বৌদ্ধ জনপদে হামলা-তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন
কক্সবাজারের রামু ও উখিয়ায় বৌদ্ধপল্লী এবং বৌদ্ধদের উপাসনালয়ে গত ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর যে নজিরবিহীন বর্বর তাণ্ডব চালানো হয়, সে সম্পর্কে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন কিছু সুপারিশসহ জমা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, এ ঘটনা ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং একটি চিহ্নিত গোষ্ঠীই
এ কাজের হোতা। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে হামলা ও অগি্নসংযোগ করে যে ভীতিকর অবস্থা তৈরি করেছিল, এর পেছনে শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি নয়, একটি সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত কাজ করেছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ হামলায় মূল ভূমিকা পালন করে জামায়াতে ইসলামী। তারা কৌশলে ব্যবহার করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মীকে। হামলা পরিচালনায় অর্থের জোগান দেয় রোহিঙ্গাদের জঙ্গি সংগঠন আরএসও এবং কয়েকটি এনজিও। স্থানীয় প্রশাসন এ ঘটনার পূর্বাভাস পেলেও বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়নি। পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের মারাত্মক ঘাটতি ছিল। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ২২টি সুপারিশও করা হয়েছে। এ ছাড়া সম্মিলিত আইনজীবী পরিষদও একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর আগে বিএনপির একটি তদন্তদলও তাদের প্রতিবেদন পেশ করেছে। আমরা আশা করি, সরকার তদন্ত প্রতিবেদনগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত ও যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, মিয়ানমারের আরাকানের সাম্প্রতিক দাঙ্গার ঘটনায় বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু কেবল তাদের পক্ষে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি তৈরি করা প্রায় অসম্ভব। আসলে রোহিঙ্গাদের এ ক্ষোভকে কোনো গোষ্ঠী হয়তো নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করেছে। আর এক বৌদ্ধ যুবকের ফেসবুকে চক্রান্তমূলকভাবে একটি ছবি ও লেখা যুক্ত করে এটিকে যে একটি ধর্মীয় ইস্যু বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, তা-ও এখন বেশ স্পষ্ট। আর এই পুরো ষড়যন্ত্রটি জামায়াত-শিবিরচক্র করেছে বলে সরকারি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। সরকার বলছে, উদ্দেশ্য একটাই- দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করা।
রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন আরএসওসহ কিছু এনজিওকে সেই এলাকায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা ভিন্ন নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলেও তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে। ইতিপূর্বে পত্রপত্রিকায়ও এ বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াত রোহিঙ্গাদের অবৈধ পুনর্বাসন, তাদের জন্ম সনদ প্রদান এবং অনেক রোহিঙ্গার পাসপোর্ট প্রাপ্তির বিষয়ে সহযোগিতা করে আসছিল বলেও ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ, জেএমবির সঙ্গেও রোহিঙ্গাদের নিবিড় সম্পৃক্ততা ছিল। কিন্তু সরকার যে কক্সবাজার ঘিরে সৃষ্টি হওয়া জঙ্গিবাদী ও সাম্প্রদায়িক চক্রান্ত প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে, বৌদ্ধপল্লীতে হামলার ঘটনা তা-ই প্রমাণ করে। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোও সুচিন্তিত। এর মধ্যে রয়েছে বান্দরবান ও কক্সবাজারের দুর্গম অঞ্চলে জঙ্গিদের আস্তানা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সেসব এলাকার কওমি মাদ্রাসাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। ওই এলাকায় গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো এবং দ্রুত দাঙ্গা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের উপস্থিতি জোরদার করতে হবে। রোহিঙ্গাদের গতিবিধি সম্পর্কেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানবাধিকারবঞ্চিত রোহিঙ্গাদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা থাকবে। কিন্তু জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে মিলে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো সুযোগ কাউকেই দেওয়া যাবে না। তাই কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের খুঁজে বের করে তাদের আশ্রয় শিবিরে স্থান দিতে হবে। যারা তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে এবং পাসপোর্ট পেতে সহায়তা করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোপরি রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবাসনের বিষয়টি দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে এর চেয়েও ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে হাজার বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে, তা ম্লান হয়ে যেতে বাধ্য। সামান্য কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী ও নষ্ট মানুষের চক্রান্তে সেই গৌরব আমরা হারাতে পারি না। সরকারকে দ্রুত পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষ আতঙ্কমুক্ত হতে পারে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, মিয়ানমারের আরাকানের সাম্প্রতিক দাঙ্গার ঘটনায় বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু কেবল তাদের পক্ষে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি তৈরি করা প্রায় অসম্ভব। আসলে রোহিঙ্গাদের এ ক্ষোভকে কোনো গোষ্ঠী হয়তো নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করেছে। আর এক বৌদ্ধ যুবকের ফেসবুকে চক্রান্তমূলকভাবে একটি ছবি ও লেখা যুক্ত করে এটিকে যে একটি ধর্মীয় ইস্যু বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, তা-ও এখন বেশ স্পষ্ট। আর এই পুরো ষড়যন্ত্রটি জামায়াত-শিবিরচক্র করেছে বলে সরকারি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। সরকার বলছে, উদ্দেশ্য একটাই- দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করা।
রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন আরএসওসহ কিছু এনজিওকে সেই এলাকায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা ভিন্ন নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলেও তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে। ইতিপূর্বে পত্রপত্রিকায়ও এ বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াত রোহিঙ্গাদের অবৈধ পুনর্বাসন, তাদের জন্ম সনদ প্রদান এবং অনেক রোহিঙ্গার পাসপোর্ট প্রাপ্তির বিষয়ে সহযোগিতা করে আসছিল বলেও ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ, জেএমবির সঙ্গেও রোহিঙ্গাদের নিবিড় সম্পৃক্ততা ছিল। কিন্তু সরকার যে কক্সবাজার ঘিরে সৃষ্টি হওয়া জঙ্গিবাদী ও সাম্প্রদায়িক চক্রান্ত প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে, বৌদ্ধপল্লীতে হামলার ঘটনা তা-ই প্রমাণ করে। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোও সুচিন্তিত। এর মধ্যে রয়েছে বান্দরবান ও কক্সবাজারের দুর্গম অঞ্চলে জঙ্গিদের আস্তানা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সেসব এলাকার কওমি মাদ্রাসাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। ওই এলাকায় গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো এবং দ্রুত দাঙ্গা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের উপস্থিতি জোরদার করতে হবে। রোহিঙ্গাদের গতিবিধি সম্পর্কেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানবাধিকারবঞ্চিত রোহিঙ্গাদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা থাকবে। কিন্তু জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে মিলে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো সুযোগ কাউকেই দেওয়া যাবে না। তাই কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের খুঁজে বের করে তাদের আশ্রয় শিবিরে স্থান দিতে হবে। যারা তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে এবং পাসপোর্ট পেতে সহায়তা করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোপরি রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবাসনের বিষয়টি দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে এর চেয়েও ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে হাজার বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে, তা ম্লান হয়ে যেতে বাধ্য। সামান্য কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী ও নষ্ট মানুষের চক্রান্তে সেই গৌরব আমরা হারাতে পারি না। সরকারকে দ্রুত পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষ আতঙ্কমুক্ত হতে পারে।
No comments