স্মরণ-জহির রায়হান by আহমেদ রিয়াজ
১৯৬৯ সাল। মুক্তি পায় দেশের মানুষের জীবন, সংগ্রাম ও স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে চলচ্চিত্র 'জীবন থেকে নেয়া'। এর আগে আর কোনো ছবিতে পাকিস্তানিদের সঙ্গে বাঙালিদের দ্বন্দ্ব এভাবে আসেনি। আর এ ছবিতেই দেখানো হয় শোষকের বিরুদ্ধে শোষিত বাঙালির বিজয়, যদিও পুরো বিষয়টি এসেছে রূপক আকারে।
এমন ছবি কয়জন বানাতে পারেন? ছবিটা প্রদর্শনের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি হলো। শুরু হলো আন্দোলন এবং আন্দোলন করেই প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনে বাধ্য করা হলো সরকারকে। মুক্তিযুদ্ধের আগেই যেন ছবিটি জানিয়ে দিল, ওই যে মুক্তিযুদ্ধ আসছে। যুদ্ধে আমাদের জিততেই হবে। ছবির নির্মাতাকে কমবেশি আমরা চিনি। আজ তাঁর শহীদ হওয়ার দিন। তিনি জহির রায়হান। জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট নোয়াখালীর ফেনী মহকুমার মজুপুর গ্রামে। বাবা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ। মা সৈয়দা সুফিয়া খাতুন। ছেলেবেলায় তাঁর ডাক নাম ছিল 'জাফর'। পুরো নাম আবু আবদার মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ। বাবা কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করলেও ছিলেন মুক্তচিন্তার মানুষ। বাবার মুক্তচিন্তা আর মুক্তবুদ্ধি চর্চার ফলে পরিবারটি সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার অনুকূল পরিবেশ পায়। ১৯৪৭ সালে দেশে ফিরে আসে পুরো পরিবার।
জহির রায়হানরা ছিলেন আট ভাইবোন। তিনি তৃতীয়। সবার বড় শহীদুল্লাহ কায়সার। লেখাপড়া শুরু কলকাতা মডেল স্কুলে। এরপর মিত্র ইনস্টিটিউশন হয়ে কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসা। দেশভাগের পর দেশে ফিরে গ্রামের আমিরাবাদ স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলে পড়ার সময়ই ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ছাত্রজীবন থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি টান ছিল তাঁর। ১৯৫২ সালে কারাভোগের পর কলকাতার প্রমথেশ বড়ুয়া মেমোরিয়াল ফটোগ্রাফিক স্কুলে চলচ্চিত্র বিষয়ে ১০ মাসের কোর্সে ভর্তি হন। টাকার অভাবে শেষ না করেই ছয় মাস পর ফিরে আসেন। জহির রায়হান ছিলেন কাহিনীকার, চিত্রনাট্য রচয়িতা, পরিচালক, চিত্রগ্রাহক ও প্রযোজক। দেশের প্রথম ইংরেজি ছবি 'লেট দেয়ার বি লাইট', পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি 'সঙ্গম' ও প্রথম সিনেস্কোপ ছবি 'বাহানা'র নির্মাতা তিনি।
১৯৫৩ অথবা ১৯৫৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন তিনি। তখন মণি সিংহের দেওয়া রাজনৈতিক নাম 'রায়হান' যুক্ত করেন নিজের নামের সঙ্গে। হয়ে যান জহির রায়হান। লেখালেখির শুরু স্কুলজীবন থেকেই। 'শেষ বিকেলের মেয়ে', 'বরফগলা নদী'সহ বেশি কিছু উপন্যাস লিখেছেন। ছোটগল্পও বাদ যায়নি। পত্রিকা সম্পাদনাও করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় চলে যান কলকাতায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচার নিয়ে তৈরি করেন প্রামাণ্যচিত্র 'স্টপ জেনোসাইড' ও 'বার্থ অব আ নেশন'। অদৃষ্টের পরিহাস- গণহত্যা বন্ধ করার জন্য স্টপ জেনোসাইড বানিয়ে যিনি দেশ-বিদেশে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন, তাঁকেই গণহত্যার স্বীকার হতে হলো। বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে সার্চ পার্টির সঙ্গে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মিরপুরের অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় যান তিনি। তারপর নিজেই নিখোঁজ হয়ে যান। ২৮ বছর ধরে দেশের মানুষ সেটাই জানত। ১৯৯৯ সালে প্রমাণ পাওয়া যায়, আটকে পড়া বিহারি ও ছদ্মবেশী পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতেই মিরপুরে শহীদ হন তিনি।
আহমেদ রিয়াজ
জহির রায়হানরা ছিলেন আট ভাইবোন। তিনি তৃতীয়। সবার বড় শহীদুল্লাহ কায়সার। লেখাপড়া শুরু কলকাতা মডেল স্কুলে। এরপর মিত্র ইনস্টিটিউশন হয়ে কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসা। দেশভাগের পর দেশে ফিরে গ্রামের আমিরাবাদ স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলে পড়ার সময়ই ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ছাত্রজীবন থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি টান ছিল তাঁর। ১৯৫২ সালে কারাভোগের পর কলকাতার প্রমথেশ বড়ুয়া মেমোরিয়াল ফটোগ্রাফিক স্কুলে চলচ্চিত্র বিষয়ে ১০ মাসের কোর্সে ভর্তি হন। টাকার অভাবে শেষ না করেই ছয় মাস পর ফিরে আসেন। জহির রায়হান ছিলেন কাহিনীকার, চিত্রনাট্য রচয়িতা, পরিচালক, চিত্রগ্রাহক ও প্রযোজক। দেশের প্রথম ইংরেজি ছবি 'লেট দেয়ার বি লাইট', পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি 'সঙ্গম' ও প্রথম সিনেস্কোপ ছবি 'বাহানা'র নির্মাতা তিনি।
১৯৫৩ অথবা ১৯৫৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন তিনি। তখন মণি সিংহের দেওয়া রাজনৈতিক নাম 'রায়হান' যুক্ত করেন নিজের নামের সঙ্গে। হয়ে যান জহির রায়হান। লেখালেখির শুরু স্কুলজীবন থেকেই। 'শেষ বিকেলের মেয়ে', 'বরফগলা নদী'সহ বেশি কিছু উপন্যাস লিখেছেন। ছোটগল্পও বাদ যায়নি। পত্রিকা সম্পাদনাও করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় চলে যান কলকাতায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচার নিয়ে তৈরি করেন প্রামাণ্যচিত্র 'স্টপ জেনোসাইড' ও 'বার্থ অব আ নেশন'। অদৃষ্টের পরিহাস- গণহত্যা বন্ধ করার জন্য স্টপ জেনোসাইড বানিয়ে যিনি দেশ-বিদেশে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন, তাঁকেই গণহত্যার স্বীকার হতে হলো। বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে সার্চ পার্টির সঙ্গে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মিরপুরের অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় যান তিনি। তারপর নিজেই নিখোঁজ হয়ে যান। ২৮ বছর ধরে দেশের মানুষ সেটাই জানত। ১৯৯৯ সালে প্রমাণ পাওয়া যায়, আটকে পড়া বিহারি ও ছদ্মবেশী পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতেই মিরপুরে শহীদ হন তিনি।
আহমেদ রিয়াজ
No comments