মিয়ানমারের আধা বর্গ কিলোমিটারের ‘কারাগার’
মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের রাজধানী আকিয়াব (সিতউয়ি)৷ রাজ্যটির নাম পাল্টে সংখ্যাগুরু বৌদ্ধদের অনুসারে ‘রাখাইন’ করেছে শাসক সামরিক জান্তা তারা, একইসঙ্গে পাল্টিয়েছে রাজধানীর নামও। নামে যদিও কিছু আসে যায় না অবস্থা হতে পারতো।
কিন্তু শুধু নামে নয়, কাজেও তৎপর দেশটির শাসকগোষ্ঠি, রাজ্যটি থেকে রোহিঙ্গা মুসলিম নির্মূলে রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই সামরিক জান্তা সেখানে নানা প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে।
এই নির্মূলকরণ প্রক্রিয়ার সর্বশেষ দৃশ্যমান নজির; গত জুনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর হামলা ও তাদের ঘরবাড়িতে আগুন দেয়া এবং হত্যা নির্যাতনের ঘটনার কয়েক মাস হয়ে গেল৷ তবে এখনও সেখানে থমথম পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷
আকিয়াবের একটি এলাকা ‘অং মিঙ্গালার'৷ আয়তন আধা বর্গকিলোমিটার৷ জনসংখ্যা তিন থেকে আট হাজার৷ তারা সবাই রোহিঙ্গা মুসলিম৷ পুরো এলাকাটা বাঁশ আর কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা৷ এছাড়া চারদিকে রয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য৷ এই কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে ভেতরের কারও পক্ষে বাইরে যাওয়া বা বাইরে থেকে কারও ভেতরে যাওয়া বেশ কঠিন৷ ফলে ভেতরের বাসিন্দারা গত চারমাস ধরে বন্দি জীবন যাপন করছেন৷ ওই আধা বর্গকিলোমিটারের মধ্যে তাদের জীবন আটকে গেছে৷ সেখাকার সব দোকানপাট আগেই গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাখাইন বৌদ্ধরা৷ ফলে খাবার দাবারের জন্য রোহিঙ্গাদের নির্ভর করতে হচ্ছে সরকারের দেয়া ত্রাণের ওপর৷
অং মিঙ্গালারের ২৮ বছরের এক যুবক মোহাম্মদ সাঈদ৷ অশ্রুসিক্ত চোখে বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, আফ্রিকার সাহারা মরুভূমিতে বাস করা এর চেয়েও অনেক ভাল৷ ইতিমধ্যে আমরা সব হারিয়েছি৷ এভাবে আর বন্দি থাকতে পারছিনা আমরা৷ আমরাও তো মানুষ৷’’
শুধু যে বন্দি অবস্থায় থাকা তা নয়৷ নিজেদের জীবন নিয়েও ভীত রোহিঙ্গারা৷ কেননা মাঝে মধ্যেই রাখাইন বৌদ্ধরা বেষ্টনীর বাইরে জড়ো হন৷ তারা সেখানে পাহারায় থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলি চালিয়ে রোহিঙ্গাদের ভয় দেখাতে উৎসাহিত করেন৷
রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা ‘আরাকান প্রজেক্ট'৷ এর প্রধান ক্রিস লেওয়া বলছেন, ‘‘এই বাঁশের বেড়াগুলো রোহিঙ্গাদের মনে এক ধরণের মনস্তাত্ত্বিক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এছাড়া সেগুলো দেখলেই মনে হয় যেন দুটো আলাদা বিশ্বকে পৃথক করে রাখা হয়েছে৷’’
লেওয়া বলেন, ‘‘অং মিঙ্গালারের পরিস্থিতি গত শতকের আশির দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ সময়কার পরিস্থিতির চেয়েও ভয়াবহ৷ কেননা রোহিঙ্গারা তো চলাফেরাও করতে পারছেনা৷’’
এদিকে আরেক সাহায্য সংস্থা ‘রিফিউজিস ইন্টারন্যাশনাল' এর কর্মকর্তা সরনাতা রেনল্ডস বলছেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের চলাফেরায় বাঁধা নিষেধ আগে থেকেই ছিল৷ তবে এখনকার পরিস্থিতি একেবারে ভয়াবহ৷’’
এই অবস্থায় অং মিঙ্গালারের বাসিন্দাদের সেখান থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার দাবি উঠছে৷ স্থানীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের এক নেতা নেয়া না বলছেন, ‘‘শহরের মধ্যে অং মিঙ্গালার থাকলে উত্তেজনা বাড়তেই থাকবে৷ আমি চাইনা বৌদ্ধ আর মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষ হোক৷ মুসলমানদের জন্য সেখানে থাকাটা বিপজ্জনক৷’’
৬০ বছরের আরেক বৌদ্ধ সান উইন ফু বলেন, ‘‘রোহিঙ্গারা সেখানে থাকলে সমস্যা হবেই৷ তাই সেখান থেকে তাদের চলে যাওয়াটা ভাল হবে৷’’
মিয়ানমারে জাতিসংঘের প্রধান অশোক নিগম বলছেন, ‘‘উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে সাময়িকভাবে অং মিঙ্গালারে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে৷ কিছুদিন পর সেখানে শান্তি ফিরে এলে, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক স্থাপিত হলে বেষ্টনী সরিয়ে নেয়া হবে৷’’
উল্লেখ্য, পশ্চিম মিয়ানমারে প্রায় আট লক্ষ রোহিঙ্গার বাস৷ জাতিসংঘের মতে, তারা বিশ্বের সবচেয়ে অবহেলিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়৷ গত জুন মাসের সংঘাতে রাখাইন রাজ্য জুড়ে প্রায় ৫০ হাজার মুসলমান ও ১০ হাজার বৌদ্ধকে গৃহহীণ হতে হয়েছিল৷ ওই ঘটনায় নিহত হয়েছিল অনেকে৷ সূত্র: এএফপি ও ডয়েচে ভেলে।
আকিয়াবের একটি এলাকা ‘অং মিঙ্গালার'৷ আয়তন আধা বর্গকিলোমিটার৷ জনসংখ্যা তিন থেকে আট হাজার৷ তারা সবাই রোহিঙ্গা মুসলিম৷ পুরো এলাকাটা বাঁশ আর কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা৷ এছাড়া চারদিকে রয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য৷ এই কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে ভেতরের কারও পক্ষে বাইরে যাওয়া বা বাইরে থেকে কারও ভেতরে যাওয়া বেশ কঠিন৷ ফলে ভেতরের বাসিন্দারা গত চারমাস ধরে বন্দি জীবন যাপন করছেন৷ ওই আধা বর্গকিলোমিটারের মধ্যে তাদের জীবন আটকে গেছে৷ সেখাকার সব দোকানপাট আগেই গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাখাইন বৌদ্ধরা৷ ফলে খাবার দাবারের জন্য রোহিঙ্গাদের নির্ভর করতে হচ্ছে সরকারের দেয়া ত্রাণের ওপর৷
অং মিঙ্গালারের ২৮ বছরের এক যুবক মোহাম্মদ সাঈদ৷ অশ্রুসিক্ত চোখে বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, আফ্রিকার সাহারা মরুভূমিতে বাস করা এর চেয়েও অনেক ভাল৷ ইতিমধ্যে আমরা সব হারিয়েছি৷ এভাবে আর বন্দি থাকতে পারছিনা আমরা৷ আমরাও তো মানুষ৷’’
শুধু যে বন্দি অবস্থায় থাকা তা নয়৷ নিজেদের জীবন নিয়েও ভীত রোহিঙ্গারা৷ কেননা মাঝে মধ্যেই রাখাইন বৌদ্ধরা বেষ্টনীর বাইরে জড়ো হন৷ তারা সেখানে পাহারায় থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলি চালিয়ে রোহিঙ্গাদের ভয় দেখাতে উৎসাহিত করেন৷
রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা ‘আরাকান প্রজেক্ট'৷ এর প্রধান ক্রিস লেওয়া বলছেন, ‘‘এই বাঁশের বেড়াগুলো রোহিঙ্গাদের মনে এক ধরণের মনস্তাত্ত্বিক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এছাড়া সেগুলো দেখলেই মনে হয় যেন দুটো আলাদা বিশ্বকে পৃথক করে রাখা হয়েছে৷’’
লেওয়া বলেন, ‘‘অং মিঙ্গালারের পরিস্থিতি গত শতকের আশির দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ সময়কার পরিস্থিতির চেয়েও ভয়াবহ৷ কেননা রোহিঙ্গারা তো চলাফেরাও করতে পারছেনা৷’’
এদিকে আরেক সাহায্য সংস্থা ‘রিফিউজিস ইন্টারন্যাশনাল' এর কর্মকর্তা সরনাতা রেনল্ডস বলছেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের চলাফেরায় বাঁধা নিষেধ আগে থেকেই ছিল৷ তবে এখনকার পরিস্থিতি একেবারে ভয়াবহ৷’’
এই অবস্থায় অং মিঙ্গালারের বাসিন্দাদের সেখান থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার দাবি উঠছে৷ স্থানীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের এক নেতা নেয়া না বলছেন, ‘‘শহরের মধ্যে অং মিঙ্গালার থাকলে উত্তেজনা বাড়তেই থাকবে৷ আমি চাইনা বৌদ্ধ আর মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষ হোক৷ মুসলমানদের জন্য সেখানে থাকাটা বিপজ্জনক৷’’
৬০ বছরের আরেক বৌদ্ধ সান উইন ফু বলেন, ‘‘রোহিঙ্গারা সেখানে থাকলে সমস্যা হবেই৷ তাই সেখান থেকে তাদের চলে যাওয়াটা ভাল হবে৷’’
মিয়ানমারে জাতিসংঘের প্রধান অশোক নিগম বলছেন, ‘‘উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে সাময়িকভাবে অং মিঙ্গালারে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে৷ কিছুদিন পর সেখানে শান্তি ফিরে এলে, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক স্থাপিত হলে বেষ্টনী সরিয়ে নেয়া হবে৷’’
উল্লেখ্য, পশ্চিম মিয়ানমারে প্রায় আট লক্ষ রোহিঙ্গার বাস৷ জাতিসংঘের মতে, তারা বিশ্বের সবচেয়ে অবহেলিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়৷ গত জুন মাসের সংঘাতে রাখাইন রাজ্য জুড়ে প্রায় ৫০ হাজার মুসলমান ও ১০ হাজার বৌদ্ধকে গৃহহীণ হতে হয়েছিল৷ ওই ঘটনায় নিহত হয়েছিল অনেকে৷ সূত্র: এএফপি ও ডয়েচে ভেলে।
No comments