‘আমি হাজারবার ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়াতে প্রস্তুত’ by মেহেদী হাসান

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, আমি হাজারবার ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়াতে প্রস্তুত আছি। আমি মৃত্যুকে পরোয়া করি না।
মৃত্যু নিয়ে কোনো ভয়ভীতি আমার নেই। আমি আমার যৌবন কাল থেকে শুরু করে আজ ৭৩ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষকে পবিত্র কুরআনের দাওয়াত দিয়েছি। কুরআনের একজন খাদেম হিসেবে ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে কুরআনের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছি। লাখ লাখ মানুষ আমার মাহফিলে যোগ দেন। অসংখ্য মানুষ এসব মাহফিল থেকে সঠিক পথের দিশা পেয়েছেন। দেশ-বিদেশের লক্ষকোটি মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। আমি সাঈদী লক্ষকোটি মানুষের চোখের পানিমিশ্রিত দোয়া ও ভালোবাসায় সিক্ত। এটিই কি আমার অপরাধ? আমি কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি। এটিই কি আমার অপরাধ? এটি যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে, তা হলে এ অপরাধে অপরাধী হয়ে হাজারবার ফাঁসির মঞ্চে যেতে আমি রাজি আছি।

গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আবার যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ বিষয়ে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। রায়ের তারিখ বিষয়ে আদেশ ঘোষণার আগ মুহূর্তে কাঠগড়ায় অপেক্ষমাণ মাওলানা সাঈদী দাঁড়িয়ে বলেন, মাননীয় আদালত আপনারা সবার কথা শুনলেন। রাষ্ট্রপক্ষের কথা শুনলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীদের কথা শুনলেন; কিন্তু অভিযুক্ত হিসেবে আমার কথা শুনলেন না। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়ে আমার কিছু কথা ছিল, তা আপনাদের শোনা উচিত। আমি অতি সংক্ষেপে তা বলতে চাই।

তখন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির বলেন, আপনার কথা বলার সুযোগ নেই। মাওলানা সাঈদী তার কথা বলতে শুরু করেন। তিনি কথা বলা শুরুর পর বারবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তি ও বাধার মুখে ট্রাইব্যুনালও মাওলানা সাঈদীকে অনুরোধ করেন কথা বলা শেষ করতে। ট্রাইব্যুনাল আসামিপক্ষের আইনজীবীদের অনুরোধ করেন তাকে থামানোর জন্য। কিন্তু মাওলানা সাঈদী তার কথা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তীব্র আপত্তি উত্থাপন করা হলে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ অবস্থার মধ্যেই মাওলানা সাঈদী তার লিখিত বক্তব্যের মূল অংশ পড়ে শোনান।

মাওলানা সাঈদী বলেন, ২০১১ সালের অক্টোবরের ৩ তারিখ এই আদালতের তদানীন্তন চেয়ারম্যান নিজামুল হক আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ পড়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমি দোষী না নির্দোষ? আপনি ট্রাইব্যুনালের বর্তমান চেয়ারম্যান তখন এই আদালতের একজন বিচারক ছিলেন। বিচারপতি নিজামুল হক বিচারে ভ্রষ্ট পথ অনুসরণ করেছিলেন বিধায় একরাশ গ্লানি নিয়ে তাকে সরে পড়তে হয়েছে। আজ সেই চেয়ারে আপনি সম্মানিত চেয়ারম্যান। এটিই আল্লাহর বিচার।

কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে মাওলানা সাঈদী বলেন, আল্লাহ যাকে খুশি সম্মানিত করেন আর যাকে খুশি অসম্মানিত করেন।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সেই দিন তখনকার চেয়ারম্যান নিজামুল হকের প্রশ্নের জবাবে আমি যা বলেছিলাম, সেখান থেকেই আমার সামান্য কিছু বক্তব্য শুরু এখন করছি। নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে আমি বলেছিলামÑ আমার বিরুদ্ধে আনীত ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং শতাব্দীর জঘন্য ও নিকৃষ্টতম মিথ্যাচার। আল্লাহর কসম! আমার বিরুদ্ধে রচনা করা চার সহস্রাধিক পৃষ্ঠার প্রতিটি পাতার প্রতিটি লাইন, প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বর্ণ মিথ্যা, মিথ্যা এবং মিথ্যা। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে কোনো এক দেলোয়ার শিকদারের করা অপরাধসমূহ আমার ওপর চাপিয়ে দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউশন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যার পাহাড় রচনা করেছেন।’

‘আজ আমি আল্লাহর নামে শপথ নিয়ে আপনাদের সামনে বলতে চাই, সরকার ও তার রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক চিত্রিত ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের হত্যাকারী, লুণ্ঠন, গণহত্যাকারী, ধর্ষক, অগ্নিসংযোগকারী দেলোয়ার শিকদার বা ‘দেলু’ বা দেইল্যা রাজাকার আমি নই। আমি ৫৬ হাজার বর্গমাইলের প্রিয় জন্মভূমি এই বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের নিকট চিরচেনা, পবিত্র কুরআনের একজন তাফসিরকারক, কুরআনের একজন খাদেম, কুরআনের পথে মানুষকে আহ্বানকারী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।’

“যে আমি সেই যৌবন কাল থেকেই শান্তি ও মানবতার উৎকর্ষ সাধনে পবিত্র কুরআনের শাশ্বত বাণী প্রচার করার লক্ষ্যে নিজ জন্মভূমি থেকে শুরু করে বিশ্বের অর্ধশত দেশ (গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত) ভ্রমণ করেছি, সেই আমি ৭৩ বছর বয়সে জীবনসায়াহ্নে এসে সরকার ও সরকারি দলের দায়ের করা ‘ধর্র্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাত হানার’ হাস্যকর ও মিথ্যা মামলায় ২৯ জুন ২০১০ থেকে আজ পর্যন্ত কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে মানবেতর অবস্থায় দিনাতিপাত করছি।”

মাওলানা সাঈদী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাত হানার অভিযোগ উত্থাপন এবং তজ্জন্য আমাকে ত্বরিৎ গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার কাজটি করল এমন এক সরকার, যারা আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস কথাটি দেশের সংবিধানে বহাল রাখাকে সহ্য করতে না পেরে অবলীলায় তা মুছে দিতে কুণ্ঠাবোধ করেনি।’

এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয় মাওলানা সাঈদীর বক্তব্য রাখা প্রসঙ্গে। সে বাধা উপেক্ষা করে মাওলানা সাঈদী কথা বলতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই ৪২ বছরের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে কোনো বিষয়েই কোনো মামলা ছিল না। একটি জিডিও ছিল না। গণতন্ত্রের লেবাসধারী বর্তমান এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের বদান্যতায়, মহানুভবতায় মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে আজ আমি ১৭টি মামলার আসামি। সেই জুন ২০১০ থেকে অদ্যাবধি কথিত মানবতাবিরোধী ২০টি অপরাধের অভিযোগসহ ১৭টি মামলা আমার বিরুদ্ধে দায়ের করে এবং বিচারপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে সরকার আমাকে তাদের এক রাজনৈতিক তামাশার পাত্রে পরিণত করেছে, যা আজ দেশবাসীর কাছে মেঘমুক্ত আকাশে দ্বিপ্রহরের সূর্যের মতোই স্পষ্ট।’

তিনি বলেন, যে ২০টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আজ আপনাদের সম্মুখে আমি দণ্ডায়মান, সেগুলো সরকারের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যচরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেই সাজানো। ১৯৭১ সালে পিরোজপুর বা পাড়েরহাটে পাক বাহিনী যা ঘটিয়েছে, সেসব কাহিনী সৃজন করে চরম মিথ্যাবাদী ও প্রতারক এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও তার সহযোগীরা নীতিনৈতিকতার মূলে পদাঘাত করে আমার নামটি জুড়ে দিয়েছেন। মহান আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী, আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী, মৃত্যুর পরের আজাবে বিশ্বাসী, পরকাল ও জাহান্নামের কঠিন শাস্তিতে বিশ্বাসী কোনো মুসলমানের পক্ষে এত জঘন্য মিথ্যাচার আদৌ সম্ভব নয়।’

সাঈদী বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা এবং সহযোগীরা তাদের সৃজিত অভিযোগগুলো প্রমাণের জন্য কয়েকজন বিতর্কিত চরিত্র, ভ্রষ্ট ও সরকারি সুবিধাভোগী দলীয় লোক ব্যতীত সাক্ষী প্রদানের জন্য কাউকেই হাজির করতে পারেননি।’

এ সময় আবারো রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তীব্র আপত্তি তোলা হয় তার বক্তব্য বন্ধ করে দেয়ার জন্য। তার পরও মাওলানা সাঈদী তার কথা অব্যাহত রাখেন। তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড ক্ষিপ্রতার সাথে এই ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপ্রক্রিয়ায় সমাপ্তি টেনেছেন। তিনি আইনকানুন, ন্যায়বিচারের শপথ, অভিযুক্ত হিসেবে আমার বক্তব্য প্রদানের অধিকারÑ কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করেননি; বরং তিনি রায় ঘোষণার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এরই মধ্যে ঘটে যায় মহান রাব্বুল আলামিনের হস্তক্ষেপের ঘটনা। আজ সেই একদা সমাপ্ত বিতর্কিত মামলার পুনঃসমাপ্তির দ্বিতীয় আয়োজন। কিন্তু আমি পূর্বের ন্যায় একই উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি মামলা যেনতেন প্রকারে শেষ করার সেই একই ত্রস্ততা।’

মাওলানা সাঈদী বলেন, ‘এই ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বস্তুত আমার বিরুদ্ধে পরিচালিত মামলার রায় প্রকাশ করে গেছেন। সাবেক চেয়ারম্যান মিডিয়ায় প্রকাশিত স্কাইপ সংলাপকে মেনে নিয়ে অন্যায় ও বেআইনিভাবে পরিচালিত বিচারকার্যের সব দায়ভার বহন করে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে বিদায় হয়েছেন। ষড়যন্ত্র ও অন্যায়ভাবে বিচারকার্য পরিচালনার বিষয়টি তার স্কাইপ কথোপকথনে প্রকাশ পেয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যানের বক্তব্যে প্রচ্ছন্নভাবে উঠে এসেছে কিভাবে সরকারের চাপে পড়ে, সুপ্রিম কোর্টের জনৈক বিচারপতির প্রলোভনে পড়ে, তথাকথিত ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের ডিকটেশন অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করে এবং তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে প্রসিকিউশনের সাথে অবৈধ যোগসাজশে বিচারকার্য পরিচালনায় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, আদালতের ক্ষমতাকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে আমার পক্ষের সাক্ষীর অগ্রিম তালিকা জমা দিতে বাধ্য করে সেই তালিকা প্রসিকিউশন এবং তাদের মাধ্যমে সরকার, সরকারি দল ও স্থানীয় প্রশাসনকে সরবরাহ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে সাক্ষীদের ওপর চাপ সৃষ্টি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আদালতে হাজির না হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টিসহ নানাবিধ অনিয়ম ও বেআইনি কর্মপন্থার মাধ্যমে সমগ্র বিচারকার্যটি কলুষিত করেছেন।’

এ পর্যায়ে আবারো রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তীব্র আপত্তি তোলা হয়। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির মাওলানা সাঈদীকে অনুরোধ করেন থামার জন্য। তখন মাওলানা সাঈদী তার লিখিত বক্তব্য সংক্ষেপ করে বলেন, ‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এর পূর্বে দুইবার ক্ষমতাসীন ছিল। তখন আমি যুদ্ধাপরাধী ছিলাম না, আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও হয়নি। একটি জিডিও হয়নি বাংলাদেশের কোথাও। অথচ তদন্ত কর্মকর্তা এই আদালতে বলেছেন ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের পর আমি নাকি ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত পলাতক ছিলাম। ছাত্রজীবন থেকে আমি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম বলে তিনি মিথ্যাচার করেছেন। অথচ ১৯৭৯ সালে আমি সাধারণ সমর্থক হিসেবে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করি। এর পূর্বে আমি কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক ছিলাম না। ১৯৯০ সালের শুরু অবধি আমার রাজনৈতিক কোনো পরিচয়ও ছিল না। ১৯৮৯ সালে আমি জামায়াতের মজলিসে শূরায় সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হই।’

মাওলানা সাঈদী বলেন, ‘দেশবাসী সাক্ষী, রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার কখনো কোনোকালেই তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না। বরাবরই আমার বিচরণ ছিল কুরআনের ময়দানে। জনগণকে কুরআনের দাওয়াত পৌঁছানোই ছিল আমার কাজ। আমার তাফসির মাহফিলগুলোতে হাজারো লাখো মানুষ অংশগ্রহণ করে। এসব মাহফিল থেকে অসংখ্য, অগণিত মানুষ সঠিক পথের দিশা পেয়েছেন, নামাজি হয়েছেন। এটিই কি আমার অপরাধ? দেশ-বিদেশের লক্ষকোটি মানুষ আমার ওপর আস্থা রাখেন, আমাকে বিশ্বাস করেন, আমাকে ভালোবাসেন। আমি সাঈদী লক্ষকোটি মানুষের চোখের পানিমিশ্রিত দোয়া ও ভালোবাসায় সিক্ত। এই ভালোবাসাই কি আমার অপরাধ? বিগত অর্ধ শতাব্দী ধরে আমি কুরআনের দাওয়াত বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছি, এটিই কি আমার অপরাধ? আমি কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি, এটিই কি আমার অপরাধ? মাননীয় আদালত, এটি যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে, তা হলে এ অপরাধে অপরাধী হয়ে হাজারবার ফাঁসির মঞ্চে যেতে আমি রাজি আছি। আমি মৃত্যুকে পরোয়া করি না। মৃত্যু নিয়ে কোনো ধরনের ভয় বা ভীতি আমার মধ্যে নেই। ’

মাওলানা সাঈদী বলেন, ‘আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও একত্ববাদ এবং কুরআনের বিপ্লবী দাওয়াত প্রচারে আমি অকুণ্ঠচিত্ত। এ কারণে সরকার তাদের ইসলামবিদ্বেষী মিশন বাস্তবায়নে আমাকে অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করে আমাকে বিতর্কিত এবং জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ও নিশ্চিহ্ন করার জন্যই আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উত্থাপন করেছে। আমার বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যচরিতার্থ করার জন্য এবং আমাকে তাদের আদর্শিক শত্রু মনে করে সরকার কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে আমার বিরুদ্ধে শতাব্দীর জঘন্যতম ও নিকৃষ্টতম মিথ্যা এ মামলা পরিচালনা করেছেন। আমি রাজাধিরাজ, সম্রাটের সম্রাট, সকল বিচারপতির মহাবিচারপতি, আকাশ ও জমিনের সার্বভৌমত্বের একচ্ছত্র অধিপতি, মহান আরশের মালিক, সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নামে শপথ করে বলছি, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ আমি করিনি।’

‘আমি মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, হে আল্লাহ! আমার বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা, তার সহযোগী প্রসিকিউশন এবং মিথ্যা সাক্ষ্যদাতাদের হেদায়েত করো; আর হেদায়েত তাদের নসিবে না থাকলে তাদের সকলকে শারীরিক, মানসিক ও পারিবারিকভাবে সে রকম অশান্তির আগুনে দগ্ধিভূত করো; যেমনটি তারা আমাকে, আমার পরিবারকে এবং বিশ্বব্যাপী আমার অগণিত ভক্তবৃন্দকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে। আর জাহান্নাম করো তাদের চিরস্থায়ী ঠিকানা।’

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের তীব্র আপত্তি ও বাধায় উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারই মধ্যে মাওলানা সাঈদী বলেন, ‘আমি আমার সকল বিষয় সেই মহান আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি, যিনি আমার কর্মবিধায়ক এবং তাঁকেই আমি আমার একমাত্র অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছি। সাহায্যকারী হিসেবে মহান আরশের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন-ই আমার জন্য যথেষ্ট।’ এখানেই তিনি কথা বলা বন্ধ করেন।
       


No comments

Powered by Blogger.