই আবুল হোসেনকে নিয়ে একমত হতে পারেনি। দুদক সূত্র জানায়, সংস্থাটির একজন কমিশনার প্রথম থেকেই আবুল হোসেনকে বাদ দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করে আসছিলেন। এর সঙ্গে পরে যুক্ত হন একজন আইনজীবী। দুদক চেয়ারম্যানও কোনো শক্ত অবস্থান নিতে পারেননি।
দুদক সূত্র আরও জানায়, সৈয়দ আবুল হোসেনকে রক্ষায় এজাহারে অনেক কিছুই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে একটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে বিশেষজ্ঞ দলের চিঠিতে। যেমন, এজাহারে গণখাতে ক্রয় আইনের কোনোই উল্লেখ করা হয়নি। অথচ পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগসহ সব ধরনের পণ্য বা সেবা কেনার প্রক্রিয়া চলেছে গণখাতে ক্রয় আইন অনুযায়ী। এ আইনে মন্ত্রী ও সচিবের দায়দায়িত্ব স্পষ্ট করে বলা আছে।
এ নিয়ে একাধিক সাবেক সচিবের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মন্ত্রীর সরাসরি অনুমোদন ছাড়া কোনো কেনাকাটাই করা হয় না, করা যায়ও না। তা আইনে যা-ই থাকুক না কেন। আর কেনাকাটার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে হলেও মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবকেই সাধারণত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এ নিয়ে এজাহারে কোনো কিছুই উল্লেখ করেনি দুদক। এ থেকে বিশ্বব্যাংক মনে করছে, মন্ত্রীকে রক্ষায় দুদক ইচ্ছাকৃতভাবে বিষয়টি এড়িয়ে গেছে।
জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘ঘটনায় কে সংশ্লিষ্ট, সেটা দেখতে হবে। সেখানে একজনও হতে পারেন, দুজনও হতে পারেন, তিনজনও হতে পারেন। যিনি অপরাধী, তাঁকেই ধরতে হবে।’
সব মিলিয়ে পুরো পদ্মা সেতু এখন নির্ভর হয়ে আছে মাত্র একজন ব্যক্তি অর্থাৎ সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীকে নিয়ে সরকার বা দুদক কী সিদ্ধান্ত নেয় তার ওপর। এ ব্যাপারে দুদক এখনো আগের সিদ্ধান্তে অনড়। তা সত্ত্বেও শেষ চেষ্টা হিসেবে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে ওয়াশিংটনে যাবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এটাই এখন শেষ ভরসা বলে মনে করছে সরকারি সূত্রগুলো।
No comments