ঢাকায় জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে সরকার ভীত কেন?- বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স

ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের পর উত্তরও ১০ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণা অপ্রত্যাশিত না হলেও যাঁরা ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁদের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নয় মাসের বেশি সময় ধরে অনির্বাচিত প্রশাসক নিয়োজিত আছেন।


অথচ গত বছর সব মহলের আপত্তি উপেক্ষা করে সরকার যখন ঢাকা সিটি করপোরেশনকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করে, তখন বলা হয়েছিল, নাগরিক-সুবিধা বাড়াতেই এটি করা হচ্ছে এবং তিন মাসের মধ্যে সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেওয়া হবে। সেই তিন মাসের স্থলে এক বছর পার হতে চললেও নির্বাচনের লক্ষণ নেই।
সরকার এখন আদালতের ওপর বন্দুক রেখে সিটি করপোরেশন নির্বাচন না করার কৌশল খুঁজছে। কিন্তু আদালত বলেছেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ওয়ার্ডের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে নির্বাচন করা হোক। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের, আর ওয়ার্ডের সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজটি করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, জানুয়ারি নাগাদ সারা দেশের ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজটি শেষ হবে। নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে, যেকোনো সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তারা প্রস্তুত। কিন্তু ওয়ার্ডের সীমানা পুনর্নির্ধারণের ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কিছুই বলছে না। বিদায়ী নির্বাচন কমিশন সাধ্যমতো চেষ্টা করেও ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে পারেনি সরকারের অসহযোগিতার কারণে। যে সরকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া এক দিনও দেশ পরিচালনা না করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ, সেই সরকার কী করে এক কোটির বেশি জন-অধ্যুষিত দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঠেকিয়ে রাখছে?
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে, সিটি করপোরেশন চালিত বিভিন্ন হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দাতব্য কেন্দ্র ও পার্ক পরিচালনার ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর পর নগরের পরিষেবা-সুবিধা যে বাড়াবে, তার নিশ্চয়তা কী? সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকলে অন্তত তাঁদের কাছে জবাব চাওয়া যেত। অনির্বাচিত প্রশাসকদের জবাবদিহি থাকে জনগণের প্রতি নয়, নিয়োগকর্তার প্রতি।
আমরা মনে করি, সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হলে আয়ও বাড়াতে হবে, সরকারের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। সে ক্ষেত্রে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো অযৌক্তিক নয়। কিন্তু নগরবাসী দেখতে চাইবে, তাদের দেওয়া প্রতিটি পয়সা ঢাকার বাসিন্দাদের সেবায় ব্যয় হচ্ছে, কর্তাব্যক্তিদের পকেটে যাচ্ছে না। ওয়ার্ডের সীমানা পুনর্নির্ধারণ এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে অবিলম্বে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করা হোক। বিপুল ভোটে জয়ী সরকার ঢাকা মহানগরে জনপ্রিয়তা যাচাই করতে ভয় পাচ্ছে কেন?

No comments

Powered by Blogger.