গণপরিবহন! by মাহফুজুর রহমান মানিক
ডারউইনের কথা তো ফেলনা নয়, সার্ভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট_ যোগ্যতমরাই টিকে থাকে। ঢাকা শহরের গণপরিবহনের কথা চিন্তা করলে মনে হবে শক্তিমানরাই বুঝি যোগ্যতম। শক্তির যোগ্যতার বাইরে গণপরিবহনে নিজের স্থান করে নেওয়ার, টিকে থাকার অন্য কোনো মাধ্যম নেই।
যদিও নামে গণপরিবহন। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। জনসাধারণের চলাচলের পরিবহন। কাজে শক্তিমানদের আধিপত্য। আপনি শক্তিমান_ চলন্ত গাড়িতে লাফ দিয়ে উঠতে পারবেন, কয়েকজনকে ধাক্কিয়ে বাসে জায়গা করে নিতে পারবেন কিংবা বাসের দরজায় ঝুলে থেকে গন্তব্যস্থলে যেতে পারবেন। আপনারই জয়। সেখানে দুর্বলের স্থান নেই। বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের (ডিজঅ্যাবল) কথা বলাই বাহুল্য। এর বাইরে নারীরাও যে কত ভোগান্তির শিকার হয়ে এগুলোতে চলাফেরা করেন, তা সবারই জানা।
শক্তির পরিচয় কেবল গণপরিবহনে উঠতে নয়, নামতেও দিতে হয়। স্বাভাবিকভাবে বাস থামিয়ে যে যাত্রীকে নামিয়ে দেবে_ তা দেখা যায় না। অনেক সময় অবশ্য কোনো নারী যাত্রী থাকলে হেলপার চালককে 'মহিলা আছে' বললে বাস কিছুটা স্লো করা হয়। অথচ গণপরিবহন তার স্টপেজে থামবে। তার যাত্রীরা যাতে ঠিকভাবে নামতে পারেন, সে ব্যবস্থাও করবে। সেখানে যাত্রী পুরুষ কিংবা নারী হোক_ সেটা তার দেখার বিষয় নয়। পুরুষ যাত্রী হলে ড্রাইভার বাস না থামালেও যে হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। বিষয়টা চিন্তা করলে কী দাঁড়ায়? এরা বেপরোয়া। যাত্রীর সুবিধার চেয়ে নিজেদের সুবিধার দিকটাই দেখে। যেমন_ কখনও কখনও বন্ধের দিনে বা অফিসিয়াল সময়ের বাইরে যখন যাত্রী কম থাকে_ ধরা যাক বাস একটা স্টপেজে দাঁড়িয়ে আছে, বাসের সব সিট ভরছে না কিংবা একেবারে লোকাল বাস হলে বাসের সিট ভরার পরও বাসের মাঝখানে যাত্রী চলাচলের জায়গা না ভরা পর্যন্ত কিন্তু বাসটা ছাড়বে না। অথচ এ বাসই যখন ভরা যাত্রী নিয়ে আরেকটা স্টপেজে যাবে, সেখানে নতুন যাত্রী না পেলে পুরনো কোনো যাত্রী নামার থাকলে ঠিকভাবে নামাবে না। যতটা পারা যায় চলন্ত অবস্থায় যাত্রী নামিয়ে যেতে চায়। অথচ এ রকমটা হওয়ার কথা নয়। চলন্ত বাস থেকে 'বাম পা দিয়ে নামেন' বললেও কোনো যাত্রী যে অ্যাক্সিডেন্টের শিকার হবেন না_ সে নিশ্চয়তা কি আছে?
চালকদের আসলে এ রকম বেপরোয়া মনোভাবই দুর্ঘটনার কারণ। আর এর পেছনের কথা হলো, তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ নেই। অনেক সময় গাড়ির হেলপাররাই চালকের আসনে আসীন হয়। তাদের না আছে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা, না আছে যাত্রীজ্ঞান, এরা না জানে ট্রাফিক আইন। লাইসেন্স কিংবা ভুয়া লাইসেন্সের কথা বলাই বাহুল্য।
গণপরিবহনে তারাই সাধারণত চলাচল করেন, যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি নেই; যাদের সিএনজিচালিত ট্যাক্সি কিংবা রিকশা ভাড়া করার মতো সামর্থ্য নেই, কিংবা সামর্থ্য থাকলেও এগুলোতে যাওয়ার অবস্থা নেই; তারা বাধ্য হয়েই গণপরিবহন ব্যবহার করেন। বলা চলে অধিকাংশ মানুষের অবস্থাই এ রকম। আমাদের গণপরিবহনে নৈরাজ্যের কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। জনসংখ্যার তুলনায় গণপরিবহন খুবই কম। ফলে এখানে প্রতিনিয়তই শক্তি প্রদর্শন করতে হয়। সংখ্যায় এগুলো যেমন অপ্রতুল তেমনি অনেক সময় পাওয়াও দায় হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে বাসে ওঠেন। পাশাপাশি যানজট তো লেগেই আছে। ভুক্তভোগী এ মানুষদের অবস্থা যেন দেখার কেউই নেই। উন্নত বিশ্বের লাইট-রেল, মনো-রেল, মেট্রো-রেল আমাদের জন্য স্বপ্নের বিষয় হতে পারে। বড় বড় বাসও কি স্বপ্নের? কিংবা ওয়াটার বাস। সরকার গত বছর যে ওয়াটার বাস ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু করল, সেটাও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যর্থ হলো। এ ছাড়া বিদ্যমান গণপরিবহনের সংখ্যা দিন দিন কমছে বলে সম্প্রতি খবর দিয়েছে একটি পত্রিকা। তাহলে গণপরিবহনে কি এভাবে গণদুর্ভোগ চলতেই থাকবে?
mahfuz.manik@gmail.com
শক্তির পরিচয় কেবল গণপরিবহনে উঠতে নয়, নামতেও দিতে হয়। স্বাভাবিকভাবে বাস থামিয়ে যে যাত্রীকে নামিয়ে দেবে_ তা দেখা যায় না। অনেক সময় অবশ্য কোনো নারী যাত্রী থাকলে হেলপার চালককে 'মহিলা আছে' বললে বাস কিছুটা স্লো করা হয়। অথচ গণপরিবহন তার স্টপেজে থামবে। তার যাত্রীরা যাতে ঠিকভাবে নামতে পারেন, সে ব্যবস্থাও করবে। সেখানে যাত্রী পুরুষ কিংবা নারী হোক_ সেটা তার দেখার বিষয় নয়। পুরুষ যাত্রী হলে ড্রাইভার বাস না থামালেও যে হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। বিষয়টা চিন্তা করলে কী দাঁড়ায়? এরা বেপরোয়া। যাত্রীর সুবিধার চেয়ে নিজেদের সুবিধার দিকটাই দেখে। যেমন_ কখনও কখনও বন্ধের দিনে বা অফিসিয়াল সময়ের বাইরে যখন যাত্রী কম থাকে_ ধরা যাক বাস একটা স্টপেজে দাঁড়িয়ে আছে, বাসের সব সিট ভরছে না কিংবা একেবারে লোকাল বাস হলে বাসের সিট ভরার পরও বাসের মাঝখানে যাত্রী চলাচলের জায়গা না ভরা পর্যন্ত কিন্তু বাসটা ছাড়বে না। অথচ এ বাসই যখন ভরা যাত্রী নিয়ে আরেকটা স্টপেজে যাবে, সেখানে নতুন যাত্রী না পেলে পুরনো কোনো যাত্রী নামার থাকলে ঠিকভাবে নামাবে না। যতটা পারা যায় চলন্ত অবস্থায় যাত্রী নামিয়ে যেতে চায়। অথচ এ রকমটা হওয়ার কথা নয়। চলন্ত বাস থেকে 'বাম পা দিয়ে নামেন' বললেও কোনো যাত্রী যে অ্যাক্সিডেন্টের শিকার হবেন না_ সে নিশ্চয়তা কি আছে?
চালকদের আসলে এ রকম বেপরোয়া মনোভাবই দুর্ঘটনার কারণ। আর এর পেছনের কথা হলো, তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ নেই। অনেক সময় গাড়ির হেলপাররাই চালকের আসনে আসীন হয়। তাদের না আছে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা, না আছে যাত্রীজ্ঞান, এরা না জানে ট্রাফিক আইন। লাইসেন্স কিংবা ভুয়া লাইসেন্সের কথা বলাই বাহুল্য।
গণপরিবহনে তারাই সাধারণত চলাচল করেন, যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি নেই; যাদের সিএনজিচালিত ট্যাক্সি কিংবা রিকশা ভাড়া করার মতো সামর্থ্য নেই, কিংবা সামর্থ্য থাকলেও এগুলোতে যাওয়ার অবস্থা নেই; তারা বাধ্য হয়েই গণপরিবহন ব্যবহার করেন। বলা চলে অধিকাংশ মানুষের অবস্থাই এ রকম। আমাদের গণপরিবহনে নৈরাজ্যের কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। জনসংখ্যার তুলনায় গণপরিবহন খুবই কম। ফলে এখানে প্রতিনিয়তই শক্তি প্রদর্শন করতে হয়। সংখ্যায় এগুলো যেমন অপ্রতুল তেমনি অনেক সময় পাওয়াও দায় হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে বাসে ওঠেন। পাশাপাশি যানজট তো লেগেই আছে। ভুক্তভোগী এ মানুষদের অবস্থা যেন দেখার কেউই নেই। উন্নত বিশ্বের লাইট-রেল, মনো-রেল, মেট্রো-রেল আমাদের জন্য স্বপ্নের বিষয় হতে পারে। বড় বড় বাসও কি স্বপ্নের? কিংবা ওয়াটার বাস। সরকার গত বছর যে ওয়াটার বাস ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু করল, সেটাও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যর্থ হলো। এ ছাড়া বিদ্যমান গণপরিবহনের সংখ্যা দিন দিন কমছে বলে সম্প্রতি খবর দিয়েছে একটি পত্রিকা। তাহলে গণপরিবহনে কি এভাবে গণদুর্ভোগ চলতেই থাকবে?
mahfuz.manik@gmail.com
No comments