ঈদ এলেই প্রতীক্ষার প্রহর গোনা by মাশরেখা মনা
৫৩ বছরের মালেকা বেগমের বাড়ি ফরিদপুর। ৫ বছর ধরে আছেন গাজীপুর হোতাপাড়ার প্রবীণ নিবাসে। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কোনো ঈদেই তিনি বাড়ি যাননি। ৪ ছেলে, ছেলের বউ, নাতি-নাতনিদের কারও সময় নেই মালেকা বেগমকে দেখতে আসার, ঈদে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার। ফরিদপুর থেকে ঢাকা তাদের কাছে অনেক দূর।
না জানিয়ে ছেলেরা এখানে দিয়ে গেছেন মা মালেকা বেগমকে। তার ছেলেরা গ্রামে কোরবানি দেয়। মালেকা বেগম বলেন, একসময় ঈদে আমার হাতে রান্না করা সেমাই ও পায়েস ছাড়া ওদের ঈদ হতো না; কিন্তু এত বছর ধরে ছেলেরা তাকে ছাড়া কীভাবে ঈদ করে তা-ই ভাবেন তিনি। ঈদের দিন ছেলে, নাতি-নাতনিদের কথা ভেবে কেঁদে বুক ভাসান। বলেন, চার ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে খুব আনন্দে কাটত ঈদের দিনটি তার। বৃদ্ধাশ্রমে থাকবেন, এখানে ঈদ করবেন_ এমনটা ভাবেননি কোনোদিন।
৫০ বছরের মাকসুদা বেগমের বাড়ি খুলনায়। প্রবীণ নিবাসে ঈদ তার ভালো লাগে। তার কোনো ছেলেমেয়ে নেই। ৪৫ বছর সংসার করার পর স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তার খোঁজ নেন না। ঈদে কেউ নিতে আসবে_ সে আশা করেন না তিনি। কোরবানির ঈদ হলেও ঈদের দিন সকালে গোসল করে নতুন কাপড় পরেন। আতর-সুরমা লাগান। সকালে সেমাই, লুচি, জর্দা, পায়েস খান। নামাজ শেষে দুপুরে খিচুড়ি, সবজি, মুরগির মাংস খান। কোরবানির পর পোলাও, মাংস খান। এখানে গরু-খাসি কোরবানি হয়। ঈদের দিন বিকেলে সবাই বেড়াতে যান। বললেন এই প্রবীণ নিবাসের প্রতিষ্ঠাতাই আমার সন্তান। তার সঙ্গে ঈদ করি। জীবনের অনেকটা সময় স্বামী, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে দিয়েছি; কিন্তু আজ আমার শেষ সময়। অসহায় এ সময়ে কেউ আমার খোঁজ নেয় না, আশ্রয়ও দেয়নি কেউ। ঈদের দিন কেউ একটা ফোনও করে না। তাই আমিও তাদের কথা মনে করি না। শুধু এ প্রবীণ নিবাসের প্রতিষ্ঠাতা সন্তানের কথা ভাবি, তার জন্য দোয়া করি।
৬০ বছরের রওশনারা বেগমের বাড়ি রাজশাহী। ১০ বছর আগে ৩ ছেলে মিথ্যা বলে এখানে রেখে গেছে। এরপর আর কেউ কখনও দেখতে আসেনি। প্রতিটি ঈদের আগে ছেলেদের জন্য অপেক্ষা করেন। যদি কোনো ছেলে ঈদে নিতে আসে।' সন্তানদের ছাড়া ঈদ করব; ভাবিনি কখনও। কোরবানির ঈদে আমার ছেলেরা আমার হাতে তৈরি বাটা মসলার গরু মাংস খেতে খুব পছন্দ করত। সেসব কথা ভেবে চোখের পানি ঝরে দু'চোখ বেয়ে।
৬৩ বছরের মনোয়ারার বাড়ি দিনাজপুর। দুই ছেলে দুই মেয়ে। ১২ বছর ধরে এখানে আছেন, কোনোদিন বাড়িতে যাননি। ১ ছেলে একবার ঈদের আগে এসে বলেছিল। মাকে বাড়িতে নিয়ে যাবে। সেই থেকে প্রতি ঈদে ছেলের পথ চেয়ে থাকেন তিনি।
৫০ বছরের মণ্ডু সাহা ৬ বছর হলো এসেছেন বৃদ্ধাশ্রমে। বাড়ি ময়মনসিংহ। কোনোদিন কেউ আসেনি তাকে দেখতে। পূজা এলেও আসে না কেউ। তিনি তুলসী গাছ ও মূর্তি দিয়ে এখানে পূজা করেন। এখান থেকে পূজা দেখাতে নিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ। তিনি সব সময় প্রার্থনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। একসময় বাড়ির মা, দিদিমা বা প্রধান হিসেবে পূজায় সব দায়িত্ব তার ছিল। কিন্তু আজ তার কোনো দায়িত্ব নেই। কত পূজা চলে যায়_ তার খোঁজ কেউ নেয় না। কখনও ভাবেননি তার একসময়ের যৌথ সুন্দর পরিবার থেকে বিতাড়িত হয়ে আশ্রমে ঠাঁই হবে এবং পূজার সময়ও তাকে আশ্রমে থাকতে হবে।
সিনিয়র সুপারভাইজার হাবিবুন নেছা বেলি ২২ বছর ধরে গাজীপুরে অবস্থিত বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের সার্বিক দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, আমার দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতায় কত মায়ের করুণ কাহিনী দেখেছি-শুনেছি, যা বর্ণনার ভাষা নেই। কিন্তু তারপরও মায়েরা এখানে আছেন। উপায় নেই তাদের। বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের কোরবানি ঈদের আয়োজন খুব আনন্দময় ও জাঁকজমকভাবে আমরা পালন করি। গরু-খাসি কোরবানি দেওয়া হয়। মায়েদের শাড়ি, আতর-সুরমা এসব দেওয়া হয়। নানা আয়োজনে খাবার দেওয়া হয়। বিকেলে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয় নানা জায়গায়। এখানে ১০০ মায়ের মধ্যে ২০-৩০ জনকে তাদের সন্তান বা আত্মীয়-স্বজন ঈদে নিতে আসেন। তবে আমি দেখেছি, ঈদ এলেই প্রতিটি মায়ের সন্তান বা আত্মীয়-স্বজন নিতে আসার কত প্রতীক্ষারত ঘটনা। সবাই অপেক্ষা করেন কোরবানির ঈদে বাড়ি যাওয়ার। হ
৫০ বছরের মাকসুদা বেগমের বাড়ি খুলনায়। প্রবীণ নিবাসে ঈদ তার ভালো লাগে। তার কোনো ছেলেমেয়ে নেই। ৪৫ বছর সংসার করার পর স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তার খোঁজ নেন না। ঈদে কেউ নিতে আসবে_ সে আশা করেন না তিনি। কোরবানির ঈদ হলেও ঈদের দিন সকালে গোসল করে নতুন কাপড় পরেন। আতর-সুরমা লাগান। সকালে সেমাই, লুচি, জর্দা, পায়েস খান। নামাজ শেষে দুপুরে খিচুড়ি, সবজি, মুরগির মাংস খান। কোরবানির পর পোলাও, মাংস খান। এখানে গরু-খাসি কোরবানি হয়। ঈদের দিন বিকেলে সবাই বেড়াতে যান। বললেন এই প্রবীণ নিবাসের প্রতিষ্ঠাতাই আমার সন্তান। তার সঙ্গে ঈদ করি। জীবনের অনেকটা সময় স্বামী, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে দিয়েছি; কিন্তু আজ আমার শেষ সময়। অসহায় এ সময়ে কেউ আমার খোঁজ নেয় না, আশ্রয়ও দেয়নি কেউ। ঈদের দিন কেউ একটা ফোনও করে না। তাই আমিও তাদের কথা মনে করি না। শুধু এ প্রবীণ নিবাসের প্রতিষ্ঠাতা সন্তানের কথা ভাবি, তার জন্য দোয়া করি।
৬০ বছরের রওশনারা বেগমের বাড়ি রাজশাহী। ১০ বছর আগে ৩ ছেলে মিথ্যা বলে এখানে রেখে গেছে। এরপর আর কেউ কখনও দেখতে আসেনি। প্রতিটি ঈদের আগে ছেলেদের জন্য অপেক্ষা করেন। যদি কোনো ছেলে ঈদে নিতে আসে।' সন্তানদের ছাড়া ঈদ করব; ভাবিনি কখনও। কোরবানির ঈদে আমার ছেলেরা আমার হাতে তৈরি বাটা মসলার গরু মাংস খেতে খুব পছন্দ করত। সেসব কথা ভেবে চোখের পানি ঝরে দু'চোখ বেয়ে।
৬৩ বছরের মনোয়ারার বাড়ি দিনাজপুর। দুই ছেলে দুই মেয়ে। ১২ বছর ধরে এখানে আছেন, কোনোদিন বাড়িতে যাননি। ১ ছেলে একবার ঈদের আগে এসে বলেছিল। মাকে বাড়িতে নিয়ে যাবে। সেই থেকে প্রতি ঈদে ছেলের পথ চেয়ে থাকেন তিনি।
৫০ বছরের মণ্ডু সাহা ৬ বছর হলো এসেছেন বৃদ্ধাশ্রমে। বাড়ি ময়মনসিংহ। কোনোদিন কেউ আসেনি তাকে দেখতে। পূজা এলেও আসে না কেউ। তিনি তুলসী গাছ ও মূর্তি দিয়ে এখানে পূজা করেন। এখান থেকে পূজা দেখাতে নিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ। তিনি সব সময় প্রার্থনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। একসময় বাড়ির মা, দিদিমা বা প্রধান হিসেবে পূজায় সব দায়িত্ব তার ছিল। কিন্তু আজ তার কোনো দায়িত্ব নেই। কত পূজা চলে যায়_ তার খোঁজ কেউ নেয় না। কখনও ভাবেননি তার একসময়ের যৌথ সুন্দর পরিবার থেকে বিতাড়িত হয়ে আশ্রমে ঠাঁই হবে এবং পূজার সময়ও তাকে আশ্রমে থাকতে হবে।
সিনিয়র সুপারভাইজার হাবিবুন নেছা বেলি ২২ বছর ধরে গাজীপুরে অবস্থিত বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের সার্বিক দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, আমার দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতায় কত মায়ের করুণ কাহিনী দেখেছি-শুনেছি, যা বর্ণনার ভাষা নেই। কিন্তু তারপরও মায়েরা এখানে আছেন। উপায় নেই তাদের। বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের কোরবানি ঈদের আয়োজন খুব আনন্দময় ও জাঁকজমকভাবে আমরা পালন করি। গরু-খাসি কোরবানি দেওয়া হয়। মায়েদের শাড়ি, আতর-সুরমা এসব দেওয়া হয়। নানা আয়োজনে খাবার দেওয়া হয়। বিকেলে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয় নানা জায়গায়। এখানে ১০০ মায়ের মধ্যে ২০-৩০ জনকে তাদের সন্তান বা আত্মীয়-স্বজন ঈদে নিতে আসেন। তবে আমি দেখেছি, ঈদ এলেই প্রতিটি মায়ের সন্তান বা আত্মীয়-স্বজন নিতে আসার কত প্রতীক্ষারত ঘটনা। সবাই অপেক্ষা করেন কোরবানির ঈদে বাড়ি যাওয়ার। হ
No comments