পরিবর্তন বড় বেশি জরুরি by মযহারুল ইসলাম বাবলা
নতুন বছর শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে নতুন বছরের শুরুর মাসটি প্রায় অতিক্রমের মুখে। নানা প্রত্যাশা আর স্বপ্নপূরণের আকাঙ্ক্ষা প্রতি নতুন বছরের আগমনে আমরা করে থাকি। এবারও তা-ই করেছি। তবে দেশের সার্বিক অবস্থা আমাদের শঙ্কিত করে তুলেছে।
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় দুই প্রধান দল এখন পরস্পরের মুখোমুখি। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে, না তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন? এ নিয়ে দ্বন্দ্ব ক্রমেই সংঘাতের পথে এগোচ্ছে। রাজনৈতিক সহিংসতার আভাসও লক্ষ করা যাচ্ছে।
প্রতি পাঁচ বছরান্তে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে একবার এই দল, আরেকবার ওই দল ক্ষমতায় বসছে। কিন্তু জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। দুই প্রধান দল যে কেউ কারো বিকল্প নয়, এ সত্যটি বারবার প্রমাণিত। অথচ প্রকৃত বিকল্পের অভাবে জনগণ এই দুই দলের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। এ যাবৎকালের একটি নির্বাচনও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি- একমাত্র শাসক বদল ছাড়া। বিদ্যমান ব্যবস্থায় জনগণের মুক্তি অসম্ভব। ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ছাড়া জনগণের ভাগ্য বদল হবে না। বিদ্যমান জনবিরোধী ব্যবস্থা নিয়ে প্রধান দুই দলের মধ্যে নূ্যনতম বিরোধ নেই। নেই মতপার্থক্য। বরং উভয়ে ব্যবস্থাটি টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অভিন্ন এবং একাট্টা।
দেশে জ্বালানি নিয়ে চলছে তুঘলকি অনাচার। বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য স্থিতিশীল এবং কমেছে। অথচ সরকার আইএমএফের দাসখতে বারবার জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করে জনগণকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির বিরূপ প্রভাবে ভোক্তা পর্যায়ের সব স্তরে নাভিশ্বাস চরমে। যাদের সংগতি আছে তাদের কথা ভিন্ন। সংখ্যাগরিষ্ঠদের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে।
বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের অঙ্গীকারে সরকার ক্ষমতায় এসে প্রথম দুই বছর বিদ্যুৎব্যবস্থার উন্নয়নে নূ্যনতম ভূমিকা পালন করেনি। তীব্র বিদ্যুৎ সংকটের সুযোগ হাতিয়ে কুইক রেন্টাল পদ্ধতির বাতাবরণে বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি করে। জাতীয় সংসদে অনৈতিক সেই চুক্তির আগাম দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) বিল পাস করিয়ে নেওয়া হয়েছে। চড়া মূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয়ের আর্থিক বোঝা চাপানো হয়েছে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ওপর। ছয় দফা বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করে সরকার ইতিহাস গড়েছে।
গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির পরও সরকার গ্যাস সংযোগ চালু করেনি। ৮০০ টাকার প্রতি সিলিন্ডার এলপি গ্যাস লাফিয়ে লাফিয়ে এক হাজার ৮০০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। অথচ সরকার নির্বিকার। সরকার দেশবাসীকে গ্যাসবঞ্চিত করে এক নজরকাড়া বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার জন্ম দিয়েছে। যে সরকার জনগণের স্বার্থ না দেখে অসাধু ব্যবসায়ীদের অনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করে, সে সরকার নিশ্চিতরূপে জনগণের সরকার নয়। এলপি গ্যাসের মূল্য স্থিতিশীল ও সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত না করে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রেখে অসহায় জনগণকে ঠেলে দিয়েছে এক অমানবিক-বৈষম্যপূর্ণ পরিস্থিতির মুখে। যাদের গ্যাস সংযোগ রয়েছে, তাদের মাসিক খরচ সাড়ে ৪০০ টাকা। অন্যদিকে গ্যাস সংযোগহীনদের রান্নার এলপি গ্যাস ক্রয়ে মাসিক খরচ হচ্ছে প্রায় তিন হাজার টাকা। এই বৈষম্যপূর্ণ অবস্থার আশু নিরসন জরুরি। কিন্তু নির্বাচিত সরকার এতটাই আমলাতান্ত্রিক জালে আটকে রয়েছে যে জনগণের এই দুর্দশা মোচনে ক্রমাগত চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে জনগণের ভোটের আশা তবে কি সরকার করছে না? নাকি জোরপূর্বক ক্ষমতা ধরে রাখার দিবাস্বপ্নে রয়েছে। জনস্বার্থ উপেক্ষার মাশুল উপদেষ্টা নামধারী সাবেক আমলাদের কাউকে নয়- দিতে হবে সরকারি দলকেই।
দেশে ধর্ষণের বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছিল। কিন্তু এখন তা মারাত্মক পর্যায়ে। পাঁচ-সাত বছরের শিশু পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। গণধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে। ভারতের দিল্লিতে বাসে গণধর্ষণের একটি ঘটনা সারা ভারতকে নাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ আমাদের দেশে গণধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ ও হত্যা অহরহ ঘটছে; কিন্তু সামাজিক প্রতিবাদ-প্রতিরোধ তেমন আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারেনি। পুলিশ ও আইনের প্রতি আস্থাহীনতায় এবং সামাজিক বিড়ম্বনার ভয়ে আক্রান্ত বেশির ভাগই বিষয়টি চেপে যায়। প্রকাশ করে না। যে কয়টি প্রকাশ পায়, সেগুলোর নগণ্যসংখ্যকই সুবিচার পেয়ে থাকে। অধিকসংখ্যকই সময়ের স্রোতে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায়। ধর্ষকরা প্রধানত বেকার-অর্ধবেকার। কাজহীন, বোধ-বিবেচনা ও সংস্কৃতিহীন। ভবিষ্যৎহীন বলেই তারা নিজেদের বিকার মানসিকতা প্রকাশ করছে জঘন্য উপায়ে। বিদ্যমান ব্যবস্থা তরুণ-যুবকদের বেকার রাখছে। সংস্কৃতিহীন করছে, সুস্থ মানসিক বিকাশের পথ রুদ্ধ করছে এবং ভবিষ্যৎহীন করে তুলেছে। যার নেতিবাচক প্রভাবে মর্যাদাহীন, আশাহীন-ভবিষ্যৎহীন তরুণ-যুবকরা অসুস্থ-অমানবিক পন্থায় নিজেদের বিকার জাহির করছে। মাদক, ইভ টিজিং, ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে সমাজ ও রাষ্ট্রের দায় অবশ্যই রয়েছে।
সমাজের সর্বত্র চলছে হীন প্রতিযোগিতা। কে কাকে ডিঙিয়ে এগিয়ে যাবে। কাকে ধাক্কা দিলে নিজের অর্জন নিশ্চিত হবে। ব্যক্তির উন্নতির এই অসম প্রতিযোগিতায় সমষ্টি ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছে। তাই সর্বাগ্রে প্রয়োজন বিদ্যমান শাসনব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন, যা নির্বাচনের মাধ্যমে আসবে না, আসবে সমাজ পরিবর্তনে। যে ব্যবস্থা মানুষকে আশাহীন এবং ভবিষ্যৎহীন করবে না, সবার অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করবে, সে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ছাড়া দেশবাসীর পরিত্রাণ নেই।
লেখক : সংস্কৃতিকর্মী
প্রতি পাঁচ বছরান্তে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে একবার এই দল, আরেকবার ওই দল ক্ষমতায় বসছে। কিন্তু জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। দুই প্রধান দল যে কেউ কারো বিকল্প নয়, এ সত্যটি বারবার প্রমাণিত। অথচ প্রকৃত বিকল্পের অভাবে জনগণ এই দুই দলের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। এ যাবৎকালের একটি নির্বাচনও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি- একমাত্র শাসক বদল ছাড়া। বিদ্যমান ব্যবস্থায় জনগণের মুক্তি অসম্ভব। ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ছাড়া জনগণের ভাগ্য বদল হবে না। বিদ্যমান জনবিরোধী ব্যবস্থা নিয়ে প্রধান দুই দলের মধ্যে নূ্যনতম বিরোধ নেই। নেই মতপার্থক্য। বরং উভয়ে ব্যবস্থাটি টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অভিন্ন এবং একাট্টা।
দেশে জ্বালানি নিয়ে চলছে তুঘলকি অনাচার। বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য স্থিতিশীল এবং কমেছে। অথচ সরকার আইএমএফের দাসখতে বারবার জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করে জনগণকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির বিরূপ প্রভাবে ভোক্তা পর্যায়ের সব স্তরে নাভিশ্বাস চরমে। যাদের সংগতি আছে তাদের কথা ভিন্ন। সংখ্যাগরিষ্ঠদের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে।
বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের অঙ্গীকারে সরকার ক্ষমতায় এসে প্রথম দুই বছর বিদ্যুৎব্যবস্থার উন্নয়নে নূ্যনতম ভূমিকা পালন করেনি। তীব্র বিদ্যুৎ সংকটের সুযোগ হাতিয়ে কুইক রেন্টাল পদ্ধতির বাতাবরণে বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি করে। জাতীয় সংসদে অনৈতিক সেই চুক্তির আগাম দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) বিল পাস করিয়ে নেওয়া হয়েছে। চড়া মূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয়ের আর্থিক বোঝা চাপানো হয়েছে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ওপর। ছয় দফা বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করে সরকার ইতিহাস গড়েছে।
গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির পরও সরকার গ্যাস সংযোগ চালু করেনি। ৮০০ টাকার প্রতি সিলিন্ডার এলপি গ্যাস লাফিয়ে লাফিয়ে এক হাজার ৮০০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। অথচ সরকার নির্বিকার। সরকার দেশবাসীকে গ্যাসবঞ্চিত করে এক নজরকাড়া বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার জন্ম দিয়েছে। যে সরকার জনগণের স্বার্থ না দেখে অসাধু ব্যবসায়ীদের অনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করে, সে সরকার নিশ্চিতরূপে জনগণের সরকার নয়। এলপি গ্যাসের মূল্য স্থিতিশীল ও সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত না করে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রেখে অসহায় জনগণকে ঠেলে দিয়েছে এক অমানবিক-বৈষম্যপূর্ণ পরিস্থিতির মুখে। যাদের গ্যাস সংযোগ রয়েছে, তাদের মাসিক খরচ সাড়ে ৪০০ টাকা। অন্যদিকে গ্যাস সংযোগহীনদের রান্নার এলপি গ্যাস ক্রয়ে মাসিক খরচ হচ্ছে প্রায় তিন হাজার টাকা। এই বৈষম্যপূর্ণ অবস্থার আশু নিরসন জরুরি। কিন্তু নির্বাচিত সরকার এতটাই আমলাতান্ত্রিক জালে আটকে রয়েছে যে জনগণের এই দুর্দশা মোচনে ক্রমাগত চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে জনগণের ভোটের আশা তবে কি সরকার করছে না? নাকি জোরপূর্বক ক্ষমতা ধরে রাখার দিবাস্বপ্নে রয়েছে। জনস্বার্থ উপেক্ষার মাশুল উপদেষ্টা নামধারী সাবেক আমলাদের কাউকে নয়- দিতে হবে সরকারি দলকেই।
দেশে ধর্ষণের বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছিল। কিন্তু এখন তা মারাত্মক পর্যায়ে। পাঁচ-সাত বছরের শিশু পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। গণধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে। ভারতের দিল্লিতে বাসে গণধর্ষণের একটি ঘটনা সারা ভারতকে নাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ আমাদের দেশে গণধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ ও হত্যা অহরহ ঘটছে; কিন্তু সামাজিক প্রতিবাদ-প্রতিরোধ তেমন আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারেনি। পুলিশ ও আইনের প্রতি আস্থাহীনতায় এবং সামাজিক বিড়ম্বনার ভয়ে আক্রান্ত বেশির ভাগই বিষয়টি চেপে যায়। প্রকাশ করে না। যে কয়টি প্রকাশ পায়, সেগুলোর নগণ্যসংখ্যকই সুবিচার পেয়ে থাকে। অধিকসংখ্যকই সময়ের স্রোতে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায়। ধর্ষকরা প্রধানত বেকার-অর্ধবেকার। কাজহীন, বোধ-বিবেচনা ও সংস্কৃতিহীন। ভবিষ্যৎহীন বলেই তারা নিজেদের বিকার মানসিকতা প্রকাশ করছে জঘন্য উপায়ে। বিদ্যমান ব্যবস্থা তরুণ-যুবকদের বেকার রাখছে। সংস্কৃতিহীন করছে, সুস্থ মানসিক বিকাশের পথ রুদ্ধ করছে এবং ভবিষ্যৎহীন করে তুলেছে। যার নেতিবাচক প্রভাবে মর্যাদাহীন, আশাহীন-ভবিষ্যৎহীন তরুণ-যুবকরা অসুস্থ-অমানবিক পন্থায় নিজেদের বিকার জাহির করছে। মাদক, ইভ টিজিং, ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে সমাজ ও রাষ্ট্রের দায় অবশ্যই রয়েছে।
সমাজের সর্বত্র চলছে হীন প্রতিযোগিতা। কে কাকে ডিঙিয়ে এগিয়ে যাবে। কাকে ধাক্কা দিলে নিজের অর্জন নিশ্চিত হবে। ব্যক্তির উন্নতির এই অসম প্রতিযোগিতায় সমষ্টি ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছে। তাই সর্বাগ্রে প্রয়োজন বিদ্যমান শাসনব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন, যা নির্বাচনের মাধ্যমে আসবে না, আসবে সমাজ পরিবর্তনে। যে ব্যবস্থা মানুষকে আশাহীন এবং ভবিষ্যৎহীন করবে না, সবার অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করবে, সে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ছাড়া দেশবাসীর পরিত্রাণ নেই।
লেখক : সংস্কৃতিকর্মী
No comments