ঢাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ পুলিশি ভূমিকায় ছাত্রলীগ- ১৯ ককটেল বিস্ফোরণ, ছাত্রদলের বিরুদ্ধে মামলা

ছাত্রলীগ এবং পুলিশের কঠোর প্রতিরোধব্যবস্থা সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে ছাত্রদল। গতকাল সকালে তারা বিভিন্ন দাবিতে ক্যাম্পাসে বিাক্ষোভ মিছিল করে
তাদের বাধা দিতে ছাত্রলীগ ও বিপুল পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা এ কর্মসূচি পালন করে। তবে ছাত্রলীগ পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও পথচারীরা হয়রানির শিকার হন। এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় কমপে ১৯টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে,। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।

ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ঢুকতে পারে এমন সংবাদে আগের দুই দিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও সারা দিন উত্তেজনা বিরাজ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। গতকাল সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে পুলিশি স্টাইলে তল্লাশি চৌকি বসান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ক্যাম্পাসে কোনো সাধারণ ছাত্রছাত্রী কিংবা পথচারী যেতে চাইলে তাদের তল্লাশি করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ক্যাম্পাসের সব প্রবেশ পথ এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বেশ ক’টি সাঁজোয়া যানসহ বিপুল পুলিশ মোতায়েন ছিল ভোর থেকেই। সক্রিয় ছিলেন গোয়েন্দা সদস্যরাও।

এ প্রতিরোধব্যবস্থার মধ্যেই সকাল ১০টার দিকে নীলতে এলাকা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি মুহিদুল হাসান হিরুর নেতৃত্বে বিভিন্ন দাবিতে বিােভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ছাত্রদল। এ সময় তারা স্যার এ এফ রহমান হল পর্যন্ত এলে তাদের ধাওয়া করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ফলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ফিরে যায়। পরে সাড়ে ১০টার দিকে আবারো আর এক দফা মিছিলের চেষ্টা করে তারা। তবে এ দফায় পুলিশ এবং ছাত্রলীগের বাধার মুখে তারা ব্যর্থ হয়। এ ঘটনার পরপরই বেপরোয়া হয়ে ওঠে ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল শাখার নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে মহড়া দেয়া শুরু করে। এ সময় পলাশী ও আজিমপুর মোড়ে বেশ কয়েকজন সাধারণ পথচারী তাদের আক্রমণের শিকার হন এবং গুরুতর আহত হন কয়েকজন।

ছাত্রদলের মিছিলে আরো অংশ নেন ঢাবি ছাত্রদলের সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নাসিরউদ্দিন রুম্মন প্রমুখ। অন্য দিকে সাংগঠনিক সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে শাহবাগ এলাকা থেকে মিছিল করার চেষ্টা করে ছাত্রদল।

এ দিকে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং আশপাশের এলাকায় প্রায় ১৯টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে নীলতে মোড়ে আটটি, পলাশী মোড়ে আটটি, শাহবাগ এলাকায় দুইটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন চানখাঁরপুল এলাকায় একটি বিস্ফোরণ ঘটে। নীলতে মোড় থেকে পুলিশ একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ছাত্রদল ছাত্রলীগকে দায়ী করেছে। তবে ছাত্রলীগ এবং পুলিশ ছাত্রদলকে দায়ী করেছে।

ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ বলেন, বাইরের কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ছাত্রছাত্রীদের কাজে বিঘœ ঘটায় তবে তাদের সাহায্য করতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। এ কারণেই আমাদের কিছুটা ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে।

ছাত্রদল সভাপতি মুহিদুল হাসান হিরু বলেন, ’৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী আমাদের ন্যায্য অধিকার লঙ্ঘন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এ কারণে আমরা ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করা শুরু করেছি। আমাদের দাবি আদায় না হলে ভবিষ্যতে আরো কঠোর কর্মসূচি দিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. মো: আমজাদ আলী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্যই ছাত্রদল এ কাজ করছে। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হতে পারে বলে তিনি জানান।

গত সোমবারও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১৩টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এ দিন একজন আহত এবং অপর একজন গ্রেফতার হন। এ ঘটনায় রাতেই ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত কেন্দ্রীয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে আসামি করে মামলা করেছে ছাত্রলীগ। সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মী কামাল হোসেন বাদি হয়ে এ মামলা করেন বলে জানা গেছে।

এ দিকে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল এবং সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব এক বিবৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রলীগের বোমা হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে অবিলম্বে মিছিলে বোমা হামলাকারী ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও বহিরাগত অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান তারা।
       

No comments

Powered by Blogger.