বিআইডব্লিউটিসির ৪টি প্যাডেল জাহাজই চলছে ঝুঁকি নিয়ে by খালিদ সাইফুল্লাহ
রাজধানীর সাথে দেশের দণিাঞ্চলের নৌ যোগাযোগ রাকারী বিআইডব্লিউটিসির চারটি প্যাডেল জাহাজই চলছে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে।
অবিলম্বে এসব নৌযান পরিপূর্ণ মেরামতসহ যাত্রীসুবিধা নিশ্চিত না করলে আগামী
তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সবই বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা
জানিয়েছেন ওয়াকিবহাল মহল। এর মধ্যে ‘পিএস মাহসুদ’ জাহাজটির অবস্থা এতটাই
খারাপ যে, সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর তার সার্ভে সার্টিফিকেট পর্যন্ত নবায়ন
করেনি। তবে সে অবস্থাতেই মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে মেঘনা
পাড়ি দিয়ে নৌযানটি যাত্রী পরিবহন করছে। সংস্থাটির কারিগরি পরিদফতর ও
ব্যবস্থাপনা কর্তৃপ আজ পর্যন্ত তার যাত্রীবাহী নৌযানসহ পুরো নৌবহরের মেরামত
ও রণাবেণে সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনাভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
ফলে বর্ষা মওসুমসহ দু’টি ঈদে ভিড়ের সময় নির্ভরযোগ্য নৌযানের অভাবে
ভয়াবহ সঙ্কটে পড়বে যাত্রীরা। পরিস্থিতি উত্তরণে শুধু ফাইল চলাচালি আর
মিটিংয়ের পর মিটিং হয়। কিন্তু তার বাস্তব সুফল পান না সাধারণ যাত্রীরা।
ব্রিটিশ আমল থেকে তৎকালীন পূর্ববাংলার রাজধানী ঢাকা ও পাশের ব্যবসায়কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জের সাথে দণিাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র বরিশাল ছাড়াও খুলনার সাথে নিরাপদ নৌযোগাযোগ রার দায়িত্ব পালন করে আসছিল ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ার আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান-‘আইজিএন’ ও ‘আরএসএন’ কোম্পানি। সে সময়ে বাষ্পীয় প্যাডেল চালিত নৌযানগুলোর সাহায্যে নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠি-খুলনা রুটে ‘রকেট স্টিমার সার্ভিস’ ও ঢাকা থেকে চাঁদপুরসহ আরো অনেক ঘাট ধরে বরিশাল পর্যন্ত আরো একটি ‘মেইল স্টিমার সার্ভিস’ পরিচালিত হতো। এ দু’টি সার্ভিসেই একাধিক বাষ্পীয় প্যাডেল জাহাজ চললেও তার পুরো ইন্ধন শক্তি ছিল কয়লানির্ভর। দেশ বিভাগের পরে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অন্তত ৩০টি প্যাডেল হুইল জাহাজসহ আরো একাধিক পণ্য ও জ্বালানিবাহী নৌযান নিয়ে গঠিত হয় ‘পাকিস্তান রিভার স্টিমার্স’ নামের অপর একটি আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান।
দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের অধ্যাদেশ বলে পরিত্যক্ত আরো কয়েকটি নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত হয় ‘বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি)। কিন্তু সরকারি স্বশাসিত এ সংস্থাটির কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা শুরু থেকেই ‘চলাচল অযোগ্য’ বলে শুধু নৌযানগুলো বিক্রির খেলা শুরু করে। হাতেগোনা কয়েকটি প্যাডেল জাহাজকে কয়লার পরিবর্তে ফার্নেস অয়েলে রূপান্তর করা হয়। তবে স্বাধীনতার পরে আজ পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য কোনো নতুন নৌযান সংগ্রহ করা হয়নি। যদিও বর্তমান সরকারের আমলে দু’টি নতুন যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহের ল্েয ইতোমধ্যে একটি বেসরকারি নৌ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হয়েছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে এসব নৌযান যাত্রী পরিবহনে আসার কথা রয়েছে।
তবে ১৯৭৯ থেকে ’৮২ সালের মধ্যে ‘পিএস মাহসুদ, পিএস অস্ট্রিচ ও পিএস লেপচা’ জাহাজ তিনটিতে নতুন ইঞ্জিন সংযোজনসহ পরিপূর্ণ পুনর্বাসন করা হলেও ত্র“টিপূর্ণ হাইড্রোলিক গিয়ার সংযোজনের ফলে মাত্র তিন হাজার ঘণ্টা চলার পরেই একে একে ওই সব নৌযানই বিকল হয়ে পড়ে। পরে ১৯৯৫-৯৬ সালে নৌযান তিনটিতে মেকানিক্যাল গিয়ার সংযোজন করে তা পুনরায় যাত্রী পরিবহনে দেয়া হয়। ২০০২সালে ‘পিএস টার্ন’ জাহাজটিতেও নতুন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়।
কিন্তু এসব নৌযানে সংযোজিত বেলজিয়ামের নতুন ইঞ্জিনগুলো অত্যন্ত নির্ভরতার সাথে চললেও সময়োচিত মেরামত ও রণাবেণের অভাবে প্রতিটি নৌযানেরই প্যাডেলগুলোতে ত্র“টি লেগেই থাকছে। এমনকি ১৯৯৬ সালের পরে এসব নৌযানের উপরিকাঠামোরও কোনো পরিপূর্ণ মেরামত দূরের কথা সুষ্ঠু ও নিয়মিত রণাবেণ পর্যন্ত হচ্ছে না। ফলে প্রতিটি নৌযানের যাত্রীসেবার মান এখন সর্বকালের নাজুক পর্যায়ে। উপরন্তু প্রতিটি নৌযানই গিয়ারে কম-বেশি ত্র“টি নিয়ে চলছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে। অথচ এসব নৌযানের চলতি মেরামত ও রণাবেণের নামে সংস্থাটির ঢাকা ঘাটে প্রতি মাসে বিপুল অর্থ ব্যয় দেখান হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রীসেবা ও কারিগরি বিভাগের দায়িত্বশীলরা নৌযানগুলোর পেছনে অর্থব্যয় দেখাতে যতটা আগ্রহী, বাস্তবে তার বিনিময়ে কাজ করার বিষয়টি ততটা তদারকি করেন না। ফলে জনগণের অর্থব্যয় হলেও যাত্রীসুবিধা নিশ্চিত হচ্ছে না।
বর্তমানে ঢাকা-চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-মোড়েলগঞ্জ রুটের জন্য যে চারটি প্যাডেল জাহাজ রয়েছে তার সবই চলছে জোড়াতালি দিয়ে। এর মধ্যে ‘পিএস মাহসুদ’ জাহাজটির বার্ষিক মেরামতকাজ ২০১১-এর অক্টোবরে করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সে কাজ শুরু করা হয় গত বছরের মে মাসে। তরিঘরি করে নৌযানটির তলা মেরামত করে বিগত ঈদুল ফিতরের আগে তা যাত্রী পরিবহনে নিয়ে আসা হয়। কথা ছিল ঈদের পর পরই আবার ডক ইয়ার্ডে নিয়ে নৌযানটির ডেক ও উপরিকাঠামোসহ পূর্ণাঙ্গ মেরামত সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু এর পরে ঈদুল আজহা গিয়ে ২০১২ সালও শেষ হয়ে গেছে। তার পূর্ণাঙ্গ মেরামতকাজটি আর হয়নি। ইতোমধ্যে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর থেকে পিএস মাহসুদ-এর সার্ভে সনদ পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। নৌযানটির গিয়ারের পাশাপাশি এর উপরিকাঠামোর অবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অপর দিকে ‘পিএস লেপচা’ জাহাজটি গত মাসে ‘গাবখান চ্যানেল’-এ এক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণভবে চলাচল করছে। নৌযানটি গাবখান চ্যানেল অতিক্রমের সময় বিপরীত দিক থেকে প্রবেশকারী একটি বেসরকারি পণ্যবাহী জাহাজ পিএস লেপচার ওপর আছড়ে পড়ে। ফলে লেপচার মারাত্মক তি হয়। অথচ মেরামত না করেই নৌযানটি যাত্রী পরিবহন করছে। কর্তৃপরে মতে এ ব্যাপারে মেরিন কোর্টে মামলা করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা সরেজমিনে নৌযানটি পরিদর্শন না করায় এর মেরামত শুরু করা যাচ্ছে না।
এ ছাড়াও প্রতিটি নৌযানের যাত্রীসেবার মান গত কয়েক বছর ধরে সর্বকালের নিম্ন পর্যায়ে। সাধারণ যাত্রীদের মতে, ‘বিআইডব্লিউটিসি’র নৌযানগুলোতে নিরাপদ ও সাচ্ছন্দ্য ভ্রমণে যে নির্ভরতা ছিল তা ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয়েছে। এর যাত্রীসেবার মান এখন সর্বকালের তলানিতে ঠেকেছে। ডেক শ্রেণী থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিটি েেত্রই নানা অনিয়ম-অব্যবস্থা বিদ্যমান থাকলেও তা থেকে উত্তরণের কোনো উদ্যোগ সংস্থাটির বাণিজ্য পরিদফতর ও যাত্রীসেবা ইউনিটের নেই।’
তবে এ সব কিছুর চেয়েও প্রতিটি নৌযানরেই মূল ইঞ্জিন ও গিয়ার থেকে শুরু করে উপরিকাঠামো ও যাত্রীসেবার বিষয়গুলো নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। উপরন্তু বিআইডব্লিউটিসিতে কারিগরি পরিদফতরের কোনো পরিচালক না থাকায় এর মেরামত ও রণাবেণ কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার উপক্রম। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব প্রকৌশলী জ্ঞান রঞ্জন শীলকে সংস্থাটির পরিচালক-কারিগরি পদে নিয়োগ দেয়া হলেও মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র না মেলায় তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে পারছেন না বলে জানা গেছে।
নৌযানগুলো মেরামতের ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসির প্রধান প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, এমএস প্লেটের অভাবে এতদিন পিএস মাহসুদ-এর মেরামত শুরু করা যায়নি। তবে সে সমস্যার সমাধান হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে মাহসুদ মেরামত শুরুর ল্েয ডকইয়ার্ডে নেয়া হবে বলে জানিয়ে পর্যায়ক্রমে অন্য সব প্যাডেল জাহাজের মেরামতকাজও সম্পন্ন করা হবে বলে তিনি জানান।
ব্রিটিশ আমল থেকে তৎকালীন পূর্ববাংলার রাজধানী ঢাকা ও পাশের ব্যবসায়কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জের সাথে দণিাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র বরিশাল ছাড়াও খুলনার সাথে নিরাপদ নৌযোগাযোগ রার দায়িত্ব পালন করে আসছিল ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ার আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান-‘আইজিএন’ ও ‘আরএসএন’ কোম্পানি। সে সময়ে বাষ্পীয় প্যাডেল চালিত নৌযানগুলোর সাহায্যে নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠি-খুলনা রুটে ‘রকেট স্টিমার সার্ভিস’ ও ঢাকা থেকে চাঁদপুরসহ আরো অনেক ঘাট ধরে বরিশাল পর্যন্ত আরো একটি ‘মেইল স্টিমার সার্ভিস’ পরিচালিত হতো। এ দু’টি সার্ভিসেই একাধিক বাষ্পীয় প্যাডেল জাহাজ চললেও তার পুরো ইন্ধন শক্তি ছিল কয়লানির্ভর। দেশ বিভাগের পরে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অন্তত ৩০টি প্যাডেল হুইল জাহাজসহ আরো একাধিক পণ্য ও জ্বালানিবাহী নৌযান নিয়ে গঠিত হয় ‘পাকিস্তান রিভার স্টিমার্স’ নামের অপর একটি আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান।
দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের অধ্যাদেশ বলে পরিত্যক্ত আরো কয়েকটি নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত হয় ‘বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি)। কিন্তু সরকারি স্বশাসিত এ সংস্থাটির কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা শুরু থেকেই ‘চলাচল অযোগ্য’ বলে শুধু নৌযানগুলো বিক্রির খেলা শুরু করে। হাতেগোনা কয়েকটি প্যাডেল জাহাজকে কয়লার পরিবর্তে ফার্নেস অয়েলে রূপান্তর করা হয়। তবে স্বাধীনতার পরে আজ পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য কোনো নতুন নৌযান সংগ্রহ করা হয়নি। যদিও বর্তমান সরকারের আমলে দু’টি নতুন যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহের ল্েয ইতোমধ্যে একটি বেসরকারি নৌ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হয়েছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে এসব নৌযান যাত্রী পরিবহনে আসার কথা রয়েছে।
তবে ১৯৭৯ থেকে ’৮২ সালের মধ্যে ‘পিএস মাহসুদ, পিএস অস্ট্রিচ ও পিএস লেপচা’ জাহাজ তিনটিতে নতুন ইঞ্জিন সংযোজনসহ পরিপূর্ণ পুনর্বাসন করা হলেও ত্র“টিপূর্ণ হাইড্রোলিক গিয়ার সংযোজনের ফলে মাত্র তিন হাজার ঘণ্টা চলার পরেই একে একে ওই সব নৌযানই বিকল হয়ে পড়ে। পরে ১৯৯৫-৯৬ সালে নৌযান তিনটিতে মেকানিক্যাল গিয়ার সংযোজন করে তা পুনরায় যাত্রী পরিবহনে দেয়া হয়। ২০০২সালে ‘পিএস টার্ন’ জাহাজটিতেও নতুন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়।
কিন্তু এসব নৌযানে সংযোজিত বেলজিয়ামের নতুন ইঞ্জিনগুলো অত্যন্ত নির্ভরতার সাথে চললেও সময়োচিত মেরামত ও রণাবেণের অভাবে প্রতিটি নৌযানেরই প্যাডেলগুলোতে ত্র“টি লেগেই থাকছে। এমনকি ১৯৯৬ সালের পরে এসব নৌযানের উপরিকাঠামোরও কোনো পরিপূর্ণ মেরামত দূরের কথা সুষ্ঠু ও নিয়মিত রণাবেণ পর্যন্ত হচ্ছে না। ফলে প্রতিটি নৌযানের যাত্রীসেবার মান এখন সর্বকালের নাজুক পর্যায়ে। উপরন্তু প্রতিটি নৌযানই গিয়ারে কম-বেশি ত্র“টি নিয়ে চলছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে। অথচ এসব নৌযানের চলতি মেরামত ও রণাবেণের নামে সংস্থাটির ঢাকা ঘাটে প্রতি মাসে বিপুল অর্থ ব্যয় দেখান হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রীসেবা ও কারিগরি বিভাগের দায়িত্বশীলরা নৌযানগুলোর পেছনে অর্থব্যয় দেখাতে যতটা আগ্রহী, বাস্তবে তার বিনিময়ে কাজ করার বিষয়টি ততটা তদারকি করেন না। ফলে জনগণের অর্থব্যয় হলেও যাত্রীসুবিধা নিশ্চিত হচ্ছে না।
বর্তমানে ঢাকা-চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-মোড়েলগঞ্জ রুটের জন্য যে চারটি প্যাডেল জাহাজ রয়েছে তার সবই চলছে জোড়াতালি দিয়ে। এর মধ্যে ‘পিএস মাহসুদ’ জাহাজটির বার্ষিক মেরামতকাজ ২০১১-এর অক্টোবরে করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সে কাজ শুরু করা হয় গত বছরের মে মাসে। তরিঘরি করে নৌযানটির তলা মেরামত করে বিগত ঈদুল ফিতরের আগে তা যাত্রী পরিবহনে নিয়ে আসা হয়। কথা ছিল ঈদের পর পরই আবার ডক ইয়ার্ডে নিয়ে নৌযানটির ডেক ও উপরিকাঠামোসহ পূর্ণাঙ্গ মেরামত সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু এর পরে ঈদুল আজহা গিয়ে ২০১২ সালও শেষ হয়ে গেছে। তার পূর্ণাঙ্গ মেরামতকাজটি আর হয়নি। ইতোমধ্যে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর থেকে পিএস মাহসুদ-এর সার্ভে সনদ পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। নৌযানটির গিয়ারের পাশাপাশি এর উপরিকাঠামোর অবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অপর দিকে ‘পিএস লেপচা’ জাহাজটি গত মাসে ‘গাবখান চ্যানেল’-এ এক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণভবে চলাচল করছে। নৌযানটি গাবখান চ্যানেল অতিক্রমের সময় বিপরীত দিক থেকে প্রবেশকারী একটি বেসরকারি পণ্যবাহী জাহাজ পিএস লেপচার ওপর আছড়ে পড়ে। ফলে লেপচার মারাত্মক তি হয়। অথচ মেরামত না করেই নৌযানটি যাত্রী পরিবহন করছে। কর্তৃপরে মতে এ ব্যাপারে মেরিন কোর্টে মামলা করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা সরেজমিনে নৌযানটি পরিদর্শন না করায় এর মেরামত শুরু করা যাচ্ছে না।
এ ছাড়াও প্রতিটি নৌযানের যাত্রীসেবার মান গত কয়েক বছর ধরে সর্বকালের নিম্ন পর্যায়ে। সাধারণ যাত্রীদের মতে, ‘বিআইডব্লিউটিসি’র নৌযানগুলোতে নিরাপদ ও সাচ্ছন্দ্য ভ্রমণে যে নির্ভরতা ছিল তা ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয়েছে। এর যাত্রীসেবার মান এখন সর্বকালের তলানিতে ঠেকেছে। ডেক শ্রেণী থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিটি েেত্রই নানা অনিয়ম-অব্যবস্থা বিদ্যমান থাকলেও তা থেকে উত্তরণের কোনো উদ্যোগ সংস্থাটির বাণিজ্য পরিদফতর ও যাত্রীসেবা ইউনিটের নেই।’
তবে এ সব কিছুর চেয়েও প্রতিটি নৌযানরেই মূল ইঞ্জিন ও গিয়ার থেকে শুরু করে উপরিকাঠামো ও যাত্রীসেবার বিষয়গুলো নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। উপরন্তু বিআইডব্লিউটিসিতে কারিগরি পরিদফতরের কোনো পরিচালক না থাকায় এর মেরামত ও রণাবেণ কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার উপক্রম। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব প্রকৌশলী জ্ঞান রঞ্জন শীলকে সংস্থাটির পরিচালক-কারিগরি পদে নিয়োগ দেয়া হলেও মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র না মেলায় তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে পারছেন না বলে জানা গেছে।
নৌযানগুলো মেরামতের ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসির প্রধান প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, এমএস প্লেটের অভাবে এতদিন পিএস মাহসুদ-এর মেরামত শুরু করা যায়নি। তবে সে সমস্যার সমাধান হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে মাহসুদ মেরামত শুরুর ল্েয ডকইয়ার্ডে নেয়া হবে বলে জানিয়ে পর্যায়ক্রমে অন্য সব প্যাডেল জাহাজের মেরামতকাজও সম্পন্ন করা হবে বলে তিনি জানান।
No comments