সাক্ষাৎকার-লক্ষ্যে পেঁৗছাতে হলে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে by ড. পিটার জে. এটকিন্স
সাক্ষাৎকার গ্রহণ :আহমেদ সুমন সমকাল :১৯৯৪ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকায় এসেছেন। কী পরিবর্তন চোখে পড়েছে? পিটার এটকিন্স :মানুষের জীবনযাত্রার বেশ পরিবর্তন চোখে পড়েছে। এয়ারপোর্টে দেখেছি লোকজন বড় সাইজের টেলিভিশন নিয়ে ফিরছে।
বাইরে অপেক্ষমাণ লোকজনকে দেখেছি কোর্ট-ব্লেজার পরে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তায় বিশ্বের সর্বাধুনিক মডেলের গাড়িও দেখেছি। রাস্তার ধারে কর্মজীবী গরিব মানুষ এবং বস্তির মতো ছোট ছোট ঘরও দেখেছি। তবে গড়পড়তা যে একটা উন্নতি হয়েছে_ সেটা মনে হয়েছে।
সমকাল : এই পরিবর্তনকে কীভাবে দেখছেন?
পিটার এটকিন্স :এটা স্পষ্ট যে, মানুষের আয়-ব্যয় দুটিই বেড়েছে। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। আমি মনে করি, মানুষের এই আর্থিক প্রবৃদ্ধির সূচক ঊর্ধ্বমুখী বজায় থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।
সমকাল : গার্ডিয়ান পত্রিকার ভাষ্যমতে, বাংলাদেশ ২০৫০ সালে অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক শক্তিশালী দেশকে ছাড়িয়ে যাবে। বলা হচ্ছে, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ 'মধ্যম আয়ের দেশ' হিসেবে পরিচিতি অর্জন করবে। আপনার কি মনে হয়, এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভ্ভব?
পিটার এটকিন্স : লক্ষ্য অর্জনের কিছু কর্মপন্থা আছে। টেকসই কর্মপন্থা অভীষ্ট লক্ষ্যে পেঁৗছাতে সহায়তা করে। বাংলাদেশকে সে ধরনের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে।
সমকাল : আপনি হয়তো জেনেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। অবশ্য জাতীয় আয়ের মোট প্রবৃদ্ধির একটা বড় অংশ আসে তৈরি পোশাকশিল্প খাত থেকে। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশের কাতারে প্রবেশ করতে হলে কোন কোন খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে?
পিটার এটকিন্স : আমি কৃষির উন্নয়ন বা শিল্পায়নের কথা বলব না। বলব শিক্ষার উন্নয়ন এবং প্রসার ঘটাতে। এ জন্য শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। লক্ষ্যে পেঁৗছাতে হলে দক্ষ জনবল প্রয়োজন। শিক্ষা দক্ষ জনবল তৈরির প্রধান হাতিয়ার। আপনি যদি জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে গড়তে পারেন, তারাই নেতৃত্ব দেবে কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে। কৃষির আধুনিকায়ন বা কৃষি বিপ্লব কিংবা শিল্পপ্পায়ন কাদের দিয়ে ঘটবে? নিশ্চয় শিক্ষিত ব্যক্তিরাই এখানে নেতৃত্ব দেবে। এ জন্য শিক্ষাকে মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে গণ্য করতে হবে। জনসাধারণ শিক্ষিত হলেই সামাজিক উন্নয়নের সূচক তথা অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃৃতিক মূল্যবোধ প্রভৃতির উন্নয়ন ঘটবে।
সমকাল : বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ এখনও সবচেয়ে বেশি। তবে সেটা আড়াই শতাংশেরও কম। এখানে বরাদ্দের হার কতটা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন?
পিটার এটকিন্স :উন্নত রাষ্ট্র্রগুলোতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ২০ শতাংশেরও বেশি। উন্নয়নশীল রাষ্ট্র্রগুলোতে সেটা ১০ শতাংশ বা তার কাছাকাছি। আমি বলব, বাংলাদেশ সরকার এখানে যতটা সম্ভব বরাদ্দ বাড়াবে।
সমকাল : বাংলাদেশের ২০২১ কিংবা ২০৫০ সালের লক্ষ্য পূরণে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন?
পিটার এটকিন্স : বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সম্পদের অপরিকল্পিত ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। দুই দশক আগেও থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এমনকি মালয়েশিয়াও আজকের বাংলাদেশের মতো ছিল। এসব দেশ নিজস্ব্ব সম্পদের অপব্যবহার বন্ধ করে পরিকল্পনামাফিক ব্যবহার করছে। আমি বিশ্বাস করি, সদিচ্ছা থাকলে অনেক অপচয় রোধ করা যায়। যেমন, বাংলাদেশে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি মোকাবেলায় অপ্রয়োজনীয় আলোকসজ্জা পরিহার করা যেতে পারে। প্রয়োজন না থাকলে বিদ্যুতের ব্যবহার বন্ধ রাখা যেতে পারে। এমনিভাবে গ্যাসের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। রাস্তায় এত ট্রাফিক জ্যাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্বালানি পুড়ে যাচ্ছে। এগুলো রোধ করতে হবে। জনসাধারণকে পরিমিত ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে। দেশীয় সম্পদে জনগণের অংশীদারিত্ব থাকলে উন্নয়নে অধিকতর সাফল্য আসবে।
সমকাল : এবার আবহাওয়া ও জলবায়ু প্রসঙ্গে ফেরা যাক। বিশ্ব আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনে কী ধরনের প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে? তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে কারা বেশি ভূমিকা রাখছে? এতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো কী করতে পারে?
পিটার এটকিন্স :কোনো সন্দেহ নেই যে, উন্নত রাষ্ট্র্রগুলো তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে। মানুষের আরাম-আয়েশ এবং বিলাসী জীবনযাপনে যে ইকুইপমেন্ট এবং প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে বিশ্বে তাপমাত্রা বাড়ছে। উন্নয়নশীল কিংবা অনুন্নত দেশগুলোর ভূমিকা এতে অতি সামান্যই। আমরা লক্ষ্য করছি যে, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষে জাতিসংঘ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। জাতিসংঘ এ জন্য দায়ী দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলছে। আমি বলব, এটা করতে বাধ্য করতে হবে।
সমকাল : জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইংল্যান্ডে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে? পৃথিবীব্যাপী কী ধরনের প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে?
পিটার এটকিন্স : ইংল্যান্ডেও অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত, জলোচ্ছ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত সময়ে ইংল্যান্ডের বৃষ্টিপাত রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ সময় ইংল্যান্ডের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব আরও ভয়াবহ। জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সমুদ্রের পানি বেড়ে যাওয়ায় লোনা পানি কৃষি জমিতে প্রবেশ করছে। এতে শস্য উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে। খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির সম্মুুখীনের পাশাপাশি পৃথিবী অস্ব্বস্তিকর হয়ে উঠছে।
সমকাল : উষ্ণতা বৃদ্ধির বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ১৭ শতাংশ সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ মালদ্বীপ পুরোপুরি সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাবে। এসব আশঙ্কার বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু?
পিটার এটকিন্স : নিশ্চিতভাবে এসব বিষয়ে মন্তব্য করা কঠিন। এ সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের জন্য দীর্ঘদিনের তথ্য-উপাত্ত, পরিসংখ্যান দরকার। স্বল্প পরিসরের তথ্য এবং পরিসংখ্যান দিয়ে নিশ্চিত ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। এখন যা আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার বিজ্ঞানভিত্তিক ভিত্তি কম।
সমকাল : বাংলাদেশের পরিবেশগত সমস্যা মোকাবেলায় ইংল্যান্ড কী ধরনের সহযোগিতা করতে পারে?
পিটার এটকিন্স : বাংলাদেশের আর্সেনিক সমস্যা, জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম বা জিআইএস শিক্ষা ও তার প্রয়োগ, ভূমিকম্প ও ভূমি প্রভৃতি বিষয়ে ইংল্যান্ড সহযোগিতা করছে। ইংল্যান্ডের ডারহাম এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের অনেকেই এসব বিষয়ে গবেষণা করছেন। নিশ্চয় তারা দেশে ফিরে, তাদের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছেন।
সমকাল : বাংলাদেশের গবেষকদের গবেষণার মান কেমন?
পিটার এটকিন্স :আমি বলব, খুব চমৎকার। কোনো কোনো গবেষকের গবেষণার মান পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলংকার গবেষকদের চেয়েও ভালো। আমি তাদের ব্যাপারে আশাবাদী। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনে তারা ভূমিকা রাখবেন।
সমকাল : এই পরিবর্তনকে কীভাবে দেখছেন?
পিটার এটকিন্স :এটা স্পষ্ট যে, মানুষের আয়-ব্যয় দুটিই বেড়েছে। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। আমি মনে করি, মানুষের এই আর্থিক প্রবৃদ্ধির সূচক ঊর্ধ্বমুখী বজায় থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।
সমকাল : গার্ডিয়ান পত্রিকার ভাষ্যমতে, বাংলাদেশ ২০৫০ সালে অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক শক্তিশালী দেশকে ছাড়িয়ে যাবে। বলা হচ্ছে, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ 'মধ্যম আয়ের দেশ' হিসেবে পরিচিতি অর্জন করবে। আপনার কি মনে হয়, এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভ্ভব?
পিটার এটকিন্স : লক্ষ্য অর্জনের কিছু কর্মপন্থা আছে। টেকসই কর্মপন্থা অভীষ্ট লক্ষ্যে পেঁৗছাতে সহায়তা করে। বাংলাদেশকে সে ধরনের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে।
সমকাল : আপনি হয়তো জেনেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। অবশ্য জাতীয় আয়ের মোট প্রবৃদ্ধির একটা বড় অংশ আসে তৈরি পোশাকশিল্প খাত থেকে। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশের কাতারে প্রবেশ করতে হলে কোন কোন খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে?
পিটার এটকিন্স : আমি কৃষির উন্নয়ন বা শিল্পায়নের কথা বলব না। বলব শিক্ষার উন্নয়ন এবং প্রসার ঘটাতে। এ জন্য শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। লক্ষ্যে পেঁৗছাতে হলে দক্ষ জনবল প্রয়োজন। শিক্ষা দক্ষ জনবল তৈরির প্রধান হাতিয়ার। আপনি যদি জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে গড়তে পারেন, তারাই নেতৃত্ব দেবে কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে। কৃষির আধুনিকায়ন বা কৃষি বিপ্লব কিংবা শিল্পপ্পায়ন কাদের দিয়ে ঘটবে? নিশ্চয় শিক্ষিত ব্যক্তিরাই এখানে নেতৃত্ব দেবে। এ জন্য শিক্ষাকে মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে গণ্য করতে হবে। জনসাধারণ শিক্ষিত হলেই সামাজিক উন্নয়নের সূচক তথা অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃৃতিক মূল্যবোধ প্রভৃতির উন্নয়ন ঘটবে।
সমকাল : বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ এখনও সবচেয়ে বেশি। তবে সেটা আড়াই শতাংশেরও কম। এখানে বরাদ্দের হার কতটা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন?
পিটার এটকিন্স :উন্নত রাষ্ট্র্রগুলোতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ২০ শতাংশেরও বেশি। উন্নয়নশীল রাষ্ট্র্রগুলোতে সেটা ১০ শতাংশ বা তার কাছাকাছি। আমি বলব, বাংলাদেশ সরকার এখানে যতটা সম্ভব বরাদ্দ বাড়াবে।
সমকাল : বাংলাদেশের ২০২১ কিংবা ২০৫০ সালের লক্ষ্য পূরণে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন?
পিটার এটকিন্স : বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সম্পদের অপরিকল্পিত ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। দুই দশক আগেও থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এমনকি মালয়েশিয়াও আজকের বাংলাদেশের মতো ছিল। এসব দেশ নিজস্ব্ব সম্পদের অপব্যবহার বন্ধ করে পরিকল্পনামাফিক ব্যবহার করছে। আমি বিশ্বাস করি, সদিচ্ছা থাকলে অনেক অপচয় রোধ করা যায়। যেমন, বাংলাদেশে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি মোকাবেলায় অপ্রয়োজনীয় আলোকসজ্জা পরিহার করা যেতে পারে। প্রয়োজন না থাকলে বিদ্যুতের ব্যবহার বন্ধ রাখা যেতে পারে। এমনিভাবে গ্যাসের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। রাস্তায় এত ট্রাফিক জ্যাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্বালানি পুড়ে যাচ্ছে। এগুলো রোধ করতে হবে। জনসাধারণকে পরিমিত ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে। দেশীয় সম্পদে জনগণের অংশীদারিত্ব থাকলে উন্নয়নে অধিকতর সাফল্য আসবে।
সমকাল : এবার আবহাওয়া ও জলবায়ু প্রসঙ্গে ফেরা যাক। বিশ্ব আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনে কী ধরনের প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে? তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে কারা বেশি ভূমিকা রাখছে? এতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো কী করতে পারে?
পিটার এটকিন্স :কোনো সন্দেহ নেই যে, উন্নত রাষ্ট্র্রগুলো তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে। মানুষের আরাম-আয়েশ এবং বিলাসী জীবনযাপনে যে ইকুইপমেন্ট এবং প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে বিশ্বে তাপমাত্রা বাড়ছে। উন্নয়নশীল কিংবা অনুন্নত দেশগুলোর ভূমিকা এতে অতি সামান্যই। আমরা লক্ষ্য করছি যে, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষে জাতিসংঘ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। জাতিসংঘ এ জন্য দায়ী দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলছে। আমি বলব, এটা করতে বাধ্য করতে হবে।
সমকাল : জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইংল্যান্ডে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে? পৃথিবীব্যাপী কী ধরনের প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে?
পিটার এটকিন্স : ইংল্যান্ডেও অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত, জলোচ্ছ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত সময়ে ইংল্যান্ডের বৃষ্টিপাত রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ সময় ইংল্যান্ডের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব আরও ভয়াবহ। জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সমুদ্রের পানি বেড়ে যাওয়ায় লোনা পানি কৃষি জমিতে প্রবেশ করছে। এতে শস্য উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে। খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির সম্মুুখীনের পাশাপাশি পৃথিবী অস্ব্বস্তিকর হয়ে উঠছে।
সমকাল : উষ্ণতা বৃদ্ধির বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ১৭ শতাংশ সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ মালদ্বীপ পুরোপুরি সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাবে। এসব আশঙ্কার বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু?
পিটার এটকিন্স : নিশ্চিতভাবে এসব বিষয়ে মন্তব্য করা কঠিন। এ সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের জন্য দীর্ঘদিনের তথ্য-উপাত্ত, পরিসংখ্যান দরকার। স্বল্প পরিসরের তথ্য এবং পরিসংখ্যান দিয়ে নিশ্চিত ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। এখন যা আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার বিজ্ঞানভিত্তিক ভিত্তি কম।
সমকাল : বাংলাদেশের পরিবেশগত সমস্যা মোকাবেলায় ইংল্যান্ড কী ধরনের সহযোগিতা করতে পারে?
পিটার এটকিন্স : বাংলাদেশের আর্সেনিক সমস্যা, জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম বা জিআইএস শিক্ষা ও তার প্রয়োগ, ভূমিকম্প ও ভূমি প্রভৃতি বিষয়ে ইংল্যান্ড সহযোগিতা করছে। ইংল্যান্ডের ডারহাম এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের অনেকেই এসব বিষয়ে গবেষণা করছেন। নিশ্চয় তারা দেশে ফিরে, তাদের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছেন।
সমকাল : বাংলাদেশের গবেষকদের গবেষণার মান কেমন?
পিটার এটকিন্স :আমি বলব, খুব চমৎকার। কোনো কোনো গবেষকের গবেষণার মান পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলংকার গবেষকদের চেয়েও ভালো। আমি তাদের ব্যাপারে আশাবাদী। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনে তারা ভূমিকা রাখবেন।
No comments